ওবামাই কি আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট? by মাসুম খলিলী
বিশ্বের
ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে এক বুলগেরীয় নারীর নানা বক্তব্য নিয়ে ইন্টারনেটে
তোলপাড় চলছে। তুরস্কের উসমানীয় খেলাফতের অধীন মেসিডোনিয়ায় ১৯১১ সালে
জন্মগ্রহণকারী এ মহিলার কথা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল এর আগেও একাধিকবার। ৮৫
বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে ৫০ বছর ধরে বিভিন্ন সন-তারিখ উল্লেখ করে বিশ্বের
অনেক বড় বড় ভবিষ্যৎ ঘটনার কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। অর্থোডক্স খ্রিষ্টান
পরিবারে জন্ম নেয়া এই নারীর ঘনিষ্ঠজনেরা তাকে বিশেষ মর্যাদাবান হিসেবে
তুলে ধরেন। বাবা ভাঙ্গা (Baba Vanga) নামে এই মহিলা বলতেন, ভবিষ্যতে সময়ের
এসব কথা তাকে সৃষ্টিকর্তাই জানিয়েছেন। ফলে কোনো আলাদা ধর্মবিশ্বাস বা বাণী
প্রচার ছাড়াই তাকে ‘স্রষ্টার বার্তা বহনকারী’ হিসেবে তুলে ধরেন তার ভক্তরা।
বাবা ভাঙ্গার উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণীর একটি ছিল, ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা। ২০০৮ সালে একজন আফ্রিকান আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এই প্রেসিডেন্টই ‘আমেরিকার সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট’ হবেন বলেও মন্তব্য রয়েছে তার এই ভবিষ্যদ্বাণীতে। চলতি বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সাল হলো বাবা ভাঙ্গার দৃষ্টিতে এক উল্লেখযোগ্য বছর। এ সময় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হবে মধ্যপ্রাচ্যে। তিনি বলেছেন, পুরো ইউরোপ জনশূন্য হয়ে যাবে আর সেখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে মুসলমানদের। এরপর আমেরিকানরা আবহাওয়া পরিবর্তনের এক অস্ত্র আবিষ্কার করবে। এই অস্ত্রের জোরে ইউরোপে আবার খ্রিষ্ট আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর একসময় ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যত্র ফিরে আসবে কমিউনিজম। আর একপর্যায়ে পৃথিবীর সব কিছুই মারা যাবে। মানুষ চলে যাবে নতুন এক নক্ষত্রব্যবস্থায়।
কথিত বার্তাবাহক বাবা ভাঙ্গা জন্ম নিয়েছিলেন মেসিডোনিয়ার স্ট্রুমিকায় এক অপরিপক্ব শিশু হিসেবে। প্রথম যখন শিশুটি কেঁদে ওঠে তখন সেখানকার রীতি অনুযায়ী তাকে এক গৃহবধূ রাস্তায় নিয়ে যান নাম রাখার জন্য। প্রথম আগন্তুকের নাম পছন্দ না হওয়ায় দ্বিতীয় আগন্তুকের দেয়া নাম থেকে আসে ‘বাবা ভাঙ্গা’ নামটি। শৈশবে তার ছিল বাদামি চোখ ও স্বর্ণালি চুল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পিতাকে বাধ্যতামূলক বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে যেতে হয়। এরপরই তার মা মারা যান। পরে সৎমায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট ছিল একটি টর্নেডো। এ ঝড়ে ঘূর্ণিবাতাস তাকে উঠিয়ে নিয়ে এক কর্দমাক্ত মাঠে ফেলে। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর বাবা ভাঙ্গা ক্রমান্বয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে হারাতে একপর্যায়ে অন্ধ হয়ে যান। এরপর সৎমাকে হারালে বাবা একেবারে দরিদ্র অবস্থায় পড়ে গেলেন। একসময়ে এক কঠিন অসুখে পড়লে ডাক্তাররা তিনি অচিরেই মৃত্যুবরণ করবেন বলে জানান। কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। এর পর তাকে ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা সম্পর্কে বলতে দেখা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেকে বাবা ভাঙ্গার কাছে আসতে থাকেন তাদের স্বজনদের সন্ধান পেতে কিছু জানার জন্য। ১৯৪২ সালে বুলগেরীয় তৃতীয় জার বাবা ভাঙ্গার কাছে আসেন। এ সময় বুলগেরিয়ার অনেক রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী তার কাছে আসতেন। এমনকি সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ তার প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের আগস্টে বাবা ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা যান। এর আগে তার বিভিন্ন সময় করা ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল।
