গর্দভ সমাচার by আতাউর রহমান
গল্পটি
বহুল প্রচারিত: পাকিস্তান আমলের প্রথম দিকে দেশে আদমশুমারির সঙ্গে সঙ্গে
গর্দভশুমারিও চলছিল। তো তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত জেলা
প্রশাসক প্রাদেশিক সচিবালয়ে প্রেরিতব্য প্রতিবেদন হাতে হাতে জেলা
প্রশাসকের কাছে নিয়ে এসেছেন। দেখা গেল, কুমিল্লা জেলায় মোট গাধার সংখ্যা
৩৩১টি। জেলা প্রশাসক সহাস্যে বললেন, ‘সংখ্যাটি আরও ২ বাড়িয়ে ৩৩৩ করে দিন।
তাতে সংখ্যাটি সুন্দর ও সহজে স্মরণযোগ্য হবে। আর ওই দুটির একজন হলাম গিয়ে
আমি ও একজন আপনি।’
আর একাত্তরে করাচিতে বসে গল্প শুনেছিলাম: গাধার কণ্ঠস্বর হচ্ছে, ‘হে-হে, ম্যায়-ম্যায়।’ তো শয়তান নাকি এসে গাধাকে উর্দুতে বলে, ‘তোমহারা মালিক মর গায়া (তোমার মালিক মারা গেছেন)।’ তখন গাধা স্বাভাবিক ঔৎসুক্যবশত বলে, ‘হে-হে (কী বললে, কী বললে)?’ অতঃপর শয়তান জিজ্ঞেস করে, ‘উনকি বেওয়া কো শাদি করেগা কৌন (ওনার বিধবাকে কে বিয়ে করবে)?’ তখন গাধা বলতে থাকে, ‘ম্যায়-ম্যায়’; অর্থাৎ ‘আমি-আমি।’
যা হোক, গল্পটির এক বাংলা সংস্করণও আছে: ধোপার গাধাকে ধোপা ঠিকমতো খেতে দেয় না, কিন্তু কাজ করিয়ে নেয় অতিরিক্ত। তবু গাধাটা তার মালিককে ছেড়ে যায় না। এ ব্যাপারে অপর এক গাধা তাকে প্রশ্ন করলে প্রত্যুত্তরে সে বলল, ‘আমি একদিন শুনলাম মালিক তার বউকে বলছেন, আজকেও তরকারিতে লবণ বেশি দিয়েছিস। আরেক দিন যদি লবণ বেশি দিস তা হলে তোকে ওই গাধাটার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব। আমি আশায় আছি, খোদা চাহে তো আরেক দিন বউটা তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে দেবে।’
ধোপার গাধার গল্প বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল: শহরে গ্রীষ্মকালে মশার খুব উপদ্রব। তাই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে ধোপার গাধাটা দোয়া করে শীতকাল আসুক। কিন্তু শীতকাল এলে আশপাশের পুকুরে পানি শুকিয়ে যায় বলে বিরাট কাপড়ের বোঝা দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে-আসতে খুব কষ্ট হয়। তাই গাধা দোয়া করে গ্রীষ্মকাল আসুক। অতএব শীত-গ্রীষ্ম কোনো ঋতুতেই গাধার কপালে সুখ নেই। আর আমরা আমজনতা তথা ‘ম্যাংগো পাবলিক’ হচ্ছি গিয়ে সেই গাধা।
ভিন্নার্থেও আমরা গাধা। বাপ ছেলেকে নিয়ে গেছেন চিড়িয়াখানায়। ছেলের বয়স অল্প, তাই তার কৌতূহলের শেষ নেই। বাপকে সে প্রশ্ন করে করে অতিষ্ঠ করে তুলল। এক জায়গায় এসে একটি জন্তুকে দেখে সে বাপকে ‘ওটা কী’ জিজ্ঞেস করতেই তিনি জবাব দিলেন, ‘ওটা হচ্ছে গাধা’।
‘আর ওই যে গাধার পাশে দেখতে ঠিক গাধার মতো?’ ছেলে আবারও প্রশ্ন করল।
‘ওটা হচ্ছে গাধার বউ,’ বাপ প্রত্যুত্তরে বললেন।
