আধিপত্য বাড়াতে হিজড়াদের হাতে অস্ত্র by রুদ্র মিজান
দেশের
বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবদ্ধভাবে চাঁদা আদায় করে হিজড়ারা। চাঁদা আদায়ের
শৃঙ্খলার জন্য রাজধানীকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছে তারা। এক-একটি এলাকা
নিয়ন্ত্রণ করেন হিজড়াদের এক-একজন নেতা। একজনের স্থানে অন্যরা যখন চাঁদা
আদায় করতে যান তখনই দুই গ্রুপের মধ্যে বিপত্তি দেখা দেয়। এ ছাড়াও আদায়কৃত
চাঁদার টাকা নিয়েও সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। ঘটছে গুলির ঘটনাও। প্রতি মাসে
রাজধানী থেকে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন হিজড়ারা। হিজড়াদের
নিয়ন্ত্রণকারী নেতারা বিলাসী জীবন-যাপন করেন। তারা নিজ অনুসারীদের
সুযোগ-সুবিধা দেখভাল করেন। চাঁদা আদায় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে
হিজড়াদের বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের মধ্যে শক্তি সঞ্চয় করে। আদায়কৃত চাঁদায় ভাগ
বসাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। অবৈধভাবে অস্ত্রও
সংগ্রহ করে তারা। কখনও কখনও সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে তাদের মধ্যে। প্রতি
মাসে এক একটি গ্রুপ চাঁদাবাজিসহ বিভিন্নভাবে কোটি টাকা আয় করে থাকে বলে
হিজড়া সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
২০০৪ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুসারে দেশে ১৫ হাজার হিজড়া রয়েছেন। তবে হিজড়াদের দাবি সারা দেশে অন্তত ৪০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। ঢাকাতেই রয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার। রাজধানী ঢাকা নিয়ন্ত্রণ করেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ময়না, নাজমা, কচি, স্বপ্না, দিপালী, আবুল ও মেসবাহ। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে স্বতন্ত্র গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে সহস্রাধিক হিজড়া রয়েছেন। গ্রুপে রয়েছে উপগ্রুপ। হিজড়ারা কোথায়, কিভাবে কাজ করবেন তার নির্দেশনা দেন নেতারা। এজন্য সিনিয়র স্থানীয় হিজড়া নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। ওই স্থানীয় সিনিয়র হিজড়ারাই তৃণমূল হিজড়াদের পরিচালনা করে থাকেন। তৃণমূল হিজড়াদের কাছ থেকে দৈনিক টাকার হিসাব বুঝে নেন স্থানীয় হিজড়া নেতারা। খরচের টাকা ছাড়া বাকি টাকা জমা থাকে স্থানীয় ওই নেতার কাছে। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে মাসে একাধিকবার বৈঠক হয় আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে। এ বিষয়ে বড় মগবাজারের বাসন্তি হিজড়া জানান, গুরুমায়েরা (নেতা) তাদের মা। নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। যে কারণে স্থানীয় নেতা পরে আঞ্চলিক নেতার কাছে টাকা জমা রাখা হয়।