বাবা ভাঙ্গা ১৯৫০ সালেই বলেছিলেন, বিশ্ব উষ্ণ হতে শুরু করবে এবং ২০০৪ সালে এক বৃহৎ উপকূলজুড়ে সুনামি হবে। উষ্ণায়ন অবশ্য ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর তার উল্লিখিত সময়ে সুনামিও হয়েছে। ১৯৮৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে ইস্পাত পাখির আক্রমণের ঘটনা ঘটবে। আর নেকড়েরা ঝোপের (bush) মধ্যে আর্তনাদ করবে এবং নির্দোষ মানুষের রক্ত ঝরবে। টুইন টাওয়ারে সেই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮০ সালে ভাঙ্গা বলেছিলেন, ২০০০ সালে কুরস্ক রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন পানিতে নিমজ্জিত হবে। নতুন শতাব্দীর প্রাক্কালে ১৯৯৯ বা ২০০০ সালের আগস্টে পারমাণবিক ডুবোজাহাজ কুরস্ক পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ সময়ের জন্য ভাঙ্গার আলোচিত ভবিষ্যদ্বাণীটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান। এর সাথে তার আরো মন্তব্য ছিল- তিনিই হবেন আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট। ভাঙ্গার মৃত্যুর এক যুগ পর বারাক ওবামা ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ঠিকই হয়েছেন। কিন্তু তিনি শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি না সেটিই দেখার বিষয়। ২০১৬ সালেরই ৪ নভেম্বর আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট মনোনয়নের জন্য তীব্র লড়াই চলছে। রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে এমন একজন এ পর্যন্ত ‘প্রাইমারি’তে এগিয়ে আছেন যিনি অতীতে কোনো দিন জেনারেল, মন্ত্রী, সিনেটর, গভর্নর এমনকি কংগ্রেসম্যানও ছিলেন না। ট্রাম্পের বড় পরিচয় হলো- তিনি ক্যাসিনোর মালিক এবং নিউ ইয়র্কের বিলিওনিয়ার আবাসন ব্যবসায়ী। এই আলোচিত ব্যক্তি রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন দৌড়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্য দিকে দেশটির প্রথম মহিলা প্রার্থী হয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়েও ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন হিলারি। নিজেকে সমাজতন্ত্রী হিসেবে দাবি করা প্রতিপক্ষ প্রার্থী সেন্ডার্স ক্রমেই শক্তিমান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। বারাক ওবামা আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অলৌকিক কোনো লক্ষণ এখনো নেই। তবে কিছু গোলমেলে অবস্থার আলামত দেখা যাচ্ছে।
ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীতে ২০১৬ সাল হলো আলোচিত বছর। চলমান এই বছরটির ব্যাপারে বাবার চাঞ্চল্যকর সব কথা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, মুসলিমরা ইউরোপে অভিযান চালাবে এ বছর। পুরো ইউরোপ এক প্রকার জনশূন্য হয়ে যাবে। কিন্তু এই জনশূন্য হওয়ার কারণ কি আবহাওয়া পরিবর্তন নাকি মুসলিম আক্রমণ- এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ২০১৫ সালে ইউরোপে মুসলিম শরণার্থীর স্রোত ছিল এক আলোচিত ঘটনা। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়। একই সাথে ব্রিটেনের জোট ত্যাগের পাল্লা ক্রমেই ভারী হচ্ছে। ব্রেক্সিটের গণভোটে যেকোনো ফলাফল আসতে পারে। তবে এ নিয়ে ক্যামেরনের সাথে ইইউর একধরনের সমঝোতাও হয়েছে। অন্য দিকে ফ্রান্সে আইএসের নামে বোমা হামলার পর পুরো ইউরোপের অবস্থা পাল্টে যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে শরণার্থীদের মধ্যে আইএসও থাকতে পারে। ইউরোপের দেশে দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলো শক্তিমান হয়ে উঠতে থাকে। শরণার্থী নিয়ে উত্তেজনায় পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়। এই উত্তেজনার মধ্যে অনানুষ্ঠানিক গণমাধ্যমে বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী মুসলিম আক্রমণ ও ইসলামভীতি পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়। আতঙ্ক এবং হিংসা দুটোই ছড়ায় মুসলিমদের ব্যাপারে। আবার এটিও ঠিক যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইউরোপ হতে পারে এর অন্যতম প্রধান শিকার। এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতায় রয়েছে।
