সালাহউদ্দিনের খোঁজ মিললো
দীর্ঘ
৬৩ দিন পর। খোঁজ মিললো বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যোগাযোগ
প্রতিমন্ত্রী নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদের। মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের গলফ
লিংক এলাকায় রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরার সময় গতিবিধি সন্দেহজনক মনে
হওয়ায় তাঁকে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিখোঁজ এ নেতার সন্ধান
বার্তা পেয়েছেন তার পরিবার। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের একটি
হাসপাতাল থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদের
মোবাইলে একটি ফোন আসে। মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড
নিউরোজিক্যাল সায়েন্স (মিমহ্যান্স)-এর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক মহিলা
ইংরেজিতে হাসিনা আহমেদকে জানান, ‘আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’ এরপরই টেলিফোনে অসুস্থ সালাহউদ্দিন
আহমেদের কন্ঠ ভেসে আসে। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কেমন আছো হাসিনা। আমি
সালাহউদ্দিন বলছি। আমি বেঁচে আছি। তুমি সবাইকে খবরটি জানিয়ে দাও। আমাকে
এখান থেকে উদ্ধার করে কিভাবে নিয়ে যাবে একটু দ্রুত ব্যবস্থা করো।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিনের বার্তা নিয়ে ফোনটি যখন আসে তখন
মেয়েকে স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে নিয়ে গাড়িতে করে বাসায় ফিরছিলেন হাসিনা
আহমেদ। স্বামীর কণ্ঠ শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। বাসায় মেয়েকে রেখেই
ছুটে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসায়। তার সঙ্গে প্রায় ৪৫ মিনিট
কথা বলে হাসিনা আহমেদ বাসায় ফিরেন। এরপর তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা এবং
স্বামীর সন্ধান পেয়ে দেশবাসী, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট, সকল রাজনৈতিক দল ও
গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে কখন ও কারা সালাহউদ্দিন
আহমেদকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন
তার স্ত্রী। এদিকে সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাকে ফিরিয়ে আনার
ব্যবস্থা করতে ভারতের মেঘালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে তার পরিবার। গতকাল
দুপুরেই ভিসার জন্য ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেছেন হাসিনা আহমেদ ও তার দুই
আত্মীয়। হাসিনা আহমেদ জানিয়েছেন ভিসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা মেঘালয়ের
রাজধানী শিলংয়ের উদ্দেশে রওনা দেবেন। সালাহউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার
জন্য ভিসা প্রসেসিংয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এদিকে গতকাল
বিকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ
শরণ বলেছেন, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের বিষয়টি বিএনপির পক্ষ থেকে
আমাকে জানানো হয়েছে। তার বিষয়টি যাচাই করে দেখা হচ্ছে। ওদিকে মঙ্গলবার
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের দ্য নর্থইস্ট টুডে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের গলফ লিংক এলাকার
রাস্তায় ইতস্তত ঘোরাফেরার সময় গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সোমবার
সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। প্রাথমিক কথাবার্তায়
অপ্রকৃতিস্থ মনে হওয়ায় মঙ্গলবার মিমহ্যানস হাসপাতালে নেয় পুলিশ। হাসপাতালে
নেয়ার পর তাঁর পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে রোগী সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজেই
নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, তিনি বিএনপির একজন নেতা। তিনি শিলংয়ে কিভাবে
এসেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমি জানি না’। এ সংবাদের সঙ্গে হাসপাতালে
পুলিশের সঙ্গে দাঁড়ানো অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদের একটি ছবিও প্রকাশ করেছে
নর্থইস্ট টুডে। ছবিতে দেখা যায়, সাদা টি-শার্ট পরিহিত সালাহউদ্দিনের গায়ে
জড়ানো রয়েছে একটি খয়েরি-সাদা চেক চাদর। তাঁর হাত ধরে রেখেছেন একজন পুলিশ
সদস্য। পেছনে দেখা যায় হাসপাতালের একজন নার্সকে। এদিকে মেঘালয় পুলিশ সূত্রে
বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, শিলংয়ের সবচেয়ে কাছে বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি
সেটাও প্রায় ৪০-৪২ মাইল দূরে। প্রাথমিকভাবে মেঘালয় পুলিশ অনুমান করছে
রবিবার রাতে সেই ডাউকির কাছে সীমান্ত পেরিয়েই সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতে
