পানি সেচে ‘কালো সোনা’ by এম আর আলম
(দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ডোবা-পুকুর সেচে কয়লার গুঁড়া সংগ্রহের পর তা ছেঁকে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করেন স্থানীয় লোকজন। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে তাঁদের। শুক্রবার তোলা ছবি l প্রথম আলো) ‘কালো
সোনা’ শব্দ দুটির সঙ্গে অনেকেই হয়তো পরিচিত নন। তবে দিনাজপুরের
পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিসংলগ্ন
গ্রামগুলোতে ওই শব্দ দুটি খুবই চেনা। কয়লাখনি থেকে নির্গত পানি সেচে
পাওয়া কয়লার গুঁড়াকেই লোকজন কালো সোনা বলেন। কারণ, এই গুঁড়া বিক্রি করে
তাঁরা লাখো টাকা উপার্জন করেন। এলাকার মানুষ নিজেদের জমি কেটে ডোবা-পুকুর
বানিয়ে তাতে কয়লাখনির পরিশোধিত পানি জমা করেন। পরে তা ছেঁকে বের করেন
কয়লার গুঁড়া। প্রতিবছর অন্তত তিন-চারবার এই জমানো কয়লার গুঁড়া বিক্রি
করেন তাঁরা। খনি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ভূগর্ভ থেকে কয়লা উত্তোলনের
সময় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্পের সাহায্যে প্রতিদিন কয়েক হাজার লিটার পানি
অপসারণ করতে হয়। এসব পানি নালার মাধ্যমে খনির পাশের নিচু জমি কিংবা ডোবা,
পুকুরে জমা হয়। কয়লাখনি-সংলগ্ন সাহাগ্রাম, চৌহাটি, দুর্গাপুর, মজিদপুর ও
বড়পুকুরিয়া গ্রামে জল সেচে কয়লার গুঁড়া সংগ্রহের কাজ করেন কয়েক শ
নারী-পুরুষ। শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খনি এলাকার দিনমজুর
রফিকুল ইসলাম (৪০) নিজের ডোবায় কয়লার গুঁড়া সংগ্রহ করছেন। এসব গুঁড়া
কয়লা কীভাবে ও কোথা থেকে এল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, খনি থেকে বের হয়ে
আসা পানি দু-তিন মাস পুকুর বা ডোবায় ধরে রাখলে এর তলানি থেকে পাওয়া যায়
কয়লার গুঁড়া। এভাবে খনির পানি ধরে রেখে বছরে তিন-চারবার গুঁড়া কয়লা
সংগ্রহ করেন তিনি। হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর
রহমান বলেন, খনিমুখ থেকে নির্গত পানি এখন গ্রামের অনেক মানুষের জীবিকার
উৎস। গ্রামের কৃষক-দিনমজুরদের হাতে যখন কাজ থাকে না, তখন তাঁরা ঝুঁকে পড়েন
এ কাজে। নিজেদের জমিতে ডোবা-পুকুর খুঁড়ে তাতে খনির পানি ধারণ করেন।
এভাবেই মেলে কয়লার গুঁড়া। প্রতিটি ডোবা থেকে বছরে কমপক্ষে ৩০ টন কয়লা
পাওয়া যায়। এর প্রতি টনের মূল্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা। বড়পুকুরিয়া
কোল মাইনিং লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন) হাবিবউদ্দিন
আহমেদ জানান, খনি-নির্গত পানি পরিশোধনের পরও কিছু কয়লার ডাস্ট (পরিশিষ্ট)
থেকে যায়। এতে খুব সামান্য কয়লার গুঁড়া পাওয়া যায়। তবে এই পানি
দীর্ঘদিন জমা রেখে এলাকার গরিব মানুষ উপকার পাচ্ছে। তারা এ থেকে কয়লা
সংগ্রহ করে তা খোলা বাজারে, বিশেষ করে ইটভাটাগুলোতে বিক্রি করছে। খনি
এলাকার দিনমজুর বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের মানুষ খুব অভাবী। আগে
অনেক মানুষ বেকার ছিল। কেউ কেউ অন্য এলাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করত। এখন
তা করতে হচ্ছে না। কয়লাখনির পানি আমাদের কালো সোনা দিচ্ছে। অনেক অভাবী
মানুষ নিজের জমিতে পানি ধরে বছরে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছে।
বাড়তি ওই আয়ের সুযোগ পেয়ে ভালোই আছি আমরা।’
No comments