বাবা ভাঙ্গার অনেক ভবিষ্যদ্বাণী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আবার কোনো কোনোটি তিনি আদৌ বলেছেন কি না, তা নিয়েও ঘনিষ্ঠ সহচরদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। এ রকম একটি ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। সেবার দুই ‘বি’-এর মধ্যে ফাইনাল হওয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে এক ‘বি’ অর্থাৎ ব্রাজিল ফাইনালে যায়, কিন্তু আরেক ‘বি’ বা বুলগেরিয়া সেমিফাইনালেই ইতালির কাছে পেনাল্টিতে হেরে যায়।
আবার বাবা ভাঙ্গার কিছু কিছু কথা রয়েছে যেগুলোর অর্থ বোঝা যায় না। টুইন টাওয়ারের ঘটনা ঘটার আগে বুশ বা ঝোপ এবং ইস্পাত পাখির হামলায় যমজ ভাইয়ের ধ্বংসের অর্থ কী তা বোঝা ছিল কঠিন। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অবশ্য তিনি কী বলতে চেয়েছেন তা বোঝা যায়। তিনি বলেছেন, ২০২৩ সালে পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন হবে। এর অর্থ আসলে কী তা বোঝা মুশকিল। এ ধরনের কোনো প্রাকৃতিক পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর জন্য তাৎপর্যপূর্ণ না হলে তা একপ্রকার আলোচনার বাইরে থেকে যায়।
কিন্তু ২০২৫ সালের ব্যাপারে ভাঙ্গা যা বলেছেন, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বেশ আলোচনার মতো। এ সময়ে পুরো ইউরোপের জনসংখ্যা একপ্রকার শূন্যে এসে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের সাথে মিলিয়ে দেখা হলে এর সাথে সম্পর্ক থাকার কথা মনে হবে মুসলিম এবং ইসলামের। ২০২৫ সালে ইউরোপে এখন যা আছে তাই যদি থাকে, তাহলে এই অন্ধ মহিলার ভবিষ্যৎ বক্তব্যের হয়তো কোনো মূল্যই থাকবে না। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোবিয়া চাঙ্গা হয়ে আছে এবং এটাকে কেন্দ্র করে যে নানা ঘটনা ঘটছে, সেটিকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। একসময় ইরাকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কথা বলে পুরো ইরাককে আমেরিকার সামরিক অভিযানে বিরান করে দেয়া হয়েছে। এখনো শত শত লোকের রক্ত ঝরছে সেখানে। কিন্তু তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ নিজেই স্বীকার করেছেন- গণবিধ্বংসী অস্ত্র সাদ্দামের হাতে থাকার গোয়েন্দা রিপোর্ট সঠিক ছিল না। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ ইরাকে সেদিনের মার্কিন হামলা।
প্রকৃতিগত কিছু ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি বলেছেন, ২০২৮ সালে পৃথিবীর মানুষ জ্বালানির সন্ধানে শুক্র গ্রহে উড়ে যাবে। আর মাত্র এক যুগ পরের কথা এটি। জ্বালানির সন্ধানে মানুষ অনেক অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করছে। কিন্তু শুক্র গ্রহে যাওয়ার বিষয়টি এখনো অলৌকিকই মনে হচ্ছে। ২০৩৩ সালের কথাটি অবশ্য বাস্তবসম্মত। এ সময়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হতে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এর পরের কথাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ২০৪৩ সালে পুরো ইউরোপে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। রোম হবে এর রাজধানী। বিশ্ব অর্থনীতি চলে যাবে মুসলিম নিয়ন্ত্রণে। বিশ্বব্যাপী ইসলামের ব্যাপারে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো ভবিষ্যৎ বক্তব্য এটি। এর