পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয় -কারা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী by ইকবাল আহমদ সরকার
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে
কারারক্ষীদের কারও সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের কঠোর শাস্তির
মুখোমুখি হতে হবে। দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জঙ্গি এবং শীর্ষ
সন্ত্রাসীরা যাতে কারাগারের ভেতর থেকে জঙ্গি তৎপরতা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম
চালাতে না পারে সে লক্ষ্যে কারা নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে।
মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় কারা সপ্তাহের
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বন্দিদের
সুশৃঙ্খলভাবে নিরাপদ আটক ও তাদের প্রতি মানবিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে
কারারক্ষীদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। অপরাধীদের নিরাপদে আটক
রাখার মাধ্যমে সমাজে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অটুট রাখতে কারারক্ষীগণ
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। বন্দিদের সঙ্গে কারা প্রশাসনের ও
কারারক্ষীদের আচরণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে
নয়’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমরা কারা প্রশাসন পরিচালনা করছি। তাই
আমাদের সরকার সবসময় কারাগারের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন
করছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৪৩ বছরেও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোন
প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য রাজশাহীতে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং
ঢাকায় একটি কারা স্টাফ কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে অনেক কারাগারের সংস্কার এবং নতুন
কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী জুনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর করা হবে। আর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা খালি
হলে সেখানে উন্নত মানের স্কুল-কলেজ করা হবে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার
কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হওয়ার পর এখানকার জমির প্রায় ৯ একর জায়গায় পার্ক
স্থাপন করার পরিকল্পনা আছে। এতে পুরান ঢাকার মানুষসহ দেশের সব নাগরিক ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতিষ্ঠিত ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও
জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’ দেখার সুযোগ পাবে। কারারক্ষীদের
উদ্দেশে তিনি বলেন, কারা বিভাগের প্রতিটি সদস্য বন্দি সংশোধন ও পুনর্বাসনের
মহৎ পেশায় নিয়োজিত। এখানে জনকল্যাণে নিজেদের তুলে ধরার যথেষ্ট সুযোগ
রয়েছে। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পেশাগত জ্ঞানের উৎকর্ষ অর্জনের
মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি বলেন,
কারাগারে আটক অপরাধীদের শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে হবে, যাতে কেউ কারাগারে এসে
আরও বড় অপরাধী হয়ে বের না হয়। কারাগারে আসা বন্দিদের বন্দি হিসেবে না দেখে
সমাজের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সমাজের একজন সদস্য কারাগারের
পরিবেশের কারণে অপরাধী হয়ে বের হলে সমাজ আরও কলুষিত হবে। কারা প্রশাসনের
পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, বন্দিরা সাজা ভোগ শেষে কারাগার থেকে
মুক্তি পেয়ে যাতে সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পান
সে জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী কারাগারের
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক শ’ ভাগ পারিবারিক রেশন, ৩০ শতাংশ ঝুঁকিভাতা এবং
বেশ কিছু পর্যায়ে কর্মকর্তাদের পদমর্যাদা ও বেতনক্রম বৃদ্ধির কথা তুলে
ধরেন এবং ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো কারারক্ষীদের জন্যও রসদ ভাতা
চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, ১০০ বছরের পুরানো, জরাজীর্ণ খুলনা জেলা
কারাগারকে সরিয়ে নিতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। সিলেট কেন্দ্রীয়
কারাগারকেও আরও বড় পরিসরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। তিনি বলেন,
চট্টগ্রাম কারাগারের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হয়েছে। দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ,
কিশোরগঞ্জ, ফেনী, মাদারীপুর ও পিরোজপুর জেলায় নতুন কারাগার নির্মাণের কাজ
চলছে। এছাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ,
নাটোর, নীলফামারী এবং নেত্রকোনা জেলায় নতুন কারাগার চালু করার কথাও বলেন
তিনি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয়
কারাগারে শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা
বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত এক হাজার বন্দিকে বিশেষ বিবেচনায় কারাগার
থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে যাতে তারা সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন
করতে পারেন। এর আগে কারা সপ্তাহের উদ্বোধন করতে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী সকালে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ
ইফতেখার উদ্দীন তাকে সেখানে স্বাগত জানান। প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় সংগীতের
পর প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানানো হয়। এরপর একটি খোলা গাড়িতে চড়ে
প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন ও সশস্ত্র অভিবাদন গ্রহণ করেন। এছাড়া,
প্রধানমন্ত্রী কারামেলা ও প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধন ও পরিদর্শন করেন।
এরপর কারারক্ষীদের দরবারে অংশ নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে
কারাগারের ভেতরে ও বাইরে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোয়েন্দা নজরদারিও জোরদার করা হয়। দীর্ঘ সাত বছর
বন্ধ থাকার পর ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’- এই স্লোগান নিয়ে এবার সারা
দেশের ৬৮ কারাগারে কারাসপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। বন্দিদের বিষয়ে কারাগারের
কর্মচারীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা, কারারক্ষীদের উৎসাহ যোগানো,
কারাগারের পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিকদের
জানানো এবং সার্বিকভাবে সচেতনতা তৈরি এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য।
No comments