বাক্সে পড়ে আছে সরঞ্জাম, অস্ত্রোপচার বন্ধ ৬ বছর
ছয় বছর আগে দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার কক্ষ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু অবেদনবিদ ও শল্যচিকিৎসক না থাকায় গত ছয় বছরে এখানে কোনো অস্ত্রোপচার করা হয়নি। স্থানীয় ব্যক্তিদের বেশি টাকা খরচ করে বেসরকারি ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ছয় বছর আগে হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। সেখানে একটি অস্ত্রোপচার কক্ষ করা হয়।
কিন্তু অস্ত্রোপচারের সরঞ্জামগুলো এখনো বাক্সবন্দী হয়ে আছে। শল্যচিকিৎসক (সার্জন) ও অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ) না থাকায় কোনো অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। এদিকে এক্স-রে যন্ত্রের স্ক্রিন (পর্দা), এক্স-রে টেবিল ও রেডিয়েশনপ্রুফ কক্ষ না থাকায় এক্স-রেও করা হয় না। তবে এখানে স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ জন চিকিৎসকের জায়গায় ১২ জন কর্মরত আছেন। অবেদনবিদ ও শল্যচিকিৎসক না থাকায় কোনো অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জনকে প্রতি মাসে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা আরও বলেন, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। ৫ ফেব্রুয়ারি ৪১ জন রোগী ভর্তি ছিল। কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের জেনারেটরটি নষ্ট। ফলে রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে রোগী ও তাদের স্বজনেরা মোমবাতি জ্বালায়। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভোগান্তি বেশি।
স্থানীয় এক বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি আছেন উপজেলার খাগড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন (৫২)। কয়েক দিন আগে তাঁর পিত্তথলি থেকে পাথর অপসারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে পেটের ব্যথায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা তাঁকে রক্ত পরীক্ষা ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এই ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করান। এতে তাঁর ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কাহালুর বীরকেদার গ্রামের বীথি বেগম (২৪) আরেকটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর স্বামী সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব না হওয়ায় চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন। পরে তাঁরা এখানে আসেন। বেসরকারি ক্লিনিকগুলোয় সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য সাত থেকে আট হাজার করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। বগুড়া জেলা সিভিল সার্জন অর্ধেন্দু দেব মুঠোফোনে বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শল্যবিশেষজ্ঞ ও অবেদনবিদের সংকট। তাঁরা প্রতি মাসে এ সমস্যার প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠান। তবে সরকার সম্প্রতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন কোনো চিকিৎসক নিয়োগ হলে প্রথমেই তাঁদের অবেদন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। শিগগিরই এ সংকটের সমাধান করা হবে।
No comments