তিনি ছিলেন দুঃখী মানুষের নবী by সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন
মানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হজরত
মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়
আদর্শ। তাঁর অপূর্ব চরিত্র মাধুর্য নৈতিক অধঃপতনের অতল থেকে মানবতাকে দান
করেছে এক নতুন জীবন, নতুন উদ্যম, নতুন শক্তি, নতুন সম্মান ও নতুন করে পথ
চলার সামর্থ্য ও পাথেয়। তিনি মুক্তির দিশারীরূপে এমন এক অন্ধকার যুগে
আবির্ভূত হন যখন মানুষের হাতে নির্মিত মূর্তি কিংবা জীব-জানোয়ার ও গাছপালার
জন্য নিষ্পাপ মানুষকে বলি দেয়া হতো। মানুষের তাজা খুন ও গোশত পেশ করা হতো
দেবতাদের সামনে।
সেই জাহেলী যুগে উম্মতের নবী রহমতের কাণ্ডারী হয়ে মানবতাকে উদ্ধার করলেন অপমান ও লাঞ্ছনার কবল থেকে, ফিরিয়ে দিলেন মানুষের গৌরব ও হারিয়ে যাওয়া মান-মর্যাদা, আত্মসম্মানবোধ ও গ্রহণযোগ্যতা। ঘোষণা করলেন, এ পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে বড় ও মহান আর কিছু নেই। মানুষই হল আশরাফুল মাখলুকাত।
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী, পরোপকারী, সদালাপী, দয়ার্দ্যহৃদয়, ন্যায়পরায়ণ ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত অনুপম চরিত্রের অধিকারী। আশৈশব তিনি নির্মল চারিত্র্যিক মাধুর্যের পরিচয় দিয়েছেন। শৈশব ও বাল্যকালেই সর্বোত্তম মানবীয় গুণাবলীর জন্য তিনি আল-আমীন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর সুন্দরতম আদর্শের কাছে কাফেররাও মাথানত করেছিল।
তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন মানবতা, সাম্য, সততা, ত্যাগ, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব এবং সহমর্মিতার শিক্ষা। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। এই মানবসেবা এবং উদারতার নীতিকে অবলম্বন করেই প্রবল গতিতে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিস্তার লাভ করেছে ইসলাম। তলোয়ারের শক্তিতে নয়, তিনি ভালোবাসা, উদারতা, ধৈর্য, সংযম ও আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন। শতধা বিভক্ত মানব জাতিকে ঐক্য ও সাম্যের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। যে বৃদ্ধা রাসূলের (সা.) ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনিই তাঁর সেবা ও ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। এভাবে সারা জীবন তিনি মানুষের উপকার, মানবসেবা ও মানবকল্যাণকর কাজে শ্রম ও অর্থ বিলিয়েছেন প্রশস্ত হস্তে, নিরন্নকে অন্ন দান করেছেন, রোগীর সেবা করেছেন, দাসদের মুক্তি দিয়েছেন- সর্বোপরি যেখানেই কোনো মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছে; যেখানেই ক্ষুণ্ণ হয়েছে মানবতা; ক্ষুণ্ণ হয়েছে মানুষের অধিকার- সেখানেই তিনি সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানবসেবার এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে রাসূলের (সা.) ছোঁয়া লাগেনি। তাঁর স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন তৎকালীন মক্কার সেরা ধনীদের একজন। বিয়ের পর তিনি সব সম্পত্তি নবীজিকে (সা.) দিয়ে দিয়েছেন। আর রাসূল (সা.) গরিবদের মধ্যে সে অর্থ বিলিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবতার কল্যাণে সাহাবিরাও এগিয়ে এসেছিলেন সমানভাবে। প্রত্যেক সাহাবি ছিলেন আত্মোৎসর্গ ও মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার আগে মক্কার সেরা ধনী ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি তাঁর সব সম্পত্তি ইসলামের নামে অসহায় ও দুস্থদের দান করেছিলেন এবং অন্য সাহাবিরাও জান-মাল সর্বস্ব দিয়েই রাসূল (সা.) ও ইসলামকে ভালোবেসে ছিলেন।