‘গাধারাও কি বিয়ে করে?’ ছেলে এবারে শুধাল।
‘গাধারাই কেবল বিয়ে করে,’ বাপ একগাল হেসে জবাব দিলেন।
সে যাকগে। পাকিস্তান আমলে, এমনকি বাংলাদেশের সূচনালগ্নেও ঢাকার তোপখানা রোডে ছিল ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিসের অফিস কাম লাইব্রেরি। এটাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হতো ‘ইউ-এস-আই-এস (USIS)’। তো ষাটের দশকে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন ঠাট্টাচ্ছলে বলতাম ‘ইউএসআইএস’-এর মানে হচ্ছে ‘তুমি গাধা আমি গাধা।’ আর স্কুলে পড়াকালীন ইংরেজি Psychology শব্দের বানান যেমন মনে রাখার চেষ্টা করতাম ‘পিসি-চলো-যাই’ কথাটা স্মরণ রেখে, তেমনিভাবে Assassination শব্দের বানানের বেলায়ও স্মরণ রাখার চেষ্টা করতাম ‘গাধার পর গাধা, তারপর আমি, তারপর জাতি’ বাক্যাংশের সাহায্যে।
আর আরবি ভাষায় দুটি উল্লেখযোগ্য প্রবচন আছে এবং দুটিতেই গাধার সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়। একটি হচ্ছে, ‘আত্ তাক্রারু য়ুআল্লিমুল হিমার;’ যার মানে হচ্ছে: গাধা তো খুব নির্বোধ প্রাণী, যেটা পরিষ্কার পানিকেও ঘোলা করে খায়। কিন্তু সেই গাধাও একটা জিনিস বারবার করলে শিখে যায়। আরেকটি হচ্ছে, ‘আনা আমির, আন্তা আমির; মান্ ইয়াসুকাল হামির?’ অর্থাৎ ‘আমি প্রিন্স, আপনিও প্রিন্স; তা হলে গাধা চালাবে কেটা?’ তার মানে, সবাই প্রিন্স হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে সংসার চলে না।
এবারে গাধা–সংক্রান্ত বীরবলের গল্প: যুবরাজ সেলিমের ইচ্ছায় সম্রাট আকবর প্রাসাদের বাইরে সরোবরে গোসল করতে সেলিম বীরবলসহ রওনা দিয়েছেন। সম্রাট ও যুবরাজের সব পোশাক-পরিচ্ছদ বীরবলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। তাঁদের পোশাক তো আর অল্প হতে পারে না। কাজেই পথে যেতে যেতে সেলিম বীরবলকে উদ্দেশ করে টিপ্পনী কাটলেন, ‘আপনাকে দেখে একটি ভারবাহী গাধা মনে হচ্ছে।’ বীরবল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘তা তো মনে হবেই, আমি যে দুটি গাধার ভার বইছি।’ সেলিম তাতে অপমানিত বোধ করলেও সম্রাট হো-হো করে হেসে উঠেছিলেন।
তা হলে মোল্লা নাসিরুদ্দিনই বা বাদ যাবেন কেন? মোল্লার একমাত্র গাধাটা জনৈক প্রতিবেশী দিন কয়েকের জন্য ধার চেয়েছিলেন। মোল্লা বললেন, ‘কী করে দেব, ভাই? ওটা যে আমি আরেকজনকে ধার দিয়ে দিয়েছি।’ এমন সময় তাঁর গাধা আস্তাবল থেকে ডেকে উঠতেই প্রতিবেশী বললেন, ‘এই তো আপনার গাধার ডাক শুনছি; আর আপনি বলছেন ওটা নেই?’ মোল্লার তাৎক্ষণিক উত্তর: ‘আমার কথার চেয়ে গাধার ডাক যে লোক বেশি বিশ্বাস করে, তাকে গাধা ধার দেওয়া যায় না। আপনি এখন আসতে পারেন।’
