উগ্রবাদীরা সমাজকে দুষ্টচক্রের ফাঁদে ফেলবে by আবুল মোমেন
মুসলিম
বিশ্বের অস্থিরতা বর্তমানে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে কেবল ইরানের
নেতৃত্ব পশ্চিমের সঙ্গে সম্মানজনকভাবে একটি দর-কষাকষি নিষ্পত্তি করেছে।
হয়তো এর চূড়ান্ত ফলাফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে জুন পর্যন্ত। তবু পারমাণবিক
শক্তি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি পর্যন্ত পৌঁছানো ইরানের দিক থেকে কেবল
অগ্রগতি নয়, এতে নেতৃত্বের পরিপক্বতার পরিচয়ও মিলছে।
এক-এগারোর পর বিভিন্ন ছুতানাতা ধরে মার্কিন নেতৃত্বে যেভাবে ইরাক ও লিবিয়ায় আক্রমণ ঘটল, তার পরও কেন মুসলিম বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা জাগল না, তা বিস্ময়কর। মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত কেন্দ্র সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের ওপর মার্কিন বলয়ের অশুভ প্রভাবের ফল এটা। রাজতন্ত্রী বা স্বৈরাচারী শাসকদের স্বার্থকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলে এই আত্মঘাতী প্রভাব বহাল রইল।
বিশ্ব পুঁজিবাদ তার সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সব সময় নতুন নতুন ছক কেটেছে, চাল দিয়েছে। তাদের হাতে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ তেল ব্যবসা, আফ্রিকাতেও তা-ই। উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নও তাদেরই বিনিয়োগের ক্ষেত্র, ভোগ্যপণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ কবজা করার জন্য মুক্তবাজারের যূপকাষ্ঠে সবার বলি হওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হলো। বহুকাল ধরেই পুঁজিবাদ তার মূল শত্রুকে চেনে—জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব। ১৯৯০-এর পর থেকে পুরো বিশ্ব তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল। বিশ্বায়নের সুযোগে ভোগবাদী মায়াজাল ছড়িয়ে মানুষকে দলে দলে নিতান্ত ভোক্তার খেলো ভূমিকায় নামাতে পারলেও পুঁজিবাদের সংকট কাটেনি। কিন্তু এর খেসারত হিসেবে দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, শিক্ষা এবং অবশ্যই ধর্মও মানবের বামনায়নের এ রোগ নিরাময়ে কাজ করছে না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলিম সমাজে পশ্চিমাবিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু তা ঘটছে কেবল ধর্মীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ধর্মের নামেই নানা দেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে। কিন্তু এর কোনোটিই পুঁজিবাদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে না। তার জন্য জাতীয় চেতনায়—সঙ্গে নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চেতনায়ও—সমৃদ্ধ জনপ্রিয় রাজনীতির প্রয়োজন। আরব ও আফ্রিকার গোত্রভিত্তিক সমাজে এ কাজটা বরাবর কঠিন রয়ে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের কবজায় রেখে পরোক্ষ শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জঙ্গিদের তৎপরতার সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো পশ্চিমি ভূখণ্ডের কোথাও এক-এগারোর মাপের আক্রমণের পুনরাবৃত্তি ঘটানো—যদিও পরবর্তী সব আক্রমণই হয়েছে তুলনায় ছোটখাটো। এটাই স্বাভাবিক, কারণ সব পশ্চিমা দেশ তো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ফলে উল্টো সব মুসলমানকেই এর খেসারত দিতে হচ্ছে।
পশ্চিমি ভূখণ্ডে যুদ্ধ ছড়াতে না পেরে জঙ্গিরা মনোযোগ দিয়েছে স্থানীয় প্রতিপক্ষের দিকে, যেগুলো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় প্রায়ই নিজস্ব ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। সাম্রাজ্যবাদ স্বভাবতই একে নিজের স্বার্থে সমর্থন ও নির্মূলের নীতিতে ব্যবহার করে চলেছে। আপাতত অপরের কাঁধে ভর দিয়ে দুটো লাভ হয় তাদের—অস্থিতিশীল ও ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশগুলোর পরবর্তী বিনির্মাণের কাজ তাদের হয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পায় এবং তারাই লাভ গুনতে পারছে। আর যুদ্ধ তাদের অর্থাগমের বড় উৎস অস্ত্র ব্যবসাকে চাঙা রাখছে। পাছে সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করে, এ নিয়ে পশ্চিমের শাসকেরা সব সময় উৎকণ্ঠিত থাকে। কারণ, অনাকাঙ্ক্ষিত মন্দা কাটানোর সেরা উপায় অস্ত্র ব্যবসা।
মুসলিম জঙ্গিরা এখন স্বদেশের ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। ইসলামিক স্টেট, আল-শাবাব, বোকো হারাম, আল-কায়েদা, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী—সবাই ভ্রাতৃঘাতী তথা আত্মঘাতী সংঘাতে লিপ্ত। উত্তেজনায় এবং সম্ভবত খুনের নেশায় তারা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে দুটি বিষয়—এক. সব যুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবসা বাড়ে এবং হাত-ফেরতা হয়ে মুনাফা যায় পশ্চিমের ভান্ডারে; দুই. জজিরাতুল আরবে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি, অন্যায়-অনাচারের অবসান ঘটাতেই একদিন ঐক্য ও সাম্যের বাণী নিয়ে এসেছিল ইসলাম। ঐক্য ও সাম্য তো মানবিক সদিচ্ছার প্রকাশ, যা অর্জন করতে হয়। এর জন্য বর্জনের সংস্কৃতি থেকে গ্রহণের সংস্কৃতি তৈরি করতে হয়, ঘৃণা বিদ্বেষের স্থলে মানবতাবোধের চর্চা করতে হয়, দূরে ঠেলে শত্রুতার পরিবর্তে কাছে টানা ও মৈত্রীর সংস্কৃতি নির্মাণ করতে হয়। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, বাস্তব বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয় নেতৃত্বকে। এসব গুণের উৎস অবশ্যই ক্রোধ হতে পারে না।
ক্রোধ অবশ্যই ঘৃণার পথে টানবে, যা প্রতিহিংসায় সান্ত্বনা খোঁজে। মনস্তাত্ত্বিক জানেন ক্রোধ এমন এক রিপু, যা মানবমনের সহজাত সমৃদ্ধ বহুত্বকে অবিশ্বাস ও খারিজ করে কেবল ক্রোধ চরিতার্থ করার একক লক্ষ্যে স্থির হতে থাকে। এটা মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক প্রবণতা নয়, দীর্ঘমেয়াদি ক্রোধ হলো পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ মানুষের বিকারমাত্র। কেমন চাতুর্যের সঙ্গে খনিজ-সমৃদ্ধ আর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব দেশে দেশে—যার অধিকাংশই মুসলিমপ্রধান—ক্রোধ ও প্রতিহিংসার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব পুঁজিবাদ।
পরিস্থিতি এমন যে শান্তি, স্থিতি, সাম্য, ঔদার্য—এসব শব্দ অস্ত্র, যুদ্ধ, খুন প্রতিশোধের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছে। তারা লক্ষ্যই করছে না যে উদ্দেশ্যে ইসলামের আবির্ভাব, তাকেই তারা অপাঙ্ক্তেয় করে তুলেছে। কেউ নিশ্চয় বোকো হারামের আক্রমণ কি ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধ অথবা হুতিদের সুন্নিবিরোধী আক্রমণকে বদর বা ওহুদের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করবেন না। পরিপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের প্রতিটি গুলিতে লাভবান হচ্ছে পুঁজিবাদ, এদের প্রতিটি যুদ্ধ জয়ী করছে নয়া উপনিবেশবাদকে।
