সে আমাকে প্রতিবন্ধী করেছে আমি বদরুলের বিচার চাই
‘আমার শরীরের যে যে জায়গায় আসামি আঘাত করেছে, তার দাগ আছে। সে আমাকে সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী করেছে। আমি বদরুলের বিচার চাই।’ সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিমের আদালতে গতকাল রোববার সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এই বলে হামলাকারী বদরুল আলমের শাস্তির দাবি জানান কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম। মহানগর আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খাদিজাকে হত্যাচেষ্টার মামলার মোট ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে সর্বশেষ সাক্ষ্য দিলেন খাদিজা। তাঁর এ সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। খাদিজাকে গতকাল আইনজীবীরা জেরাও করেন। এরপর বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো আগামী ১ মার্চ যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করেন।আদালত সূত্র জানায়, সিলেট সদর উপজেলার আউশা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খাদিজা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদালতে পৌঁছান। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় আসামি বদরুলকে। দুপুর ১২টায় সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন খাদিজা। তিনি আদালতকে বলেন, ঘটনার দিন বিকেল পাঁচটার দিকে এক সহপাঠীর সঙ্গে তিনি এমসি কলেজের পুকুরপাড় দিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় তাঁদের পথরোধ করেন বদরুল। তাঁর হাতে একটি চাপাতি ছিল। বদরুল খাদিজাকে জোর করে পুকুরের পূর্ব পাড়ে নিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে শুরু করেন। প্রথম কোপটা বদরুল মাথা লক্ষ্য করে দিয়েছিলেন। এ কোপ খাদিজা দুই হাত দিয়ে ফেরান। এরপর বদরুল এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করেন। এ সময় নাকে ও বাম কানের লতিতেও আঘাত লাগে। এরপরই অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়েন খাদিজা। আদালত সূত্র আরও জানায়,
আইনজীবীদের জেরার সময় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বদরুলের দাবি করা বিষয়গুলো ‘সত্য নয়’ বলে জানান খাদিজা। জবানবন্দিতে বদরুল দাবি করেছিলেন, খাদিজার গৃহশিক্ষক ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে খাদিজার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। খাদিজার সাক্ষ্য শেষে আসামির কাঠগড়ায় থাকা বদরুল ‘কিছু বলতে চাই’ বলে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচারক তাঁর আবেদনে সাড়া না দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যান। সাক্ষ্য ও জেরা শেষে আদালত যুক্তিতর্কের তারিখ নির্ধারণ করলে বদরুল উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, ‘তুমি সুখী হও, খাদিজা। বিচারক আল্লাহ আছেন। আমার ফাঁসি হোক।’ গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষার্থী খাদিজা বেগমকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র বদরুল আলম। ঘটনার পরপরই উপস্থিত লোকজন বদরুলকে আটক করে পুলিশে দেন। এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর বদরুলকে একমাত্র আসামি করে খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস মামলা করেন। ৫ অক্টোবর বদরুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকায় দীর্ঘ চিকিৎসার পর গত শুক্রবার সিলেটে নিজ বাড়িতে ফেরেন খাদিজা।
No comments