অথচ বর্তমান সময়ের আলেম-উলামা বা মুসলিম জনগোষ্ঠী আর্তমানবতার সেবায় সবচেয়ে পিছিয়ে। মানবসেবার মাধ্যমে যাদের উত্থান, মানবসেবা যাদের ধর্ম- সেখানেই মুসলিম জাতি আজ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। সুন্দর পোশাক, বেশভূষা সবই ঠিক রয়েছে, রবং বেশিই রয়েছে। আশেকে রাসূল, আশেকে নবী, রাসূল প্রেমিক, বিশ্ব আশেকে রাসূল নানা উপাধি নিয়ে আয়োজন-উৎসবসহ বহাল তবিয়তে জীবনযাপন করছে। কিন্তু রাসূলের (সা.) আদর্শের শিক্ষা নেই। বাস্তব জীবন বা ব্যক্তিগত কার্যকলাপের মধ্যে মানবসেবার পরিচয় পাওয়া যায় না। রাসূলের (সা.) আদর্শের প্রতিফলন হয় না। কত মানুষ না খেয়ে থাকে, কত হতদরিদ্র শীতে কাতরায়, কত অনাথ সাহায্যের অভাবে শিক্ষার আলো পায় না, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার অভাবে সমাজ ব্যবস্থা অধঃপতনের শেষ প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে তাতে কারো মাথাব্যথা নেই।
উত্তম সমাজব্যবস্থা কায়েম রাখতে রাসূল পাক (সা.) দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কেউ যদি হালাল উপার্জন থেকে দান করে, আল্লাহ মহান সে দান নিজে গ্রহণ করেন। সেটিকে উত্তমরূপে সংরক্ষণ করেন। এক সময় সে দানের সাওয়াব পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’
অনত্র তিনি বলেছেন, ‘একটি খেজুরের অর্ধাংশ দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে গরির-অভাবী লোকদের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বল, ভালো ব্যবহার করো যাতে পরকালে তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’ এভাবে মানবতার সেবা এবং অন্যের দুঃখ-কষ্টের কথা মাথায় রেখে উম্মতকে জীবনযাপন করার উপদেশ প্রদান করেছেন। একদিন তিনি হজরত আবু দারদাকে (রা.) বললেন, ঘরে তরকারি রান্না করার সময় তাতে পানি কিছুটা বাড়িয়ে দিও। খাবার সময় যাতে প্রতিবেশীকে সামান্য ঝোল হলেও দান করতে পার। দয়ার নবী এভাবেই তাঁর উম্মতকে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং ভারসাম্য সমাজব্যবস্থা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তিনি এরশাদ করেছেন, ‘যারা রহম করে তাদের ওপরই রহমানের রহমত বর্ষিত হয়। পৃথিবীতে যারা আছে তোমরা তাদের প্রতি রহম কর, তবে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের প্রতি রহমত নাজিল করবেন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আপন বান্দাদের উদ্দেশ করে বলবেন : হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম; তোমরা আমার সেবা-যত্ন করনি। বান্দা আরজ করবে, হে আল্লাহ! তা কেমন করে সম্ভব! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন : তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা-যত্ন করনি। তার পাশে দাঁড়ালে সেখানে তো আমাকেই পেতে। হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে : তা কিভাবে সম্ভব, আপনি তো রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধার্ত ছিল। তুমি তাকে খেতে দাওনি। তোমার কি জানা ছিল না যে, তাকে খাওয়ালে তার কাছে আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি পিপাসার্ত ছিলাম; তোমরা আমায় পানি দাওনি। বান্দা আরজ করবে : হে আল্লাহ! কিভাবে আপনাকে পানি পান করাব? আপনি তো তৃষ্ণা থেকে পবিত্র। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা পিপাসার্ত ছিল, তুমি তার পিপাসা নিবারণ করনি। তোমার কি জানা ছিল না যে, তার পিপাসা মেটালে তার কাছে আমাকে পেতে।
রাসূল পাকের (সা.) উম্মত হিসেবে, তাঁর ভালোবাসার দাবিদার হিসেবে আমাদের অবশ্যই তাঁর আদর্শের অনুসরণ করতে হবে। শুধু মুখে বলা বা বেশ-ভূষাতে মুসলমানিত্ব প্রকাশ না করে কাজ-কর্মের মাধ্যমে আদর্শের বাস্তবায়ন করে যথার্থ মুসলিম পরিচয় তুলে ধরতে পারলেই তবে তা হবে ইসলামের জন্য কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে প্রশংসনীয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
গদিনশীন পীর, দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরিফ
Email : ahmadinurisds@gmail.com
সেই জাহেলী যুগে উম্মতের নবী রহমতের কাণ্ডারী হয়ে মানবতাকে উদ্ধার করলেন অপমান ও লাঞ্ছনার কবল থেকে, ফিরিয়ে দিলেন মানুষের গৌরব ও হারিয়ে যাওয়া মান-মর্যাদা, আত্মসম্মানবোধ ও গ্রহণযোগ্যতা। ঘোষণা করলেন, এ পৃথিবীতে মানুষের চেয়ে বড় ও মহান আর কিছু নেই। মানুষই হল আশরাফুল মাখলুকাত।
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অসাধারণ বিনয়ী, পরোপকারী, সদালাপী, দয়ার্দ্যহৃদয়, ন্যায়পরায়ণ ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত অনুপম চরিত্রের অধিকারী। আশৈশব তিনি নির্মল চারিত্র্যিক মাধুর্যের পরিচয় দিয়েছেন। শৈশব ও বাল্যকালেই সর্বোত্তম মানবীয় গুণাবলীর জন্য তিনি আল-আমীন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর সুন্দরতম আদর্শের কাছে কাফেররাও মাথানত করেছিল।
তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন মানবতা, সাম্য, সততা, ত্যাগ, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব এবং সহমর্মিতার শিক্ষা। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। এই মানবসেবা এবং উদারতার নীতিকে অবলম্বন করেই প্রবল গতিতে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে বিস্তার লাভ করেছে ইসলাম। তলোয়ারের শক্তিতে নয়, তিনি ভালোবাসা, উদারতা, ধৈর্য, সংযম ও আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন। শতধা বিভক্ত মানব জাতিকে ঐক্য ও সাম্যের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। যে বৃদ্ধা রাসূলের (সা.) ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনিই তাঁর সেবা ও ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিলেন। এভাবে সারা জীবন তিনি মানুষের উপকার, মানবসেবা ও মানবকল্যাণকর কাজে শ্রম ও অর্থ বিলিয়েছেন প্রশস্ত হস্তে, নিরন্নকে অন্ন দান করেছেন, রোগীর সেবা করেছেন, দাসদের মুক্তি দিয়েছেন- সর্বোপরি যেখানেই কোনো মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছে; যেখানেই ক্ষুণ্ণ হয়েছে মানবতা; ক্ষুণ্ণ হয়েছে মানুষের অধিকার- সেখানেই তিনি সুষ্ঠু সমাধান ও ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। মানবসেবার এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে রাসূলের (সা.) ছোঁয়া লাগেনি। তাঁর স্ত্রী হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন তৎকালীন মক্কার সেরা ধনীদের একজন। বিয়ের পর তিনি সব সম্পত্তি নবীজিকে (সা.) দিয়ে দিয়েছেন। আর রাসূল (সা.) গরিবদের মধ্যে সে অর্থ বিলিয়ে দিয়েছেন।
তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে মানবতার কল্যাণে সাহাবিরাও এগিয়ে এসেছিলেন সমানভাবে। প্রত্যেক সাহাবি ছিলেন আত্মোৎসর্গ ও মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার আগে মক্কার সেরা ধনী ছিলেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তিনি তাঁর সব সম্পত্তি ইসলামের নামে অসহায় ও দুস্থদের দান করেছিলেন এবং অন্য সাহাবিরাও জান-মাল সর্বস্ব দিয়েই রাসূল (সা.) ও ইসলামকে ভালোবেসে ছিলেন।
অথচ বর্তমান সময়ের আলেম-উলামা বা মুসলিম জনগোষ্ঠী আর্তমানবতার সেবায় সবচেয়ে পিছিয়ে। মানবসেবার মাধ্যমে যাদের উত্থান, মানবসেবা যাদের ধর্ম- সেখানেই মুসলিম জাতি আজ সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। সুন্দর পোশাক, বেশভূষা সবই ঠিক রয়েছে, রবং বেশিই রয়েছে। আশেকে রাসূল, আশেকে নবী, রাসূল প্রেমিক, বিশ্ব আশেকে রাসূল নানা উপাধি নিয়ে আয়োজন-উৎসবসহ বহাল তবিয়তে জীবনযাপন করছে। কিন্তু রাসূলের (সা.) আদর্শের শিক্ষা নেই। বাস্তব জীবন বা ব্যক্তিগত কার্যকলাপের মধ্যে মানবসেবার পরিচয় পাওয়া যায় না। রাসূলের (সা.) আদর্শের প্রতিফলন হয় না। কত মানুষ না খেয়ে থাকে, কত হতদরিদ্র শীতে কাতরায়, কত অনাথ সাহায্যের অভাবে শিক্ষার আলো পায় না, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনার অভাবে সমাজ ব্যবস্থা অধঃপতনের শেষ প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে তাতে কারো মাথাব্যথা নেই।
