অকেজো ইনডোর স্টেডিয়াম
সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ইনডোর স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের জলবায়ুতে সম্পূর্ণ অনুপযোগী। শীতপ্রধান দেশ আয়ারল্যান্ডের একটি স্টেডিয়ামের অনুকরণে তৈরি করায় গ্রীষ্মপ্রধান বাংলাদেশে তা অচল। গরমের মধ্যে খেলোয়াড়দের অনুশীলনের কষ্ট এবং অর্থের অপচয়ের খেসারত অবশ্যই দায়ী ব্যক্তিদের দিতে হবে। গরমকালে এর ভেতরের তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণভাবে বাইরের চেয়ে ভেতরের তাপমাত্রা থাকে ৫ ডিগ্রি বেশি। কারণ, এখানে বায়ুপ্রবাহের এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা নেই। আস্ত একটি ফুটবল মাঠের সমান এই ইনডোর স্টেডিয়ামের নকশা প্রণয়নের সময় এর বাস্তব উপযোগিতার দিকটি একেবারেই চিন্তা করা হয়নি। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, নির্মাণের আগে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও বিকেএসপির কয়েকজন কর্মকর্তা সরকারি খরচে ‘ধারণা নিতে’ আয়ারল্যান্ড সফর করেন। সেই রাজকীয় ধারণা অর্জনের ফল এখন হাতেনাতে ভোগ করছে বিকেএসপির খেলোয়াড়েরা।
স্পষ্টতই এটা শুধু আহাম্মকিই নয়, শাস্তিযোগ্য গাফিলতি। বাংলাদেশের মিরপুরেও ইনডোর স্টেডিয়াম আছে, প্রতিবেশী ভারতেও আছে। তা ছাড়া, অবাধ তথ্য ও জ্ঞান বিনিময়ের যুগে ‘ধারণা অর্জনে’ বিদেশ সফর অপ্রয়োজনীয়। তারপরও তাঁরা গেলেন এবং ফিরে এসে যে ধারণা প্রসব করলেন, তাতে যে কারোরই আক্কেল গুড়ুম হবে। যে প্রকৌশলীরা এর নকশা করেছেন, যে ঠিকাদার নির্মাণের দায়িত্বে, যে কর্মকর্তারা তদারকির দায়িত্বে ছিলেন, এই বিপত্তির দায় তাঁদের অবশ্যই নিতে হবে। উল্লেখ্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে কিছু সংস্কারে রাজি হয়েছে। কিন্তু তাতেই দায় খালাস হয়ে যায় না। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করা প্রয়োজন। ঢাকার উড়ালসড়কসহ একাধিক সরকারিভাবে নির্মিত স্থাপনায় বিদেশের অনুকরণ করতে গিয়ে মারাত্মক কারিগরি ভুলের ঘটনা স্মরণে রেখে বলতে হচ্ছে, ‘সত্যিই সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ!’ এসব ঘটনা সরকারি কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও নিষ্ঠা সম্পর্কে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করে।
No comments