সম্প্রীতি- এক জলেই সব হয় গো শুচি by আনোয়ার হোসেন
(চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বরেন্দ্রা গ্রামে শুতিহার নামের দিঘি l ছবি: প্রথম আলো) চার
দশক ধরে একটি গ্রামের হিন্দু-মুসলিম ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে একসূত্রে বেঁধে
রেখেছে ‘শুতিহার’ দিঘি। দিঘিটিকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উন্নয়নের
এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন গ্রামবাসী। দিঘির আয় থেকে নির্মাণ
হয়েছে বিদ্যালয়, মন্দির, মসজিদ, ঈদগাহ, শ্মশান, কবরস্থান এবং রাস্তাঘাট।
পাশাপাশি দিঘির আয়ের অর্থ ব্যয় হয়েছে মানুষের আপদ-বিপদে। সরকারি ওই খাস
দিঘিটি গ্রামবাসীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টাও হয়েছে প্রভাবশালী
মহলের পক্ষ থেকে। গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এ
জন্য জীবনও দিতে হয়েছে গ্রামের একজনকে। কিংবদন্তি বিপ্লবী নেত্রী ইলা
মিত্রের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের
নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্রা গ্রামে ‘শুতিহার’ দিঘির অবস্থান।
হিন্দু-মুসলিম ও আদিবাসী মিলিয়ে গ্রামটিতে দেড় হাজার লোক বাস করেন।
শুরুর কথা: দিঘিটিতে একসময় হাঁটুপানি থাকত। কচুরিপানায় ভর্তি থাকা দিঘিটি তখন ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। ১৯৭৫ সালে গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সোবহান, দিদার বক্স, আবদুল মালেক, যোগেন সর্দার, ভজহরি সর্দার, সুরেশ কর্মকার, মগোচন্দ্র ওঁরাও, আতাউর রহমান, আবদুল কাদের এবং ঝড়ু চন্দ্র পাহান মিলে মানুষের উপকারে দিঘিটিকে ব্যবহার উপযোগী করার পরিকল্পনা করেন। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয় বরেন্দ্র স্বনির্ভর পল্লি সমিতি নামের একটি সংগঠন। বর্তমানে ওই উদ্যোক্তাদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন আতাউর রহমান, আবদুল কাদের এবং ঝড়ু চন্দ্র পাহান। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটি প্রথমে গ্রামের মানুষকে নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির সহায়তায় দিঘিটি খনন করে মাছ চাষের উপযোগী করা হয়। প্রথম দিকে দিঘিটি থেকে গ্রামবাসীর মাছের চাহিদা পূরণ হলেও পুঁজির অভাবে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যায়নি। তবে আয় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ১৯৮৬ সালে দিঘির আয় থেকে ৭৪ হাজার টাকা খরচ করে গ্রামে গড়ে তোলা হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি)। এরপর ১৫ বছর ধরে দিঘিটি থেকে মোটামুটি আয় হতে থাকে।
দিঘি রক্ষায় আন্দোলন: ২০০২ সালে দিঘিটি দখলের পাঁয়তারা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীনেরা। প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তারা দিঘিটির বন্দোবস্ত নেয়। তখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। ওই সময়ে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা ফকির মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি খুন হন। এরপর গ্রামবাসী ফুঁসে ওঠেন। তাঁরা এক হয়ে দিঘিটিকে ভিত্তি করে গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির একটি আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার শপথ নেন। মামলা-মোকদ্দমায় লড়ার পর দিঘিটি পুনরায় গ্রামবাসীর আয়ত্তে আসে। এরপর দিঘির আয় বাড়ার পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নের গতি বেড়ে যায়। দিঘিটিকে পাকাপোক্তভাবে গ্রামবাসীর আয়ত্তে রাখতে ২০১২ সালে গঠন করা হয় বরেন্দ্রা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল ইসলাম বলেন, দিঘির আয়ের ৪০-৪২ লাখ টাকা খরচ করে এরই মধ্যে গ্রামের নানা উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ, ১০-১২ লাখ টাকা ব্যয়ে মন্দির, আট লাখ টাকা ব্যয়ে ঈদগাহ, শ্মশানের জন্য দুই লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে জমি, প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে রাস্তা এবং ৪০ হাজার টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানির ট্যাংক। ওই পানির ট্যাংক থেকে প্রতিটি বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ে এবং অসুখ-বিসুখসহ নানা বিপদে-আপদে ব্যয় করা হয়েছে ওই দিঘির আয়ের অর্থ। ভবিষ্যতে হাতে নেওয়া হবে মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ, শ্মশানের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, বাজার নির্মাণ এবং আরও একটি কবরস্থানের জন্য জমি ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। এ জন্য ব্যয় হবে আরও ৩০-৪০ লাখ টাকা।