সূত্রমতে, ভারতের দিপা এবং রেশমা নামে দুই হিজড়ার অনুসারী রয়েছে এ দেশে। দুই ভাগে বিভক্ত এই হিজড়াদের মধ্যে রয়েছে নানা উপগ্রুপ। হিজড়াদের যোগ্যতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করে কাজ করানো হয়। পৃথক এই তিনটি ভাগের নাম হচ্ছে, মাছুরা, ঘুঙুর শ্যামবাজার। দেখতে সুদর্শন মেয়ে হিজড়াদের রাখা হয় ঘুঙুর গ্রুপে। তাদের কাজ হচ্ছে নাচ, গান করে অর্থ উপার্জন করা। এই গ্রুপের একটি অংশ নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যায়। ছিনতাই ও অনৈতিক কাজ করে থাকে তাদের অনেকে। তাদের মধ্যে রয়েছে দুটি উপগ্রুপ। তুলনামূলক কম সুন্দরীদের একটি গ্রুপ দিনের বেলা বিভিন্ন বাসায় চাঁদা আদায় করতে যায়। তারা সেখানে নাচ-গান পরিবেশন করে থাকে। বিশেষ করে নতুন শিশুর জন্ম হলে ওই বাড়িতে ছুটে যায় তারা। তাদের ঢোলসহ দেশীয় কয়েক বাদ্যযন্ত্র থাকে। ঘুঙুর গ্রুপের সুন্দরী হিজড়ারা সাধারণত সন্ধ্যার পরপর বাসা থেকে বের হয়। অর্থের বিনিময়ে এক শ্রেণির পুরুষদের মনোরঞ্জন করে থাকে তারা। তাদের কেউ কেউ জোর করে পুরুষদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। মহাখালী মোড়, পল্লবী, বসিলা, সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকা, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিএফডিসি সংলগ্ন হাতিরঝিল, রেললাইন সংলগ্ন মগবাজার, পরীবাগ, রমনা পার্ক এলাকায় তাদের বিচরণ বেশি।
এ বিষয়ে গুলশান-১ এর বাসিন্দা হিজড়া মিষ্টি জানান, তিনি নিজে প্রায়ই অর্থের বিনিময়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। তবে এটাকে অনৈতিক মনে করেন না তিনি। বরং তিনি মনে করেন এটা এক ধরনের সেবা। মনোরঞ্জনের নামে ছিনতাইয়ের বিষয়ে মিষ্টি বলেন, বেগুনবাড়ি এলাকায় তিন পুরুষ তার এক সঙ্গীকে নিয়েছিলেন। ওই দিন মিষ্টি অন্যত্র ব্যস্ত ছিলেন। পরদিন তিন পুরুষের একজন ফোনে জানান, তার ১২শ’ টাকাসহ তার মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে গেছে ওই হিজড়া। মিষ্টি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, এতে তার খুব খারাপ লেগেছে।
শ্যামবাজার গ্রুপের হিজড়ারা বিভিন্ন হাটে-বাজারে চাঁদা তুলে থাকে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ওই প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করে আদায় করা হয়। কাওরানবাজারের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, প্রায়ই তাদের ব্যাংক ঘেরাও করে হিজড়ারা। মনে করে ব্যাংকে টাকা আছে, ঘেরাও করলেই তাদের দিয়ে দেয়া হবে। বুঝানোর পরও তারা বুঝতে চায় না। নিজ পকেট থেকে টাকা দিয়ে তাদের বিদায় করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব বিব্রত। একই অভিযোগ করেন ফার্মগেইটের পাঞ্জাবি ডটকমের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামীম। তিনি জানান, হিজড়ারা প্রায়ই মার্কেটে চাঁদা আদায় করতে যায়। না দিলে যেতে চায় না। দোকানের সামনে বসে থাকে। ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়েই তবে বিদায় করতে হয় তাদের। শ্যামবাজার গ্রুপের হিজড়ারারা শুধু মার্কেটে না তারা রাস্তাঘাটেও চাঁদা আদায় করে থাকেন। মতিঝিল, গুলিস্তান, বাবুবাজার, সদরঘাট, কমলাপুর রেলস্টেশন, রামপুরা, খামারবাড়ি, মিরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকেন তারা। মাছুরা গ্রুপটি খালে, বিলে, নদীতে চাঁদাবাজির কথা থাকলেও তারা এখন সর্বত্রই চাঁদাবাজি করে থাকেন। বিশেষ করে ঢাকায়। এ ছাড়া এই গ্রুপটি বাসায় রান্না-বান্নার কাজও করে থাকেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় হিজড়াদের মাসিক চাঁদার পরিমাণ কত তা নির্দিষ্টভাবে কেউ জানাতে পারেননি। তবে কোনো কোনো সূত্রমতে, পুরো রাজধানী থেকে মাসে কোটি আয় করে থাকেন হিজড়ারা। এই টাকায় ভাগ বসান স্থানীয় অনেক সন্ত্রাসী। তারা বিভিন্নভাবে হিজড়াদের সঙ্গে মিশে গেছেন। অনেক সন্ত্রাসী রয়েছেন যারা হিজড়াদের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে তাদের সঙ্গে বসবাস করেন। সূত্রে জানা গেছে, হিজড়াদের এক নেত্রীর বয়ফ্রেন্ড হিসেবে তার সঙ্গে থাকেন আরমান নামের এক যুবক। ওই যুবক এক সময়ে যাত্রাবাড়ীর এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়াও অনেকে ছদ্মবেশ ধারণ করে হিজড়া নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে রাজউক মার্কেটের পেছনে হিজড়াদের দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের জন্য হিজড়া নেতারা অস্ত্র সংগ্রহে রাখেন। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের। হিজড়াদের একটি গ্রুপ মাদক বিক্রয়েও সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হিজড়া নেতা আবুল জানান, অনেকেই অনেক খারাপ কাজ করছে। টাকা উত্তোলনের নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে। মাদকও বিক্রি করছে বলে শুনেছি। তবে কারা এতে জড়িত তা জানা নেই বলে জানান তিনি।
হিজড়া নেতাদের অনেকেই অঢেল সম্পত্তির মালিক। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। পুরান ঢাকায় মেসবাহ হিজড়ার অধীনে রয়েছে অর্ধশত হিজড়া। নানা ধরনের চাঁদাবাজি, অনৈতিক কাজই তাদের আয়ের উৎস। খিলক্ষেত এলাকায় নাজমার অধীনে রয়েছে অন্তত ৩৫ হিজড়া। তার রয়েছে বিপুল টাকা। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে সুদে টাকা দিয়ে থাকেন নাজমা। একইভাবে আরামবাগের আবুল হিজড়ার রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূূল্যের দুটি বাড়ি। দক্ষিণ গোড়ান সিদ্দিকবাজার এলাকার ময়না হিজড়ার রয়েছে বিলাস বহুল বাড়ি। খিলগাঁও এলাকার মাদক বিক্রেতা রেখা ও ফাতেমার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত ময়না হিজড়ার গ্রুপটি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, অপরাধী যেই হোক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু হিজড়াদের অপরাধ নিয়ে কেউ তেমন কোনো অভিযোগ করেন না বলে জানান তিনি।
২০০৪ সালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুসারে দেশে ১৫ হাজার হিজড়া রয়েছেন। তবে হিজড়াদের দাবি সারা দেশে অন্তত ৪০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। ঢাকাতেই রয়েছেন অন্তত ৩০ হাজার। রাজধানী ঢাকা নিয়ন্ত্রণ করেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ময়না, নাজমা, কচি, স্বপ্না, দিপালী, আবুল ও মেসবাহ। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে স্বতন্ত্র গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে সহস্রাধিক হিজড়া রয়েছেন। গ্রুপে রয়েছে উপগ্রুপ। হিজড়ারা কোথায়, কিভাবে কাজ করবেন তার নির্দেশনা দেন নেতারা। এজন্য সিনিয়র স্থানীয় হিজড়া নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। ওই স্থানীয় সিনিয়র হিজড়ারাই তৃণমূল হিজড়াদের পরিচালনা করে থাকেন। তৃণমূল হিজড়াদের কাছ থেকে দৈনিক টাকার হিসাব বুঝে নেন স্থানীয় হিজড়া নেতারা। খরচের টাকা ছাড়া বাকি টাকা জমা থাকে স্থানীয় ওই নেতার কাছে। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে মাসে একাধিকবার বৈঠক হয় আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে। এ বিষয়ে বড় মগবাজারের বাসন্তি হিজড়া জানান, গুরুমায়েরা (নেতা) তাদের মা। নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেন। যে কারণে স্থানীয় নেতা পরে আঞ্চলিক নেতার কাছে টাকা জমা রাখা হয়।
সূত্রমতে, ভারতের দিপা এবং রেশমা নামে দুই হিজড়ার অনুসারী রয়েছে এ দেশে। দুই ভাগে বিভক্ত এই হিজড়াদের মধ্যে রয়েছে নানা উপগ্রুপ। হিজড়াদের যোগ্যতা অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করে কাজ করানো হয়। পৃথক এই তিনটি ভাগের নাম হচ্ছে, মাছুরা, ঘুঙুর শ্যামবাজার। দেখতে সুদর্শন মেয়ে হিজড়াদের রাখা হয় ঘুঙুর গ্রুপে। তাদের কাজ হচ্ছে নাচ, গান করে অর্থ উপার্জন করা। এই গ্রুপের একটি অংশ নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে যায়। ছিনতাই ও অনৈতিক কাজ করে থাকে তাদের অনেকে। তাদের মধ্যে রয়েছে দুটি উপগ্রুপ। তুলনামূলক কম সুন্দরীদের একটি গ্রুপ দিনের বেলা বিভিন্ন বাসায় চাঁদা আদায় করতে যায়। তারা সেখানে নাচ-গান পরিবেশন করে থাকে। বিশেষ করে নতুন শিশুর জন্ম হলে ওই বাড়িতে ছুটে যায় তারা। তাদের ঢোলসহ দেশীয় কয়েক বাদ্যযন্ত্র থাকে। ঘুঙুর গ্রুপের সুন্দরী হিজড়ারা সাধারণত সন্ধ্যার পরপর বাসা থেকে বের হয়। অর্থের বিনিময়ে এক শ্রেণির পুরুষদের মনোরঞ্জন করে থাকে তারা। তাদের কেউ কেউ জোর করে পুরুষদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। মহাখালী মোড়, পল্লবী, বসিলা, সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকা, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিএফডিসি সংলগ্ন হাতিরঝিল, রেললাইন সংলগ্ন মগবাজার, পরীবাগ, রমনা পার্ক এলাকায় তাদের বিচরণ বেশি।
এ বিষয়ে গুলশান-১ এর বাসিন্দা হিজড়া মিষ্টি জানান, তিনি নিজে প্রায়ই অর্থের বিনিময়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। তবে এটাকে অনৈতিক মনে করেন না তিনি। বরং তিনি মনে করেন এটা এক ধরনের সেবা। মনোরঞ্জনের নামে ছিনতাইয়ের বিষয়ে মিষ্টি বলেন, বেগুনবাড়ি এলাকায় তিন পুরুষ তার এক সঙ্গীকে নিয়েছিলেন। ওই দিন মিষ্টি অন্যত্র ব্যস্ত ছিলেন। পরদিন তিন পুরুষের একজন ফোনে জানান, তার ১২শ’ টাকাসহ তার মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে গেছে ওই হিজড়া। মিষ্টি দুঃখ প্রকাশ করে জানান, এতে তার খুব খারাপ লেগেছে।
শ্যামবাজার গ্রুপের হিজড়ারা বিভিন্ন হাটে-বাজারে চাঁদা তুলে থাকে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ওই প্রতিষ্ঠান ঘেরাও করে আদায় করা হয়। কাওরানবাজারের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, প্রায়ই তাদের ব্যাংক ঘেরাও করে হিজড়ারা। মনে করে ব্যাংকে টাকা আছে, ঘেরাও করলেই তাদের দিয়ে দেয়া হবে। বুঝানোর পরও তারা বুঝতে চায় না। নিজ পকেট থেকে টাকা দিয়ে তাদের