আমাদের কাইয়ুম ভাই: প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা by মতিউর রহমান
জীবনের শেষ ছবি। গত বছর ৩০ নভেম্বর আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীতের মঞ্চে |
কী
যেন বলার ছিল তাঁর। বক্তৃতা শেষ করে মাইকের সামনে থেকে ফিরে গিয়েছিলেন
তাঁর আসনে। তারপরেই মনে পড়েছিল কথাটি। ‘আমার আরেকটি কথা আছে’ বলে ফিরে
এসেছিলেন মঞ্চে। কথাটি আর বলা হলো না। ঢলে পড়লেন দেশের সেরা শিল্পী
কাইয়ুম চৌধুরী। গত বছর এই দিনে, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত উচ্চাঙ্গসংগীত
উৎসবের চতুর্থ দিনের আসরে।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল একটি বছর। আবার সেই আর্মি স্টেডিয়ামে জমে উঠেছে রাগ-রাগিণীর আসর। শিল্পী ও শ্রোতায় উৎসবমুখর হেমন্তের রাত। না থেকেও তিনি আছেন। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে।
সে রাতে আমি উৎসব প্রাঙ্গণে ছিলাম না। কাইয়ুম ভাইয়ের দুঃসহ মৃত্যুসংবাদ পাই পরদিন সকালে ব্যাংকক বিমানবন্দরে। ঢাকায় ফিরে এসে এক গভীর শূন্যতায় বারবার তাঁর কথা মনে পড়েছে। এখনো প্রতিদিন তাঁকে স্মরণ করি। আগামী দিনগুলোতেও তিনি এভাবেই আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, আমাদের প্রিয় ‘কাইয়ুম ভাই’ তাঁর দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময়ের শিল্পসাধনায় দেশের চারুকলার জগৎকেই সমৃদ্ধ করেননি, দেশের সংস্কৃতি ও জনজীবনকেও রাঙিয়ে দিয়েছেন। জনরুচির নির্মাণে রেখেছেন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। ক্যানভাসে, কাগজে, হাজার পাঁচেক বইয়ের প্রচ্ছদে, অগণিত পোস্টার, নিমন্ত্রণপত্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংবাদপত্রের লোগো, অলংকরণের ভেতর দিয়ে তিনি এক আশ্চর্য সুন্দর জগতের দরজা উন্মোচন করেছেন আমাদের জন্য। সেখানে আমরা অভিভূত হয়ে দেখি লাল, নীল, সবুজ, হলুদের চোখজুড়ানো সন্নিবেশ। লতাপাতা, ফুল, পাখি, নৌকা, মাছ, তালপাতার পাখা, দিগন্তবিস্তৃত মাঠের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদী, অবারিত আকাশ, বাংলার চিরশ্যামল প্রকৃতি। কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন তাঁর পঙ্ক্তিমালায় তুলে এনেছেন রূপসী বাংলার প্রকৃতি, তেমনি করে রংতুলিতে বাংলার লাবণ্যমাধুরী ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অক্লান্তভাবে তুলে ধরেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। তাই বিদগ্ধজনেরা তাঁকে বলেছেন রংতুলির জীবনানন্দ। ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীনালায় ঘুরে বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে। এখান থেকে আমি ছবির বিষয়বস্তু আহরণ করি।’
কাইয়ুম ভাইয়ের সত্তর বছরে পা রাখা উপলক্ষে ২০০৪ সালের ৬ মার্চ বেঙ্গল গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর চতুর্থ একক চিত্র প্রদর্শনী। নাম ছিল ‘আবহমান’। সে সময়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার ঐতিহ্য, আমার শিল্পের পশ্চাদ্ভূমি আমাকে জানতে হয়েছে। এ অঞ্চলের পাল যুগের শিল্পকর্ম, সেন যুগের ভাস্কর্য ও লোকশিল্পের যে আবহমান ধারা আমরা দেখি, সেটিই আমাদের ঐতিহ্য।’ এই শিল্পবোধ নিয়েই কাজ করেছেন তিনি। একসময় সুদিন ছিল এই দেশে। আঁকতে চেয়েছেন সেই সময়ের ছবি। তেলরং, জলরং, গোয়াশ, প্যাস্টেল, অ্যাক্রেলিক, কালি-কলম, ছাপচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক পরিশীলিত নিজস্ব শিল্পভাষা বিনির্মাণ করেছিলেন তিনি।