মধ্যে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের কথিত খেলাফত রাষ্ট্র নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপ-আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে রাজনৈতিক ইসলামের নামে ইসলামি দলগুলোকে শক্তিহীন করার যে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার পেছনে এ ধরনের একটি উদ্বেগ থাকতে পারে। ইসলামিস্টদের ব্যাপারে যেকোনো দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক তৎপরতা চালানোর যুক্তি হিসেবে এ ধরনের একটি আতঙ্ক বেশ কার্যকর। আতঙ্কের পাশাপাশি ইউরোপের জন্য ‘আশাবাদী’ কথাও শুনিয়েছেন বাবা। তিনি বলেছেন, ২০৬৬ সালে আমেরিকা আবহাওয়া বদলে দেয়ার অস্ত্র বানাবে। আর যুক্তরাষ্ট্র্র রোম দখল করে সেটিকে আবার খ্রিষ্টবাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। ২০৭৬ সালে ইউরোপ এবং পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে কমিউনিজম ফিরে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এতে বামপন্থীরা আশ্বস্ত হতে পারেন।
বাবার বক্তব্য মতে, ২০৮৪ সালে প্রকৃতির নবজন্ম হবে। এ নবজন্ম কেমন হবে, সেটি তিনি বিস্তারিত বলেননি। তবে পরের কথায় এর কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ২১০০ সালে মানুষের তৈরি কৃত্রিম সূর্য এই গ্রহের অন্ধকার অংশকে আলোকোজ্জ্বল করবে। আর ২১৩০ সালে বাইরের শক্তির সাহায্যে পানির নিচে মানুষের বসবাস সম্ভব হবে।
বাবার বক্তব্য মতে, ২১৭০ সালে বিশ্বব্যাপী বড় রকমের খরা হবে। আর ২১৮৭ সালে দু’টি বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত সফলভাবে বন্ধ করা যাবে। তবে ২২০১ সালে সূর্যের তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে তাপমাত্রা কমে যাবে। এসব পরিবর্তনের প্রভাব মানবসভ্যতায় কী হবে, এ ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। এর অর্ধশতক পরের কথাও বলেছেন তিনি। বাবার মতে, ২২৬২ সালে গ্রহ ধীরে ধীরে কক্ষপথ পরিবর্তন করবে। একটি ধূমকেতুর আঘাতে হুমকির মুখে পড়বে মঙ্গল। এর প্রায় এক শতাব্দী পর ২৩৫৪ সালে কৃত্রিম সূর্যের দুর্ঘটনায় পৃথিবীতে খরা আরো বিস্তৃত হবে। ২৪৮০ সালে দুই কৃত্রিম সূর্যে সংঘর্ষ হবে আর পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।
চতুর্থ সহস্রাব্দ পর্যন্ত সময়ের কথা বলেছেন বাবা ভাঙ্গা। তার মতে, ৩০০৫ সালে মঙ্গলের একটি যুদ্ধ গ্রহ নক্ষত্রের নির্দিষ্ট আবর্তন পথ পরিবর্তন করে দেবে। ৩০১০ সালে একটি ধূমকেতু চাঁদকে আঘাত করবে। পৃথিবী শিলা ও ছাই দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়বে। বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীতে মনে হতে পারে, এটিই হয়তোবা কেয়ামতের ধ্বংসলীলা। তিনি এরপর বলেছেন, ৩৭৯৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব কিছু মরে যাবে। তবে মানবসভ্যতা এমন একপর্যায়ে যাবে যাতে তারা নতুন একটি তারকা জগতে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারবে। বাবা বলেননি, এটিই চিরন্তন পরবর্তী জগৎ হবে কি না। তবে অনেকের কল্পনায় চলে আসতে পারে এটি।
বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে কেন এত দিন পর বিশেষভাবে আলোচনা হচ্ছে, সেটি এক রহস্যের ব্যাপার। ইসলামে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালাই কেবল ভবিষ্যৎদ্রষ্টা- এমনটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়। আল্লাহ নবীদের অতীত ও ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। এভাবে তারা ভবিষ্যৎ নানা ঘটনা সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। তবে প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা প্রকাশ করাকে দোষের মনে করা হয় না। বাবা ভাঙ্গা দাবি করেন, তাকে সৃষ্টিকর্তা এসব জানিয়েছেন। স্রষ্টার জানানো কোনো কিছু মিথ্যা হয় না। ওবামা যদি সত্যিই আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়েন, তাহলে বাবার খ্যাতি বাড়বে। মুসলমানদের ইউরোপ জয়কেও অনেকে সম্ভাবনা হিসেবে ভাববেন। তা না হলে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনে বিশ্বনিয়ন্ত্রক কোনো শক্তির উদ্দেশ্যমূলক সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেই ধারণা করা হবে। এর সবচেয়ে বড় শিকার মুসলিমরাই হয়তো হবেন। এটি হতে পারে অজ্ঞাত এক নারীর ভবিতব্যবিষয়ক কথাবার্তাকে এভাবে ছড়িয়ে দেয়ার মাহাত্ম্য।