বিদায় করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব বিব্রত। একই অভিযোগ করেন ফার্মগেইটের পাঞ্জাবি ডটকমের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শামীম। তিনি জানান, হিজড়ারা প্রায়ই মার্কেটে চাঁদা আদায় করতে যায়। না দিলে যেতে চায় না। দোকানের সামনে বসে থাকে। ঝামেলা এড়াতে টাকা দিয়েই তবে বিদায় করতে হয় তাদের। শ্যামবাজার গ্রুপের হিজড়ারারা শুধু মার্কেটে না তারা রাস্তাঘাটেও চাঁদা আদায় করে থাকেন। মতিঝিল, গুলিস্তান, বাবুবাজার, সদরঘাট, কমলাপুর রেলস্টেশন, রামপুরা, খামারবাড়ি, মিরপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত চাঁদা আদায় করে থাকেন তারা। মাছুরা গ্রুপটি খালে, বিলে, নদীতে চাঁদাবাজির কথা থাকলেও তারা এখন সর্বত্রই চাঁদাবাজি করে থাকেন। বিশেষ করে ঢাকায়। এ ছাড়া এই গ্রুপটি বাসায় রান্না-বান্নার কাজও করে থাকেন। সব মিলিয়ে ঢাকায় হিজড়াদের মাসিক চাঁদার পরিমাণ কত তা নির্দিষ্টভাবে কেউ জানাতে পারেননি। তবে কোনো কোনো সূত্রমতে, পুরো রাজধানী থেকে মাসে কোটি আয় করে থাকেন হিজড়ারা। এই টাকায় ভাগ বসান স্থানীয় অনেক সন্ত্রাসী। তারা বিভিন্নভাবে হিজড়াদের সঙ্গে মিশে গেছেন। অনেক সন্ত্রাসী রয়েছেন যারা হিজড়াদের বয়ফ্রেন্ড হিসেবে তাদের সঙ্গে বসবাস করেন। সূত্রে জানা গেছে, হিজড়াদের এক নেত্রীর বয়ফ্রেন্ড হিসেবে তার সঙ্গে থাকেন আরমান নামের এক যুবক। ওই যুবক এক সময়ে যাত্রাবাড়ীর এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এ ছাড়াও অনেকে ছদ্মবেশ ধারণ করে হিজড়া নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে রাজউক মার্কেটের পেছনে হিজড়াদের দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের জন্য হিজড়া নেতারা অস্ত্র সংগ্রহে রাখেন। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের। হিজড়াদের একটি গ্রুপ মাদক বিক্রয়েও সংশ্লিষ্ট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে হিজড়া নেতা আবুল জানান, অনেকেই অনেক খারাপ কাজ করছে। টাকা উত্তোলনের নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করছে। মাদকও বিক্রি করছে বলে শুনেছি। তবে কারা এতে জড়িত তা জানা নেই বলে জানান তিনি।
হিজড়া নেতাদের অনেকেই অঢেল সম্পত্তির মালিক। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে। পুরান ঢাকায় মেসবাহ হিজড়ার অধীনে রয়েছে অর্ধশত হিজড়া। নানা ধরনের চাঁদাবাজি, অনৈতিক কাজই তাদের আয়ের উৎস। খিলক্ষেত এলাকায় নাজমার অধীনে রয়েছে অন্তত ৩৫ হিজড়া। তার রয়েছে বিপুল টাকা। বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে সুদে টাকা দিয়ে থাকেন নাজমা। একইভাবে আরামবাগের আবুল হিজড়ার রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূূল্যের দুটি বাড়ি। দক্ষিণ গোড়ান সিদ্দিকবাজার এলাকার ময়না হিজড়ার রয়েছে বিলাস বহুল বাড়ি। খিলগাঁও এলাকার মাদক বিক্রেতা রেখা ও ফাতেমার সঙ্গে ব্যবসায় জড়িত ময়না হিজড়ার গ্রুপটি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, অপরাধী যেই হোক অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু হিজড়াদের অপরাধ নিয়ে কেউ তেমন কোনো অভিযোগ করেন না বলে জানান তিনি।
No comments