৩৫ ফুট বরফের নীচে ছ’দিন চাপা পড়ে ফিরে আসাটাই ‘অলৌকিক’
মন্দিরের দরজায় মাথা কুটে চলা পরিবারের লোকেদের কাছে এটা পুনর্জন্ম!
দিল্লির সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকদের কপালে কিন্তু একরাশ চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের বক্তব্য, আগে মানুষটা বিছানায় উঠে বসুন। তার পরে না হয় ওই শব্দটা বলা যাবে!
বলবেনই বা কী করে? ছ’দিন টানা ৩৫ ফুট বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকা ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পাড় এখন গভীর কোমায়। লিভার ও কিডনি— কাজ করছে না। আক্রান্ত হয়েছেন নিউমোনিয়ায়। রক্তচাপও খুব কম। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক।
কিন্তু এত দিন বরফের তলায় চাপা পড়ে আদৌ বেঁচে রইলেন কী করে এই ল্যান্সনায়েক? সেটাই অবাক করছে সকলকে।
সিয়াচেনের সালতোরো রেঞ্জে যেখানে হনুমন্থাপ্পার সেনাচৌকি ছিল, তার নাম সোনাম। বিশ্বের সর্বোচ্চ হেলিপ্যাড এটি। ১৯ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় এমনিতেই শ্বাস নেওয়া এত কষ্টকর যে, উদ্ধারের সময় পোড় খাওয়া জওয়ানরা এক লপ্তে আধ ঘণ্টার বেশি কাজ চালাতে পারছিলেন না। এক দল হাঁফিয়ে পড়লে তাঁদের বিশ্রামে পাঠিয়ে অন্য দলকে নামাতে হচ্ছিল। হাজার দেড়েক ফুট উপরে টানা খাড়াই। সেখান থেকেই বরফের ধস নেমে এসেছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। সেনার চতুর্দশ কোরের কম্যান্ডার লেফটেনান্ট জেনারেল এস কে পাটিয়াল বলছেন, ‘‘এক কিলোমিটার চওড়া বরফের দেওয়াল আছড়ে পড়েছিল জওয়ানদের উপর। নামেই বরফ, আদতে কংক্রিটের থেকে কিছু কম নয়!’’
প্রাথমিক তল্লাশির পরে ১০ জওয়ানের কোনও সন্ধান না মেলায় ঘটনার এক দিন পরেই সেনা-কর্তারা বলে দিয়েছিলেন, বরফের স্তূপের নীচে কারওরই বেঁচে থাকার আশা নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে টুইট করে জওয়ানদের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছিলেন।
সেই ‘মৃত্যুসংবাদ’ ভুল প্রমাণ করেছেন হনুমন্থাপ্পা! প্রধানমন্ত্রী এ দিন হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন তাঁকে দেখতে। হনুমন্থাপ্পার বাকি ৯ সঙ্গীকে অবশ্য জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। সিয়াচেনে দিনের বেলায় ঝকঝকে রোদেও তাপমাত্রা শূন্যের ২৫ ডিগ্রি নীচে! রাতে তা নেমে যায় শূন্যের ৪৫ ডিগ্রি নীচে! সেখানেই ডট ও মিশা নামের দুই কুকুরকে নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল প্রায় ২০০ সেনার দল। বরফ খুঁড়তে খুঁড়তে ৩৫ ফুট নীচে নামতেই ‘মিরাক্ল’! ফাইবারের তাঁবুর নীচে একটা ফাঁকা জায়গায় পড়ে আছেন হনুমন্থাপ্পা! জীবিত!