বাবা ভাঙ্গার উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণীর একটি ছিল, ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনা। ২০০৮ সালে একজন আফ্রিকান আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এই প্রেসিডেন্টই ‘আমেরিকার সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট’ হবেন বলেও মন্তব্য রয়েছে তার এই ভবিষ্যদ্বাণীতে। চলতি বছর, অর্থাৎ ২০১৬ সাল হলো বাবা ভাঙ্গার দৃষ্টিতে এক উল্লেখযোগ্য বছর। এ সময় বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হবে মধ্যপ্রাচ্যে। তিনি বলেছেন, পুরো ইউরোপ জনশূন্য হয়ে যাবে আর সেখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে মুসলমানদের। এরপর আমেরিকানরা আবহাওয়া পরিবর্তনের এক অস্ত্র আবিষ্কার করবে। এই অস্ত্রের জোরে ইউরোপে আবার খ্রিষ্ট আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর একসময় ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যত্র ফিরে আসবে কমিউনিজম। আর একপর্যায়ে পৃথিবীর সব কিছুই মারা যাবে। মানুষ চলে যাবে নতুন এক নক্ষত্রব্যবস্থায়।
কথিত বার্তাবাহক বাবা ভাঙ্গা জন্ম নিয়েছিলেন মেসিডোনিয়ার স্ট্রুমিকায় এক অপরিপক্ব শিশু হিসেবে। প্রথম যখন শিশুটি কেঁদে ওঠে তখন সেখানকার রীতি অনুযায়ী তাকে এক গৃহবধূ রাস্তায় নিয়ে যান নাম রাখার জন্য। প্রথম আগন্তুকের নাম পছন্দ না হওয়ায় দ্বিতীয় আগন্তুকের দেয়া নাম থেকে আসে ‘বাবা ভাঙ্গা’ নামটি। শৈশবে তার ছিল বাদামি চোখ ও স্বর্ণালি চুল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তার পিতাকে বাধ্যতামূলক বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে যেতে হয়। এরপরই তার মা মারা যান। পরে সৎমায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার জীবনে টার্নিং পয়েন্ট ছিল একটি টর্নেডো। এ ঝড়ে ঘূর্ণিবাতাস তাকে উঠিয়ে নিয়ে এক কর্দমাক্ত মাঠে ফেলে। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধারের পর বাবা ভাঙ্গা ক্রমান্বয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে হারাতে একপর্যায়ে অন্ধ হয়ে যান। এরপর সৎমাকে হারালে বাবা একেবারে দরিদ্র অবস্থায় পড়ে গেলেন। একসময়ে এক কঠিন অসুখে পড়লে ডাক্তাররা তিনি অচিরেই মৃত্যুবরণ করবেন বলে জানান। কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। এর পর তাকে ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা সম্পর্কে বলতে দেখা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেকে বাবা ভাঙ্গার কাছে আসতে থাকেন তাদের স্বজনদের সন্ধান পেতে কিছু জানার জন্য। ১৯৪২ সালে বুলগেরীয় তৃতীয় জার বাবা ভাঙ্গার কাছে আসেন। এ সময় বুলগেরিয়ার অনেক রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী তার কাছে আসতেন। এমনকি সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ তার প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের আগস্টে বাবা ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা যান। এর আগে তার বিভিন্ন সময় করা ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল।