ছবি আঁকার বাইরে সুকুমার শিল্পকলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর আগ্রহ ছিল তাঁর। নেশা ছিল বই পড়া ও গান শোনার। সিনেমার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। বই, গানের রেকর্ড ও ভিডিওর বিপুল সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সারা জীবনের চেষ্টায়। সুকুমারকলার প্রতি এই অনুরাগ অনেকটা উত্তরাধিকারসূত্রেই পেয়েছিলেন। বাবার কলের গান ছিল। গ্রামোফোন রেকর্ডের সংগ্রহও ছিল ভালো। বাবার কোলে বসে দেখেছিলেন প্রথম সিনেমা। সেই অনুরাগ আমৃত্যু লালন করে গেছেন কাইয়ুম চৌধুরী।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন সমাজ ও সমকাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিল্পচর্চার বিপরীত মেরুতে। ছিলেন অত্যন্ত সমাজ-সচেতন, রাজনীতি-সচেতন মানুষ। ১৯৩৩ সালে তাঁর জন্ম নোয়াখালীতে। ১৯৪৯ সালে এসএসসি পাস করে তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আর্ট কলেজে দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন। পাস করে বের হন ১৯৫৪ সালে। ছাত্রজীবনের সময়টি কেটেছে গৌরবময় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনে। সে সময় দেশের প্রধান কবি-সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে জহির রায়হানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তাঁর প্রথম বই শেষ বিকেলের মেয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। পরে তাঁর সিনেমার পোস্টারও এঁকেছেন। প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ ছড়া লিখেছেন। তাঁর ছড়ার বই প্রকাশিত হয়েছে তিনটি।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে কাইয়ুম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল আমার। সে বছর ফেব্রুয়ারির এক সকালে বন্ধু আসাদুজ্জামান নূরকে সঙ্গে নিয়ে আজিমপুরে কাইয়ুম ভাইয়ের বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের একুশের কবিতা সংকলনের প্রচ্ছদ আঁকিয়ে নেওয়ার জন্য। বজ্রে বাজে বাঁশী নামের সেই সংকলনের তিনরঙা প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন তিনি। অভ্যুত্থানের সেই দিনগুলোতে কাইয়ুম ভাইকে দেখেছি ছাত্র-শিক্ষক-শিল্পীদের মিছিলে অংশ নিতে। মুক্তিযুদ্ধের আগে চারু ও কারুশিল্পীদের যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি ও শিল্পী মুর্তজা বশীর।
কাইয়ুম ভাইয়ের সঙ্গে সেই যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়েছিল। অটুট ছিল তাঁর মৃত্যু অবধি। তাঁকে সেই ১৯৬৯-৭০ সালে যেমন উদ্যমী দেখেছি, যেমন অনুপ্রেরণা পেয়েছি তাও অব্যাহত ছিল বরাবর। বিশেষ করে প্রথম আলোর সঙ্গে তাঁর বন্ধন ছিল নিবিড়। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি আমরা যখন প্রথম আলো বের করার উদ্যোগ নিই, তখন প্রতিটি কাজে কাইয়ুম ভাইয়ের পরামর্শ নিয়েছি। অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে তিনি প্রথম আলোর লোগো, বিভিন্ন পৃষ্ঠাসজ্জা, ক্রোড়পত্রের লোগো—সবকিছুই করে দিয়েছেন। পরেও তাঁর পরামর্শ ছাড়া আমরা এসবের কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন করিনি। এখনো তাঁর অভাব বোধ করি প্রতিদিন, তাঁকে অনুভব করি সকল কাজে।
কাইয়ুম চৌধুরীর অপ্রকাশিত কবিতা
অনেক কথা বলার ছিল
অনেক স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছি
আঁকব বলে দু’জনে মিলে
চিত্রপটও সাজিয়ে তুলেছি।
সময় তোমার হয় না যখন
শুনবে কখন আমার কথা
স্বপ্ন আমায় দেখবে কখন
রং ছড়ানো যাবেই বৃথা?
