ভিন্নমত মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়
বৃহস্পতিবার
দু’ ঘন্টা ধরে চলছিল বিক্ষোভ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ঢল যেন থামছিলই না।
তারা দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ও ভারতের আরও ছয়টি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতিবাদকারীদের হাতে হাতে লাল গোলাপ আর
জাফরন। সঙ্গে গর্জে উঠছে গলা, তবে ধীরলয়ে, বলিষ্ঠ কণ্ঠে। মিছিল থেকে
শ্লোগান উঠছে স্বাধীনতা, সমতা আর স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকারের দাবিতে।
অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড। একটিতে লেখা: ‘ভিন্নমত মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়’।
কিন্তু, বিজেপি’র বিষমাখা মিথ্যা আর সহিংস ছদ্ম-জাতীয়তাবাদী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এই ফুল আর আশার বাণী বড্ড অপর্যাপ্ত। জাতপ্রথা, লিঙ্গভিত্তিক হাউজিং নিতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বিজেপি-পন্থীদের নিয়োগ, ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনকে দিন কেবল সোচ্চার হয়েছে। বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) হর্তাকর্তারা সংলাপের পন্থা অবলম্বন করেননি। বরং নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। সমঝোতার পথে আসেন নি, দমনপীড়নকে হাতিয়ার করেছেন।
১৩ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে গ্রেপ্তার হন জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট কানাইয়া কুমার। অবহেলিত একটি জাত থেকে তার উঠে আসা। আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেয়ার তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার দায়ে আফজাল গুরুর ফাঁসি হয়েছিল। এই ফাঁসি ও মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এখনও বড় একটি বিতর্কের বিষয়।
কানাইয়া কুমারকে গ্রেপ্তারের পরই বিজেপির নেতারা ঘোষণা দিলেন, সরকার কোন ‘দেশবিরোধী’ কর্মকা- সহ্য করবে না। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ করলেন, দাবি জানালেন জেএনইউ বন্ধ করে দিতে। নিউজএক্স নামের একটি টিভি চ্যানেল প্রচার করে একটি ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখানো হয়, কানাইয়া কুমার বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক শ্লোগান দিচ্ছেন। টাইমস নাউ টিভি’র এক উপস্থাপক বাগাড়ম্বরের সঙ্গে দাবি করলেন, ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক উমর খালিদ একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও ‘দেশপ্রেমহীন’ ব্যক্তি।
এবিপি নিউজ পরে প্রমাণ করেছে, ওই ফুটেজগুলো ছিল জাল! হ্যাঁ, কিছু প্রতিবাদকারী চিৎকার করে বলেছিল: ‘যত আফজালকে তোমরা খুন করো, তত আফজালের জন্ম এ মাটিতে হবে’। এমনকি ভারতের পতনের ডাক দিয়েছেন তারা। তবে এটি ¯পষ্ট নয়, উপস্থিত শিক্ষার্থীরাই এমন করছিলেন, নাকি বহিরাগতরা। তবে এদের মধ্যে কানাইয়া কুমার ছিলেন না।
নিজের বক্তৃতায় কানাইয়া কুমার বলেছিলেন, ‘আমরা এ দেশের। ভারতের মাটিকে আমরা ভালোবাসি। আমরা ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষের জন্য লড়াই করি, যারা গরিব।’ এ সময় তিনি ‘আজাদি’ বা স্বাধীনতা দাবি করেন। কিন্তু, এ শব্দটিই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নারী অধিকারকর্মীদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় শব্দ।
রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা নিয়েও কথা বলেছিলেন কুমার। হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দলিত ছাত্রটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপ সহ্যের পর আত্মহত্যা করেন গত মাসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছিল। দলিত শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে এক ডানপন্থী ছাত্রনেতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে কানাইয়া কুমারকে শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হলে, তার ওপর আক্রমণ হয়। তারও কয়েকদিন আগে, একই আদালতে সাংবাদিক ও জেএনইউ শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল আইনজীবী। পুলিশ ওই সহিংসতা থামাতে কিছুই করেনি। ওই আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়া আইনজীবী বিক্রম চৌহান নিজেকে বিজেপি’র কর্মী হিসেবে দাবি করেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং, ইন্ডিয়া গেট-মুখী স্বঘোষিত দেশপ্রেমিকদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি। বার্তাটা পরিষ্কার: উগ্র-জাতীয়তাবাদের নামে সহিংসতা হলে, সেটি মেনে নেয়া হবে। আদালতও আর নিরাপদ জায়গা নয়।
তবে অস্বস্তি শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আমজনতার মাঝেও ছড়িয়েছে। বৃহ¯পতিবার দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। শামিল হয়েছিল অফিস কর্মী থেকে শুরু করে অবসরভোগী কর্মকর্তা, আইনজীবী, তৃণমুলের জাতপ্রথা বিরোধী কর্মী, স্থানীয় শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো।
রোহিত ভেমুলার ‘সুইসাইড লেটারে’ লেখা ছিল: ‘একজন মানুষের মর্যাদাকে তার পরিচয়ে অবনমিত করা হয়েছে। তার পরিচয় হলো, একটি ভোট, একটি সংখ্যা, একটি বস্তু। কখনও কোন মানুষকে একটি মনন হিসেবে বিচার করা হয়নি।’