ইশপের নীতিগল্পেও গাধা যথারীতি বিদ্যমান। বাপ ও বেটা তাদের গাধাটাকে বিক্রি করার জন্য হাটে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে ভিন্ন লোকজনের কথামৃত শুনতে ও রাখতে গিয়ে তাঁরা প্রথমে পালাক্রমে ও পরে উভয়ে একসঙ্গে গাধার পিঠে সওয়ার হলেন। অতঃপর প্রায়শ্চিত্ত করতে গাধার পাগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে বাঁশ ঢুকিয়ে বয়ে নিতে গিয়ে হাটসংলগ্ন সাঁকো পাড়ি দেওয়ার সময় গাধাটা দড়িসুদ্ধ পানিতে পড়ে স্রোতের মুখে ভেসে গেল। বাপ-বেটা তখন সম্যক উপলব্ধি করতে পারলেন, সংসারে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গেলে কাউকেই সন্তুষ্ট করা যায় না। ইশপের সেই গল্পটি অতিশয় জীবনধর্মী ও জনপ্রিয়।
ভারতীয় সাংবাদিক ও সুলেখক কৃষণ চন্দরের আমি গাধা বলছি শীর্ষক বইটি আমি বহু বছর আগে পড়েছি। মানুষের জীবনের ভালোমানুষি ও বোকামির অপর নাম হচ্ছে গাধা। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গাধা তার নিজস্ব জবানিতে শুনিয়েছে এক শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি। কৃষণ চন্দর যথার্থই বুঝিয়েছেন, মানুষ যদি গাধার ভাষায় কথা বলতে পারে, তা হলে গাধা মানুষের ভাষায় কথা বলতে দোষ বা আশ্চর্যের কিছুই নেই।
প্রিয় পাঠক! পত্রিকার পাতায় বেরিয়েছে, দেশে গাধার সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকার বিদেশ থেকে গাধা আমদানির চিন্তাভাবনা করছে। তা বেশ। তবে আমার মতে, পাকিস্তানে গাধার অভাব নেই, ওখান থেকে গাধা আমদানি করাই সর্বোত্তম।
আতাউর রহমান: রম্যলেখক৷ ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক৷
আর একাত্তরে করাচিতে বসে গল্প শুনেছিলাম: গাধার কণ্ঠস্বর হচ্ছে, ‘হে-হে, ম্যায়-ম্যায়।’ তো শয়তান নাকি এসে গাধাকে উর্দুতে বলে, ‘তোমহারা মালিক মর গায়া (তোমার মালিক মারা গেছেন)।’ তখন গাধা স্বাভাবিক ঔৎসুক্যবশত বলে, ‘হে-হে (কী বললে, কী বললে)?’ অতঃপর শয়তান জিজ্ঞেস করে, ‘উনকি বেওয়া কো শাদি করেগা কৌন (ওনার বিধবাকে কে বিয়ে করবে)?’ তখন গাধা বলতে থাকে, ‘ম্যায়-ম্যায়’; অর্থাৎ ‘আমি-আমি।’
যা হোক, গল্পটির এক বাংলা সংস্করণও আছে: ধোপার গাধাকে ধোপা ঠিকমতো খেতে দেয় না, কিন্তু কাজ করিয়ে নেয় অতিরিক্ত। তবু গাধাটা তার মালিককে ছেড়ে যায় না। এ ব্যাপারে অপর এক গাধা তাকে প্রশ্ন করলে প্রত্যুত্তরে সে বলল, ‘আমি একদিন শুনলাম মালিক তার বউকে বলছেন, আজকেও তরকারিতে লবণ বেশি দিয়েছিস। আরেক দিন যদি লবণ বেশি দিস তা হলে তোকে ওই গাধাটার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব। আমি আশায় আছি, খোদা চাহে তো আরেক দিন বউটা তরকারিতে লবণ বেশি দিয়ে দেবে।’
