পুলিশের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান- পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে
বিরোধী
দলের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে
বিচারবহির্ভূতভাবে বিরোধী দলের আটজন নেতাকর্মী মারা গেছেন। এরা কথিত
বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ছাড়া,
বিভিন্ন স্থানে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর নানাভাবে নির্যাতনের
অভিযোগ উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের শীর্ষ
কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বিরোধী জোটের অবরোধের মধ্যে যেসব নাশকতামূলক কাজ
হচ্ছে, তা ‘যেকোনো উপায়ে’ দমন করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি
পুলিশ কর্মকর্তাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘এখানে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই, কোনো
চিন্তা নেই। যা কিছু হোক, সে দায়িত্ব আমি নেবো।’ প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা
কতকগুলো গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। অবরোধ ও হরতালের মধ্যে যেসব
ধ্বংসাত্মক কাজ হচ্ছে, নিঃসন্দেহে তা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। এ ধরনের
অপরাধের সাথে যারা বা যে কেউ জড়িত থাকুক না কেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী তাদের আইনের হাতে সোর্পদ করবে। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু ‘যেকোনো উপায়ে’ তা দমনের এখতিয়ার কোনো বাহিনীর নেই। কারণ আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের সুস্পষ্ট বিধিবিধানের মধ্যে থেকে জননিরাপত্তার
দায়িত্ব পালন করতে হয়। আইনের বাইরে গিয়ে, খেয়াল খুশিমতো তারা কোনো কাজ করতে
পারেন না। যদি করেন, তা হবে সংবিধানের পরিপন্থী এবং এতে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা
ভেঙে পড়বে। দেশ তখন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হবে, যা গণতান্ত্রিক শাসনে
অকল্পনীয়। প্রধানমন্ত্রী যেকোনো উপায়ে নাশকতা দমনে নিজে সব দায়িত্ব নেয়ার
ঘোষণা দিয়েছেন। তার এ ঘোষণা শুধু বিস্ময়কর নয়, উদ্বেগজনকও। কারণ, পুলিশ ও
র্যাবের বিরুদ্ধে যেসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে, তার
দায়দায়িত্ব কি তিনি নেবেন? আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড জঘন্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এসব অপরাধের দায়
জেনেবুঝে কেন তিনি নেবেন, তা বোধগম্য নয়। এ কথা সত্য, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা
রক্ষা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড়
চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই সমস্যা আইনশৃঙ্খলাজনিত নয়, সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক
সমস্যা। তাই এর সমাধান করতে হবে রাজনৈতিক উপায়েই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে
রাজনৈতিক সমস্যার অতীতে সমাধান হয়নি, বর্তমানেও হবে না। আমরা আশা করব,
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইনের সুস্পষ্ট বিধিবিধানের মধ্যে থেকে
দায়িত্ব পালনের নির্দেশন দেয়া হবে। একই সাথে, চলমান সঙ্কট উত্তরণে দ্রুত
আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেয়া জরুরি, যাতে দেশে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তার
আশু অবসান ঘটে।
No comments