বন্দরের ইজারায় আপত্তি জেলা প্রশাসনের
কর্ণফুলী নদীর তীরে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্প এলাকায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছ থেকে ইজারা নিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মাঝখানে প্রায় চার একর জায়গায় এই স্থাপনা নির্মাণ করছে বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। চবক ইজারা দিলেও জায়গাটির মালিকানা দাবি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষ চাক্তাই ও রাজাখালীর মধ্যবর্তী ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৩ বর্গফুট জায়গা বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ইজারা দেয়। জায়গার বার্ষিক ভাড়া ধরেছে ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৫২৩ টাকা। ১৫ বছরের জন্য এ ইজারা দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন সমবায় অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। এ বিষয়ে বন্দর পর্ষদ সদস্য জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত কর্ণফুলী নদীর হাই ওয়াটার মার্ক (সাধারণ জোয়ারে নদীর পানি যে সীমানা স্পর্শ করে) দেড় শ ফুট পর্যন্ত বন্দরের এখতিয়ারাধীন। আর নদীকেন্দ্রিক যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা করে, তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করাও বন্দরের কাজ। মৎস্য একটি বড় ক্ষেত্র। কিন্তু তাদের জন্য কোনো কিছু করা হয়নি। ওই চিন্তা করে তাদের জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জমিসংক্রান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে নির্মাণাধীন এ স্থাপনা নিয়ে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে একটি প্রতিবেদন দেন সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আছিয়া খাতুন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মধ্যবর্তী স্থানের যে জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে, তা খাস খতিয়ানভুক্ত নদী (কর্ণফুলী নদী) শ্রেণির জমি। খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গা কী বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইজারা বা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছে, তা বোধগম্য নয়। এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন গত বছরের সেপ্টেম্বরে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কর্ণফুলী নদীর পাশের জমিতে স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ইজারা প্রদানের বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন তিনি। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, কর্ণফুলী নদী শাসন, নদী খনন, নদী সংরক্ষণ, নদীতীর রক্ষণাবেক্ষণ ও বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত। কর্ণফুলী নদীর হাই ওয়াটার মার্ক অর্থাৎ ১৫০ ফুট পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন। কর্ণফুলী নদীতে হাজার হাজার মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার যত্রতত্র নোঙর করে, যা জাহাজ চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ নৌযান ও ট্রলারের নিরাপদ নোঙরের জন্য মৎস্য বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যাতে দরিদ্র মৎস্যজীবীরা উপযুক্ত মূল্যে মৎস্য অবতরণ ও বিক্রয় করতে পারেন। গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পাঁচটি একতলা ভবন ও একটি দোতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। একতলা ভবনের দোকানগুলোতে মাছের আড়ত থাকবে এবং দোতলা ভবনে শৌচাগার ও পোশাক পরিবর্তনের কক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
No comments