যেভাবে তুলে নেয়া হয় সালাহউদ্দিনকে
বিএনপির
মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে বলপূর্বক গুমের ঘটনায়
অবিলম্বে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার
সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। একই সঙ্গে অতীতের বলপূর্বক সকল
গুমের তদন্তের তাগিদ দিয়ে সংস্থাটির এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস
বলেন, প্রধান বিরোধী দলের সদস্যদের জোরপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তে ব্যর্থ
হওয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। সালাহউদ্দিন আহমেদের জোরপূর্বক গুমের
ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। জরুরিভিত্তিতে সেটা করতে
হবে। কারণ, ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত তা অনেক দেরি হয়ে যাবে। হিউম্যান রাইটস
ওয়াচের প্রতিবেদনে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেয়ার ঘটনার বিবরণও দেয়া
হয়েছে। এতে বলা হয়, যে বাড়ি থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নেয়া হয়, ওই
বাড়ির কেয়ারটেকারের বক্তব্যমতে ১০ই মার্চ রাত ১০টার দিকে সাদা পোশাকের
একাধিক সদস্য ওই বাড়ির সামনে যায়। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে
পরিচয় দেয় এবং তাদের ব্যাজ দেখায়। তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশের আধ ঘণ্টা পর
নিচে নামে। তাদের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদও ছিলেন। তারা
তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, এলিট
ফোর্স র্যাবের একটি গাড়িও সেখানে ছিল। এরপর থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ
রয়েছেন। তার নিখোঁজের ঘটনায় সরকার তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে
বা এ মুহূর্তে সালাহউদ্দিন কোথায় অবস্থান করছেন, সে ব্যাপারেও কোন তথ্য নেই
বলে জানিয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে সালাহউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা
অভিযোগ জানান। সালাহউদ্দিন আহমেদকে আদালতে হাজির করার দাবি জানিয়ে তার
স্ত্রী এ ব্যাপারে একটি মামলাও করেন। তা সত্ত্বেও, তাকে প্রকাশ্যে আনা হয়
নি। ঢাকায় হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে গত ১৬ই মার্চ পুলিশের
ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) জানান, তার আওতাধীন নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ
সালাহউদ্দিনকে আটক করে নি। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করার
পক্ষে আদালতে তেমন কোন তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত
আদালতের শুনানি আগামী ৮ই এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। ২০১৪ সালের
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে যে
সহিংসতার সূত্রপাত হয়, চলমান সহিংসতা তারই ধারাবাহিকতা। নির্বাচনের আগে ও
পরে বেশ কয়েক শ’ মানুষ নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭
সাল থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য সংগঠন বাংলাদেশে বলপূর্বক গুমের
ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করেছে। বেশির ভাগ গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর
সদস্যরা। ২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন। তার ভাগ্যে কি
ঘটেছে, তা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে অপহরণ
ও সুস্পষ্টভাবে চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের সন্দেহভাজন
সদস্যদের ভূমিকা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে সেটাও হয়েছিল
গণমাধ্যমের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের কারণে। প্রথমদিকে র্যাব কর্মকর্তারা
এ ঘটনায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। কিন্তু হঠাৎ নিহতদের
লাশ যখন নদীতে ভেসে ওঠে তখন সব ফাঁস হয়ে যায়। এ বছর জানুয়ারির শুরুতে সরকার
ও বিরোধী দলের মধ্যে যে সহিংসতা চলছে তারই মাঝে গুম করা হয়েছে সালাহউদ্দিন
আহমেদকে। এ বছরের এই সহিংসতায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন
শত শত মানুষ। বিরোধী দল যখন হরতাল বা অবরোধ পালনের পক্ষে নেমেছে তখনই এসব
ঘটনা ঘটেছে বেশি। সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিরোধী দলের হাজার হাজার
নেতাকর্মীকে। ব্রাড অ্যাডামস তার বিবৃতিতে বলেন, কর্তৃপক্ষ বলপূর্বক গুমের
বহু ঘটনা গুরুত্ব সহকারে নথিভুক্ত করেছে। তা সত্ত্বেও, এ ঘটনাগুলো সরকার
তদন্ত করেছে, সে ব্যাপারে যৎসামান্য ও এমন কি বহু ক্ষেত্রে কোন
তথ্য-প্রমাণও নেই। তিনি বলেন, জনগণের কাছে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও
নিরাপত্তা বাহিনীর কোন সদস্যকে তাদের ভূমিকার জন্য জবাবদিহি করতে হয় নি।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীকে
নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু, বাংলাদেশে দায়মুক্তির যে সংস্কৃতি
তার শাসনামলের আগে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল, তিনি ক্ষমতায় আসার পরও তাতে
কোন পরিবর্তন আসে নি। ব্রাড অ্যাডামস বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের
ঘটনা বড় একটি রীতির একটি অংশ। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশ
সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অস্বীকৃতি এবং তদন্তের জন্য
অর্থবহ কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা একই ধরনের আচরণের অংশ।
No comments