ব্লগার অনন্তকে কুপিয়ে হত্যা, লেখালেখিই ছিল অনন্তের ধ্যানজ্ঞান by উজ্জ্বল মেহেদী ও সুমনকুমার দাশ
অনন্ত বিজয় দাশ |
সিলেট
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে লেখক, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের
লাশ। চলছে ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি। মর্গের প্রাঙ্গণজুড়ে পরিচিতজনেরা। সবাই
উদ্বিগ্ন। আসছেন, যাচ্ছেন। চলছে নীরব অশ্রুবিসর্জনও। আগন্তুকেরা একজন
আরেকজনের সঙ্গে অনুচ্চস্বরে কথা বলছিলেন।
এরই
মধ্যে দুজনের উচ্চস্বরের প্রশ্নোত্তরে ভাঙে মর্গের আশপাশের নীরবতা।
‘অনন্ত? কোন অনন্ত...? ওই যে শান্ত-সুমন্ত...!’ এই ‘শান্ত-সুমন্ত’ই অনন্ত
বিজয় দাশ। ওই নামেই মানুষের কাছে বেশি পরিচিত হয়ে ওঠা এ মানুষটির
ধ্যানজ্ঞানই ছিল লেখালেখি করা। আর এর মধ্য দিয়ে নিজের কাছে যেটা কুসংস্কার
বলে মনে হয়েছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা।
সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় গতকাল সকালে এই অনন্তকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ‘শান্ত-সুমন্ত’ সম্পর্কে পরিবার ছাড়াও প্রতিবেশীরা ছিলেন ভালোরকম অবহিত। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে পড়াশোনা-লেখালেখিতেই সময়টা কাটাতেন তিনি। অনন্ত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে পাস করে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর আগে যোগদান করেন। ব্যাংকের সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজার শাখায় কর্মরত ছিলেন।
বন্ধুরা জানান, মুক্তমনা ও সামহোয়্যার ইন ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি ছাড়াও অনন্ত ফেসবুকেও ছিলেন সক্রিয়। গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একাধিক লেখা লেখেন। বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতেন তিনি। অনন্তর লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পার্থিব, সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেস্কো অধ্যায়, ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা।
সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় গতকাল সকালে এই অনন্তকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ‘শান্ত-সুমন্ত’ সম্পর্কে পরিবার ছাড়াও প্রতিবেশীরা ছিলেন ভালোরকম অবহিত। কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে পড়াশোনা-লেখালেখিতেই সময়টা কাটাতেন তিনি। অনন্ত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগ থেকে পাস করে পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দুই বছর আগে যোগদান করেন। ব্যাংকের সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজার শাখায় কর্মরত ছিলেন।
বন্ধুরা জানান, মুক্তমনা ও সামহোয়্যার ইন ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি ছাড়াও অনন্ত ফেসবুকেও ছিলেন সক্রিয়। গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি সিলেটের গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে একাধিক লেখা লেখেন। বস্তুবাদ ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগে লিখতেন তিনি। অনন্তর লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পার্থিব, সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেস্কো অধ্যায়, ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা।
সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় অনন্ত বিজয় দাশ নামে এক লেখক ও ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতা-কর্মীরা l ছবি: প্রথম আলো |
গত
ফেব্রুয়ারিতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়ের
অবিশ্বাসের দর্শন বইয়ের প্রথম সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন অনন্ত। তিনি
যুক্তি নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
এ ছাড়া অনন্ত মুক্তমনা ব্লগের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সমন্বয়ক ছিলেন। সিলেটের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ‘সেক্যুলারিজম, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানমনস্কতা’ বিষয়ক তৎপরতার জন্য ‘মুক্তমনা ২০০৫’ পুরস্কার পান অনন্ত।
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত দুজন সংগঠক বলেন, অনন্ত বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে ছাত্রাবস্থা থেকেই সভা-সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছিলেন। কুসংস্কার, সংস্কারবদ্ধ জীবনাচারণ, অপবিশ্বাস আর চিরায়ত প্রথার বিরুদ্ধে যুক্তি ও মুক্তচিন্তা দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে তাঁর সংগঠন ও যুক্তি পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এসব কারণেই অনন্তকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
জীবনের শেষ স্ট্যাটাস: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে সরকারদলীয় স্থানীয় এক সাংসদের মন্তব্য নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন অনন্ত। গতকাল সকাল আটটা ৩৮ মিনিটে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন। এটিই ছিল তাঁর শেষ স্ট্যাটাস। তাতে লেখেন, ‘...২০০৭ সালের দিকে আমি যখন যুক্তির প্রথম সংখ্যাটা সম্পাদনা করি, সেখানে লেখক সুমন তুরহান-এর লেখা প্রকাশ করেছিলাম, যার নাম ছিল সিলেটি মৌলবাদ।’
লেখাটির শেষের কিছু অংশ, ‘সিলেট, মহাসমুদ্রের একটি ক্ষুদ্রতম চর, আর আমরা সেই চরের অধিপতিরা আর কিছু করতে না পারলেও জন্ম দিয়েছি একটি স্বতন্ত্র মৌলবাদের। সিলেটি মৌলবাদ, অত্যন্ত নীরবে, বহুদিন ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মহামারি আকারে, এখনই এই প্রগতিবিরোধী আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। পৃথিবীটা অনেক বড়ো, তবে আমাদের সুশীল ভণ্ডরা এখনো বেশ আদিম, তাঁদের সময় এসেছে কুয়োর বাইরে বেরিয়ে এসে বিশাল বিশ্বটাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার। আমরা প্রত্যেকে মানুষ, এবং আমরা প্রত্যেকেই বাঙলাদেশের বাঙালি—এই সহজ সত্যটি উপলব্ধি করতে সিলেটবাসীর আর কতকাল লাগবে?’