বৃহ¯পতিবারের প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোস্টারে ভেমুলার সেই কথাগুলোই ছিল, তবে হতাশার অক্ষরকে সেখানে বদলে দিয়েছে আশার বর্ণমালা। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা আর কেবল একটি ভোট নই, সংখ্যা নই, নই কোন বস্তু। আমরা তরুণ। ভবিষ্যৎ আমাদেরই।’ কিন্তু সত্যিকার গণতন্ত্র আর সমতার এই কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ এখন রুদ্ধ।
(নিউ ইয়র্ক টাইমস)
কিন্তু, বিজেপি’র বিষমাখা মিথ্যা আর সহিংস ছদ্ম-জাতীয়তাবাদী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে এই ফুল আর আশার বাণী বড্ড অপর্যাপ্ত। জাতপ্রথা, লিঙ্গভিত্তিক হাউজিং নিতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বিজেপি-পন্থীদের নিয়োগ, ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দিনকে দিন কেবল সোচ্চার হয়েছে। বিজেপি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) হর্তাকর্তারা সংলাপের পন্থা অবলম্বন করেননি। বরং নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছেন। সমঝোতার পথে আসেন নি, দমনপীড়নকে হাতিয়ার করেছেন।
১৩ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে গ্রেপ্তার হন জেএনইউ ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট কানাইয়া কুমার। অবহেলিত একটি জাত থেকে তার উঠে আসা। আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেয়ার তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার দায়ে আফজাল গুরুর ফাঁসি হয়েছিল। এই ফাঁসি ও মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রাখতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এখনও বড় একটি বিতর্কের বিষয়।
কানাইয়া কুমারকে গ্রেপ্তারের পরই বিজেপির নেতারা ঘোষণা দিলেন, সরকার কোন ‘দেশবিরোধী’ কর্মকা- সহ্য করবে না। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র থাকার অভিযোগ করলেন, দাবি জানালেন জেএনইউ বন্ধ করে দিতে। নিউজএক্স নামের একটি টিভি চ্যানেল প্রচার করে একটি ভিডিও ফুটেজ। সেখানে দেখানো হয়, কানাইয়া কুমার বিভিন্ন রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক শ্লোগান দিচ্ছেন। টাইমস নাউ টিভি’র এক উপস্থাপক বাগাড়ম্বরের সঙ্গে দাবি করলেন, ওই অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক উমর খালিদ একজন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ ও ‘দেশপ্রেমহীন’ ব্যক্তি।
এবিপি নিউজ পরে প্রমাণ করেছে, ওই ফুটেজগুলো ছিল জাল! হ্যাঁ, কিছু প্রতিবাদকারী চিৎকার করে বলেছিল: ‘যত আফজালকে তোমরা খুন করো, তত আফজালের জন্ম এ মাটিতে হবে’। এমনকি ভারতের পতনের ডাক দিয়েছেন তারা। তবে এটি ¯পষ্ট নয়, উপস্থিত শিক্ষার্থীরাই এমন করছিলেন, নাকি বহিরাগতরা। তবে এদের মধ্যে কানাইয়া কুমার ছিলেন না।
নিজের বক্তৃতায় কানাইয়া কুমার বলেছিলেন, ‘আমরা এ দেশের। ভারতের মাটিকে আমরা ভালোবাসি। আমরা ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষের জন্য লড়াই করি, যারা গরিব।’ এ সময় তিনি ‘আজাদি’ বা স্বাধীনতা দাবি করেন। কিন্তু, এ শব্দটিই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও নারী অধিকারকর্মীদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় শব্দ।
রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যা নিয়েও কথা বলেছিলেন কুমার। হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দলিত ছাত্রটি কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপ সহ্যের পর আত্মহত্যা করেন গত মাসে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বৃত্তি বন্ধ করে দিয়েছিল। দলিত শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে এক ডানপন্থী ছাত্রনেতার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তাকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল।
গত সপ্তাহে কানাইয়া কুমারকে শুনানির জন্য নিয়ে যাওয়া হলে, তার ওপর আক্রমণ হয়। তারও কয়েকদিন আগে, একই আদালতে সাংবাদিক ও জেএনইউ শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল আইনজীবী। পুলিশ ওই সহিংসতা থামাতে কিছুই করেনি। ওই আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়া আইনজীবী বিক্রম চৌহান নিজেকে বিজেপি’র কর্মী হিসেবে দাবি করেন। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং, ইন্ডিয়া গেট-মুখী স্বঘোষিত দেশপ্রেমিকদের একটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন তিনি। বার্তাটা পরিষ্কার: উগ্র-জাতীয়তাবাদের নামে সহিংসতা হলে, সেটি মেনে নেয়া হবে। আদালতও আর নিরাপদ জায়গা নয়।
তবে অস্বস্তি শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আমজনতার মাঝেও ছড়িয়েছে। বৃহ¯পতিবার দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। শামিল হয়েছিল অফিস কর্মী থেকে শুরু করে অবসরভোগী কর্মকর্তা, আইনজীবী, তৃণমুলের জাতপ্রথা বিরোধী কর্মী, স্থানীয় শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো।
রোহিত ভেমুলার ‘সুইসাইড লেটারে’ লেখা ছিল: ‘একজন মানুষের মর্যাদাকে তার পরিচয়ে অবনমিত করা হয়েছে। তার পরিচয় হলো, একটি ভোট, একটি সংখ্যা, একটি বস্তু। কখনও কোন মানুষকে একটি মনন হিসেবে বিচার করা হয়নি।’
বৃহ¯পতিবারের প্রতিবাদে একদল শিক্ষার্থীর হাতে থাকা পোস্টারে ভেমুলার সেই কথাগুলোই ছিল, তবে হতাশার অক্ষরকে সেখানে বদলে দিয়েছে আশার বর্ণমালা। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা আর কেবল একটি ভোট নই, সংখ্যা নই, নই কোন বস্তু। আমরা তরুণ। ভবিষ্যৎ আমাদেরই।’ কিন্তু সত্যিকার গণতন্ত্র আর সমতার এই কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ এখন রুদ্ধ।
(নিউ ইয়র্ক টাইমস)
No comments