ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন
সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। তাই বলে ভুয়া সনদ দেখিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কিংবা রাজাকারের তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তি রাষ্ট্র থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা নেবে! বিজয়ের মাসেই এ ধরনের একটি খবর আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার জন্য প্রদত্ত ভাতা নিয়ে এই তস্করবৃত্তি আমাদের কেবল উদ্বিগ্নই করে না, লজ্জিতও করে। গত শুক্রবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ভুয়া সনদধারী প্রায় তিন হাজার ব্যক্তির ভাতা বাতিল ও স্থগিত করেছে সরকার। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৭৫ জনের ভাতা স্থগিত এবং বাকিদের বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে নতুন করে গেজেটভুক্তির আহ্বান জানানোর পরই ভুয়া সনদধারীদের তালিকাভুক্তির হিড়িক পড়ে যায়। অনেকে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করে যথারীতি ভাতাও হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীকালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি দপ্তর ও এলাকাবাসীর সাক্ষ্য–প্রমাণে বেরিয়ে আসে যে তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় উত্থাপিত অভিযোগগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উল্লিখিত ব্যক্তিদের ভাতা স্থগিত ও বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাধুবাদ পেতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এরা কীভাবে ভুয়া সনদ বাগিয়ে নিতে পারল? প্রশাসনের ভেতরে কারা তাদের এই দুষ্কর্মে সহায়তা করেছে? এর সঙ্গে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন থাকাও অস্বাভাবিক নয়। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ভাতা ফেরত নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কেবল ভাতা ফেরত নেওয়াই যথেষ্ট নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা ও নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনের রহস্য অজানা নয়। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সনদ বাতিল হয়ে গেছে। এ রকম আরও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রশাসনে ও সমাজে লুকিয়ে আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করি।
No comments