ধোপার গাধার গল্প বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল: শহরে গ্রীষ্মকালে মশার খুব উপদ্রব। তাই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে ধোপার গাধাটা দোয়া করে শীতকাল আসুক। কিন্তু শীতকাল এলে আশপাশের পুকুরে পানি শুকিয়ে যায় বলে বিরাট কাপড়ের বোঝা দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে-আসতে খুব কষ্ট হয়। তাই গাধা দোয়া করে গ্রীষ্মকাল আসুক। অতএব শীত-গ্রীষ্ম কোনো ঋতুতেই গাধার কপালে সুখ নেই। আর আমরা আমজনতা তথা ‘ম্যাংগো পাবলিক’ হচ্ছি গিয়ে সেই গাধা।
ভিন্নার্থেও আমরা গাধা। বাপ ছেলেকে নিয়ে গেছেন চিড়িয়াখানায়। ছেলের বয়স অল্প, তাই তার কৌতূহলের শেষ নেই। বাপকে সে প্রশ্ন করে করে অতিষ্ঠ করে তুলল। এক জায়গায় এসে একটি জন্তুকে দেখে সে বাপকে ‘ওটা কী’ জিজ্ঞেস করতেই তিনি জবাব দিলেন, ‘ওটা হচ্ছে গাধা’।
‘আর ওই যে গাধার পাশে দেখতে ঠিক গাধার মতো?’ ছেলে আবারও প্রশ্ন করল।
‘ওটা হচ্ছে গাধার বউ,’ বাপ প্রত্যুত্তরে বললেন।
‘গাধারাও কি বিয়ে করে?’ ছেলে এবারে শুধাল।
‘গাধারাই কেবল বিয়ে করে,’ বাপ একগাল হেসে জবাব দিলেন।
সে যাকগে। পাকিস্তান আমলে, এমনকি বাংলাদেশের সূচনালগ্নেও ঢাকার তোপখানা রোডে ছিল ইউনাইটেড স্টেটস ইনফরমেশন সার্ভিসের অফিস কাম লাইব্রেরি। এটাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হতো ‘ইউ-এস-আই-এস (USIS)’। তো ষাটের দশকে আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন ঠাট্টাচ্ছলে বলতাম ‘ইউএসআইএস’-এর মানে হচ্ছে ‘তুমি গাধা আমি গাধা।’ আর স্কুলে পড়াকালীন ইংরেজি Psychology শব্দের বানান যেমন মনে রাখার চেষ্টা করতাম ‘পিসি-চলো-যাই’ কথাটা স্মরণ রেখে, তেমনিভাবে Assassination শব্দের বানানের বেলায়ও স্মরণ রাখার চেষ্টা করতাম ‘গাধার পর গাধা, তারপর আমি, তারপর জাতি’ বাক্যাংশের সাহায্যে।
আর আরবি ভাষায় দুটি উল্লেখযোগ্য প্রবচন আছে এবং দুটিতেই গাধার সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়। একটি হচ্ছে, ‘আত্ তাক্রারু য়ুআল্লিমুল হিমার;’ যার মানে হচ্ছে: গাধা তো খুব নির্বোধ প্রাণী, যেটা পরিষ্কার পানিকেও ঘোলা করে খায়। কিন্তু সেই গাধাও একটা জিনিস বারবার করলে শিখে যায়। আরেকটি হচ্ছে, ‘আনা আমির, আন্তা আমির; মান্ ইয়াসুকাল হামির?’ অর্থাৎ ‘আমি প্রিন্স, আপনিও প্রিন্স; তা হলে গাধা চালাবে কেটা?’ তার মানে, সবাই প্রিন্স হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে সংসার চলে না।
