কোকোকে অশ্রুসিক্ত মায়ের বিদায় জানিয়েছেন মা খালেদা জিয়া
(ছবি:-১ গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মরদেহ নিয়ে আসার পর শেষবারের মতো ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ছুঁয়ে দেখছেন মা খালেদা জিয়া। ছবি: বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সৌজন্যে ছবি:-২ আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার শান্তির জন্য মোনাজাত করছেন মা খালেদা জিয়া ও স্বজনেরা। ছবি: সাজিদ হোসেন ছবি:-৩ ছেলের মরদেহ দেখার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। ছবি: বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সৌজন্যে) ছোট
ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে অশ্রুসিক্ত চোখে শেষ বিদায় জানিয়েছেন মা
খালেদা জিয়া। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক
কার্যালয়ে কোকোর মরদেহ নেওয়া হলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কোকোর
মরদেহবাহী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের বিমানটি আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময়
সকাল আটটার দিকে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। এটি বাংলাদেশ
সময় দুপুর পৌনে ১২ টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ
করে। কোকোর মরদেহ গ্রহণের জন্য বিএনপির নেতা আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল
নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, ফজলুল হক মিলন, গিয়াস কাদের চৌধুরী,
আবদুল মান্নান প্রমুখ বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে কোকোর
মরদেহ বহনকারী গাড়ি পৌঁছে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে। উত্তর পাশের
ফটক দিয়ে গাড়ি ঢোকানো হয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে। নেতা-কর্মীদের ভিড়,
ধাক্কাধাক্কিতে ফটক খুলে কয়েক গজ ভেতরে গাড়ি ঢুকাতে সময় লাগে প্রায় ১৫
মিনিট। পৌনে দুইটার দিকে কোকোর কফিন কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকানো হয়।
কার্যালয়ের ভেতরে দলীয় নেতা-কর্মী বা গণমাধ্যমের কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ
ছিল না। সকাল থেকে ভেতরে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তাঁর
পরিবারের সদস্যরা। এর বাইরে তাঁর নিজস্ব কর্মকর্তা এবং মহিলা দলের কয়েকজন
নেত্রী ছিলেন। কার্যালয়ের ভেতরে থাকা একজন প্রথম আলোকে বলেন, কোকোর মরদেহ
রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। এ কক্ষে সাধারণত খালেদা জিয়া
সংবাদ সম্মেলন বা এ জাতীয় অনুষ্ঠান করেন। কক্ষের ভেতর স্থায়ী মঞ্চে রাখা
হয় কফিন। কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে আসেন খালেদা জিয়া।
প্রথমে কিছুটা নির্বাক ছিলেন। একটু পর ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। কফিনে থাকা
কোকোর মুখ দুই হাতে ধরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ছেলের মরদেহের পাশে
বসেই তিনি মোনাজাত করেন। পাশের আরেকটি কক্ষে তখন চলছিল কোরআন তিলাওয়াত।
সেখানে এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও দুই
মেয়ে, খালেদা জিয়ার দুই ভাইয়ের স্ত্রী, তারেক রহমানের শাশুড়ি, খালেদা
জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল
বিশ্বাস প্রমুখ। পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো দেখার পর প্রায় এক ঘণ্টা
পর কোকোর মরদেহ বেলা পৌনে তিনটার দিকে গুলশান কার্যালয় থেকে বায়তুল
মোকাররমের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মা খালেদা জিয়া অশ্রুসজল
নয়নে গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ছেলেকে বিদায় জানান। বিএনপির
পক্ষ থেকে নেতা-কর্মীদের গুলশান কার্যালয়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল।
কিন্তু তার পরও সকাল থেকে সেখানে ভিড় করতে থাকেন শত শত নেতা-কর্মী। তবে
কারও ভেতরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বসে অনেক
মহিলা কর্মীকে তসবিহ পড়তে দেখা যায়। কোকো গত শনিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী
কুয়ালালামপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরদিন কুয়ালালামপুরে
তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।দুপুর ১২ টার দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন
২০-দলীয় জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের জানান, বানানীর সামরিক কবরস্থানে কোকোর
দাফনের অনুমতি মিলেনি। তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনাপ্রধানের
সন্তান হিসেবে কোকোকে সামরিক কবরস্থানে দাফন করা যায়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ
জন্য অনুমতিও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
No comments