উত্তম সমাজব্যবস্থা কায়েম রাখতে রাসূল পাক (সা.) দান-খয়রাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘কেউ যদি হালাল উপার্জন থেকে দান করে, আল্লাহ মহান সে দান নিজে গ্রহণ করেন। সেটিকে উত্তমরূপে সংরক্ষণ করেন। এক সময় সে দানের সাওয়াব পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’
অনত্র তিনি বলেছেন, ‘একটি খেজুরের অর্ধাংশ দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে গরির-অভাবী লোকদের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বল, ভালো ব্যবহার করো যাতে পরকালে তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।’ এভাবে মানবতার সেবা এবং অন্যের দুঃখ-কষ্টের কথা মাথায় রেখে উম্মতকে জীবনযাপন করার উপদেশ প্রদান করেছেন। একদিন তিনি হজরত আবু দারদাকে (রা.) বললেন, ঘরে তরকারি রান্না করার সময় তাতে পানি কিছুটা বাড়িয়ে দিও। খাবার সময় যাতে প্রতিবেশীকে সামান্য ঝোল হলেও দান করতে পার। দয়ার নবী এভাবেই তাঁর উম্মতকে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করেছেন।
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং ভারসাম্য সমাজব্যবস্থা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তিনি এরশাদ করেছেন, ‘যারা রহম করে তাদের ওপরই রহমানের রহমত বর্ষিত হয়। পৃথিবীতে যারা আছে তোমরা তাদের প্রতি রহম কর, তবে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের প্রতি রহমত নাজিল করবেন।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আপন বান্দাদের উদ্দেশ করে বলবেন : হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম; তোমরা আমার সেবা-যত্ন করনি। বান্দা আরজ করবে, হে আল্লাহ! তা কেমন করে সম্ভব! আপনি তো বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন : তুমি কি জান না, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল, কিন্তু তুমি তার সেবা-যত্ন করনি। তার পাশে দাঁড়ালে সেখানে তো আমাকেই পেতে। হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে খাবার দাওনি। বান্দা বলবে : তা কিভাবে সম্ভব, আপনি তো রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা ক্ষুধার্ত ছিল। তুমি তাকে খেতে দাওনি। তোমার কি জানা ছিল না যে, তাকে খাওয়ালে তার কাছে আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান! আমি পিপাসার্ত ছিলাম; তোমরা আমায় পানি দাওনি। বান্দা আরজ করবে : হে আল্লাহ! কিভাবে আপনাকে পানি পান করাব? আপনি তো তৃষ্ণা থেকে পবিত্র। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা পিপাসার্ত ছিল, তুমি তার পিপাসা নিবারণ করনি। তোমার কি জানা ছিল না যে, তার পিপাসা মেটালে তার কাছে আমাকে পেতে।
রাসূল পাকের (সা.) উম্মত হিসেবে, তাঁর ভালোবাসার দাবিদার হিসেবে আমাদের অবশ্যই তাঁর আদর্শের অনুসরণ করতে হবে। শুধু মুখে বলা বা বেশ-ভূষাতে মুসলমানিত্ব প্রকাশ না করে কাজ-কর্মের মাধ্যমে আদর্শের বাস্তবায়ন করে যথার্থ মুসলিম পরিচয় তুলে ধরতে পারলেই তবে তা হবে ইসলামের জন্য কল্যাণকর এবং আল্লাহর কাছে প্রশংসনীয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক, ইসলামী চিন্তাবিদ
গদিনশীন পীর, দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরিফ
Email : ahmadinurisds@gmail.com
No comments