মাঠে বেলজিয়াম, গ্যালারিতে লড়াই আর্জেন্টিনা–ব্রাজিলের by আনিসুল হক
গ্যালারি—অংশ সে তো খেলারই। এটা লিখেছিলাম বাংলাদেশের গ্যালারিতে বসে ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলা দেখার পর। ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়াতে ৫ জুলাইয়ের আর্জেন্টিনা বনাম বেলজিয়াম খেলা দেখতে গিয়ে সেটাই বারবার মনে পড়তে লাগল। আমরা বাংলাদেশের ছয়জন একসঙ্গে বসেছি গ্যালারিতে। কোকাকোলার আমন্ত্রণে আমাদের এই দলটিতে আছেন সব মিলিয়ে সার্ক দেশের ২৩ জন। বাংলাদেশের চারজন কোকাকোলার বিশ্বকাপ কুইজ বিজয়ী, একজন কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র দে আর আমি গুড ফর নাথিং। সাংবাদিক আরেকজন আছেন, শ্রীলঙ্কার। তিনি অবশ্য শ্রীলঙ্কার একমাত্র প্রতিনিধি এই দলে। তো আমরা ছয় বঙ্গপুঙ্গব সঙ্গে করে নিয়েছি তিনটা লাল-সবুজ পতাকা। আমার গায়ে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির জার্সি। আমাদের দলের অন্তত দুজন, বগুড়ার মাহবুব আর সিলেটের শাফি—চরম আর্জেন্টিনাভক্ত। মাহবুব ইংরেজির শিক্ষক, বারবার বলছেন, ও মাই গড, ক্যান ইউ বিলিভ ইট, আর্জেন্টিনা সেমিফাইনালে উঠেছে, আর আমি সেই খেলা চর্মচক্ষে মাঠে বসে দেখছি! মাহবুবের অবশ্য আরেকটা আফসোস আছে, সাজানোগোছানো বানানো রাজধানী শহর ব্রাসিলিয়া দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে বলেন, এরা এত উন্নত, কিন্তু একটাই সমস্যা—এরা শিক্ষিত নয় কেন, এরা কেন ইংরেজি জানে না? আমি তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি, বলি, ইংরেজি কেন জানবে? আপনারা ব্রিটিশ শাসনে ছিলেন, আপনারা ইংরেজি জানেন, আর এরা পর্তুিগজ উপনিবেশ ছিল, এরা পর্তুিগজ জানে। শুধু একটাই সমস্যা, উপনিবেশকেরা আসার আগে এখানকার ভাষা কী ছিল, তা হারিয়ে গেছে। কিংবা শাসকদের ভাষাই এদের ভাষা হয়ে গেছে।
আমাদের মনে ফুর্তি। আমরা খেলা শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে গ্যালারিতে আসন নিয়েছি। লাউডস্পিকারে গান হচ্ছে, তার সঙ্গে স্ফীত মধ্যভাগসমেত শরীরটা দুলে উঠতে চাইছে।
আর্জেন্টাইনরা এসেছে দলে দলে। সকালবেলা আটটা থেকে তারা দল বেঁধে স্টেডিয়ামে যাচ্ছে রাস্তায় প্রভাতফেরি গাইতে গাইতে, গগনবিদারী তাদের কণ্ঠ। আমি বারবার দৌড়ে নয়তলা হোটেল রুমের ব্যালকনিতে যাচ্ছি। এরা এত চিৎকার করতে পারে। গ্যালারির ৪০ ভাগ অন্তত আর্জেন্টাইন। নীল-সাদা পোশাক পরে হাতে পতাকা নিয়ে গান গাইছে, আর মাথার ওপরে পতাকা নাড়ছে। বাকি ৬০ ভাগ প্রধানত ব্রাজিলীয়রা, কেউ কেউ তাদের হলুদে উজ্জ্বল, কেউ কেউ বেলজিয়ামকে সমর্থন করতে লাল পরে এসেছে। এমনকি ব্রাজিলের পতাকার সবুজের জায়গায় লাল লাগিয়ে পতাকা বানিয়ে এনেছে এরা। যতক্ষণ খেলা চলল, ততক্ষণ একবার আর্জেন্টাইনরা গান ধরে, গানের সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে মাথার ওপরে পতাকা নাড়ানো চলে প্রবল বেগে। তখন ব্রাজিলীয়রা সিটি বাজিয়ে ব্রতচ্যুত চেষ্টা করে। তারপর গান ধরে ব্রাজিলীয়রা। একসঙ্গে, পুরো স্টেডিয়ামে গান গাওয়া চলেছে। পাশে বসা ব্রাজিলীয় তরুণীকে জিজ্ঞেস করি, ‘এটা কি তোমাদের জাতীয় সংগীত।’ মেয়েটি বলে, ‘না না, এটা আমাদের ফুটবল নিয়ে গান, আমরা বলছি, আমরা হলাম পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন।’ তাই তো বলি, এই গান গাইবার সময় ওরা পাঁচ আঙুল দেখায় কেন? আর ওদিকে আর্জেন্টিনারা গান বানিয়েছে, ‘তোমাদের আঙিনায় এসে আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে যাচ্ছি, আমাদের ম্যারাডোনা তোমাদের পেলের চেয়ে ভালো।’ একজন ব্রাজিলিয়ানকে দেখলাম তাই পেলের মুখের কাটআউট নিয়ে এসেছেন, নিজের মুখে ধরে আর্জেন্টাইনদের দেখাচ্ছেন আর গাইছেন, পাঁচবার পাঁচবার।
তাহলে কেবল বাংলাদেশেই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের রেষারেষি নয়, এটা আছে খোদ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের নাগরিকদের মধ্যেও। তবুও হাজারে হাজারে আর্জেন্টাইন এসেছে ব্রাজিলে, গান গাইছে, রাস্তায় দল বেঁধে হল্লা করছে, স্টেডিয়ামে নাচানাচি করছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা তো ঘটেনি। ১-০ গোলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা দলের সমর্থকদের সঙ্গে হাত নেড়ে নিজেরাও সেসব গানে অংশ নিলেন।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার আসল মজা হলো এখানে। আপনি নিজেও খেলবেন। ব্রাজিলের চিৎকার বেশি শোনা যাচ্ছে, এবার আর্জেন্টিনার চিৎকার চাই বেশি। সমর্থকেরা সংগঠিত হয়ে আবার শুরু করে দিল গান। ব্রাজিলীয়রা তখন শুরু করল সিটি বাজানো। একটা মিস হলো তো ব্রাজিলের ধ্বনি: বু... বাংলাদেশের গ্যালারিতে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, চিৎকার করে দিনের শেষে জয় এলে মনে হয়, আমিই তো জেতালাম। শুধু যে এই দুই দেশের মানুষ এই ম্যাচটাতে ছিল, তা তো নয়। আমার পাশে একজন ছিলেন মেক্সিকান। ওই পাশে একজন পেরুর। আমেরিকা থেকে এসেছে কতজন। সব দেশ থেকেই নাকি মানুষ এসেছে বিশ্বের কাপ দেখতে, শুধু সুদান ছাড়া।
খেলা শেষ হয়ে গেল বেলা তিনটার মধ্যেই, আর্জেন্টাইনরা তবু মাঠ ছাড়ে না। খেলা দেখে বেরোচ্ছে, এক আর্জেন্টাইন আমার কাছে এসে বলল, তোমার গায়ে এটা কী। বললাম, বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের জার্সি। সে বলল, আমার সঙ্গে বদলাবে? আমি সঙ্গে সঙ্গে ওটা খুলে দিয়ে মেসি ১০ লেখা একটা আজেন্টিনার জার্সি পেয়ে গেলাম। ওটা পেয়ে মনে হলো, স্বয়ং মেসি ওটা আমাকে দিয়েছেন উপহার হিসেবে।