বাবা ভাঙ্গা ১৯৫০ সালেই বলেছিলেন, বিশ্ব উষ্ণ হতে শুরু করবে এবং ২০০৪ সালে এক বৃহৎ উপকূলজুড়ে সুনামি হবে। উষ্ণায়ন অবশ্য ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। আর তার উল্লিখিত সময়ে সুনামিও হয়েছে। ১৯৮৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে ইস্পাত পাখির আক্রমণের ঘটনা ঘটবে। আর নেকড়েরা ঝোপের (bush) মধ্যে আর্তনাদ করবে এবং নির্দোষ মানুষের রক্ত ঝরবে। টুইন টাওয়ারে সেই ঘটনা ঘটেছে। ১৯৮০ সালে ভাঙ্গা বলেছিলেন, ২০০০ সালে কুরস্ক রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন পানিতে নিমজ্জিত হবে। নতুন শতাব্দীর প্রাক্কালে ১৯৯৯ বা ২০০০ সালের আগস্টে পারমাণবিক ডুবোজাহাজ কুরস্ক পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ সময়ের জন্য ভাঙ্গার আলোচিত ভবিষ্যদ্বাণীটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিয়ে। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকার ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান। এর সাথে তার আরো মন্তব্য ছিল- তিনিই হবেন আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট। ভাঙ্গার মৃত্যুর এক যুগ পর বারাক ওবামা ৪৪তম প্রেসিডেন্ট ঠিকই হয়েছেন। কিন্তু তিনি শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি না সেটিই দেখার বিষয়। ২০১৬ সালেরই ৪ নভেম্বর আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট মনোনয়নের জন্য তীব্র লড়াই চলছে। রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে এমন একজন এ পর্যন্ত ‘প্রাইমারি’তে এগিয়ে আছেন যিনি অতীতে কোনো দিন জেনারেল, মন্ত্রী, সিনেটর, গভর্নর এমনকি কংগ্রেসম্যানও ছিলেন না। ট্রাম্পের বড় পরিচয় হলো- তিনি ক্যাসিনোর মালিক এবং নিউ ইয়র্কের বিলিওনিয়ার আবাসন ব্যবসায়ী। এই আলোচিত ব্যক্তি রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন দৌড়ে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। অন্য দিকে দেশটির প্রথম মহিলা প্রার্থী হয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়েও ডেমোক্র্যাট মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন হিলারি। নিজেকে সমাজতন্ত্রী হিসেবে দাবি করা প্রতিপক্ষ প্রার্থী সেন্ডার্স ক্রমেই শক্তিমান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন। বারাক ওবামা আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো অলৌকিক কোনো লক্ষণ এখনো নেই। তবে কিছু গোলমেলে অবস্থার আলামত দেখা যাচ্ছে।
ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীতে ২০১৬ সাল হলো আলোচিত বছর। চলমান এই বছরটির ব্যাপারে বাবার চাঞ্চল্যকর সব কথা রয়েছে। তিনি বলেছিলেন, মুসলিমরা ইউরোপে অভিযান চালাবে এ বছর। পুরো ইউরোপ এক প্রকার জনশূন্য হয়ে যাবে। কিন্তু এই জনশূন্য হওয়ার কারণ কি আবহাওয়া পরিবর্তন নাকি মুসলিম আক্রমণ- এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। ২০১৫ সালে ইউরোপে মুসলিম শরণার্থীর স্রোত ছিল এক আলোচিত ঘটনা। এ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়। একই সাথে ব্রিটেনের জোট ত্যাগের পাল্লা ক্রমেই ভারী হচ্ছে। ব্রেক্সিটের গণভোটে যেকোনো ফলাফল আসতে পারে। তবে এ নিয়ে ক্যামেরনের সাথে ইইউর একধরনের সমঝোতাও হয়েছে। অন্য দিকে ফ্রান্সে আইএসের নামে বোমা হামলার পর পুরো ইউরোপের অবস্থা পাল্টে যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে শরণার্থীদের মধ্যে আইএসও থাকতে পারে। ইউরোপের দেশে দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলো শক্তিমান হয়ে উঠতে থাকে। শরণার্থী নিয়ে উত্তেজনায় পুরো অভিবাসনপ্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যায়। এই উত্তেজনার মধ্যে অনানুষ্ঠানিক গণমাধ্যমে বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণী মুসলিম আক্রমণ ও ইসলামভীতি পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়। আতঙ্ক এবং হিংসা দুটোই ছড়ায় মুসলিমদের ব্যাপারে। আবার এটিও ঠিক যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইউরোপ হতে পারে এর অন্যতম প্রধান শিকার। এর বিস্তীর্ণ অঞ্চল সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতায় রয়েছে।
