খালেদার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা বিএনপি’র
জিয়া
চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে দলটি।
একইসঙ্গে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের রাজনীতি থেকে
দূরে রাখতে সরকার এ ধরনের মিথ্যা মামলায় হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছেন
তারা। গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। তিনি
বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের জরুরি সরকারের আমলে দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ
ট্রাস্ট অর্থ আত্মসাতের মিথ্যা মামলার বিচারের যখনই সময় হয় ঠিক তখনই
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে বসে শেখ হাসিনা এ মামলা নিয়ে নানান
বক্তব্য দিয়ে থাকেন। খালেদা জিয়া নাকি এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন-
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অধস্তন আদালতের ওপর
চাপ সৃষ্টি করে। তার উদ্দেশ্য বিচারকের ওপর সরকারের প্রভাব সৃষ্টি করা।
সরকার বিচার বিভাগকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান,
বিএনপির সকল সিনিয়র নেতা এবং সারা দেশের হাজার হাজার ভিন্নমত পোষণকারীরা
ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা আলমগীর। তিনি
বলেন, ভিন্নমত হলেই সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে তা দমন করছে।
আদালতের মাধ্যমেই শেখ হাসিনা নিজের ১৫টি মামলা তুলে নিয়েছেন। এমনকি
বিচারাধীন মামলাও তিনি তুলে নিয়েছেন। মামলার বাদী আজম জে চৌধুরী যে সব
চেকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ঘুষ দিয়েছিলেন তা পত্রিকায় ফাঁস হয়েছিল। সেই
মামলার ট্রায়ালও শুরু হয়েছিল, কিন্তু বাতিল করা হয়েছে। অথচ যে মামলার কোন
ভিত্তিই নেই সেই মামলা হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। বিএনপি চেয়ারপারসনের
বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে মামলা দেয়া হচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, এই অবৈধ
অনৈতিক সরকার মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করছে।
অনৈতিক ও অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস
করেছে। তারা বিচার বিভাগকেও ধ্বংস করেছে। উচ্চ আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা
থাকলেও আমরা এখন হতাশ। তিনি বলেন, যখন সরকার অন্যায়ভাবে বিরোধী রাজনীতিকদের
হয়রানি করে তখন উচ্চ আদালতে গিয়ে তারা রিলিফ পেয়ে থাকেন। কিন্তু এখন
আদালতের আচরণে আমরা হতাশ। এখন দেশে দু’টি নিয়ম। একটি সরকারি দলের জন্য
আরেকটি বিরোধী দলের জন্য। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া,
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে
হবে। না হলে আমরা আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজপথেও কঠোর আন্দোলনে যাবো।
দুদক চেয়ারম্যানের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, দুদকের চেয়ারম্যান
বিশেষ রাজনৈতিক দলের স্বার্থ রক্ষা করছেন। তিনি পাবনাতে একটি বিশেষ
রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন ও পরে ছিলেন রাজশাহীতে। তিনি তার পদে থেকে
সাংবিধানিক ভাষায় কথা না বলে রাজনৈতিক কর্মীর মতো কথা বলছেন। ট্রাস্ট
মামলায় হঠাৎ করে বিচারক পরিবর্তনকে উদ্দেশ্যমূলক আখ্যায়িত করে বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, খালেদা জিয়ার
বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচারক পরিবর্তনের জন্য
আমরা উচ্চ আদালতে রিট করেছি। সেই আবেদনটি এখন আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন
অবস্থায় সরকার হঠাৎ তাকে সরিয়ে দিয়েছে। এতে প্রমাণ হয়, এ সরকার আইনের কোন
তোয়াক্কা করে না। তারা অন্যসব কিছুর মতো বিচার বিভাগকেও গায়ের জোরে নিজেদের
আদেশ-নির্দেশে চালাতে চায়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম
কে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান
আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএসএম আবদুল হালিম, গণশিক্ষা
বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments