আইএসের মতো সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে
ইসলামিক
স্টেট ও আল-কায়েদার মতো বহুজাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বাংলাদেশে
উপস্থিতির তথ্য রয়েছে। এতে দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র ক্রমবর্ধমান চাপের
মুখে পড়বে। মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনে
বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক শুনানিতে এসব কথা বলেছেন কমিশনের কো-চেয়ার
রিপাবলিকান দলের জিম ম্যাকগর্ভার্ন। তিনি সব নাগরিকের অধিকার সুরক্ষায় যে
বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ওই শুনানিতে অংশ নেন গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত
ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। তিনি বলেন,
রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশে কট্টরপন্থি সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি মেনে নিতে
অস্বীকৃতি জানাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন
বাতিল করার আহ্বান জানান সরকারের প্রতি। ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থার
এপি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। এখানে স্বাধীন
মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন বৃদ্ধির বিষয়টি ওই কমিশনে
তুলে ধরেছেন বন্যা। ক্যাপিটল হিলে অনুষ্ঠিত ওই শুনানিতে তিনি বাংলাদেশে
ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের ওপর ভয়াবহ হামলার বর্ণনা দেন। গত
নয় মাসে এমন হামলায় নিহত হয়েছেন ৫ জন । আহত হয়েছেন অনেকে। গত ফেব্রুয়ারিতে
ঢাকার ব্যস্ত সড়কে তিনি ও তার স্বীমা অভিজিৎ রায়ের ওপর নৃশংস হামলা হয়। ওই
হামলার পর রক্তাক্ত অবস্থায় তারা এক ঘণ্টা পড়েছিলেন রাস্তায়। তারপর তাদেরকে
নেয়া হয় হাসপাতালে। বন্যা বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ। রক্তপাতের
এই দিনগুলোই এখন সেখানে সাধারণ হয়ে উঠছে। সন্ত্রাসীদের হাতে মানুষের
কণ্ঠরোধ প্রতি মাসের নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু এসব খুনিকে কখনো
বিচারের আওতায় আনা হয় নি তাই এখন বিদেশি কর্মীদের ওপর, এমনকি মুসলমানদের
অন্য সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে। উপরন্তু যে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মীয়
সহিষ্ণুতার রীতি প্রচলিত সেখানে লেখক, সংখ্যালঘু শিয়া মুসলিম, খ্রিস্টান
ধর্মযাজকদের ওপর ভয়াবহ হামলা অপছায়ার মতো ঘুরছে। সমালোচকরা বলেন, যারা
হুমকির মুখে রয়েছেন তাদেরকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সরকার। উল্টো তারা ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করছে। রাফিদা আহমেদ
বন্যা বলেন, প্রথমদিকে এসব হামলা নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল সরকার।
কিন্তু পরে তারা ব্লগারদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখালেখির ক্ষেত্রে সতর্কতা
দেয়। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তাদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে উৎসাহিত করেছে সরকার।
তিনি বলেন, তার ওপর হামলার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কোন
যোগাযোগ করা হয় নি। তারা রাজনৈতিক কারণে, কট্টরপন্থি সন্ত্রাসীদের
উপস্থিতির বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুুক্তি
আইন বাতিলে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যেন যুক্তরাষ্ট্র আহ্বান জানায় সেজন্য
তিনি মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এই আইনে ধর্ম নিয়ে সমালোচনামূলক
কোন লেখা ইন্টারনেটে প্রকাশ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে।
বন্যা বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে এই আইনে বেশ কয়েকজন
ব্লগার ও সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বাংলাদেশে। পেন আমেরিকান সেন্টারের
মুক্ত মত প্রকাশ বিষয়ক পরামর্শক কারিন ডুয়েশ্চ কারলেকার বলেন, গত বছর
কট্টরপন্থিরা ৮৪ জন ব্লগারের একটি হিটলিস্ট প্রকাশ করে। এ ছাড়া তারা
সাংবাদিক ও সুশীল সমাজকে টার্গেট করে। কিন্তু এমন হুমকির মুখে থাকা
ব্যক্তিদের সুরক্ষা পুলিশ বা সরকার দেয় নি বললেই চলে অথবা দেয়ই নি। তিনি
বলেন, কয়েক ডজন ব্লগার জীবন বাঁচাতে এজন্য দেশ ছেড়েছেন অথবা আত্মগোপনে
আছেন। এসব হামলার জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ কট্টরপন্থিদের অথবা রাজনৈতিক দল,
বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার মিত্র
জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছে। বলা হয়েছে, তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব
ঘটনা ঘটাচ্ছে। এপি লিখেছে, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি
চিফ অব মিশন মাহবুব হাসান রাজপথের বিক্ষোভের সময় বেসামরিক লোকজনের ওপর
পেট্রল বোমা ছুড়ে মানুষ হত্যার জন্য দায়ী করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলকে। এ
কর্মকাণ্ডকে তিনি সন্ত্রাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে, লেখকদের নিরাপত্তা
দিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে তিনি সরাসরি কিছু
বলেন নি। ওই শুনানিতে ম্যাকগভার্ন বলেন, সমাজকে পরিচালনার জন্য গণতন্ত্র
হলো উত্তম পন্থা।
No comments