এসো না আজ শুরু করি
রঙের খেলা চিত্রপটে
হাত বাড়িয়ে দাও না তুমি
নকশা করি শূন্য ঘটে।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল একটি বছর। আবার সেই আর্মি স্টেডিয়ামে জমে উঠেছে রাগ-রাগিণীর আসর। শিল্পী ও শ্রোতায় উৎসবমুখর হেমন্তের রাত। না থেকেও তিনি আছেন। উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে।
সে রাতে আমি উৎসব প্রাঙ্গণে ছিলাম না। কাইয়ুম ভাইয়ের দুঃসহ মৃত্যুসংবাদ পাই পরদিন সকালে ব্যাংকক বিমানবন্দরে। ঢাকায় ফিরে এসে এক গভীর শূন্যতায় বারবার তাঁর কথা মনে পড়েছে। এখনো প্রতিদিন তাঁকে স্মরণ করি। আগামী দিনগুলোতেও তিনি এভাবেই আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, আমাদের প্রিয় ‘কাইয়ুম ভাই’ তাঁর দীর্ঘ পাঁচ দশকের বেশি সময়ের শিল্পসাধনায় দেশের চারুকলার জগৎকেই সমৃদ্ধ করেননি, দেশের সংস্কৃতি ও জনজীবনকেও রাঙিয়ে দিয়েছেন। জনরুচির নির্মাণে রেখেছেন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। ক্যানভাসে, কাগজে, হাজার পাঁচেক বইয়ের প্রচ্ছদে, অগণিত পোস্টার, নিমন্ত্রণপত্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংবাদপত্রের লোগো, অলংকরণের ভেতর দিয়ে তিনি এক আশ্চর্য সুন্দর জগতের দরজা উন্মোচন করেছেন আমাদের জন্য। সেখানে আমরা অভিভূত হয়ে দেখি লাল, নীল, সবুজ, হলুদের চোখজুড়ানো সন্নিবেশ। লতাপাতা, ফুল, পাখি, নৌকা, মাছ, তালপাতার পাখা, দিগন্তবিস্তৃত মাঠের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদী, অবারিত আকাশ, বাংলার চিরশ্যামল প্রকৃতি। কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন তাঁর পঙ্ক্তিমালায় তুলে এনেছেন রূপসী বাংলার প্রকৃতি, তেমনি করে রংতুলিতে বাংলার লাবণ্যমাধুরী ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অক্লান্তভাবে তুলে ধরেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। তাই বিদগ্ধজনেরা তাঁকে বলেছেন রংতুলির জীবনানন্দ। ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীনালায় ঘুরে বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে। এখান থেকে আমি ছবির বিষয়বস্তু আহরণ করি।’
কাইয়ুম ভাইয়ের সত্তর বছরে পা রাখা উপলক্ষে ২০০৪ সালের ৬ মার্চ বেঙ্গল গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর চতুর্থ একক চিত্র প্রদর্শনী। নাম ছিল ‘আবহমান’। সে সময়ে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার ঐতিহ্য, আমার শিল্পের পশ্চাদ্ভূমি আমাকে জানতে হয়েছে। এ অঞ্চলের পাল যুগের শিল্পকর্ম, সেন যুগের ভাস্কর্য ও লোকশিল্পের যে আবহমান ধারা আমরা দেখি, সেটিই আমাদের ঐতিহ্য।’ এই শিল্পবোধ নিয়েই কাজ করেছেন তিনি। একসময় সুদিন ছিল এই দেশে। আঁকতে চেয়েছেন সেই সময়ের ছবি। তেলরং, জলরং, গোয়াশ, প্যাস্টেল, অ্যাক্রেলিক, কালি-কলম, ছাপচিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক পরিশীলিত নিজস্ব শিল্পভাষা বিনির্মাণ করেছিলেন তিনি।