চোখ দান করা হলো না: অনন্ত তাঁর মরনোত্তর চক্ষুদান প্রসঙ্গে বছর খানেক আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সন্ধানী ইউনিটের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন। এই হাসপাতালে চোখ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গতকাল মৃত্যুর পর তাঁর আর চোখ দান করা হয়নি।
অনন্তের বাবা রবীন্দ্র কুমার দাশ ও মা পীযূষ বালা দাশ অবসর জীবন যাপন করছেন।
এ ছাড়া অনন্ত মুক্তমনা ব্লগের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সমন্বয়ক ছিলেন। সিলেটের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ‘সেক্যুলারিজম, যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানমনস্কতা’ বিষয়ক তৎপরতার জন্য ‘মুক্তমনা ২০০৫’ পুরস্কার পান অনন্ত।
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত দুজন সংগঠক বলেন, অনন্ত বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিবাদী সমাজ গঠনে ছাত্রাবস্থা থেকেই সভা-সেমিনার আয়োজনের পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছিলেন। কুসংস্কার, সংস্কারবদ্ধ জীবনাচারণ, অপবিশ্বাস আর চিরায়ত প্রথার বিরুদ্ধে যুক্তি ও মুক্তচিন্তা দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে তাঁর সংগঠন ও যুক্তি পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এসব কারণেই অনন্তকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
জীবনের শেষ স্ট্যাটাস: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে সরকারদলীয় স্থানীয় এক সাংসদের মন্তব্য নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন অনন্ত। গতকাল সকাল আটটা ৩৮ মিনিটে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন। এটিই ছিল তাঁর শেষ স্ট্যাটাস। তাতে লেখেন, ‘...২০০৭ সালের দিকে আমি যখন যুক্তির প্রথম সংখ্যাটা সম্পাদনা করি, সেখানে লেখক সুমন তুরহান-এর লেখা প্রকাশ করেছিলাম, যার নাম ছিল সিলেটি মৌলবাদ।’
লেখাটির শেষের কিছু অংশ, ‘সিলেট, মহাসমুদ্রের একটি ক্ষুদ্রতম চর, আর আমরা সেই চরের অধিপতিরা আর কিছু করতে না পারলেও জন্ম দিয়েছি একটি স্বতন্ত্র মৌলবাদের। সিলেটি মৌলবাদ, অত্যন্ত নীরবে, বহুদিন ধরেই ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ মহামারি আকারে, এখনই এই প্রগতিবিরোধী আঞ্চলিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার। পৃথিবীটা অনেক বড়ো, তবে আমাদের সুশীল ভণ্ডরা এখনো বেশ আদিম, তাঁদের সময় এসেছে কুয়োর বাইরে বেরিয়ে এসে বিশাল বিশ্বটাকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার। আমরা প্রত্যেকে মানুষ, এবং আমরা প্রত্যেকেই বাঙলাদেশের বাঙালি—এই সহজ সত্যটি উপলব্ধি করতে সিলেটবাসীর আর কতকাল লাগবে?’
চোখ দান করা হলো না: অনন্ত তাঁর মরনোত্তর চক্ষুদান প্রসঙ্গে বছর খানেক আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সন্ধানী ইউনিটের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন। এই হাসপাতালে চোখ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গতকাল মৃত্যুর পর তাঁর আর চোখ দান করা হয়নি।
অনন্তের বাবা রবীন্দ্র কুমার দাশ ও মা পীযূষ বালা দাশ অবসর জীবন যাপন করছেন।
No comments