গ্রামবাসী জানান, দিঘিটির কারণেই গ্রামের প্রতিটি বাসিন্দা মাছ খাওয়ার সুযোগ পান। ঝড়ু চন্দ্র পাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিঘিটা হামরাকে এক করে র্যাখ্যাছে। তাই হামরা সবাই মিলে ভালো আছি। হামারঘে একতা কেহু ভাঙতে পারবে না।’
শুরুর কথা: দিঘিটিতে একসময় হাঁটুপানি থাকত। কচুরিপানায় ভর্তি থাকা দিঘিটি তখন ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। ১৯৭৫ সালে গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সোবহান, দিদার বক্স, আবদুল মালেক, যোগেন সর্দার, ভজহরি সর্দার, সুরেশ কর্মকার, মগোচন্দ্র ওঁরাও, আতাউর রহমান, আবদুল কাদের এবং ঝড়ু চন্দ্র পাহান মিলে মানুষের উপকারে দিঘিটিকে ব্যবহার উপযোগী করার পরিকল্পনা করেন। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয় বরেন্দ্র স্বনির্ভর পল্লি সমিতি নামের একটি সংগঠন। বর্তমানে ওই উদ্যোক্তাদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন আতাউর রহমান, আবদুল কাদের এবং ঝড়ু চন্দ্র পাহান। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনটি প্রথমে গ্রামের মানুষকে নিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির সহায়তায় দিঘিটি খনন করে মাছ চাষের উপযোগী করা হয়। প্রথম দিকে দিঘিটি থেকে গ্রামবাসীর মাছের চাহিদা পূরণ হলেও পুঁজির অভাবে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যায়নি। তবে আয় ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ১৯৮৬ সালে দিঘির আয় থেকে ৭৪ হাজার টাকা খরচ করে গ্রামে গড়ে তোলা হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি)। এরপর ১৫ বছর ধরে দিঘিটি থেকে মোটামুটি আয় হতে থাকে।
দিঘি রক্ষায় আন্দোলন: ২০০২ সালে দিঘিটি দখলের পাঁয়তারা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীনেরা। প্রশাসনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে তারা দিঘিটির বন্দোবস্ত নেয়। তখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। ওই সময়ে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা ফকির মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি খুন হন। এরপর গ্রামবাসী ফুঁসে ওঠেন। তাঁরা এক হয়ে দিঘিটিকে ভিত্তি করে গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির একটি আদর্শ গ্রাম গড়ে তোলার শপথ নেন। মামলা-মোকদ্দমায় লড়ার পর দিঘিটি পুনরায় গ্রামবাসীর আয়ত্তে আসে। এরপর দিঘির আয় বাড়ার পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নের গতি বেড়ে যায়। দিঘিটিকে পাকাপোক্তভাবে গ্রামবাসীর আয়ত্তে রাখতে ২০১২ সালে গঠন করা হয় বরেন্দ্রা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল ইসলাম বলেন, দিঘির আয়ের ৪০-৪২ লাখ টাকা খরচ করে এরই মধ্যে গ্রামের নানা উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ, ১০-১২ লাখ টাকা ব্যয়ে মন্দির, আট লাখ টাকা ব্যয়ে ঈদগাহ, শ্মশানের জন্য দুই লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে জমি, প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে রাস্তা এবং ৪০ হাজার টাকা দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পানির ট্যাংক। ওই পানির ট্যাংক থেকে প্রতিটি বাড়িতে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ে এবং অসুখ-বিসুখসহ নানা বিপদে-আপদে ব্যয় করা হয়েছে ওই দিঘির আয়ের অর্থ। ভবিষ্যতে হাতে নেওয়া হবে মসজিদ সম্প্রসারণের কাজ, শ্মশানের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, বাজার নির্মাণ এবং আরও একটি কবরস্থানের জন্য জমি ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ। এ জন্য ব্যয় হবে আরও ৩০-৪০ লাখ টাকা।
গ্রামবাসী জানান, দিঘিটির কারণেই গ্রামের প্রতিটি বাসিন্দা মাছ খাওয়ার সুযোগ পান। ঝড়ু চন্দ্র পাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিঘিটা হামরাকে এক করে র্যাখ্যাছে। তাই হামরা সবাই মিলে ভালো আছি। হামারঘে একতা কেহু ভাঙতে পারবে না।’
No comments