ব্রাজিল সময় সন্ধ্যায় হলো হল্যান্ড-কোস্টারিকা ম্যাচ। উৎপল শুভ্রর সঙ্গে ব্রাসিলিয়ার এক সুপার মলে গিয়ে টিভির দোকানে দাঁড়িয়ে খেলাটা দেখলাম। ব্রাজিলীয়রা উৎকণ্ঠিত, কোস্টারিকা না আবার টাইব্রেকারে জিতে যায়। তাহলে তো আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিশ্চিত। এমনিতেই আর্জেন্টিনাকে সেভাবে একটাও বড় দলের মুখোমুখি হতে হয়নি সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে, এরপরে হল্যান্ডের বদলে যদি কোস্টারিকাকে তারা পায় সেমিফাইনালে, বুঝতে হবে, এটা নিয়তির ষড়যন্ত্র যে আর্জেন্টিনা এবার চ্যাম্পিয়ন হোক। নেইমারের পিঠের হাড় ভেঙে যাওয়া আর থিয়োগো সিলভার দুটো হলুদ কার্ড জার্মানির এক পা হয়তো ফাইনালে এনেই দিয়েছে।
সেইখানে ব্রাজিল কী করতে পারে? কোচ স্কলারি যেমনটা বলেছেন, এটা তাদের নতুন প্রেরণা দেবে। এবারের বিশ্বকাপ আমাদের খেলতে হবে নেইমারের জন্য। ২২ বছরের ওই ছেলেটার খেলা পরশু দেখতে পাব না বেলো হরিজন্তেতে, আমার জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে।
যেমন আমাদের বাংলাদেশি আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা খুব করে চাইছিলেন মেসি একটা গোল অন্তত করুন। মেসি গোল করেননি, খুব ভালো খেলেছেন, তাও বলা যাবে না, কিন্তু তার দেওয়া পাসগুলোও এমন নিখুঁত হয়, যেটা মাঠের গ্যালারিতে বসেই কেবল বোঝা যায়, টিভিতে দেখে কিছুই বোঝা যাবে না।
মেসি-সমর্থকেরা মেসিকে দেখবেন, অন্তত আরও দুটো খেলায়, সেমিতে। আর আল্লাহ না করুন, তৃতীয় স্থানে বা ফাইনালে। ব্রাজিলের সমর্থকেরা আর কবে নেইমারের খেলা দেখতে পাবেন? নাকি বিধাতা চাইছেন, নেইমার রাশিয়া বিশ্বকাপে আসুন সোনার কাপটা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য। যেমন এসেছিলেন ম্যারাডোনা আর রোনালদো, তাঁদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে, কাপটা নিয়ে যাওয়ার জন্যই। মেসির এবার ২৭, নেইমারের যে মাত্র ২২।
কী হবে, কে বলতে পারে। নাকি হতে যাচ্ছে মহারণ, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল? সিট বেল্ট বেঁধে তৈরি হোন। আমিও ব্রাসিলিয়া থেকে বেলো হরিজন্তেতে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাই।
৫ জুলাই, ব্রাসিলিয়া, ব্রাজিল থেকে
আমাদের মনে ফুর্তি। আমরা খেলা শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে গ্যালারিতে আসন নিয়েছি। লাউডস্পিকারে গান হচ্ছে, তার সঙ্গে স্ফীত মধ্যভাগসমেত শরীরটা দুলে উঠতে চাইছে।
