এই সর্বনাশা জিপিএ-৫ থামান, এখনই by রফিকুজজামান রুমান
দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বের হলো মঙ্গলবার। পাসের হার শকতরা ৯। প্রতি ১০০ জনে ৯১ জন ফেল করেছে! এর আগে অনুষ্ঠিত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে শতকরা ২১ জন এবং ‘গ’ ইউনিটে শতকরা ২০ জন। ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৪২ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী। ধারণা করা যায়, ফেল করাদের (শতকরা ৯১ জন) প্রায় সবাই এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ বা কাছাকাছি গ্রেড পেয়েছে। জিপিএ ৫ পাওয়া একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বরও যখন পায় না, তখন লাখ লাখ জিপিএ ৫ পাওয়ায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের প্রশ্ন, ‘এই জিপিএ ৫ লইয়া আমরা কী করিব?’
শিক্ষামন্ত্রীকে খুব কাছ থেকে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এসেই মঞ্চে গেলেন না। দর্শক সারিতে এসে বসে পড়লেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বললেন, পরামর্শ চাইলেন। আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বুঝলাম, তিনি আন্তরিক। একটা কিছু করতে চান। কিন্তু বড় অদ্ভুত এই দেশ! রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখানে হারিয়ে যায় সব। শিক্ষা যায়, মনুষ্যত্ব যায়, বিবেক যায়, যায় ইচ্ছাটাও। রাজনীতির নামে এখানে সব কিছু হয়; শুধু রাজনীতিটাই হয় না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে সস্তা আত্মতৃপ্তির লালসায় পাবলিক পরীক্ষায় শত ভাগ পাস করানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পৃথিবীর কোথায়? পৃথিবীর কোন প্রান্তে পরীক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয় বেশি নম্বর দিয়ে পাসের হার বাড়িয়ে দিতে? এই বিধ্বংসী রাজনীতির কাছে ‘নরম’ মনের শিক্ষামন্ত্রী অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তাই তো এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রবাস দখল-রাজনীতির আগুনে পোড়ানো হলে সেটি দেখে শুধুই কাঁদেন দরদি শিক্ষামন্ত্রী। কোনও প্রতিবাদ তিনি করতে পারেননি। দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবু মন্ত্রীর কান্না আমাদের একটি বার্তা দিয়েছিল, তিনি চাইলেও কিছু করতে পারছেন না। কোথাও হয়তো তার হাত-পা বাঁধা। কিন্তু না। তিনিও আসলে রাজনীতির ছকে বৃত্তবন্দি। না হলে প্রায় সবগুলো পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিনি নিজের সাফাই গাইতেন না। স্বীকারই করতে চাইলেন না যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিলেন না। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও ‘রাজনৈতিক’ হয়ে গেলেন!