যুদ্ধমাত্রই উত্তেজনা ছড়ায় আর উত্তেজিত তরুণদের ন্যায়ের রোমান্সে বিজয়াভিযানে প্রলুব্ধ করে। সেই অভিযানে তারা কদাচিৎ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পশ্চিমা লক্ষ্য—ব্যক্তি বা বস্তুতে হানা দেন, অধিকাংশ সময় স্বদেশের ভিন্নধর্মী কিংবা ভিন্নমতের মুসলিমদেরই হনন করছেন। ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠী জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় না জেগে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানিতে লিপ্ত থাকলেই পুঁজিবাদের কার্যসিদ্ধি হয়। ওদের ফর্মুলা এ পর্যন্ত ঠিকঠাক কাজ করছে।
মুক্তবুদ্ধির তরুণ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায় বা ওয়াশিকুর রহমান খুন হলে পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের কী ক্ষতি হবে? অনেকেই ভাববেন, অভ্যন্তরীণভাবে জ্ঞানচর্চার মুক্ত পথ রুদ্ধ হবে এবং তাতে ইসলামি সমাজ কায়েম সহজ হয়ে যাবে। এভাবে জ্ঞানচর্চাকে হয় ইসলামের বিপরীতে দাঁড় করানো হচ্ছে অথবা ইসলামি সমাজে জ্ঞানচর্চাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। এটা নিছক ধারণা নয়, বাস্তবেই যে ঘটছে তার প্রমাণ কেনিয়া, পাকিস্তানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে শত শত ছাত্র হত্যা।
কোরআন-হাদিসে কিন্তু জ্ঞানচর্চায় সীমা টানার বিপক্ষেই বলা হয়েছে, জ্ঞানচর্চার জন্য সুদূর চীন দেশে যাও এবং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো—এ দুটো উপদেশ জ্ঞানের অসীমতার প্রতি ইঙ্গিত করে। আর জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র কথাটিতেও যুদ্ধ, এমনকি ধর্মযুদ্ধেরও ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে জ্ঞানচর্চাকে।
আদতে সমস্যাটা জ্ঞানচর্চাতে নয়, আর সমাধানও হত্যায় মিলবে না। কেননা জ্ঞানের কোনো ধর্মীয়, আঞ্চলিক বিভাজন সম্ভব নয়। বিভাজন বা স্বাতন্ত্র্য থাকে সংস্কৃতিতে যে কারণে ধর্মবিশ্বাসে না হলেও ধর্মচর্চার সংস্কৃতিতে দেশে দেশে ভিন্নতা দেখা যায়। তবে সেখান গ্রহণ-বর্জন ধীরে হলেও ঘটতে থাকে। কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে জ্ঞানচর্চার পথ রুদ্ধ করে দিতে চায়, তাহলে একসময় সেই সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়বে। বাগদাদ ও সর্বশেষ কর্দোভার পতনের পরে আরবের মুসলিম সভ্যতার (মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আরবিভাষী অঞ্চল) অবক্ষয় ঠেকানো যায়নি, জ্ঞানচর্চা রুদ্ধ হওয়া এর একটি বড় কারণ। তুর্কি-পার্সিভাষী মুসলিম সভ্যতা আরেকটু দীর্ঘায়িত হয়েছে, ভারতে মোগল শাসনের কারণে তা ইংরেজ আক্রমণ পর্যন্ত অন্তত কাব্য-শিল্পকলা-সংগীত-স্থাপত্য, প্রশাসনে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, ইরানে জ্ঞানচর্চার ধারা ক্ষীয়মাণ হলেও সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়নি কখনো।
ভারতবর্ষে বাংলা তার নিজস্ব সংস্কৃতির গুণে—যা কাব্য, আধ্যাত্মিক সংগীত, উদারনৈতিক ও সরল জীবনদর্শনের সম্ভারে—বেশ দ্রুত প্রতিকূল প্রত্যাঘাত সামলে উঠেছিল। তার নিজস্ব মানবিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জোরে এ দেশের মানুষ পাকিস্তানের সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তা দ্রুত রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের সে আন্দোলন ফলপ্রসূ হওয়ার কারণ তা ঘটনাচক্রে হয়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মাঠে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী শক্তির অবস্থান শক্তিশালী হতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ যুগপৎ অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং ক্ষমতার রাজনীতির ওপর একচেটিয়া অধিকার কায়েম করতে গিয়ে সমাজতন্ত্রসহ নীতি-আদর্শকেই গুরুত্বহীন এবং ধর্মান্ধতা ও ভোগবাদ উভয়ের সঙ্গেই আপস করেছে।