আর্জেন্টাইনরা এসেছে দলে দলে। সকালবেলা আটটা থেকে তারা দল বেঁধে স্টেডিয়ামে যাচ্ছে রাস্তায় প্রভাতফেরি গাইতে গাইতে, গগনবিদারী তাদের কণ্ঠ। আমি বারবার দৌড়ে নয়তলা হোটেল রুমের ব্যালকনিতে যাচ্ছি। এরা এত চিৎকার করতে পারে। গ্যালারির ৪০ ভাগ অন্তত আর্জেন্টাইন। নীল-সাদা পোশাক পরে হাতে পতাকা নিয়ে গান গাইছে, আর মাথার ওপরে পতাকা নাড়ছে। বাকি ৬০ ভাগ প্রধানত ব্রাজিলীয়রা, কেউ কেউ তাদের হলুদে উজ্জ্বল, কেউ কেউ বেলজিয়ামকে সমর্থন করতে লাল পরে এসেছে। এমনকি ব্রাজিলের পতাকার সবুজের জায়গায় লাল লাগিয়ে পতাকা বানিয়ে এনেছে এরা। যতক্ষণ খেলা চলল, ততক্ষণ একবার আর্জেন্টাইনরা গান ধরে, গানের সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে মাথার ওপরে পতাকা নাড়ানো চলে প্রবল বেগে। তখন ব্রাজিলীয়রা সিটি বাজিয়ে ব্রতচ্যুত চেষ্টা করে। তারপর গান ধরে ব্রাজিলীয়রা। একসঙ্গে, পুরো স্টেডিয়ামে গান গাওয়া চলেছে। পাশে বসা ব্রাজিলীয় তরুণীকে জিজ্ঞেস করি, ‘এটা কি তোমাদের জাতীয় সংগীত।’ মেয়েটি বলে, ‘না না, এটা আমাদের ফুটবল নিয়ে গান, আমরা বলছি, আমরা হলাম পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন।’ তাই তো বলি, এই গান গাইবার সময় ওরা পাঁচ আঙুল দেখায় কেন? আর ওদিকে আর্জেন্টিনারা গান বানিয়েছে, ‘তোমাদের আঙিনায় এসে আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে যাচ্ছি, আমাদের ম্যারাডোনা তোমাদের পেলের চেয়ে ভালো।’ একজন ব্রাজিলিয়ানকে দেখলাম তাই পেলের মুখের কাটআউট নিয়ে এসেছেন, নিজের মুখে ধরে আর্জেন্টাইনদের দেখাচ্ছেন আর গাইছেন, পাঁচবার পাঁচবার।
তাহলে কেবল বাংলাদেশেই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের রেষারেষি নয়, এটা আছে খোদ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের নাগরিকদের মধ্যেও। তবুও হাজারে হাজারে আর্জেন্টাইন এসেছে ব্রাজিলে, গান গাইছে, রাস্তায় দল বেঁধে হল্লা করছে, স্টেডিয়ামে নাচানাচি করছে, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা তো ঘটেনি। ১-০ গোলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার আনন্দে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা দলের সমর্থকদের সঙ্গে হাত নেড়ে নিজেরাও সেসব গানে অংশ নিলেন।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার আসল মজা হলো এখানে। আপনি নিজেও খেলবেন। ব্রাজিলের চিৎকার বেশি শোনা যাচ্ছে, এবার আর্জেন্টিনার চিৎকার চাই বেশি। সমর্থকেরা সংগঠিত হয়ে আবার শুরু করে দিল গান। ব্রাজিলীয়রা তখন শুরু করল সিটি বাজানো। একটা মিস হলো তো ব্রাজিলের ধ্বনি: বু... বাংলাদেশের গ্যালারিতে খেলা দেখার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, চিৎকার করে দিনের শেষে জয় এলে মনে হয়, আমিই তো জেতালাম। শুধু যে এই দুই দেশের মানুষ এই ম্যাচটাতে ছিল, তা তো নয়। আমার পাশে একজন ছিলেন মেক্সিকান। ওই পাশে একজন পেরুর। আমেরিকা থেকে এসেছে কতজন। সব দেশ থেকেই নাকি মানুষ এসেছে বিশ্বের কাপ দেখতে, শুধু সুদান ছাড়া।
