দেশ রক্ষায় সমঝোতার বিকল্প নেই- ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব
দেশের চলমান জাতীয় সঙ্কট থেকে উত্তরণে সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তিগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব পেশ করে তিনি বলেন, একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই জাতিকে বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণের সহায়তা করতে পারে। প্রস্তাবে বলা হয়, যেহেতু সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে বর্তমান কাঠামোতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের ত্রে অকার্যকর হয়ে পড়েছে, মতার উৎস হিসেবে জনগণের ইচ্ছা এই সংশোধনে প্রতিফলিত হয়নি, জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা গ্রাস করেছে। এ কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও স্তব্ধ হয়েছে। সেজন্য সময় এসেছে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার। জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের প্রধান কাজ হবে প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে পরিচালনার ল্েয সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান। ঐকমত্যের সরকারের প্রধান কর্তব্য হবে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট হিসেবে যে যুক্তি তুলে ধরেছেন, তার সাথে দ্বিমত পোষণের অবকাশ খুব কমই রয়েছে। আসলেই একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ছাড়া এমন ঘোর সঙ্কট জাতির জীবনে কখনো আসেনি। জনগণের অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচনের পর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সংবিধানকে নির্বিচারে কাটাছেঁড়ার কারণে এটি জাতির সঙ্কটকালে দিকনির্দেশনা দিতে অমে পরিণত হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নির্দলীয় নিরপে সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে অব্যাহত আন্দোলন করে যাচ্ছে। অন্য দিকে সরকার তাদের দাবি বিবেচনার পরিবর্তে দমনপীড়ন ও নিঃশেষ করার নীতি গ্রহণ করেছে। সরকার ও বিরোধী শক্তির এই প্রাণঘাতী লড়াইয়ে জনগণ এক নিরাপত্তাহীন, শঙ্কাকুল এবং অনিশ্চিত সময়ে নিপ্তি হয়েছে। এই অনিশ্চিত অচলাবস্থার সমাধান হওয়া জরুরি। সাংবিধানিক ব্যবস্থার বাইরে অতীতেও জাতীয় সঙ্কট সময়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব হতো যদি সব রাজনৈতিক পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নিতে একমত হতে পারত। বাস্তবে যেহেতু এটি দেখা যাচ্ছে না, তাই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি বিবেচনা করা দরকার। এ সরকারের বিস্তারিত কাঠামো কেমন হবে, সেটি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বসে ঠিক করতে পারে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনকে ১৯৯০ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার সময়ও এভাবে ঠিক করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব সংস্থা বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ফোরাম বা অভ্যন্তরীণ কোনো সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে সেটিও বিবেচনার মধ্যে আনা যেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সমঝোতার বিপরীতে সঙ্ঘাতের পথে দুই পক্ষ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে ধ্বংস আর রক্তপাত ছাড়া ভালো পরিণতি নেই। শুভবুদ্ধির উদয় হতেই হবে।
No comments