অন্যদিকে লোভ, ক্রোধ ও ঘৃণার মতো স্থূল রিপুই সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তাতে জঙ্গিদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। তাদের এ তৎপরতা অবশ্য মূল প্রতিপক্ষ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের গায়ে আঁচড়টিও কাটতে পারছে না। বরং মুসলিম দেশগুলোর ওপর আরও সংঘবদ্ধ প্রত্যাঘাত হানার জন্য উসকানির কাজ করছে। আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য স্বৈরাচার হয়ে ওঠার পথ প্রশান্ত করে দিচ্ছে। যেকোনো মনস্তাত্ত্বিকই বলবেন, ধর্মান্ধদের আক্রমণাত্মক তৎপরতা প্রমাণ করে অন্তর্নিহিতভাবে তারা কত দুর্বল এবং ভিতু। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো পৌরুষের প্রমাণ দেয় না, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে না, তা বোঝায় যে জ্ঞানচর্চায় এবং ইসলাম ধর্ম পঠন-পাঠনে, বড় রকমের গলদ থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য সামনে থাকে দুটি কাজ—রাজনীতিতে নয়া উপনিবেশবাদবিরোধী উপাদান যোগ ও জোরালো করা এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে জ্ঞানচর্চার পরিসর মুক্ত অবাধ করে তোলা। এ কথা সব মুসলিম দেশের জন্যই প্রযোজ্য। আর সত্য হলো ধর্মবর্ণনির্বিশেষে উন্নয়নশীল বিশ্বের সব দেশকেই এ পথে চলতে হবে।
বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী কখনো ধর্ম ত্যাগ করেনি, করবে না, সংস্কৃতিও তারা ছাড়ে না, ছাড়তে পারে না এবং জ্ঞানচর্চা ছাড়া মানুষের পক্ষে মানুষ থাকা সম্ভব নয়। এগুলোই শাশ্বত ও বিকাশমানতায় সংযোগ ঘটিয়ে মানবসমাজকে সার্থক করে তোলে। বিপরীত পথে আক্রোশ বাড়ে এবং ঘৃণা-ক্রোধ-হত্যার দুষ্টচক্রের ফাঁদে আটকে যায় সেই সমাজ। এটা কারও কাম্য হতে পারে?
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
এক-এগারোর পর বিভিন্ন ছুতানাতা ধরে মার্কিন নেতৃত্বে যেভাবে ইরাক ও লিবিয়ায় আক্রমণ ঘটল, তার পরও কেন মুসলিম বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা জাগল না, তা বিস্ময়কর। মুসলিম বিশ্বের অঘোষিত কেন্দ্র সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের ওপর মার্কিন বলয়ের অশুভ প্রভাবের ফল এটা। রাজতন্ত্রী বা স্বৈরাচারী শাসকদের স্বার্থকে ঘিরে যুগ যুগ ধরে এই অঞ্চলে এই আত্মঘাতী প্রভাব বহাল রইল।
বিশ্ব পুঁজিবাদ তার সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সব সময় নতুন নতুন ছক কেটেছে, চাল দিয়েছে। তাদের হাতে আছে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ তেল ব্যবসা, আফ্রিকাতেও তা-ই। উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নও তাদেরই বিনিয়োগের ক্ষেত্র, ভোগ্যপণ্যের বাজারের নিয়ন্ত্রণ কবজা করার জন্য মুক্তবাজারের যূপকাষ্ঠে সবার বলি হওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি করা হলো। বহুকাল ধরেই পুঁজিবাদ তার মূল শত্রুকে চেনে—জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব। ১৯৯০-এর পর থেকে পুরো বিশ্ব তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল। বিশ্বায়নের সুযোগে ভোগবাদী মায়াজাল ছড়িয়ে মানুষকে দলে দলে নিতান্ত ভোক্তার খেলো ভূমিকায় নামাতে পারলেও পুঁজিবাদের সংকট কাটেনি। কিন্তু এর খেসারত হিসেবে দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, শিক্ষা