অসময়ে চলে যাওয়া- শোক বই থেকে by কাজী সুমন
মাত্র
৪৫ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত
রহমান কোকোর। তার মৃত্যুতে শোকাহত বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। তাদের
সঙ্গে সমব্যথী হয়েছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক ও
বিশিষ্টজনরা। শোক প্রকাশের জন্য রোববার দুপুর ১টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের
গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে খোলা হয়েছে দুটি পৃথক শোকবই। বিদেশী কূটনীতিকদের
শোক প্রকাশের জন্য কার্যালয়ের ভেতরে শোকবই খোলা হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট
নাগরিক ও সাধারণ মানুষের জন্য কার্যালয়ের মূলফটকের বাইরে একটি টেবিলের ওপর
রাখা হয় আরেকটি শোকবই। ওই বইতে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আরাফাত রহমান কোকোর
স্মৃতিচারণ করছেন তারা। গত দুদিনে কয়েকশ’ পৃষ্ঠাজুড়ে কেউ কেউ লিখেছেন তাদের
অনুভূতি। এদিকে গত দুদিনে শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেছেন অন্তত ২০-২৫ জন বিদেশী
কূটনীতিক। রোববার সর্বপ্রথম শোকবইয়ে স্বাক্ষর করতে খালেদা জিয়ার গুলশান
কার্যালয়ে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। এর আগে
তিনি অনানুষ্ঠানিক শোক প্রকাশ করেন। শোকবইয়ে বৃটিশ হাইকমিশনার লিখেন-
‘অসময়ে আরাফাত রহমান কোকোর চলে যাওয়ার খবর শোনে আমি গভীরভারে মর্মাহত
হয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা
জানাচ্ছি।’ আরাফাত রহমানের বেদনাদায়ক বিদায়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ডেভিড মিল শোক জানিয়েছেন। শোকবইতে তিনি বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে
লিখেন, ওই বিয়োগান্তুক ক্ষতিতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের সর্বস্তরের
কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে আমি শোক প্রকাশ করছি। আপনার
পরিবারের এই দুঃসময়ে আমাদের সহমর্মিতা থাকবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়া ও তার পরিবারের প্রতি শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি
হাইকমিশনার সন্দ্বীপ চক্রবর্তী। শোকবইতে তিনি লিখেন, আরাফাত রহমান কোকোর
অকাল এবং দুঃখজনক বিদায়ে আমরা আন্তরিকভাবে গভীর শোক প্রকাশ করছি। শোকাহত
পরিবার-পরিজন, কাছের এবং দূরের স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা ওই
শোক যেন কেটে ওঠার শক্তি পান- সেজন্য আমি স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করছি।
কোকোর অসময়ের ওই চলে যাওয়াকে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ উল্লেখ করে ভারতীয় ওই
কূটনীতিক বলেন, ওই শোক সইবার ক্ষমতা যেন তার পরিবার পায় সবসময় আমাদের সেই
প্রার্থনাই থাকবে। আরাফাত রহমান কোকোর মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ
করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ম্যারি টুলুন্দিমো। কোকোর এই
মৃত্যুকে বিয়োগান্তুক আখ্যায়িত করে ওই কূটনীতিক বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর
এই দুঃখজনক চলে যাওয়ায় আমি গভীর শোক করছি। রোববার বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যে
আরও শোক প্রকাশ করেন- মিশরের রাষ্ট্রদূত মাহমুদ আইজ্জাত, চীনা রাষ্ট্রদূত
লিং চু, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত খালেদ সুলতান আল উতাইরি, পাকিস্তানের
ডেপুটি হাইকমিশনার সামিনা মেহতাব, রেডক্রসের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডার্কো
জর্ডালোভ, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শায়ের মোহাম্মদ, কাতার, সিঙ্গাপুর,
তুরস্ক ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতরা স্বাক্ষর করেন। এদিকে গতকাল বিদেশী
কূটনীতিকদের মধ্যে শোক প্রকাশ করেন স্পেনের রাষ্ট্রদূত লুইস তেজেদা চাকন,
ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত বেনসেন আবু বান্দালি, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আল
ইবরাহিম, আরব আমিরাত ও নেপালের দূতাবাসের কর্মকর্তা শোকবইতে স্বাক্ষর করেন।
ওদিকে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে শোকবইতে সাক্ষর করেছেন সাবেক
প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি
লিখেছেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার স্নোহাস্পদ
ছোট সন্তান আরাফাত রহমান কোকো মাত্র ৪৫ বছর বয়সে অকাল মৃত্যুতে আমি
মর্মাহত হয়েছে। কোকোকে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব স্নেহ করতাম। আল্লাহ তার
রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। জিয়া পরিবারের সবাইকে এই শোক সহ্য করার শক্তি
দিন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না লিখেছেন, বিএনপি
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক
মৃত্যুতে তিনি যে শোকের সাগরে ভাসতে তাতে আমরাও মর্মাহত। আল্লাক যেন তাকে
এই শোক সইবার শক্তি দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আনোয়ার
উল্লাহ চৌধুরী লিখেছেন, ‘আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা
গভীরভাবে শোকাহত। মরহুমের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং শোকাগ্রস্ত
পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। ’ ইসলামী ইউনিভার্সিটির
চেয়ারম্যান মাওলানা কাশেমী লিখেছেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে আমি
গভীর শোক প্রকাশ করছি। জিয়া পরিবারকে আল্লাহ যেন এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি
দেন- এই কামনা করছি।’ এছাড়া রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে- জাতীয়
পার্টি (একাংশ) কাজী জাফর আহমেদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ
নেজামী, বিশিষ্ট বুুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.)
আবদুল মান্নান, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল আজিম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির
সভাপতি এড. তৈমূর আলম খন্দকার, হেফাজত ইসলামীর ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক নুর
হোসেন কাসেমী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. ওয়াকিল আহমেদ,
বিজিএমইএ’র সভাপতি আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল,
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা, আকরাম খান, জাতীয় ফুটবল
দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকসহ সহস্রাধিক মানুষ।
No comments