নিউইয়র্কে নরেন্দ্র মোদিকে বিপুল সংবর্ধনার প্রস্তুতি
নরেন্দ্র মোদি। এএফপি |
খেলাধুলা বা বিনোদন বিষয়ের কোনো আয়োজন হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন। আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠা হাজারো দর্শকের উপস্থিতি সেখানকার চিরচেনা দৃশ্য। তবে বিদেশি কোনো রাজনীতিকের আগমন নিয়ে সে রকম মাতামাতি বিরল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সে রকম ঘটনারই জন্ম দিতে যাচ্ছেন। বলা হচ্ছে, রক তারকাদের মতো অভ্যর্থনা পাবেন তিনি। ম্যাডিসন স্কয়ারে আগামী রোববার মোদির অনুষ্ঠানে যে মাত্রায় জনসমাগম ঘটবে, তা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কোনো বিদেশি নেতার জন্য রেকর্ড। এতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ যোগ দেবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানের সব টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। আশপাশে জড়ো হবেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। তাঁদের জন্য সেখানে স্থাপন করা হবে বড় আকারের পর্দা।
অথচ, ইনিই হচ্ছেন সেই মোদি, যাঁর বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। ভারতীয় প্রবাসীরা আশা করছেন, মোদির এই সফর কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়; বরং বিশ্বব্যাপী ভারতের গুরুত্বকে তুলে ধরবে। নিউইয়র্কে রোববারের আয়োজনের পুরোভাগে থাকবেন ভারতীয় মার্কিন সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট দুই মুখ। একজন নিনা দাভুলুরি, যিনি এ বছরই ‘মিস আমেরিকা’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। অন্যজন হলেন টেলিভিশন সাংবাদিক হরি শ্রীনিবাসন। বোস্টনের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের শল্যচিকিৎসক দীনেশ প্যাটেল বললেন, ‘ভারতীয় নাগরিকেরা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রবাসী ভারতীয়রা আশা করছেন, মোদির প্রশাসন আমলাতন্ত্রের রাশ টেনে ধরবে এবং জনগণের দিকে দৃষ্টি দেবে।’ ৫০ বছরেরও বেশি আগে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো প্যাটেলও মোদির মতোই গুজরাটের বাসিন্দা। প্যাটেল আরও বলেন, ‘নতুন নেতাকে দেখতে লোকজন অধীর আগ্রহে রয়েছেন। আরেক নরেন্দ্র এই দেশে আসছেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়ে দেবেন, ভারত কী জিনিস।’ প্রথম নরেন্দ্র ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর জন্মগত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
১৯ শতকের এই খ্যাতনামা দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হিন্দু ধর্মবিশ্বাস নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে নানা ইস্যুতে টানাপোড়েন ও অস্বস্তি এখনো রয়ে গেছে। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার সময়কার ভূমিকার কারণে মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন। ওই দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিল মুসলিম। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা মোদি ওই দাঙ্গা ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ আছে। যদিও তিনি বরাবর এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং সুপ্রিম কোর্টের এক তদন্তে তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। মোদি আজ শুক্রবার তাঁর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরু করছেন। তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে একটি ব্যক্তিগত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন মোদি। এতে তিনি চা আর লেবুর শরবত ছাড়া কিছুই খাবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, মোদি প্রতিবছর এ সময়ে উপবাস পালন করেন। মঙ্গলবার দুই নেতা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হবেন। সূত্র: এএফপি ও রয়টার্স
No comments