এবং অবশ্যই ধর্মও মানবের বামনায়নের এ রোগ নিরাময়ে কাজ করছে না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলিম সমাজে পশ্চিমাবিরোধী তীব্র প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু তা ঘটছে কেবল ধর্মীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ধর্মের নামেই নানা দেশে জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে। কিন্তু এর কোনোটিই পুঁজিবাদের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে না। তার জন্য জাতীয় চেতনায়—সঙ্গে নয়া ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চেতনায়ও—সমৃদ্ধ জনপ্রিয় রাজনীতির প্রয়োজন। আরব ও আফ্রিকার গোত্রভিত্তিক সমাজে এ কাজটা বরাবর কঠিন রয়ে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের শাসকদের কবজায় রেখে পরোক্ষ শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম জঙ্গিদের তৎপরতার সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো পশ্চিমি ভূখণ্ডের কোথাও এক-এগারোর মাপের আক্রমণের পুনরাবৃত্তি ঘটানো—যদিও পরবর্তী সব আক্রমণই হয়েছে তুলনায় ছোটখাটো। এটাই স্বাভাবিক, কারণ সব পশ্চিমা দেশ তো সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ফলে উল্টো সব মুসলমানকেই এর খেসারত দিতে হচ্ছে।
পশ্চিমি ভূখণ্ডে যুদ্ধ ছড়াতে না পেরে জঙ্গিরা মনোযোগ দিয়েছে স্থানীয় প্রতিপক্ষের দিকে, যেগুলো আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় প্রায়ই নিজস্ব ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। সাম্রাজ্যবাদ স্বভাবতই একে নিজের স্বার্থে সমর্থন ও নির্মূলের নীতিতে ব্যবহার করে চলেছে। আপাতত অপরের কাঁধে ভর দিয়ে দুটো লাভ হয় তাদের—অস্থিতিশীল ও ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশগুলোর পরবর্তী বিনির্মাণের কাজ তাদের হয়ে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো পায় এবং তারাই লাভ গুনতে পারছে। আর যুদ্ধ তাদের অর্থাগমের বড় উৎস অস্ত্র ব্যবসাকে চাঙা রাখছে। পাছে সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করে, এ নিয়ে পশ্চিমের শাসকেরা সব সময় উৎকণ্ঠিত থাকে। কারণ, অনাকাঙ্ক্ষিত মন্দা কাটানোর সেরা উপায় অস্ত্র ব্যবসা।
মুসলিম জঙ্গিরা এখন স্বদেশের ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়েছে। ইসলামিক স্টেট, আল-শাবাব, বোকো হারাম, আল-কায়েদা, হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী—সবাই ভ্রাতৃঘাতী তথা আত্মঘাতী সংঘাতে লিপ্ত। উত্তেজনায় এবং সম্ভবত খুনের নেশায় তারা সম্পূর্ণ ভুলে গেছে দুটি বিষয়—এক. সব যুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবসা বাড়ে এবং হাত-ফেরতা হয়ে মুনাফা যায় পশ্চিমের ভান্ডারে; দুই. জজিরাতুল আরবে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি, অন্যায়-অনাচারের অবসান ঘটাতেই একদিন ঐক্য ও সাম্যের বাণী নিয়ে এসেছিল ইসলাম। ঐক্য ও সাম্য তো মানবিক সদিচ্ছার প্রকাশ, যা অর্জন করতে হয়। এর জন্য বর্জনের সংস্কৃতি থেকে গ্রহণের সংস্কৃতি তৈরি করতে হয়, ঘৃণা বিদ্বেষের স্থলে মানবতাবোধের চর্চা করতে হয়, দূরে ঠেলে শত্রুতার পরিবর্তে কাছে টানা ও মৈত্রীর সংস্কৃতি নির্মাণ করতে হয়। প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, বাস্তব বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয় নেতৃত্বকে। এসব গুণের উৎস অবশ্যই ক্রোধ হতে পারে না।
