কলকাতার ‘চক্রব্যূহ’ মাতাল উৎসবমঞ্চ
কলকাতা থেকে নাটকের দল আসবে, এমন খবর কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় ছিল। নাট্যমেলার নিয়মিত দর্শকেরাও অপেক্ষায় ছিলেন ভিনদেশি নাটকের স্বাদ গ্রহণের। অবশেষে গতকাল রোববার রাতে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর মাঠে অনির্বাণ একুশে নাট্যমেলার উৎসবমঞ্চে গতকাল কলকাতার রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ পরিবেশিত নাটক চক্রব্যূহ মঞ্চস্থ হয়। দর্শকদের হৃদয় জয় করেছে সীমান্তের ওপারের এই নাটকের দল ও তাদের পরিবেশনা। চক্রব্যূহ প্রকৃতপক্ষে একটি বর্ণনামূলক একক নাটক। নাটকটির একমাত্র চরিত্রটিতেও অভিনয় করেন নির্দেশক ও রচয়িতা দানী কর্মকার নিজেই। গোটা নাটকটিতে মঞ্চে আলো-আঁধারি খেলা ও মনোমুগ্ধকর আবহ সংগীতে উপস্থিত দর্শকদের মন ভরে যায়। নাটকের কাহিনির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে দানী কর্মকার বলেন, চক্রব্যূহ শব্দটি মহাভারতের অভিমন্যুর ফাঁদে পা দেওয়া থেকে উৎপত্তি। অভিমন্যু মায়ের গর্ভ থেকেই যুদ্ধ-সম্পর্কিত শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি জানতেন কীভাবে চক্রব্যূহ প্রকাশ করতে হয়, কিন্তু বের হওয়ার উপায় জানতেন না। নাটকটি শুধু অভিমন্যু হত্যার নিমিত্তেই নয় বরং একটি রূপক-অলংকারও বটে। নাটকটি মানবজীবনের অবিরাম সংগ্রামকেই চিত্রিত করে। এদিকে মেলার প্রধান আকর্ষণ নাটক হলেও গতকাল বিকেল থেকেই উৎসবমঞ্চে ছিল জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা।
মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে দর্শনার অংকুর আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় আমন্ত্রিত শিল্পী আশানুর রহমান, কৃষ্ণ গায়েন ও মোস্তফা কামাল সংগীত এবং মুহিনী, নাদিয়া ও সেঁজুতি নৃত্য পরিবেশন করেন। রাতে নাটক শুরুর আগে ছিল অনির্বাণ থিয়েটারের নিয়মিত আয়োজন বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা। গতকালের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের প্রজন্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় থিয়েটারের নির্বাহী সদস্য বদরুল আলম সভাপতিত্ব করেন। আলোচক ছিলেন রাজশাহীর সংস্কৃতিকর্মী কাওসার জামী ও চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রকাশিত প্রতিদিনের নতুন খবর পত্রিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। এদিকে মেলার মূল মঞ্চের বাইরে বিশাল এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলার আদলে অসংখ্য স্টল। আছে নাগরদোলাসহ শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণ। চাকরির সূত্রে বর্তমানে দর্শনার বাসিন্দা কামরুন্নাহার মিতা এমন উৎসব দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। স্বামী ও সন্তান নিয়ে দুই দিন এসেছেন নাট্যমেলায়। তিনি গতকাল বলেন, দর্শনার মতো মফস্বল শহরে যে আয়োজন করা হয়েছে, তা অভাবনীয়। মেলাটি এখন প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে।
No comments