সম্ভবত এরিস্টটল বলেছিলেন, ‘মানুষ রাজনৈতিক জীব।’ এটি খুবই সত্য। মানুষের মধ্যে রাজনীতি আছে। কিন্তু রাজনীতির মধ্যেই তো ‘রাজনীতি’ নেই। দেশকে এগিয়ে নেয়ার রাজনীতি দেশকে শুধুই পেছনে টানছে। পেছনে টানার ব্যাকরণটি বুঝতে হলে উন্নয়নের ফিরিস্তি, তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি, পাসের হারে বিপ্লব- এসব গোলকধাঁধার বাইরে এসে নির্মোহ বিশ্লেষণ করতে পারতে হবে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটিকে যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রায় ধর্মানুভূতি নিয়ে উচ্চারণ করে, সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের মিথ্যা সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দিনের পর দিন চাকরি করেছেন কমপক্ষে পাঁচজন। যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য বিদেশী বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা জানানোর স্বর্ণদণ্ডে স্বর্ণ উধাও! সেটিকে জায়েজ করবার জন্য সর্বোচ্চ নির্বাহীর ঘোষণা, ‘স্বর্ণকার নিজের মায়ের গয়না থেকেও চুরি করে!’ রাষ্ট্রের টাকায় ১৮২ জনের আমেরিকা-মিছিল! অথচ কত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা হয় না! ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে থাকে কত ‘ভোটার’! একটি দেশ বিষের উপরে টিকে আছে। মানুষ প্রতিদিন টাকা দিয়ে বিষ কিনছে। এমন খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাতে বিষ নেই। ইবাদতের কুরবানি, ত্যাগের কুরবানি। তাতেও গরু মোটাতাজা করার ‘মহৌষধ’! রোগী মরে গেলেও চিকিৎসার বিল পুরো পরিশোধ করার আগে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় না এ দেশে। থেমে থাকে না শুধু মহামান্যদের শারীরিক চেক-আপের জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সিঙ্গাপুর/যুক্তরাজ্য গমন।
এগুলোর সঙ্গে একটি দেশের এগিয়ে যাওয়া না-যাওয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই হয়তো। কিন্তু এগুলোই হচ্ছে একটি দেশের সত্যিকারের পাটাতন। এ ভিত্তিভূমির উপরেই গড়ে ওঠে আর আর সব উন্নয়নের অট্টালিকা। আহা, আমরা ঝিনুক পেয়েছি, তার মধ্যে মুক্তো কই!
আমরা কেন বুঝতে পারছি না, লাখ লাখ জিপিএ ৫ দিয়ে একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে না। মানুষ হিসেবে জিপিএ ৫ পেতে হবে। গড়তে হবে একটি মানবিক সমাজ। যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, অবিচার।
বৈষম্য! তার কি সাক্ষাৎ প্রমাণই না পাওয়া গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলে! ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় যে ছেলেটি প্রথম হয়েছে সে মাদরাসার ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় আইন করেছে, মাদরাসা থেকে পাস করা ছাত্র প্রথম দিকের ৭-৮টি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হতে পারবে না! আবদুর রহমান মজুমদার, তোমরা কেন এই দেশে জন্মেছো? যে দেশ লাখ লাখ জিপিএ ৫ উৎপাদন করে, কিন্তু সত্যিকারের মেধার স্বীকৃতি দেয় না, সেই দেশে জন্মানো পাপ কিনা আমি জানি না।
শিক্ষামন্ত্রীকে খুব কাছ থেকে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এসেই মঞ্চে গেলেন না। দর্শক সারিতে এসে বসে পড়লেন। উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বললেন, পরামর্শ চাইলেন। আমি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বুঝলাম, তিনি আন্তরিক। একটা কিছু করতে চান। কিন্তু বড় অদ্ভুত এই দেশ! রাজনীতির মারপ্যাঁচে এখানে হারিয়ে যায় সব। শিক্ষা যায়, মনুষ্যত্ব যায়, বিবেক যায়, যায় ইচ্ছাটাও। রাজনীতির নামে এখানে সব কিছু হয়; শুধু রাজনীতিটাই হয় না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে সস্তা আত্মতৃপ্তির লালসায় পাবলিক পরীক্ষায় শত ভাগ পাস করানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় পৃথিবীর কোথায়? পৃথিবীর কোন প্রান্তে পরীক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয় বেশি নম্বর দিয়ে পাসের হার বাড়িয়ে দিতে? এই বিধ্বংসী রাজনীতির কাছে ‘নরম’ মনের শিক্ষামন্ত্রী অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন। তাই তো এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রবাস দখল-রাজনীতির আগুনে পোড়ানো হলে সেটি দেখে শুধুই কাঁদেন দরদি শিক্ষামন্ত্রী। কোনও প্রতিবাদ তিনি করতে পারেননি। দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি। তবু মন্ত্রীর কান্না আমাদের একটি বার্তা দিয়েছিল, তিনি চাইলেও কিছু করতে পারছেন না। কোথাও হয়তো তার হাত-পা বাঁধা। কিন্তু না। তিনিও আসলে রাজনীতির ছকে বৃত্তবন্দি। না হলে প্রায় সবগুলো পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তিনি নিজের সাফাই গাইতেন না। স্বীকারই করতে চাইলেন না যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিলেন না। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও ‘রাজনৈতিক’ হয়ে গেলেন!