ক্রোধ অবশ্যই ঘৃণার পথে টানবে, যা প্রতিহিংসায় সান্ত্বনা খোঁজে। মনস্তাত্ত্বিক জানেন ক্রোধ এমন এক রিপু, যা মানবমনের সহজাত সমৃদ্ধ বহুত্বকে অবিশ্বাস ও খারিজ করে কেবল ক্রোধ চরিতার্থ করার একক লক্ষ্যে স্থির হতে থাকে। এটা মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক প্রবণতা নয়, দীর্ঘমেয়াদি ক্রোধ হলো পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ মানুষের বিকারমাত্র। কেমন চাতুর্যের সঙ্গে খনিজ-সমৃদ্ধ আর ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব দেশে দেশে—যার অধিকাংশই মুসলিমপ্রধান—ক্রোধ ও প্রতিহিংসার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ব পুঁজিবাদ।
পরিস্থিতি এমন যে শান্তি, স্থিতি, সাম্য, ঔদার্য—এসব শব্দ অস্ত্র, যুদ্ধ, খুন প্রতিশোধের কাছে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছে। তারা লক্ষ্যই করছে না যে উদ্দেশ্যে ইসলামের আবির্ভাব, তাকেই তারা অপাঙ্ক্তেয় করে তুলেছে। কেউ নিশ্চয় বোকো হারামের আক্রমণ কি ইসলামিক স্টেটের যুদ্ধ অথবা হুতিদের সুন্নিবিরোধী আক্রমণকে বদর বা ওহুদের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করবেন না। পরিপ্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের প্রতিটি গুলিতে লাভবান হচ্ছে পুঁজিবাদ, এদের প্রতিটি যুদ্ধ জয়ী করছে নয়া উপনিবেশবাদকে।
যুদ্ধমাত্রই উত্তেজনা ছড়ায় আর উত্তেজিত তরুণদের ন্যায়ের রোমান্সে বিজয়াভিযানে প্রলুব্ধ করে। সেই অভিযানে তারা কদাচিৎ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পশ্চিমা লক্ষ্য—ব্যক্তি বা বস্তুতে হানা দেন, অধিকাংশ সময় স্বদেশের ভিন্নধর্মী কিংবা ভিন্নমতের মুসলিমদেরই হনন করছেন। ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠী জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনায় না জেগে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানিতে লিপ্ত থাকলেই পুঁজিবাদের কার্যসিদ্ধি হয়। ওদের ফর্মুলা এ পর্যন্ত ঠিকঠাক কাজ করছে।
মুক্তবুদ্ধির তরুণ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায় বা ওয়াশিকুর রহমান খুন হলে পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের কী ক্ষতি হবে? অনেকেই ভাববেন, অভ্যন্তরীণভাবে জ্ঞানচর্চার মুক্ত পথ রুদ্ধ হবে এবং তাতে ইসলামি সমাজ কায়েম সহজ হয়ে যাবে। এভাবে জ্ঞানচর্চাকে হয় ইসলামের বিপরীতে দাঁড় করানো হচ্ছে অথবা ইসলামি সমাজে জ্ঞানচর্চাকে সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। এটা নিছক ধারণা নয়, বাস্তবেই যে ঘটছে তার প্রমাণ কেনিয়া, পাকিস্তানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে শত শত ছাত্র হত্যা।
কোরআন-হাদিসে কিন্তু জ্ঞানচর্চায় সীমা টানার বিপক্ষেই বলা হয়েছে, জ্ঞানচর্চার জন্য সুদূর চীন দেশে যাও এবং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো—এ দুটো উপদেশ জ্ঞানের অসীমতার প্রতি ইঙ্গিত করে। আর জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র কথাটিতেও যুদ্ধ, এমনকি ধর্মযুদ্ধেরও ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে জ্ঞানচর্চাকে।