ঢোকেন কিংবা তাকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তারপর সেখান থেকে কোন বাস বা ভাড়ার
টেম্পোয় চেপে তিনি হয়তো সোমবার ভোরে শিলংয়ে পৌঁছেন। এবং কিছুক্ষণ পর পুলিশ
তাকে আটক করে। সূত্রগুলোর বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, এখন
সালাহউদ্দিন আহমেদের ব্যাপারটি নিয়ে মেঘালয়ের পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃৃপক্ষের
সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কীভাবে মামলা এগোবে এবং তাকে নিয়ে কী করা হবে মেঘালয়
সরকার বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথাবার্তা বলছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। তবে মামলার জট কিছুটা জটিল হতে
পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে সালাহউদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার
ঘটনায় নানা আলোচনা জমে উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। তারা মনে করছেন, সিটি
নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও আন্দোলন থেকে সরে আসার ফলাফলই হয়তো
সালাহউদ্দিন উদ্ধার।
যেভাবে আটক ও হাসপাতালে : মেঘালয়ের পূর্ব খাসী পাহাড় পুলিশ সুপার এম খারক্রাং কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার সাতসকালে ভদ্রলোক উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন শিলং গলফ ক্লাবের সামনে রাস্তায়। চোখের চাহনিও একটু অদ্ভুত। যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা, এলাকায় অপরিচিত ওই ভদ্রলোকের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেন। খারক্রাং বলেন, তখন সেখান দিয়েই যাচ্ছিল পুলিশ পেট্রোলের একটি জিপ। টহলদার বাহিনী লোকটিকে ধরে নিয়ে কাছেই শিলংয়ের প্যাসটিওর বিটহাউস থানাতে নিয়ে যায়। ভদ্রলোক (সালাহউদ্দিন) থানায় গিয়েই বলতে শুরু করেন, ‘দেখুন আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি। আমি সে দেশে স্টেট মিনিস্টারও ছিলাম! কিন্তু ভদ্রলোকের পকেটে একটা কাগজ পর্যন্ত নেই। কোনও টাকা-পয়সা দূরে থাক, পকেটে একটা মানিব্যাগও নেই। ফলে যথারীতি শিলংয়ের পুলিশ প্রথমে তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করেনি, পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিয়েছিল। আচ্ছা বুঝলাম আপনি বাংলাদেশে মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু বর্ডার পেরিয়ে শিলং অবধি এলেন কী করে? পুলিশের এই প্রশ্নের জবাবে ভদ্রলোক আবার ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মুখে কোনও কথা জোগায় না। ওনার অবস্থা দেখে থানাতেই সিদ্ধান্ত হয় ইনি নিশ্চয় মানসিক ভারসাম্যহীন। আর তারপরই পুলিশ তাকে শিলংয়ের মানসিক প্রতিবন্ধীর হাসপাতাল মিমহ্যানসে (মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্স) ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। খারক্রাং বলেন, ভদ্রলোক বাংলাদেশী কিনা বা সালাহউদ্দিন আহমেদ কিনা সেটা কিন্তু আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। ওনার কাছে কোনও কাগজপত্র নেই। কোনও আত্মীয়-পরিজন এসে ওকে এখনও চিহ্নিতও করেননি। ফলে আপাতত ওনাকে একজন বিদেশী নাগরিক বলে চিহ্নিত করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার জন্য ফরেনার্স অ্যাক্টে আমরা রীতিমাফিক মামলা দায়ের করেছি। আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে দিতাম, কিন্তু তার শরীর অসুস্থ হওয়ার কারণে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিতে হয়েছে। একই কারণে পুলিশ এখনও তাকে ভালভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। খারক্রাং বলেন, মেঘালয় পুলিশ সার্ভিসে দীর্ঘ কর্মজীবনেও এমন কেস খুব কমই পেয়েছি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আগে হয়নি বললেই চলে। এদিকে শিলং শহরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বিবেক সিয়াম বিবিসিকে বলেছেন, একজন ব্যক্তি উদভ্রান্তের মতো গল্ফ লিংক এলাকায় ঘুরছেন- এ খবর পেয়েই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার দেহে কোন চোট বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু তিনি নিজে হৃদরোগ আর লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও তিনি গুছিয়ে দিতে পারছিলেন না। তাই তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখানে তিনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, সেটা তাকে জেরা করার পরেই বোঝা যাবে।