সঙ্গীরা বলছেন, এটা সম্ভব হয়েছে স্রেফ হনুমন্থাপ্পার অদম্য মনের জোর আর প্রাণশক্তির জন্য। ২০০৩-এ ১৯ নম্বর মাদ্রাজ রেজিমেন্টে যোগ দেন হনুমন্থাপ্পা। ১৩ বছরের মধ্যে ১০ বছরই কাটিয়েছেন সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘চ্যালেঞ্জিং এরিয়া’য়। কাশ্মীরে জঙ্গিদমনের তাগিদে পোস্টিং চেয়ে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে। সেখানেও অদম্য সাহস দেখিয়ে সবার মন জিতে নেন বছর ৩৪-এর যুবক। সোমবার বরফের তলায় তাঁর নাড়ি চলছে বুঝেই উল্লাসে ফেটে পড়েন উদ্ধারকারীরা। তবে আচ্ছন্ন অবস্থা, শূন্য দৃষ্টি। চপারে তুলে হনুমন্থাপ্পাকে দ্রুত নিয় আসা হয় লাদাখের সেনা-ট্রানজিট হল্ট থাইস-এ। মঙ্গলবার সকালে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে দিল্লির সেনা হাসপাতাল।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ফেসবুক, টুইটার— সবার প্রার্থনা এখন শুধু কর্নাটকের বেতাদুর গ্রামের ছেলেটির জন্য। বাড়িতে তাঁর অপেক্ষায় আকুল বাবা, মা, স্ত্রী মহাদেবী এবং দেড় বছরের একরত্তি মেয়ে নেত্রা। গ্রামের মন্দিরে মাথা কুটে চলেছেন ওঁরা। মহাদেবীর কথায়, ‘‘ওঁর বেঁচে থাকার আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। এখন শুধু একবার চোখের দেখা দেখতে চাই।’’
সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকদলটি। উদ্ধারের সময় হনুমন্থাপ্পার শরীরে জলের পরিমাণ ছিল তলানিতে। রুপোলি রেখা একটাই, বরফের কামড় তাঁর শরীরে তেমন থাবা বসায়নি। চিকিৎসকরা এখন জওয়ানের শরীর গরম করে রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শরীরের যে সব অংশে রক্তচলাচল কার্যত বন্ধ, সেখানে রক্ত পাঠানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁদেরও প্রার্থনা, আর একটা ‘মিরাক্ল’ ঘটুক।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
দিল্লির সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকদের কপালে কিন্তু একরাশ চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের বক্তব্য, আগে মানুষটা বিছানায় উঠে বসুন। তার পরে না হয় ওই শব্দটা বলা যাবে!
বলবেনই বা কী করে? ছ’দিন টানা ৩৫ ফুট বরফের নীচে চাপা পড়ে থাকা ল্যান্সনায়েক হনুমন্থাপ্পা কোপ্পাড় এখন গভীর কোমায়। লিভার ও কিডনি— কাজ করছে না। আক্রান্ত হয়েছেন নিউমোনিয়ায়। রক্তচাপও খুব কম। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক।
কিন্তু এত দিন বরফের তলায় চাপা পড়ে আদৌ বেঁচে রইলেন কী করে এই ল্যান্সনায়েক? সেটাই অবাক করছে সকলকে।
সিয়াচেনের সালতোরো রেঞ্জে যেখানে হনুমন্থাপ্পার সেনাচৌকি ছিল, তার নাম সোনাম। বিশ্বের সর্বোচ্চ হেলিপ্যাড এটি। ১৯ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় এমনিতেই শ্বাস নেওয়া এত কষ্টকর যে, উদ্ধারের সময় পোড় খাওয়া জওয়ানরা এক লপ্তে আধ ঘণ্টার বেশি কাজ চালাতে পারছিলেন না। এক দল হাঁফিয়ে পড়লে তাঁদের বিশ্রামে পাঠিয়ে অন্য দলকে নামাতে হচ্ছিল। হাজার দেড়েক ফুট উপরে টানা খাড়াই। সেখান থেকেই বরফের ধস নেমে এসেছিল ৩ ফেব্রুয়ারি। সেনার চতুর্দশ কোরের কম্যান্ডার লেফটেনান্ট জেনারেল এস কে পাটিয়াল বলছেন, ‘‘এক কিলোমিটার চওড়া বরফের দেওয়াল আছড়ে পড়েছিল জওয়ানদের উপর। নামেই বরফ, আদতে কংক্রিটের থেকে কিছু কম নয়!’’
