সব মেঘে ঢাকা by লবী রহমান
ঝর্নার
মৃদু চঞ্চল প্রান্তরে নূপুর বাজিয়ে অনুষ্টুপ ছন্দে যে সময় কাটত, তা যেন আজ
প্রকৃতির মতো প্রশান্ত। বর্ণহীন চঞ্চলতা, আনন্দ আজ আর নেই। ফুল ঝরে শুকিয়ে
গেছে উন্মুক্ত সবুজ চত্বরে। দূর্বাদলের মৃদু শিহরণ আজ বিদায় নিয়েছে।
গিরিললিত জীবন স্পন্দের শিশির বিন্দু শুকিয়ে গেছে করালগ্রাসী সূর্যোদাহের
তার সাথে হারিয়ে গেছে হেমন্তের ঝরা ফসলের মতো আমার সোনালী দিন যা আর কখনো
ফিরে আসবে না।
ঠিক যেন শৈলচূড়ার বরফের আলো ঠিকরায়ে পড়েছে। কিন্তু বরফ এখনো গলল না। আমি জানি সে ছিল অবলন্ধ শুভ্র, সে কী নিবিড় পবিত্র, সাড়া দেয়া বিজয়ের পর বিসর্জনের পর বিসর্জনের সানাইয়ের সুরের মাঝে শুনতে পাই সেই ভরান কণ্ঠে মধুর ডাক-লবী তুমি কোথায়? এ কি হলো! এমন তো কথা ছিল না। এতগুলো প্রাণ অকালে কেনই বা কেড়ে নিল হায়েনার থাবায়? এই অপূরণীয় ক্ষতির মাসুল কি সম্ভব? কাকে করবো এ প্রশ্ন? কে ছিল এই লোমহর্ষক কাহিনীর নেপথ্যে? কি ছিল তার স্বার্থ? গত সাত বছরেও মিলল না তার হদিস। কিসের উপর চালিয়ে ছিল ব্রেকহীন বুলডোজার? স্তব্ধ করে দিল ৫৭টি পরিবারের জীবনের চলমান গতি। ভাবছেন বলব প্রশ্ন করুন বিবেককে। জানি বিবেকের বিকৃত লাশ এখন নর্দমার ভেতর। হ্যাঁ সেদিন ছিল ২৫শে ফেব্রুয়ারি। নিয়মিত উঠেছিল সূর্য, দিন শেষে অস্তও গেল। কিন্তু আমার জীবনে সুখের সূর্যটা কালের করাল গ্রাসে অস্ত হলো অনন্তকালের জন্য, যা আর কখনও উঁকি দেবে না। এখন একমাত্র অবলম্বন হলো স্মৃতি, আমরা সেই মধুর স্মৃতিচারণ করে নিজেকে সান্ত্বনা দেই-
‘পৃথিবীটা সুন্দর ছিল
তুমি ছিলে বলে
আজও আছো সুন্দর
সেই পৃথিবী
অনুভবে তুমি আছো বলে’
জীবনের নিয়মই হচ্ছে সকাল, কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙছে সবার। দক্ষিণা জানালাও খুলছে সবাই। হিমেল স্নিগ্ধ বাতাসও বইছে, ঘরে কল্পনার রঙে রাঙাচ্ছে সবার জীবন। দীর্ঘ সুখময় ক্লান্তি শেষে ঘুমাচ্ছে সবাই আর আমার অন্তর্দহনে জ্বলছে বুক, বইছে ঘরামরী বিষবাষ্প ভরা দূষিত বাতাস। আর নয়ন গড়ানো জলে ভিজছে বালিশ, যার সর্বক্ষণই ভেজা।
সে সঙ্গে চিন্তা ক্লান্তি শেষে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু কেন? কি ছিল আমাদের অপরাধ? সততার তো কোনো ঘাটতি ছিল না। শপথ অনুযায়ী ছিল কর্মতৎপরতা। অন্যায়ের সঙ্গে ছিল না কোনো আপস। তবে কি এটাই ছিল অপরাধ? মাঝে মাঝে মনে হয় কবর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে চিৎকার করে বলি আর এক দিনের জন্য জেগে ধরো অস্ত্র। নির্দেশ দাও তোমার প্লাটুনকে সবার মুখোশ দাও খুলে করো না তাদের কোনো ক্ষমা। শেষ করে দাও সেই রক্ত পিপাসু পিশাচদের কালো হাত এসব ভেবে আবার ক্লান্ত হয়ে যাই। আর অস্থিরতায় এপাশ ওপাশ করি।
জানি সারাজীবন কলম চালিয়ে আমার লেখা শেষ হবে না। জানতেও পারবো না কাকে লিখব লিখে আর জানিয়েও কোনো লাভ নেই কেননা এভাবেই কেটে গেল ৭টি বছর। পূরণ হবে না সে ক্ষতির এ বিষ বাষ্প পূর্ণ সমাজ শুধু ব্ল্যাক হোলের মতো কেড়ে নিতেই জানে। জানে না কিছু দিতে। যারা করেছে আমাদের এ হাল তাদের বলছি। আজ যদি জানতে ভালো লাগার মানুষকে এভাবে কেড়ে নিলে যে কি যন্ত্রণা হয় তাহলে করতে না এ তাণ্ডবলীলা ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো এতগুলো পরিবারকে করতে না সর্বস্বান্ত এ যে কী কষ্ট! প্রতিটি নিঃশ্বাসেই শুধু হতাশা হাহাকার আর্তনাদ ইলাহী তোমাকেই লিখছি।
জানি না তো শুনছ কি ওপার বসে আমার এ বেদনার ডাক
তোমায় পেয়েও যদি সব হারাতাম
মিছে যতথাক পড়ে যাক