ইলেকট্রিক শক বা শক থেরাপির লক্ষণ ছিল: চিকিৎসক: মিমহ্যানসের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই রোগীকে সমপ্রতি ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে বলেই তারা অনুমান করছেন। খুব জোরালো ইলেকট্রিক শক খেলে বা অন্য কোনও শক থেরাপির মানুষের যেমন সাময়িক মস্তিষ্ক বৈকল্য হয় তার মধ্যেও সেরকমই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। তিনি স্বাভাবিক বা প্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিলেন না। আসলে মিমহ্যানসে ডাক্তারদের চিকিৎসায় সোমবার রাত থেকেই অল্প অল্প করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার লক্ষণ দেখাতে শুরু করেন তিনি। তারপর গতকাল সকালে তিনি মিমহ্যানসের চিকিৎসকদের জানান, ঢাকায় তার স্ত্রীর টেলিফোন নম্বর তার মনে পড়েছে। সেখানে তিনি ফোন করে কথা বলতে চান। তবে মিমহ্যানসে চিকিৎসকরা এদিন তাকে পরীক্ষা করে দেখেছেন তার হৃদযন্ত্রে কিছু দুর্বলতার লক্ষণ আছে। ফলে মানসিক হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে এদিন বিকালে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে মিমহ্যানস হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট ডা. ডি সিনকন জানান, সোমবার বিকালে পুলিশ একজন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে। নিজেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করা ওই ব্যক্তিকে মিমহ্যানসে নিয়ে আসার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আমাদের মনোচিকিৎসকরা দেখেন, ওই ব্যক্তিটি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কথা জানালে তাকে আবার শিলং সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত সালাহউদ্দিন : এদিকে দৈনিক মানবজমিনের কলকাতা প্রতিনিধি পরিতোষ পাল জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদকে গতকাল বিকালে পুলিশ শিলং সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার শিলংয়ের গল্ফ লিংক এলাকায় এক ব্যক্তিকে অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। থানায় নেয়া হলে সে তার নাম সালাহউদ্দিন আহমেদ হিসেবে জানালেও তাকে খুবই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। তার উপর মানসিক নির্যাতন হয়েছে অনুমান করে পুলিশ তাকে রাতেই মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। এরপরই হার্টের চিকিৎসার জন্য পুলিশ তাকে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার হার্টের চিকিৎসা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, সালাহউদ্দিনকে যখন আটক করা হয় তখন তার কাছে কোন নথিই পাওয়া যায়নি। তবে সে যে বাংলাদেশী সে কথা পুলিশকে শুরুতেই জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে শিলংয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে কোন কিছু জানাতে পারেননি। সালাহউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ ব্যাপারে কোন তথ্য পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শরীর একটু ভাল হলেই তাকে ফরেনার্স আইনে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে আজ অথবা কাল আদালতে তোলা হবে।
‘আমি বেঁচে আছি, সবাইকে জানিয়ে দাও’ :‘আমি বেঁচে আছি, সবাইকে জানিয়ে দাও’- গতকাল মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে ফোনে স্ত্রীকে এ কথা বলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল দুপুর আড়াইটায় গুলশানের নিজ বাসায় গণমাধ্যমকে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন। হাসিনা আহমেদ জানান, বেলা ১১টা থেকে ১২টার মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ভারতের মেঘালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোজিক্যাল সায়েন্স (মিমহ্যান্স) হাসপাতালের পরিচয় দিয়ে এক মহিলা কর্মকর্তা ইংরেজিতে বলেন, ‘আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।’ হাসিনা এই সময়ে বলেন, ‘আমি উনার মিসেস বলছি।’ এরপরই ওই পাশের টেলিফোনে অসুস্থ সালাহউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠ ভেসে আসে। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কেমন আছো হাসিনা। আমি সালাহউদ্দিন বলছি। আমি বেঁচে আছি। মোটামুটি ভাল আছি। তুমি সবাইকে খবরটি জানিয়ে দাও। সবাই যেন আমার জন্য দোয়া করে। দ্রুত আমার দলের লোকজন ও গণমাধ্যমকে জানাও। আমাকে এখানে ফেলে গেছে। তিনি আরও বলেছেন, ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করো। আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে কিভাবে নিয়ে যাবে একটু দ্রুত ব্যবস্থা করো। এখানে খুব ঠাণ্ডা। আমার পর্যাপ্ত কাপড়-চোপড় নেই।’ হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমার স্বামী বেঁচে আছেন। মেঘালয়ের শিলংয়ের মিমহ্যান্স মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমার স্বামীর সন্ধান পাওয়ায় আমি দেশবাসী, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট, সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমার স্বামীর সন্ধান বার্তাটি পেয়ে আমি মানসিকভাবে শান্তি পেয়েছি। আমি আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি আমার ডাক শুনেছেন। আমার ডাক কবুল করেছেন। আমার বিশ্বাস ছিল আমার স্বামী জীবিত আছেন এবং ইনশাআল্লাহ্ আমাদের মাঝে একদিন ফিরে আসবেন।’ আপনি কি সালাহউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠ নিশ্চিত হয়েছেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর কণ্ঠ চিনি। ১০০ বছর পর হলেও তার কণ্ঠ আমি চিনবোই।’ কারা কখন ও কিভাবে সালাহউদ্দিন আহমেদকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন কিছু জানতে পেরেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘এসব আমি জানি না। আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।’ সালাহউদ্দিন আহমেদকে আনতে কখন ভারত যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা তার কাছে দ্রুততম সময়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ভিসার আবেদন করা হয়েছে। ভিসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি ও আমার দুই আত্মীয় যাবেন। এ ব্যাপারে আমরা সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খবরটি শুনেই আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমাকে বলেছেন, তুমি দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ভিসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে যদি কোথাও কাউকে বলতে হয়, আমাকে জানাও আমি বলে দিচ্ছি।’ এ সময় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও ডা. ফরহাদ শুভ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিথ্যাচার প্রমাণিত- নাসিম: সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করেছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথা হয়েছে। তার এই সন্ধানের খবরই প্রমাণ করে এতদিন বিএনপি মিথ্যাচার করেছে।’ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া এতদিন দাবি করে আসছেন সালাহউদ্দিন র্যাবের কাছে আছে। সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। তাদের এসব দাবি এখন মিথ্যাচারে পরিণত হয়েছে। সালাহউদ্দিনের গুমের বিষয়ে বিএনপি দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের পর তা বিএনপির মিথ্যাচার প্রমাণ হয়েছে। জনগণ বিএনপির কোন মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবে না। এদিকে দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের কথোপকথনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার, বিএনপির এই নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ করেনি। তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার সন্ধান করছিল পুলিশ। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার কয়েকটি মামলা আছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। তিনি কিভাবে ভারতে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হবে।
যেভাবে আটক ও হাসপাতালে : মেঘালয়ের পূর্ব খাসী পাহাড় পুলিশ সুপার এম খারক্রাং কয়েকটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার সাতসকালে ভদ্রলোক উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন শিলং গলফ ক্লাবের সামনে রাস্তায়। চোখের চাহনিও একটু অদ্ভুত। যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছেন। পাজামা-পাঞ্জাবি পরা, এলাকায় অপরিচিত ওই ভদ্রলোকের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেন। খারক্রাং বলেন, তখন সেখান দিয়েই যাচ্ছিল পুলিশ পেট্রোলের একটি জিপ। টহলদার বাহিনী লোকটিকে ধরে নিয়ে কাছেই শিলংয়ের প্যাসটিওর বিটহাউস থানাতে নিয়ে যায়। ভদ্রলোক (সালাহউদ্দিন) থানায় গিয়েই বলতে শুরু করেন, ‘দেখুন আমি কিন্তু বাংলাদেশের একজন ভিআইপি। আমি সে দেশে স্টেট মিনিস্টারও ছিলাম! কিন্তু ভদ্রলোকের পকেটে একটা কাগজ পর্যন্ত নেই। কোনও টাকা-পয়সা দূরে থাক, পকেটে একটা মানিব্যাগও নেই। ফলে যথারীতি শিলংয়ের পুলিশ প্রথমে তার কথা একেবারেই বিশ্বাস করেনি, পাগলের প্রলাপ বলেই উড়িয়ে দিয়েছিল। আচ্ছা বুঝলাম আপনি বাংলাদেশে মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু বর্ডার পেরিয়ে শিলং অবধি এলেন কী করে? পুলিশের এই প্রশ্নের জবাবে ভদ্রলোক আবার ফ্যালফ্যাল করে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মুখে কোনও কথা জোগায় না। ওনার অবস্থা দেখে থানাতেই সিদ্ধান্ত হয় ইনি নিশ্চয় মানসিক ভারসাম্যহীন। আর তারপরই পুলিশ তাকে শিলংয়ের মানসিক প্রতিবন্ধীর হাসপাতাল মিমহ্যানসে (মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল অ্যান্ড নিউরোলজিক্যাল সায়েন্স) ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। খারক্রাং বলেন, ভদ্রলোক বাংলাদেশী কিনা বা সালাহউদ্দিন আহমেদ কিনা সেটা কিন্তু আমরা এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। ওনার কাছে কোনও কাগজপত্র নেই। কোনও আত্মীয়-পরিজন এসে ওকে এখনও চিহ্নিতও করেননি। ফলে আপাতত ওনাকে একজন বিদেশী নাগরিক বলে চিহ্নিত করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার জন্য ফরেনার্স অ্যাক্টে আমরা রীতিমাফিক মামলা দায়ের করেছি। আমরা তাকে আদালতে পাঠিয়ে দিতাম, কিন্তু তার শরীর অসুস্থ হওয়ার কারণে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে দিতে হয়েছে। একই কারণে পুলিশ এখনও তাকে ভালভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। খারক্রাং বলেন, মেঘালয় পুলিশ সার্ভিসে দীর্ঘ কর্মজীবনেও এমন কেস খুব কমই পেয়েছি। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আগে হয়নি বললেই চলে। এদিকে শিলং শহরের পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট বিবেক সিয়াম বিবিসিকে বলেছেন, একজন ব্যক্তি উদভ্রান্তের মতো গল্ফ লিংক এলাকায় ঘুরছেন- এ খবর পেয়েই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তার দেহে কোন চোট বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। কিন্তু তিনি নিজে হৃদরোগ আর লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও তিনি গুছিয়ে দিতে পারছিলেন না। তাই তাকে একটি মানসিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে। এখানে তিনি কী উদ্দেশ্যে এসেছেন, সেটা তাকে জেরা করার পরেই বোঝা যাবে।
ইলেকট্রিক শক বা শক থেরাপির লক্ষণ ছিল: চিকিৎসক: মিমহ্যানসের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই রোগীকে সমপ্রতি ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে বলেই তারা অনুমান করছেন। খুব জোরালো ইলেকট্রিক শক খেলে বা অন্য কোনও শক থেরাপির মানুষের যেমন সাময়িক মস্তিষ্ক বৈকল্য হয় তার মধ্যেও সেরকমই লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। তিনি স্বাভাবিক বা প্রকৃতিস্থ অবস্থায় ছিলেন না। আসলে মিমহ্যানসে ডাক্তারদের চিকিৎসায় সোমবার রাত থেকেই অল্প অল্প করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার লক্ষণ দেখাতে শুরু করেন তিনি। তারপর গতকাল সকালে তিনি মিমহ্যানসের চিকিৎসকদের জানান, ঢাকায় তার স্ত্রীর টেলিফোন নম্বর তার মনে পড়েছে। সেখানে তিনি ফোন করে কথা বলতে চান। তবে মিমহ্যানসে চিকিৎসকরা এদিন তাকে পরীক্ষা করে দেখেছেন তার হৃদযন্ত্রে কিছু দুর্বলতার লক্ষণ আছে। ফলে মানসিক হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে এদিন বিকালে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তবে মিমহ্যানস হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপারিনটেনডেন্ট ডা. ডি সিনকন জানান, সোমবার বিকালে পুলিশ একজন ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসে। নিজেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করা ওই ব্যক্তিকে মিমহ্যানসে নিয়ে আসার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। আমাদের মনোচিকিৎসকরা দেখেন, ওই ব্যক্তিটি মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। কিন্তু তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কথা জানালে তাকে আবার শিলং সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত সালাহউদ্দিন : এদিকে দৈনিক মানবজমিনের কলকাতা প্রতিনিধি পরিতোষ পাল জানিয়েছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদকে গতকাল বিকালে পুলিশ শিলং সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, সোমবার শিলংয়ের গল্ফ লিংক এলাকায় এক ব্যক্তিকে অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। থানায় নেয়া হলে সে তার নাম সালাহউদ্দিন আহমেদ হিসেবে জানালেও তাকে খুবই বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। তার উপর মানসিক নির্যাতন হয়েছে অনুমান করে পুলিশ তাকে রাতেই মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকরা জানান, তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। এরপরই হার্টের চিকিৎসার জন্য পুলিশ তাকে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই তার হার্টের চিকিৎসা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, সালাহউদ্দিনকে যখন আটক করা হয় তখন তার কাছে কোন নথিই পাওয়া যায়নি। তবে সে যে বাংলাদেশী সে কথা পুলিশকে শুরুতেই জানিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সালাহউদ্দিন কিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে শিলংয়ে এসেছেন সে ব্যাপারে কোন কিছু জানাতে পারেননি। সালাহউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ ব্যাপারে কোন তথ্য পুলিশ জানাতে পারেনি। তবে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। শরীর একটু ভাল হলেই তাকে ফরেনার্স আইনে বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগে আজ অথবা কাল আদালতে তোলা হবে।