প্রাথমিক তল্লাশির পরে ১০ জওয়ানের কোনও সন্ধান না মেলায় ঘটনার এক দিন পরেই সেনা-কর্তারা বলে দিয়েছিলেন, বরফের স্তূপের নীচে কারওরই বেঁচে থাকার আশা নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে টুইট করে জওয়ানদের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছিলেন।
সেই ‘মৃত্যুসংবাদ’ ভুল প্রমাণ করেছেন হনুমন্থাপ্পা! প্রধানমন্ত্রী এ দিন হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন তাঁকে দেখতে। হনুমন্থাপ্পার বাকি ৯ সঙ্গীকে অবশ্য জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। সিয়াচেনে দিনের বেলায় ঝকঝকে রোদেও তাপমাত্রা শূন্যের ২৫ ডিগ্রি নীচে! রাতে তা নেমে যায় শূন্যের ৪৫ ডিগ্রি নীচে! সেখানেই ডট ও মিশা নামের দুই কুকুরকে নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল প্রায় ২০০ সেনার দল। বরফ খুঁড়তে খুঁড়তে ৩৫ ফুট নীচে নামতেই ‘মিরাক্ল’! ফাইবারের তাঁবুর নীচে একটা ফাঁকা জায়গায় পড়ে আছেন হনুমন্থাপ্পা! জীবিত!
সঙ্গীরা বলছেন, এটা সম্ভব হয়েছে স্রেফ হনুমন্থাপ্পার অদম্য মনের জোর আর প্রাণশক্তির জন্য। ২০০৩-এ ১৯ নম্বর মাদ্রাজ রেজিমেন্টে যোগ দেন হনুমন্থাপ্পা। ১৩ বছরের মধ্যে ১০ বছরই কাটিয়েছেন সেনাবাহিনীর পরিভাষায় ‘চ্যালেঞ্জিং এরিয়া’য়। কাশ্মীরে জঙ্গিদমনের তাগিদে পোস্টিং চেয়ে নিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলসে। সেখানেও অদম্য সাহস দেখিয়ে সবার মন জিতে নেন বছর ৩৪-এর যুবক। সোমবার বরফের তলায় তাঁর নাড়ি চলছে বুঝেই উল্লাসে ফেটে পড়েন উদ্ধারকারীরা। তবে আচ্ছন্ন অবস্থা, শূন্য দৃষ্টি। চপারে তুলে হনুমন্থাপ্পাকে দ্রুত নিয় আসা হয় লাদাখের সেনা-ট্রানজিট হল্ট থাইস-এ। মঙ্গলবার সকালে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে দিল্লির সেনা হাসপাতাল।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে ফেসবুক, টুইটার— সবার প্রার্থনা এখন শুধু কর্নাটকের বেতাদুর গ্রামের ছেলেটির জন্য। বাড়িতে তাঁর অপেক্ষায় আকুল বাবা, মা, স্ত্রী মহাদেবী এবং দেড় বছরের একরত্তি মেয়ে নেত্রা। গ্রামের মন্দিরে মাথা কুটে চলেছেন ওঁরা। মহাদেবীর কথায়, ‘‘ওঁর বেঁচে থাকার আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। এখন শুধু একবার চোখের দেখা দেখতে চাই।’’
সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছেন সেনা হাসপাতালের চিকিৎসকদলটি। উদ্ধারের সময় হনুমন্থাপ্পার শরীরে জলের পরিমাণ ছিল তলানিতে। রুপোলি রেখা একটাই, বরফের কামড় তাঁর শরীরে তেমন থাবা বসায়নি। চিকিৎসকরা এখন জওয়ানের শরীর গরম করে রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শরীরের যে সব অংশে রক্তচলাচল কার্যত বন্ধ, সেখানে রক্ত পাঠানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁদেরও প্রার্থনা, আর একটা ‘মিরাক্ল’ ঘটুক।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
No comments