সংবিধানের অবমাননায় কেন এমন নিয়োগ? by ইকতেদার আহমেদ
সদ্য
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর যে সংবিধান
প্রণয়ন করা হয় এটি জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিতে রচিত। উচ্চাদালতের
বিচারকদের সকল ধরনের প্রলোভনের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য ৭২’র সংবিধানে তাঁদের
অবসর পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের কর্মে যে কোনো ধরনের নিয়োগ বারিত ছিল।
পরবর্তীতে দেশ সামরিক শাসনের কবলে পড়লে দ্বিতীয় ঘোষণাপত্র (পঞ্চদশ সংশোধন)
আদেশ, ১৯৭৮ দ্বারা সংবিধানের ৯৯ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করত: উচ্চ আদালতের
বিচারকদের অবসর পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের লাভজনক বিচারিক বা আধা-বিচারিক পদে
নিয়োগের জন্য এবং হাইকোর্ট বিভাগ হতে অবসর পরবর্তী আপিল বিভাগে ওকালতি করার
জন্য যোগ্য করা হয়। উক্ত সামরিক ফরমানটি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের
অংশ হিসেবে স্থায়ী রূপ পায়। অতঃপর সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসর পরবর্তী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান
উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে আসীন হওয়ার জন্য যোগ্য করা হয়। উল্লেখ্য, উভয় পদই
প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হলে দেশের সর্বমহল হতে ৭২’র সংবিধানের প্রত্যাবর্তনের দাবি ওঠে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় ৭২’র সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের কথা বলে আসছিল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল পরবর্তী পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তনের আবশ্যকতা দেখা দিলে দেশের সাধারণ জনমানুষের মধ্যে ৭২’র সংবিধানে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু সংশোধনী পরবর্তী দেখা গেল উচ্চাদালতের বিচারকদের অবসর পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগের জন্য অযোগ্য করা হলেও সামরিক ফরমানের মাধ্যমে প্রবর্তিত বিচারিক ও আধা-বিচারিক পদে যোগদান ও হাইকোর্ট বিভাগ হতে অবসর পরবর্তী আপিল বিভাগে ওকালতির বিধান অক্ষুণ্ন রাখা হয়।
উচ্চ আদালতের বিচারকরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ব্যত্যয়ে অবসর পরবর্তী বেতনের সমপরিমাণ অবসর ভাতা প্রাপ্ত হন। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী অবসর পরবর্তী চুক্তিভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত হলে তিনি তাঁর অবসর ভাতা হিসেবে বেতনের যে পরিমাণ অর্থগ্রহণ করেন তা বিয়োজনপূর্বক তাঁর চুক্তিভিত্তিক বেতন নির্ধারণ করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানে এখনও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ন্যায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসর পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ দেয়া হলে তাঁদের বেতন হতে যে পরিমাণ অর্থ অবসর ভাতা হিসেবে নেয়া হয় তা বিয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের দেশের চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো। এটি একই পদ হতে দু’বার বেতন গ্রহণের সমরূপ যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর্থিক নিয়মের পরিপন্থি।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের পদ বিচারিক বা আধা-বিচারিক পদ নয়। এ কারণে উভয় প্রতিষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নিয়োগের সুযোগ নেই। এ ধরনের নিয়োগ একদিকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি অপরদিকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নব সংযোজিত অনুচ্ছেদ নং ৭ক(১)(খ) এর বিধান অনুযায়ী সংবিধান বা এর কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করার সমরূপ। এ ধরনের কাজে সাজার বিধান কি সংবিধানে তা উল্লেখ রয়েছে। এরপরও কিভাবে এমন নিয়োগ চলছে তাতে হতবাক ও বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে কি!
(সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক)
E-mail: iktederahmed@yahoo.com
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হলে দেশের সর্বমহল হতে ৭২’র সংবিধানের প্রত্যাবর্তনের দাবি ওঠে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় ৭২’র সংবিধানে প্রত্যাবর্তনের কথা বলে আসছিল। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল পরবর্তী পঞ্চদশ সংশোধনী প্রবর্তনের আবশ্যকতা দেখা দিলে দেশের সাধারণ জনমানুষের মধ্যে ৭২’র সংবিধানে প্রত্যাবর্তন বিষয়ে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু সংশোধনী পরবর্তী দেখা গেল উচ্চাদালতের বিচারকদের অবসর পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পদে নিয়োগের জন্য অযোগ্য করা হলেও সামরিক ফরমানের মাধ্যমে প্রবর্তিত বিচারিক ও আধা-বিচারিক পদে যোগদান ও হাইকোর্ট বিভাগ হতে অবসর পরবর্তী আপিল বিভাগে ওকালতির বিধান অক্ষুণ্ন রাখা হয়।
উচ্চ আদালতের বিচারকরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ব্যত্যয়ে অবসর পরবর্তী বেতনের সমপরিমাণ অবসর ভাতা প্রাপ্ত হন। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী অবসর পরবর্তী চুক্তিভিত্তিতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত হলে তিনি তাঁর অবসর ভাতা হিসেবে বেতনের যে পরিমাণ অর্থগ্রহণ করেন তা বিয়োজনপূর্বক তাঁর চুক্তিভিত্তিক বেতন নির্ধারণ করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানে এখনও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ন্যায় উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসর পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ দেয়া হলে তাঁদের বেতন হতে যে পরিমাণ অর্থ অবসর ভাতা হিসেবে নেয়া হয় তা বিয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের দেশের চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো। এটি একই পদ হতে দু’বার বেতন গ্রহণের সমরূপ যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আর্থিক নিয়মের পরিপন্থি।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের পদ বিচারিক বা আধা-বিচারিক পদ নয়। এ কারণে উভয় প্রতিষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের কোন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নিয়োগের সুযোগ নেই। এ ধরনের নিয়োগ একদিকে অসাংবিধানিক ও বেআইনি অপরদিকে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নব সংযোজিত অনুচ্ছেদ নং ৭ক(১)(খ) এর বিধান অনুযায়ী সংবিধান বা এর কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করার সমরূপ। এ ধরনের কাজে সাজার বিধান কি সংবিধানে তা উল্লেখ রয়েছে। এরপরও কিভাবে এমন নিয়োগ চলছে তাতে হতবাক ও বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে কি!
(সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক)
E-mail: iktederahmed@yahoo.com
No comments