‘পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র আমরা বুঝি’
পৌর
নির্বাচন নিয়ে সরকারের নীলনকশা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, পৌরসভায় প্রথমবারের
মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তড়িঘড়ি করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন
করার অর্থ কী? আমরা জানি, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করেই প্রমাণ করা হবে
বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হচ্ছে জনগণের সবচেয়ে প্রিয় রাজনৈতিক দল। আমরা এই
নীলনকশা বুঝি। আমরা জানি, এটাই হবে। এখানে নির্বাচন করার জন্য কেউ কোন
স্বাধীনতা পাবেন না। পদে পদে বাধা দেয়া হবে, গ্রেপ্তার করা হবে, এমনকি
হত্যা পর্যন্ত করা হতে পারে। তারপরও আমরা এই নির্বাচনে আছি। কারণ আমাদের
সামনে তো বিকল্প কোন পথ নেই। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে
অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) আয়োজিত ‘পৌরসভা নির্বাচন
২০১৫ : বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, পৌর নির্বাচনে সরকার তার ভরাডুবি ঠেকাতেই
বিরোধী দল দমনের পথ বেঁছে নিয়েছে। আবারও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে কারাগারগুলো।
সরকার খুব ভালো করে জানে বিএনপিকে যদি দমন না করা যায়, এভাবে গ্রেপ্তার করে
আটকে রাখা না যায়, ত্রাস দেখিয়ে আটকে রাখা না যায়, তাহলে এই নির্বাচনেও
তাদের ভরাডুবি ঘটতে পারে। সে জন্য তারা আজকে দমনমূলক একটা ব্যবস্থা নিয়েছে।
সরকারের দমনপীড়নের কথা উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, আমাদের বহু
প্রার্থীকে অস্ত্র দেখিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার
করে নেয়া হয়েছে। ফেনীতে কোন প্রার্থীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেয়া হয়নি। ওখানে
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজকেও আমার কাছে
খবর এসেছে- ঝিনাইদহে আমাদের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা
দেশে গণগ্রেপ্তার চলছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত এক
হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কয়েক মাস আগে ৫/৬ হাজার
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই নির্বাচন তো আমরা জানি, একটা তামাশার মতো অবস্থায়
দাঁড়িয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, তারপরেও আমরা
নির্বাচনে আছি। এ জন্য আছি যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে আমাদের
অবস্থাটা দৃঢ় করতে চাই। জনগণের কাছে যেতে চাই। ন্যূনতম যে অধিকারটুকু আছে,
সেই অধিকারটুকু নিতে চাই। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা একটা অস্বাভাবিক
শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি অতিক্রম করছি। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের সাহসিকতার
সঙ্গে, কৌশলের সঙ্গে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে, ধৈর্যের সঙ্গে, গণতান্ত্রিক
উপায়ে বেরিয়ে আসতে হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে
আমি গণতন্ত্রকে দেখতে চাই। বিশ্বপরিস্থিতিতে গণতন্ত্র ডাবল
স্ট্যান্ডার্ন্ড। ইরাক, সিরিয়া, মিয়ানমার আফগানিস্তানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি
বলেন, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এটাকেও একটা ছুঁতো করে আমাদের
জঙ্গিবাদী, গণতন্ত্রবিরোধী বলে চিহ্নিত করার জন্য সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করা
হয়েছে। এই কথাটা আমাদের সকলের মধ্যে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত নির্বাচন
ছাড়া আমাদের বিকল্প পথ নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য
নির্বাচনের বিকল্প নেই। মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা একটি উদারপন্থি
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনে বিশ্বাস করি
এবং আজকে স্থানীয় সরকারে যে পরিবর্তন হবে, সেটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হতে
হবে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি
তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, জিও পলিটিক্যাল সিচুয়েশন দেখে,
আমাদের কৌশলের সঙ্গে, আমাদের ঠাণ্ডা মাথায় গণতন্ত্রের দিকে যেতে হবে।
বাধ্য হয়ে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। এই সিদ্ধান্তই সঠিক। কারণ, আমাদের তো
সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ঢাকায় আমরা পার্টি অফিসে বসতে পারি, কিন্তু
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। এলাকায় সমাবেশ করতে দেয়া হয়
না। লড়াই, সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র অর্জন করেছি। দীর্ঘ সাত বছর ধরে হারানো
অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে মানুষ। সরকারের উদ্দেশে বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, দেয়ালের লিখনগুলো পডুন। জনগণের মানুষের মুখের
ভাষা, চোখের ভাষা দেখুন, বোঝার চেষ্টা করুন। এখনও সময় আছে, সরকারের শুভ
বুদ্ধির উদয় হবে। আপনারা জনগণের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিয়ে একটি সত্যিকার
অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তিনি বলেন, একটি সঠিক
নির্বাচন দিয়ে জনগণের অধিকারগুলো ফিরিয়ে দিন। অন্যথায় অনেকেই বলেছেন, ভয়াবহ
একটা পরিণতির দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজকে এখানে উগ্রবাদের কথা বলা
হচ্ছে। জঙ্গিবাদের কথা বলা হচ্ছে। পশ্চিমারা বার বার বলছে, এখানে জঙ্গিবাদ
আসছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস তখনই বেড়ে যায় যখন গণতন্ত্র থাকে না। গণতান্ত্রিক
শক্তিগুলো পরাজিত হলে উগ্রবাদের উত্থান ঘটে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
প্রকৌশলী আনহ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাবেক ভিসি প্রফেসর খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর নুরুল আমিন ব্যাপারী, এ্যাব মহাসচিব
প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন, প্রকৌশলী একেএম জহিরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মোতাহার
হোসেন, প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান মানিক প্রমুখ বক্তব্য দেন।
No comments