বাবা ভাঙ্গার অনেক ভবিষ্যদ্বাণী বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আবার কোনো কোনোটি তিনি আদৌ বলেছেন কি না, তা নিয়েও ঘনিষ্ঠ সহচরদের কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। এ রকম একটি ছিল বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে। সেবার দুই ‘বি’-এর মধ্যে ফাইনাল হওয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে এক ‘বি’ অর্থাৎ ব্রাজিল ফাইনালে যায়, কিন্তু আরেক ‘বি’ বা বুলগেরিয়া সেমিফাইনালেই ইতালির কাছে পেনাল্টিতে হেরে যায়।
আবার বাবা ভাঙ্গার কিছু কিছু কথা রয়েছে যেগুলোর অর্থ বোঝা যায় না। টুইন টাওয়ারের ঘটনা ঘটার আগে বুশ বা ঝোপ এবং ইস্পাত পাখির হামলায় যমজ ভাইয়ের ধ্বংসের অর্থ কী তা বোঝা ছিল কঠিন। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর অবশ্য তিনি কী বলতে চেয়েছেন তা বোঝা যায়। তিনি বলেছেন, ২০২৩ সালে পৃথিবীর কক্ষপথের পরিবর্তন হবে। এর অর্থ আসলে কী তা বোঝা মুশকিল। এ ধরনের কোনো প্রাকৃতিক পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর জন্য তাৎপর্যপূর্ণ না হলে তা একপ্রকার আলোচনার বাইরে থেকে যায়।
কিন্তু ২০২৫ সালের ব্যাপারে ভাঙ্গা যা বলেছেন, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বেশ আলোচনার মতো। এ সময়ে পুরো ইউরোপের জনসংখ্যা একপ্রকার শূন্যে এসে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। ২০১৬ সালের সাথে মিলিয়ে দেখা হলে এর সাথে সম্পর্ক থাকার কথা মনে হবে মুসলিম এবং ইসলামের। ২০২৫ সালে ইউরোপে এখন যা আছে তাই যদি থাকে, তাহলে এই অন্ধ মহিলার ভবিষ্যৎ বক্তব্যের হয়তো কোনো মূল্যই থাকবে না। কিন্তু এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে ইসলামোফোবিয়া চাঙ্গা হয়ে আছে এবং এটাকে কেন্দ্র করে যে নানা ঘটনা ঘটছে, সেটিকে ফিরিয়ে আনা যাবে না। একসময় ইরাকে গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের কথা বলে পুরো ইরাককে আমেরিকার সামরিক অভিযানে বিরান করে দেয়া হয়েছে। এখনো শত শত লোকের রক্ত ঝরছে সেখানে। কিন্তু তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ নিজেই স্বীকার করেছেন- গণবিধ্বংসী অস্ত্র সাদ্দামের হাতে থাকার গোয়েন্দা রিপোর্ট সঠিক ছিল না। আজকের মধ্যপ্রাচ্যের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ ইরাকে সেদিনের মার্কিন হামলা।
প্রকৃতিগত কিছু ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি বলেছেন, ২০২৮ সালে পৃথিবীর মানুষ জ্বালানির সন্ধানে শুক্র গ্রহে উড়ে যাবে। আর মাত্র এক যুগ পরের কথা এটি। জ্বালানির সন্ধানে মানুষ অনেক অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করছে। কিন্তু শুক্র গ্রহে যাওয়ার বিষয়টি এখনো অলৌকিকই মনে হচ্ছে। ২০৩৩ সালের কথাটি অবশ্য বাস্তবসম্মত। এ সময়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হতে থাকবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
এর পরের কথাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ২০৪৩ সালে পুরো ইউরোপে ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে। রোম হবে এর রাজধানী। বিশ্ব অর্থনীতি চলে যাবে মুসলিম নিয়ন্ত্রণে। বিশ্বব্যাপী ইসলামের ব্যাপারে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো ভবিষ্যৎ বক্তব্য এটি। এর মধ্যে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের কথিত খেলাফত রাষ্ট্র নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইউরোপ-আমেরিকার যৌথ উদ্যোগে রাজনৈতিক ইসলামের নামে ইসলামি দলগুলোকে শক্তিহীন করার যে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তার পেছনে এ ধরনের একটি উদ্বেগ থাকতে পারে। ইসলামিস্টদের ব্যাপারে যেকোনো দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক তৎপরতা চালানোর যুক্তি হিসেবে এ ধরনের একটি আতঙ্ক বেশ কার্যকর। আতঙ্কের পাশাপাশি ইউরোপের জন্য ‘আশাবাদী’ কথাও শুনিয়েছেন বাবা। তিনি বলেছেন, ২০৬৬ সালে আমেরিকা আবহাওয়া বদলে দেয়ার অস্ত্র বানাবে। আর যুক্তরাষ্ট্র্র রোম দখল করে সেটিকে আবার খ্রিষ্টবাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। ২০৭৬ সালে ইউরোপ এবং পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে কমিউনিজম ফিরে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এতে বামপন্থীরা আশ্বস্ত হতে পারেন।
বাবার বক্তব্য মতে, ২০৮৪ সালে প্রকৃতির নবজন্ম হবে। এ নবজন্ম কেমন হবে, সেটি তিনি বিস্তারিত বলেননি। তবে পরের কথায় এর কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ২১০০ সালে মানুষের তৈরি কৃত্রিম সূর্য এই গ্রহের অন্ধকার অংশকে আলোকোজ্জ্বল করবে। আর ২১৩০ সালে বাইরের শক্তির সাহায্যে পানির নিচে মানুষের বসবাস সম্ভব হবে।
বাবার বক্তব্য মতে, ২১৭০ সালে বিশ্বব্যাপী বড় রকমের খরা হবে। আর ২১৮৭ সালে দু’টি বৃহৎ অগ্ন্যুৎপাত সফলভাবে বন্ধ করা যাবে। তবে ২২০১ সালে সূর্যের তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে তাপমাত্রা কমে যাবে। এসব পরিবর্তনের প্রভাব মানবসভ্যতায় কী হবে, এ ব্যাপারে কিছু বলেননি তিনি। এর অর্ধশতক পরের কথাও বলেছেন তিনি। বাবার মতে, ২২৬২ সালে গ্রহ ধীরে ধীরে কক্ষপথ পরিবর্তন করবে। একটি ধূমকেতুর আঘাতে হুমকির মুখে পড়বে মঙ্গল। এর প্রায় এক শতাব্দী পর ২৩৫৪ সালে কৃত্রিম সূর্যের দুর্ঘটনায় পৃথিবীতে খরা আরো বিস্তৃত হবে। ২৪৮০ সালে দুই কৃত্রিম সূর্যে সংঘর্ষ হবে আর পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।
চতুর্থ সহস্রাব্দ পর্যন্ত সময়ের কথা বলেছেন বাবা ভাঙ্গা। তার মতে, ৩০০৫ সালে মঙ্গলের একটি যুদ্ধ গ্রহ নক্ষত্রের নির্দিষ্ট আবর্তন পথ পরিবর্তন করে দেবে। ৩০১০ সালে একটি ধূমকেতু চাঁদকে আঘাত করবে। পৃথিবী শিলা ও ছাই দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পড়বে। বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীতে মনে হতে পারে, এটিই হয়তোবা কেয়ামতের ধ্বংসলীলা। তিনি এরপর বলেছেন, ৩৭৯৭ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব কিছু মরে যাবে। তবে মানবসভ্যতা এমন একপর্যায়ে যাবে যাতে তারা নতুন একটি তারকা জগতে নিজেদের সরিয়ে নিতে পারবে। বাবা বলেননি, এটিই চিরন্তন পরবর্তী জগৎ হবে কি না। তবে অনেকের কল্পনায় চলে আসতে পারে এটি।
বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে কেন এত দিন পর বিশেষভাবে আলোচনা হচ্ছে, সেটি এক রহস্যের ব্যাপার। ইসলামে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালাই কেবল ভবিষ্যৎদ্রষ্টা- এমনটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়। আল্লাহ নবীদের অতীত ও ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা সম্পর্কে জানিয়েছেন। এভাবে তারা ভবিষ্যৎ নানা ঘটনা সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। তবে প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা প্রকাশ করাকে দোষের মনে করা হয় না। বাবা ভাঙ্গা দাবি করেন, তাকে সৃষ্টিকর্তা এসব জানিয়েছেন। স্রষ্টার জানানো কোনো কিছু মিথ্যা হয় না। ওবামা যদি সত্যিই আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট হয়ে পড়েন, তাহলে বাবার খ্যাতি বাড়বে। মুসলমানদের ইউরোপ জয়কেও অনেকে সম্ভাবনা হিসেবে ভাববেন। তা না হলে এসব ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনে বিশ্বনিয়ন্ত্রক কোনো শক্তির উদ্দেশ্যমূলক সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেই ধারণা করা হবে। এর সবচেয়ে বড় শিকার মুসলিমরাই হয়তো হবেন। এটি হতে পারে অজ্ঞাত এক নারীর ভবিতব্যবিষয়ক কথাবার্তাকে এভাবে ছড়িয়ে দেয়ার মাহাত্ম্য।
No comments