সম্ভবত এরিস্টটল বলেছিলেন, ‘মানুষ রাজনৈতিক জীব।’ এটি খুবই সত্য। মানুষের মধ্যে রাজনীতি আছে। কিন্তু রাজনীতির মধ্যেই তো ‘রাজনীতি’ নেই। দেশকে এগিয়ে নেয়ার রাজনীতি দেশকে শুধুই পেছনে টানছে। পেছনে টানার ব্যাকরণটি বুঝতে হলে উন্নয়নের ফিরিস্তি, তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশ, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, মাথাপিছু আয়ের ঊর্ধ্বগতি, পাসের হারে বিপ্লব- এসব গোলকধাঁধার বাইরে এসে নির্মোহ বিশ্লেষণ করতে পারতে হবে। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটিকে যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রায় ধর্মানুভূতি নিয়ে উচ্চারণ করে, সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের মিথ্যা সার্টিফিকেট নিয়ে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দিনের পর দিন চাকরি করেছেন কমপক্ষে পাঁচজন। যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য বিদেশী বন্ধুদের কৃতজ্ঞতা জানানোর স্বর্ণদণ্ডে স্বর্ণ উধাও! সেটিকে জায়েজ করবার জন্য সর্বোচ্চ নির্বাহীর ঘোষণা, ‘স্বর্ণকার নিজের মায়ের গয়না থেকেও চুরি করে!’ রাষ্ট্রের টাকায় ১৮২ জনের আমেরিকা-মিছিল! অথচ কত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা হয় না! ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে থাকে কত ‘ভোটার’! একটি দেশ বিষের উপরে টিকে আছে। মানুষ প্রতিদিন টাকা দিয়ে বিষ কিনছে। এমন খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন, যাতে বিষ নেই। ইবাদতের কুরবানি, ত্যাগের কুরবানি। তাতেও গরু মোটাতাজা করার ‘মহৌষধ’! রোগী মরে গেলেও চিকিৎসার বিল পুরো পরিশোধ করার আগে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় না এ দেশে। থেমে থাকে না শুধু মহামান্যদের শারীরিক চেক-আপের জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সিঙ্গাপুর/যুক্তরাজ্য গমন।
এগুলোর সঙ্গে একটি দেশের এগিয়ে যাওয়া না-যাওয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই হয়তো। কিন্তু এগুলোই হচ্ছে একটি দেশের সত্যিকারের পাটাতন। এ ভিত্তিভূমির উপরেই গড়ে ওঠে আর আর সব উন্নয়নের অট্টালিকা। আহা, আমরা ঝিনুক পেয়েছি, তার মধ্যে মুক্তো কই!
আমরা কেন বুঝতে পারছি না, লাখ লাখ জিপিএ ৫ দিয়ে একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে না। মানুষ হিসেবে জিপিএ ৫ পেতে হবে। গড়তে হবে একটি মানবিক সমাজ। যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, অবিচার।
বৈষম্য! তার কি সাক্ষাৎ প্রমাণই না পাওয়া গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলে! ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় যে ছেলেটি প্রথম হয়েছে সে মাদরাসার ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয় আইন করেছে, মাদরাসা থেকে পাস করা ছাত্র প্রথম দিকের ৭-৮টি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হতে পারবে না! আবদুর রহমান মজুমদার, তোমরা কেন এই দেশে জন্মেছো? যে দেশ লাখ লাখ জিপিএ ৫ উৎপাদন করে, কিন্তু সত্যিকারের মেধার স্বীকৃতি দেয় না, সেই দেশে জন্মানো পাপ কিনা আমি জানি না।
No comments