তবুও অনিশ্চিত গন্তব্যে তুরস্ক
অভ্যুথান ব্যর্থ হওয়ার পর ইস্তাম্বুলে জনসমুদ্রের মাঝে বিজয় উদযাপন করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। তাকে বহনকারী বাসের ওপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমাদের মাথা শুধু আল্লাহর কাছে নত হয়।’ এরদোগানের এ প্রতীকী কথা তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে। রক্ষণশীল মুসলিমদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা এরদোগান প্রায়ই তার বক্তব্য ‘ইসলামী ভাষায়’ উপস্থাপন করেন। এ দৃশ্য থেকে বোঝা যায়, গত দুই দশকে তুরস্ক কতটা বদলে গেছে। ঐতিহ্যগতভাবে তুরস্কের সেনাবাহিনী দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। গত শতাব্দীতে তারা তিন তিনটি সফল অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। কিন্তু এবারের ব্যর্থতায় রাতারাতি দেশের শত্রু হয়ে উঠেছে। এখন তাদের জেলে ভরা হচ্ছে। রাষ্ট্রের সব বিভাগ থেকে তাদের সমর্থকদের বিতাড়িত করা হচ্ছে। সামরিক বাহিনীর অন্তত ৬ হাজার সদস্য এখন কাঠগড়ায়।
প্রশ্ন উঠেছে, সেনাবাহিনীর ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরিণতি কী? এখন কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন? নাকি নিজেকে দুর্বল নেতা মনে করে বিরোধীদের সঙ্গে সংহতির চেষ্টা করবেন? যেসব রাজনৈতিক দল এরদোগানের রাজনীতির অতিমাত্রায় বিরোধিতা করত, তারাও গণতন্ত্র রক্ষায় অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির একটা সুযোগ এরদোগানের সামনে রয়েছে। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, গণতন্ত্রের চেয়ে তুরস্কে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ আরও শক্তিশালী হয়েছে। এরদোগান জয়ী হলেও তুরস্কের ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোথায়, তা অনিশ্চিত। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা লিবারেল মানুষ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছে, গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এরদোগানের বিশাল সমর্থক দল, যারা দেশজুড়ে রাজপথ দখলে নিয়েছিলেন, তারা ধর্মীয় স্লোগান দিয়েছেন এবং ইসলামী নেতার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। রক্ষণশীল এ মুসলিম জনশক্তির অবস্থান যতটা না গণতন্ত্রের প্রতি, তার চেয়ে বেশি এরদোগানের প্রতি। দলে দলে মহিলারাও রাস্তায় বেরিয়েছেন। হিজাব মাথায় দিয়ে কিংবা নিকাব পরে এরদোগানের পক্ষে প্লাকার্ড উঁচু করে ধরেছেন। তুরস্কের অন্তত ৮৫ হাজার মসজিদের মাইক থেকে এরদোগানের পক্ষে ঘোষণা এসেছে। অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ডের আঙ্কারা অফিসের পরিচালক ওজগুর আনলুহিসারকিলি বলেন, অভ্যুত্থানের বিপক্ষে যারা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের অধিকাংশের ভাষা গণতান্ত্রিক ছিল না।
প্রশ্ন উঠেছে, সেনাবাহিনীর ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পরিণতি কী? এখন কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরও বেশি ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবেন? নাকি নিজেকে দুর্বল নেতা মনে করে বিরোধীদের সঙ্গে সংহতির চেষ্টা করবেন? যেসব রাজনৈতিক দল এরদোগানের রাজনীতির অতিমাত্রায় বিরোধিতা করত, তারাও গণতন্ত্র রক্ষায় অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এতে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির একটা সুযোগ এরদোগানের সামনে রয়েছে। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, গণতন্ত্রের চেয়ে তুরস্কে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ আরও শক্তিশালী হয়েছে। এরদোগান জয়ী হলেও তুরস্কের ভবিষ্যৎ গন্তব্য কোথায়, তা অনিশ্চিত। তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ কিংবা লিবারেল মানুষ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছে, গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এরদোগানের বিশাল সমর্থক দল, যারা দেশজুড়ে রাজপথ দখলে নিয়েছিলেন, তারা ধর্মীয় স্লোগান দিয়েছেন এবং ইসলামী নেতার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। রক্ষণশীল এ মুসলিম জনশক্তির অবস্থান যতটা না গণতন্ত্রের প্রতি, তার চেয়ে বেশি এরদোগানের প্রতি। দলে দলে মহিলারাও রাস্তায় বেরিয়েছেন। হিজাব মাথায় দিয়ে কিংবা নিকাব পরে এরদোগানের পক্ষে প্লাকার্ড উঁচু করে ধরেছেন। তুরস্কের অন্তত ৮৫ হাজার মসজিদের মাইক থেকে এরদোগানের পক্ষে ঘোষণা এসেছে। অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ডের আঙ্কারা অফিসের পরিচালক ওজগুর আনলুহিসারকিলি বলেন, অভ্যুত্থানের বিপক্ষে যারা রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের অধিকাংশের ভাষা গণতান্ত্রিক ছিল না।
তারা সেসব লোক, যাদের জীবনে ইসলামের ভূমিকাই বড়। আবার অনেকেই ইসলাম পালন করেন না। তুর্কি জনগণ এখন দেখার অপেক্ষায় তাদের তেজস্বী ও ক্ষমতাবান নেতা এরদোগান দেশকে কোন পথে পরিচালিত করেন। রোববার এরদোগান তার ভাষণে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার দেশে ফের মৃত্যুদণ্ড চালু হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করা হয়েছিল। এরদোগান বলেছেন, ‘ওদের ট্যাংক আছে, কিন্তু আমাদের আছে ঈমান (বিশ্বাস)। তাই প্রতিশোধ নয়, প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কাজ করতে হবে যুক্তি এবং অভিজ্ঞতার আলোকে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সিনিয়র তুরস্ক বিশ্লেষক নাইজার গোকসেল বলেন, এখন প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সামনে দুটি পথ খোলা। হয়তো তিনি রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে নিজের স্বার্র্থের আলোকে পুনর্বিন্যস্ত করবেন। অথবা বিরোধী দলসহ সমাজের সব শ্রেণীপেশা মতাদর্শের মানুষের সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। তবে এরদোগানের অতীত ইতিহাস বলে, দ্বিতীয়টির তুলনায় প্রথম পথেই হাঁটবেন তিনি। আনলুহিসারকিলির মতে, সরকার এখন প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন আনতে পারবে। এতে তুরস্ক এমন দেশে পরিণত হবে, যেখানে ভিন্নমত কিংবা বিরোধী মতাদর্শের স্থান একেবারেই সংকুচিত হয়ে পড়বে।
No comments