‘উনি মুক্তিযোদ্ধা, দয়া করে যত্ন নেবেন’ - অসুস্থ গোবিন্দ হালদারের পাশে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট
সোমবার
রাত প্রায় দশটা। শীতের কলকাতা অনেকটাই চুপচাপ। এরই মধ্যে আচমকাই কড়া
নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কনভয় ছুটে
চলেছে। গন্তব্য, উত্তর কলকাতার একটি অতি সাধারণ পলিক্লিনিক কাম হাসপাতাল।
এখানেই ভর্তি রয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রেরণা সৃষ্টিকারী
গানের রচয়িতা, কবি ও গীতিকার গোবিন্দ হালদার। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সোজা
হাজির হলেন আইসিইউতে। তার আগেই অবশ্য উপস্থিত হালদার-পত্নী পারুল দেবী ও
কন্যা গোপার কাছে খবর নেন গীতিকারের শারীরিক অবস্থার। অসুস্থ গোবিন্দ
হালদারের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আবদুল হামিদ জানতে চান, কেমন আছেন? দৃষ্টিহীন
হালদারকে জানানো হয় বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের হাজির হওয়ার কথা। অসুস্থ
অবস্থাতেই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। আবদুল হামিদ তাকে বলেন, মনে পড়ে সেই সব
গানের কথা, যেগুলো মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিল? গীতিকার সহজেই ধীরে ধীরে
শোনান বেশ কয়েকটি গানের প্রথম কয়েকটি কলি। মিনিট দশেক গীতিকারের কাছে থেকে
বাইরে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের আবদুল হামিদ বলেন, উনি আমাদেরই একজন। উনি
একজন মুক্তিযোদ্ধা। একজন বীর সৈনিক। দয়া করে ওর যত্ন নেবেন। উনি যাতে আরও
দীর্ঘদিন বেঁচে থাকেন। মাত্র দু’দিন আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অসুস্থতার খবর পেয়ে নিজেই ফোন করেছিলেন গীতিকার গোবিন্দ হালদারকে।
তখন তিনি ভাল ছিলেন না। তাই তেমনভাবে কথা বলতে পারেননি। তবে হাসিনা তাকে
জানিয়েছেন, দ্রুত ভাল হয়ে উঠুন। হাসিনা আরও বলেছেন, আপনার গান শুনে সেদিন
আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। গোবিন্দ হালদারের সব ধরনের চিকিৎসার খরচও যে
বাংলাদেশ সরকার বহন করবে সেকথাও তিনি জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, শেখ হাসিনার
পরামর্শেই সোমবার রাতের কর্মসূচি পরিবর্তন করে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশের মানুষের হয়ে সহমর্মিতা জানাতে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্রনাথ রায়
পলিক্লিনিক ও হাসপাতালে। এ হাসপাতালেই গত ১৩ই ডিসেম্বর কিডনিজনিত অসুস্থতার
জন্য ৮৪ বছরের গোবিন্দ হালদারকে ভর্তি করা হয়। এখন তিনি অনেকটা ভাল।
হাসপাতালের পরিচালনা ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট তরুণ পালিত জানিয়েছেন, উনি
চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। তার জ্ঞানও রয়েছে। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে’,
‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ প্রভৃতি
মুক্তিযুদ্ধের উন্মাদনা সৃষ্টিকারী গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার। বাংলাদেশ
সরকার এর আগেও অসুস্থ গীতিকারের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। দেয়া
হয়েছিল ১৫ লাখ রুপি। গত বছর ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ সম্মানও দেয়া হয়েছে তাকে।
অসুস্থতার কারণে তার পরিবর্তে কন্যা গোপা দেবী সেই সম্মান নিতে ঢাকায়
গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, পুরস্কার ঘোষণার সময় যেভাবে অভ্যর্থনা জানানো
হয়েছে তাতে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। আসলে কলকাতা তথা এপার বাংলা এই মহান
গীতিকারকে স্মরণ না করলেও ওপার বাংলা তাকে আপন করে নিয়েছে।
No comments