খেলা শেষ হয়ে গেল বেলা তিনটার মধ্যেই, আর্জেন্টাইনরা তবু মাঠ ছাড়ে না। খেলা দেখে বেরোচ্ছে, এক আর্জেন্টাইন আমার কাছে এসে বলল, তোমার গায়ে এটা কী। বললাম, বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের জার্সি। সে বলল, আমার সঙ্গে বদলাবে? আমি সঙ্গে সঙ্গে ওটা খুলে দিয়ে মেসি ১০ লেখা একটা আজেন্টিনার জার্সি পেয়ে গেলাম। ওটা পেয়ে মনে হলো, স্বয়ং মেসি ওটা আমাকে দিয়েছেন উপহার হিসেবে।
ব্রাজিল সময় সন্ধ্যায় হলো হল্যান্ড-কোস্টারিকা ম্যাচ। উৎপল শুভ্রর সঙ্গে ব্রাসিলিয়ার এক সুপার মলে গিয়ে টিভির দোকানে দাঁড়িয়ে খেলাটা দেখলাম। ব্রাজিলীয়রা উৎকণ্ঠিত, কোস্টারিকা না আবার টাইব্রেকারে জিতে যায়। তাহলে তো আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিশ্চিত। এমনিতেই আর্জেন্টিনাকে সেভাবে একটাও বড় দলের মুখোমুখি হতে হয়নি সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে, এরপরে হল্যান্ডের বদলে যদি কোস্টারিকাকে তারা পায় সেমিফাইনালে, বুঝতে হবে, এটা নিয়তির ষড়যন্ত্র যে আর্জেন্টিনা এবার চ্যাম্পিয়ন হোক। নেইমারের পিঠের হাড় ভেঙে যাওয়া আর থিয়োগো সিলভার দুটো হলুদ কার্ড জার্মানির এক পা হয়তো ফাইনালে এনেই দিয়েছে।
সেইখানে ব্রাজিল কী করতে পারে? কোচ স্কলারি যেমনটা বলেছেন, এটা তাদের নতুন প্রেরণা দেবে। এবারের বিশ্বকাপ আমাদের খেলতে হবে নেইমারের জন্য। ২২ বছরের ওই ছেলেটার খেলা পরশু দেখতে পাব না বেলো হরিজন্তেতে, আমার জন্য এর চেয়ে বড় দুঃসংবাদ আর কী হতে পারে।
যেমন আমাদের বাংলাদেশি আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা খুব করে চাইছিলেন মেসি একটা গোল অন্তত করুন। মেসি গোল করেননি, খুব ভালো খেলেছেন, তাও বলা যাবে না, কিন্তু তার দেওয়া পাসগুলোও এমন নিখুঁত হয়, যেটা মাঠের গ্যালারিতে বসেই কেবল বোঝা যায়, টিভিতে দেখে কিছুই বোঝা যাবে না।
মেসি-সমর্থকেরা মেসিকে দেখবেন, অন্তত আরও দুটো খেলায়, সেমিতে। আর আল্লাহ না করুন, তৃতীয় স্থানে বা ফাইনালে। ব্রাজিলের সমর্থকেরা আর কবে নেইমারের খেলা দেখতে পাবেন? নাকি বিধাতা চাইছেন, নেইমার রাশিয়া বিশ্বকাপে আসুন সোনার কাপটা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য। যেমন এসেছিলেন ম্যারাডোনা আর রোনালদো, তাঁদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে, কাপটা নিয়ে যাওয়ার জন্যই। মেসির এবার ২৭, নেইমারের যে মাত্র ২২।
কী হবে, কে বলতে পারে। নাকি হতে যাচ্ছে মহারণ, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল? সিট বেল্ট বেঁধে তৈরি হোন। আমিও ব্রাসিলিয়া থেকে বেলো হরিজন্তেতে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছাই।
৫ জুলাই, ব্রাসিলিয়া, ব্রাজিল থেকে
No comments