সেই মধু ডাক,
আজও প্রতিটি প্রহর জুড়ে
প্রতি নিঃশ্বাসে আমি করি যে স্মরণ
যে দিন থেমে যাবে করতে স্মরণ
জেনে নিও সেদিনই হবে
সাথীহারা এ হৃদয়ের মৃত্যুবরণ।
লবী রহমান
শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফীকের স্ত্রী
ঠিক যেন শৈলচূড়ার বরফের আলো ঠিকরায়ে পড়েছে। কিন্তু বরফ এখনো গলল না। আমি জানি সে ছিল অবলন্ধ শুভ্র, সে কী নিবিড় পবিত্র, সাড়া দেয়া বিজয়ের পর বিসর্জনের পর বিসর্জনের সানাইয়ের সুরের মাঝে শুনতে পাই সেই ভরান কণ্ঠে মধুর ডাক-লবী তুমি কোথায়? এ কি হলো! এমন তো কথা ছিল না। এতগুলো প্রাণ অকালে কেনই বা কেড়ে নিল হায়েনার থাবায়? এই অপূরণীয় ক্ষতির মাসুল কি সম্ভব? কাকে করবো এ প্রশ্ন? কে ছিল এই লোমহর্ষক কাহিনীর নেপথ্যে? কি ছিল তার স্বার্থ? গত সাত বছরেও মিলল না তার হদিস। কিসের উপর চালিয়ে ছিল ব্রেকহীন বুলডোজার? স্তব্ধ করে দিল ৫৭টি পরিবারের জীবনের চলমান গতি। ভাবছেন বলব প্রশ্ন করুন বিবেককে। জানি বিবেকের বিকৃত লাশ এখন নর্দমার ভেতর। হ্যাঁ সেদিন ছিল ২৫শে ফেব্রুয়ারি। নিয়মিত উঠেছিল সূর্য, দিন শেষে অস্তও গেল। কিন্তু আমার জীবনে সুখের সূর্যটা কালের করাল গ্রাসে অস্ত হলো অনন্তকালের জন্য, যা আর কখনও উঁকি দেবে না। এখন একমাত্র অবলম্বন হলো স্মৃতি, আমরা সেই মধুর স্মৃতিচারণ করে নিজেকে সান্ত্বনা দেই-
‘পৃথিবীটা সুন্দর ছিল
তুমি ছিলে বলে
আজও আছো সুন্দর
সেই পৃথিবী
অনুভবে তুমি আছো বলে’
জীবনের নিয়মই হচ্ছে সকাল, কাকডাকা ভোরে ঘুম ভাঙছে সবার। দক্ষিণা জানালাও খুলছে সবাই। হিমেল স্নিগ্ধ বাতাসও বইছে, ঘরে কল্পনার রঙে রাঙাচ্ছে সবার জীবন। দীর্ঘ সুখময় ক্লান্তি শেষে ঘুমাচ্ছে সবাই আর আমার অন্তর্দহনে জ্বলছে বুক, বইছে ঘরামরী বিষবাষ্প ভরা দূষিত বাতাস। আর নয়ন গড়ানো জলে ভিজছে বালিশ, যার সর্বক্ষণই ভেজা।
সে সঙ্গে চিন্তা ক্লান্তি শেষে লম্বা দীর্ঘশ্বাস। কিন্তু কেন? কি ছিল আমাদের অপরাধ? সততার তো কোনো ঘাটতি ছিল না। শপথ অনুযায়ী ছিল কর্মতৎপরতা। অন্যায়ের সঙ্গে ছিল না কোনো আপস। তবে কি এটাই ছিল অপরাধ? মাঝে মাঝে মনে হয় কবর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে চিৎকার করে বলি আর এক দিনের জন্য জেগে ধরো অস্ত্র। নির্দেশ দাও তোমার প্লাটুনকে সবার মুখোশ দাও খুলে করো না তাদের কোনো ক্ষমা। শেষ করে দাও সেই রক্ত পিপাসু পিশাচদের কালো হাত এসব ভেবে আবার ক্লান্ত হয়ে যাই। আর অস্থিরতায় এপাশ ওপাশ করি।
জানি সারাজীবন কলম চালিয়ে আমার লেখা শেষ হবে না। জানতেও পারবো না কাকে লিখব লিখে আর জানিয়েও কোনো লাভ নেই কেননা এভাবেই কেটে গেল ৭টি বছর। পূরণ হবে না সে ক্ষতির এ বিষ বাষ্প পূর্ণ সমাজ শুধু ব্ল্যাক হোলের মতো কেড়ে নিতেই জানে। জানে না কিছু দিতে। যারা করেছে আমাদের এ হাল তাদের বলছি। আজ যদি জানতে ভালো লাগার মানুষকে এভাবে কেড়ে নিলে যে কি যন্ত্রণা হয় তাহলে করতে না এ তাণ্ডবলীলা ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো এতগুলো পরিবারকে করতে না সর্বস্বান্ত এ যে কী কষ্ট! প্রতিটি নিঃশ্বাসেই শুধু হতাশা হাহাকার আর্তনাদ ইলাহী তোমাকেই লিখছি।
জানি না তো শুনছ কি ওপার বসে আমার এ বেদনার ডাক
তোমায় পেয়েও যদি সব হারাতাম
মিছে যতথাক পড়ে যাক
সেই মধু ডাক,
আজও প্রতিটি প্রহর জুড়ে
প্রতি নিঃশ্বাসে আমি করি যে স্মরণ
যে দিন থেমে যাবে করতে স্মরণ
জেনে নিও সেদিনই হবে
সাথীহারা এ হৃদয়ের মৃত্যুবরণ।
লবী রহমান
শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফীকের স্ত্রী
No comments