এবারে গাধা–সংক্রান্ত বীরবলের গল্প: যুবরাজ সেলিমের ইচ্ছায় সম্রাট আকবর প্রাসাদের বাইরে সরোবরে গোসল করতে সেলিম বীরবলসহ রওনা দিয়েছেন। সম্রাট ও যুবরাজের সব পোশাক-পরিচ্ছদ বীরবলের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হলো। তাঁদের পোশাক তো আর অল্প হতে পারে না। কাজেই পথে যেতে যেতে সেলিম বীরবলকে উদ্দেশ করে টিপ্পনী কাটলেন, ‘আপনাকে দেখে একটি ভারবাহী গাধা মনে হচ্ছে।’ বীরবল সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘তা তো মনে হবেই, আমি যে দুটি গাধার ভার বইছি।’ সেলিম তাতে অপমানিত বোধ করলেও সম্রাট হো-হো করে হেসে উঠেছিলেন।
তা হলে মোল্লা নাসিরুদ্দিনই বা বাদ যাবেন কেন? মোল্লার একমাত্র গাধাটা জনৈক প্রতিবেশী দিন কয়েকের জন্য ধার চেয়েছিলেন। মোল্লা বললেন, ‘কী করে দেব, ভাই? ওটা যে আমি আরেকজনকে ধার দিয়ে দিয়েছি।’ এমন সময় তাঁর গাধা আস্তাবল থেকে ডেকে উঠতেই প্রতিবেশী বললেন, ‘এই তো আপনার গাধার ডাক শুনছি; আর আপনি বলছেন ওটা নেই?’ মোল্লার তাৎক্ষণিক উত্তর: ‘আমার কথার চেয়ে গাধার ডাক যে লোক বেশি বিশ্বাস করে, তাকে গাধা ধার দেওয়া যায় না। আপনি এখন আসতে পারেন।’
ইশপের নীতিগল্পেও গাধা যথারীতি বিদ্যমান। বাপ ও বেটা তাদের গাধাটাকে বিক্রি করার জন্য হাটে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে ভিন্ন লোকজনের কথামৃত শুনতে ও রাখতে গিয়ে তাঁরা প্রথমে পালাক্রমে ও পরে উভয়ে একসঙ্গে গাধার পিঠে সওয়ার হলেন। অতঃপর প্রায়শ্চিত্ত করতে গাধার পাগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে বাঁশ ঢুকিয়ে বয়ে নিতে গিয়ে হাটসংলগ্ন সাঁকো পাড়ি দেওয়ার সময় গাধাটা দড়িসুদ্ধ পানিতে পড়ে স্রোতের মুখে ভেসে গেল। বাপ-বেটা তখন সম্যক উপলব্ধি করতে পারলেন, সংসারে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে গেলে কাউকেই সন্তুষ্ট করা যায় না। ইশপের সেই গল্পটি অতিশয় জীবনধর্মী ও জনপ্রিয়।
ভারতীয় সাংবাদিক ও সুলেখক কৃষণ চন্দরের আমি গাধা বলছি শীর্ষক বইটি আমি বহু বছর আগে পড়েছি। মানুষের জীবনের ভালোমানুষি ও বোকামির অপর নাম হচ্ছে গাধা। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি গাধা তার নিজস্ব জবানিতে শুনিয়েছে এক শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি। কৃষণ চন্দর যথার্থই বুঝিয়েছেন, মানুষ যদি গাধার ভাষায় কথা বলতে পারে, তা হলে গাধা মানুষের ভাষায় কথা বলতে দোষ বা আশ্চর্যের কিছুই নেই।
প্রিয় পাঠক! পত্রিকার পাতায় বেরিয়েছে, দেশে গাধার সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকার বিদেশ থেকে গাধা আমদানির চিন্তাভাবনা করছে। তা বেশ। তবে আমার মতে, পাকিস্তানে গাধার অভাব নেই, ওখান থেকে গাধা আমদানি করাই সর্বোত্তম।
আতাউর রহমান: রম্যলেখক৷ ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক৷
No comments