ছবি আঁকার বাইরে সুকুমার শিল্পকলার প্রতিটি ক্ষেত্রেই গভীর আগ্রহ ছিল তাঁর। নেশা ছিল বই পড়া ও গান শোনার। সিনেমার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। বই, গানের রেকর্ড ও ভিডিওর বিপুল সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন তাঁর সারা জীবনের চেষ্টায়। সুকুমারকলার প্রতি এই অনুরাগ অনেকটা উত্তরাধিকারসূত্রেই পেয়েছিলেন। বাবার কলের গান ছিল। গ্রামোফোন রেকর্ডের সংগ্রহও ছিল ভালো। বাবার কোলে বসে দেখেছিলেন প্রথম সিনেমা। সেই অনুরাগ আমৃত্যু লালন করে গেছেন কাইয়ুম চৌধুরী।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন সমাজ ও সমকাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিল্পচর্চার বিপরীত মেরুতে। ছিলেন অত্যন্ত সমাজ-সচেতন, রাজনীতি-সচেতন মানুষ। ১৯৩৩ সালে তাঁর জন্ম নোয়াখালীতে। ১৯৪৯ সালে এসএসসি পাস করে তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত ঢাকা আর্ট কলেজে দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন। পাস করে বের হন ১৯৫৪ সালে। ছাত্রজীবনের সময়টি কেটেছে গৌরবময় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনে। সে সময় দেশের প্রধান কবি-সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে জহির রায়হানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। তাঁর প্রথম বই শেষ বিকেলের মেয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন। পরে তাঁর সিনেমার পোস্টারও এঁকেছেন। প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুতোষ ছড়া লিখেছেন। তাঁর ছড়ার বই প্রকাশিত হয়েছে তিনটি।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে কাইয়ুম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল আমার। সে বছর ফেব্রুয়ারির এক সকালে বন্ধু আসাদুজ্জামান নূরকে সঙ্গে নিয়ে আজিমপুরে কাইয়ুম ভাইয়ের বাড়িতে হাজির হয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের একুশের কবিতা সংকলনের প্রচ্ছদ আঁকিয়ে নেওয়ার জন্য। বজ্রে বাজে বাঁশী নামের সেই সংকলনের তিনরঙা প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলেন তিনি। অভ্যুত্থানের সেই দিনগুলোতে কাইয়ুম ভাইকে দেখেছি ছাত্র-শিক্ষক-শিল্পীদের মিছিলে অংশ নিতে। মুক্তিযুদ্ধের আগে চারু ও কারুশিল্পীদের যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল, তার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন তিনি ও শিল্পী মুর্তজা বশীর।
কাইয়ুম ভাইয়ের সঙ্গে সেই যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়েছিল। অটুট ছিল তাঁর মৃত্যু অবধি। তাঁকে সেই ১৯৬৯-৭০ সালে যেমন উদ্যমী দেখেছি, যেমন অনুপ্রেরণা পেয়েছি তাও অব্যাহত ছিল বরাবর। বিশেষ করে প্রথম আলোর সঙ্গে তাঁর বন্ধন ছিল নিবিড়। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি আমরা যখন প্রথম আলো বের করার উদ্যোগ নিই, তখন প্রতিটি কাজে কাইয়ুম ভাইয়ের পরামর্শ নিয়েছি। অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে তিনি প্রথম আলোর লোগো, বিভিন্ন পৃষ্ঠাসজ্জা, ক্রোড়পত্রের লোগো—সবকিছুই করে দিয়েছেন। পরেও তাঁর পরামর্শ ছাড়া আমরা এসবের কোনো পরিবর্তন বা সংযোজন করিনি। এখনো তাঁর অভাব বোধ করি প্রতিদিন, তাঁকে অনুভব করি সকল কাজে।
কাইয়ুম চৌধুরীর অপ্রকাশিত কবিতা
অনেক কথা বলার ছিল
অনেক স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছি
আঁকব বলে দু’জনে মিলে
চিত্রপটও সাজিয়ে তুলেছি।
সময় তোমার হয় না যখন
শুনবে কখন আমার কথা
স্বপ্ন আমায় দেখবে কখন
রং ছড়ানো যাবেই বৃথা?
এসো না আজ শুরু করি
রঙের খেলা চিত্রপটে
হাত বাড়িয়ে দাও না তুমি
নকশা করি শূন্য ঘটে।
No comments