‘আমি বেঁচে আছি, সবাইকে জানিয়ে দাও’ :‘আমি বেঁচে আছি, সবাইকে জানিয়ে দাও’- গতকাল মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে ফোনে স্ত্রীকে এ কথা বলেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল দুপুর আড়াইটায় গুলশানের নিজ বাসায় গণমাধ্যমকে দেয়া এক ব্রিফিংয়ে তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ এ কথা জানিয়েছেন। হাসিনা আহমেদ জানান, বেলা ১১টা থেকে ১২টার মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ তার মোবাইলে একটি ফোন আসে। ভারতের মেঘালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোজিক্যাল সায়েন্স (মিমহ্যান্স) হাসপাতালের পরিচয় দিয়ে এক মহিলা কর্মকর্তা ইংরেজিতে বলেন, ‘আপনার স্বামী আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।’ হাসিনা এই সময়ে বলেন, ‘আমি উনার মিসেস বলছি।’ এরপরই ওই পাশের টেলিফোনে অসুস্থ সালাহউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠ ভেসে আসে। সালাহউদ্দিন বলেন, ‘কেমন আছো হাসিনা। আমি সালাহউদ্দিন বলছি। আমি বেঁচে আছি। মোটামুটি ভাল আছি। তুমি সবাইকে খবরটি জানিয়ে দাও। সবাই যেন আমার জন্য দোয়া করে। দ্রুত আমার দলের লোকজন ও গণমাধ্যমকে জানাও। আমাকে এখানে ফেলে গেছে। তিনি আরও বলেছেন, ম্যাডামের সঙ্গে যোগাযোগ করো। আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে কিভাবে নিয়ে যাবে একটু দ্রুত ব্যবস্থা করো। এখানে খুব ঠাণ্ডা। আমার পর্যাপ্ত কাপড়-চোপড় নেই।’ হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমার স্বামী বেঁচে আছেন। মেঘালয়ের শিলংয়ের মিমহ্যান্স মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমার স্বামীর সন্ধান পাওয়ায় আমি দেশবাসী, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট, সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমার স্বামীর সন্ধান বার্তাটি পেয়ে আমি মানসিকভাবে শান্তি পেয়েছি। আমি আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি আমার ডাক শুনেছেন। আমার ডাক কবুল করেছেন। আমার বিশ্বাস ছিল আমার স্বামী জীবিত আছেন এবং ইনশাআল্লাহ্ আমাদের মাঝে একদিন ফিরে আসবেন।’ আপনি কি সালাহউদ্দিন আহমেদের কণ্ঠ নিশ্চিত হয়েছেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর কণ্ঠ চিনি। ১০০ বছর পর হলেও তার কণ্ঠ আমি চিনবোই।’ কারা কখন ও কিভাবে সালাহউদ্দিন আহমেদকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন কিছু জানতে পেরেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘এসব আমি জানি না। আমাকে এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।’ সালাহউদ্দিন আহমেদকে আনতে কখন ভারত যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা তার কাছে দ্রুততম সময়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ভিসার আবেদন করা হয়েছে। ভিসা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি ও আমার দুই আত্মীয় যাবেন। এ ব্যাপারে আমরা সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খবরটি শুনেই আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। আমাকে বলেছেন, তুমি দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ভিসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে যদি কোথাও কাউকে বলতে হয়, আমাকে জানাও আমি বলে দিচ্ছি।’ এ সময় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও ডা. ফরহাদ শুভ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মিথ্যাচার প্রমাণিত- নাসিম: সালাহউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করেছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথা হয়েছে। তার এই সন্ধানের খবরই প্রমাণ করে এতদিন বিএনপি মিথ্যাচার করেছে।’ নাসিম বলেন, খালেদা জিয়া এতদিন দাবি করে আসছেন সালাহউদ্দিন র্যাবের কাছে আছে। সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আছে। তাদের এসব দাবি এখন মিথ্যাচারে পরিণত হয়েছে। সালাহউদ্দিনের গুমের বিষয়ে বিএনপি দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব খবরের পর তা বিএনপির মিথ্যাচার প্রমাণ হয়েছে। জনগণ বিএনপির কোন মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবে না। এদিকে দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের কথোপকথনের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার, বিএনপির এই নেতাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ করেনি। তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার সন্ধান করছিল পুলিশ। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার কয়েকটি মামলা আছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। তিনি কিভাবে ভারতে গেলেন তা খতিয়ে দেখা হবে।
No comments