আদতে সমস্যাটা জ্ঞানচর্চাতে নয়, আর সমাধানও হত্যায় মিলবে না। কেননা জ্ঞানের কোনো ধর্মীয়, আঞ্চলিক বিভাজন সম্ভব নয়। বিভাজন বা স্বাতন্ত্র্য থাকে সংস্কৃতিতে যে কারণে ধর্মবিশ্বাসে না হলেও ধর্মচর্চার সংস্কৃতিতে দেশে দেশে ভিন্নতা দেখা যায়। তবে সেখান গ্রহণ-বর্জন ধীরে হলেও ঘটতে থাকে। কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে জ্ঞানচর্চার পথ রুদ্ধ করে দিতে চায়, তাহলে একসময় সেই সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়বে। বাগদাদ ও সর্বশেষ কর্দোভার পতনের পরে আরবের মুসলিম সভ্যতার (মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার আরবিভাষী অঞ্চল) অবক্ষয় ঠেকানো যায়নি, জ্ঞানচর্চা রুদ্ধ হওয়া এর একটি বড় কারণ। তুর্কি-পার্সিভাষী মুসলিম সভ্যতা আরেকটু দীর্ঘায়িত হয়েছে, ভারতে মোগল শাসনের কারণে তা ইংরেজ আক্রমণ পর্যন্ত অন্তত কাব্য-শিল্পকলা-সংগীত-স্থাপত্য, প্রশাসনে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, ইরানে জ্ঞানচর্চার ধারা ক্ষীয়মাণ হলেও সম্পূর্ণ রুদ্ধ হয়নি কখনো।
ভারতবর্ষে বাংলা তার নিজস্ব সংস্কৃতির গুণে—যা কাব্য, আধ্যাত্মিক সংগীত, উদারনৈতিক ও সরল জীবনদর্শনের সম্ভারে—বেশ দ্রুত প্রতিকূল প্রত্যাঘাত সামলে উঠেছিল। তার নিজস্ব মানবিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জোরে এ দেশের মানুষ পাকিস্তানের সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে, তা দ্রুত রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। পাকিস্তান আমলের সে আন্দোলন ফলপ্রসূ হওয়ার কারণ তা ঘটনাচক্রে হয়ে উঠেছিল জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে সংকট আছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মাঠে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদী শক্তির অবস্থান শক্তিশালী হতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আওয়ামী লীগ যুগপৎ অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং ক্ষমতার রাজনীতির ওপর একচেটিয়া অধিকার কায়েম করতে গিয়ে সমাজতন্ত্রসহ নীতি-আদর্শকেই গুরুত্বহীন এবং ধর্মান্ধতা ও ভোগবাদ উভয়ের সঙ্গেই আপস করেছে।
অন্যদিকে লোভ, ক্রোধ ও ঘৃণার মতো স্থূল রিপুই সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। তাতে জঙ্গিদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। তাদের এ তৎপরতা অবশ্য মূল প্রতিপক্ষ পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের গায়ে আঁচড়টিও কাটতে পারছে না। বরং মুসলিম দেশগুলোর ওপর আরও সংঘবদ্ধ প্রত্যাঘাত হানার জন্য উসকানির কাজ করছে। আর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের জন্য স্বৈরাচার হয়ে ওঠার পথ প্রশান্ত করে দিচ্ছে। যেকোনো মনস্তাত্ত্বিকই বলবেন, ধর্মান্ধদের আক্রমণাত্মক তৎপরতা প্রমাণ করে অন্তর্নিহিতভাবে তারা কত দুর্বল এবং ভিতু। সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডগুলো পৌরুষের প্রমাণ দেয় না, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে না, তা বোঝায় যে জ্ঞানচর্চায় এবং ইসলাম ধর্ম পঠন-পাঠনে, বড় রকমের গলদ থেকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য সামনে থাকে দুটি কাজ—রাজনীতিতে নয়া উপনিবেশবাদবিরোধী উপাদান যোগ ও জোরালো করা এবং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে জ্ঞানচর্চার পরিসর মুক্ত অবাধ করে তোলা। এ কথা সব মুসলিম দেশের জন্যই প্রযোজ্য। আর সত্য হলো ধর্মবর্ণনির্বিশেষে উন্নয়নশীল বিশ্বের সব দেশকেই এ পথে চলতে হবে।
বৃহত্তর মানবগোষ্ঠী কখনো ধর্ম ত্যাগ করেনি, করবে না, সংস্কৃতিও তারা ছাড়ে না, ছাড়তে পারে না এবং জ্ঞানচর্চা ছাড়া মানুষের পক্ষে মানুষ থাকা সম্ভব নয়। এগুলোই শাশ্বত ও বিকাশমানতায় সংযোগ ঘটিয়ে মানবসমাজকে সার্থক করে তোলে। বিপরীত পথে আক্রোশ বাড়ে এবং ঘৃণা-ক্রোধ-হত্যার দুষ্টচক্রের ফাঁদে আটকে যায় সেই সমাজ। এটা কারও কাম্য হতে পারে?
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক।
No comments