গুমের রাজনীতি by বিহঙ্গ চৌধুরি
এ দেশে কিছুদিন পর পর জলজ্যান্ত মানুষ ‘হাওয়া’ হয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ। ১০ মার্চ তিনি ‘হাওয়া’ হলেন। এখনো তাঁর খবর নেই।। ২৩ ফেব্রুয়ারি একইভাবে ‘হাওয়া’ হয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। খবর মিলল ২১ ঘণ্টা পর। গত বছরের মার্চে দিনদুপুরে রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকী ‘হাওয়া’ হন। ‘পাওয়া’ গেল ৩৫ ঘণ্টা পর। এভাবে ২০১৪ সালে ৮৮টি ‘হাওয়া’ হওয়া বা গুমের ঘটনা ঘটে। পরে ২৩ জনের লাশ পাওয়া যায়। ১২ জন ছাড়া পান। একজন ডিবি অফিসে, একজন থানায়, দুজনকে জেলে পাওয়া যায়। সাতজনকে র্যাব অপহরণের পর মিডিয়ার সামনে হাজির করে। বাকি ৪২ জন এখনো নিখোঁজ।
২০১৩ সালে অপহৃত হন ৬৮ জন। তার মধ্যে ৫৫ জন এখনো গায়েব। লাশ হয়ে ফিরেছেন পাঁচজন। ২০১২ সালে অপহৃত হন ৫৬ জন। ৩৪ জন এখনো লাপাত্তা। ২০১১ সালে অপহৃতের সংখ্যা ৫৯ জন। নিখোঁজ ৩৯, লাশ ১৬। ২০১০ সালে অপহৃত ৪৬ জনের মধ্যে এখনো ৩৩ জনের খোঁজ নেই। ২০০৭-২০০৯ সালে ২১ জন অপহৃতের মধ্যে লাশ মিলেছে মাত্র তিনজনের (সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র)।
সালাহ উদ্দিনের গুমের ঘটনাটি স্বাভাবিকের চেয়ে উদ্বেগজনক। কারণ তাঁর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর জন্ম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। যাদের হাতে জান-মাল নিরাপত্তার দায়িত্ব, তারাই যদি জান-মালের হুমকি হয়, তবে অসহায় মানুষের আশ্রয় কোথায়? তা ছাড়া তাতে গুম হওয়া ব্যক্তির ফিরে আসার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। ফিরে এলেও তাঁরা আর নিরীহ মানুষ থাকেন না, আসামি হয়ে যান। অভিযোগ থাকুক না–থাকুক, অভিযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। অভিযোগের সত্যতা থাকুক না–থাকুক, অন্তত অভিযোগপত্রে নাম থাকবেই। নয়তো লাশ হয়ে ফেরেন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় যেমনটি হয়েছিল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৮৮টি গুমের হোতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর
২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০১২-১৪ সালে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার মধ্যে নয়জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ছয়জন কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বন্দী থেকে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। বাকি ছয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কেউ জানে না। প্রতিবেদনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সমালোচনা করে বলা হয়, এর মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হচ্ছে।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বেআইনি আচরণ, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ পাস হয়েছিল। প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও ওই আইনে এ পর্যন্ত কারও বিচার বা শাস্তি হওয়ার খবর আমরা পাইনি। উল্টো নিজেদের বল্গাহীন আচরণে আরও দায়মুক্তি ভোগ করতে পুলিশ বাহিনী সম্প্রতি ওই আইনের ১৪টি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে (৫ মার্চ, ২০১৫: প্রথম আলো)।
গুম হওয়া বা আগুনে পোড়া কোনোটাই আমাদের কাম্য নয়। আমরা কি স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা আশা করতে পারি না?
লেখক: আইনজীবী, ঢাকা জজ আদালত।
২০১৩ সালে অপহৃত হন ৬৮ জন। তার মধ্যে ৫৫ জন এখনো গায়েব। লাশ হয়ে ফিরেছেন পাঁচজন। ২০১২ সালে অপহৃত হন ৫৬ জন। ৩৪ জন এখনো লাপাত্তা। ২০১১ সালে অপহৃতের সংখ্যা ৫৯ জন। নিখোঁজ ৩৯, লাশ ১৬। ২০১০ সালে অপহৃত ৪৬ জনের মধ্যে এখনো ৩৩ জনের খোঁজ নেই। ২০০৭-২০০৯ সালে ২১ জন অপহৃতের মধ্যে লাশ মিলেছে মাত্র তিনজনের (সূত্র: আইন ও সালিশ কেন্দ্র)।
সালাহ উদ্দিনের গুমের ঘটনাটি স্বাভাবিকের চেয়ে উদ্বেগজনক। কারণ তাঁর স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর জন্ম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। যাদের হাতে জান-মাল নিরাপত্তার দায়িত্ব, তারাই যদি জান-মালের হুমকি হয়, তবে অসহায় মানুষের আশ্রয় কোথায়? তা ছাড়া তাতে গুম হওয়া ব্যক্তির ফিরে আসার সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। ফিরে এলেও তাঁরা আর নিরীহ মানুষ থাকেন না, আসামি হয়ে যান। অভিযোগ থাকুক না–থাকুক, অভিযোগ সৃষ্টি হয়ে যায়। অভিযোগের সত্যতা থাকুক না–থাকুক, অন্তত অভিযোগপত্রে নাম থাকবেই। নয়তো লাশ হয়ে ফেরেন। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় যেমনটি হয়েছিল।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৮৮টি গুমের হোতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর
২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০১২-১৪ সালে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার মধ্যে নয়জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ছয়জন কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বন্দী থেকে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। বাকি ছয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কেউ জানে না। প্রতিবেদনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সমালোচনা করে বলা হয়, এর মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হচ্ছে।
পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বেআইনি আচরণ, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে জনগণকে সুরক্ষা দিতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ পাস হয়েছিল। প্রায় দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও ওই আইনে এ পর্যন্ত কারও বিচার বা শাস্তি হওয়ার খবর আমরা পাইনি। উল্টো নিজেদের বল্গাহীন আচরণে আরও দায়মুক্তি ভোগ করতে পুলিশ বাহিনী সম্প্রতি ওই আইনের ১৪টি ধারা-উপধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে (৫ মার্চ, ২০১৫: প্রথম আলো)।
গুম হওয়া বা আগুনে পোড়া কোনোটাই আমাদের কাম্য নয়। আমরা কি স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা আশা করতে পারি না?
লেখক: আইনজীবী, ঢাকা জজ আদালত।
No comments