ছাত্রলীগের ভর্তি–বাণিজ্য
রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও রাজশাহীর সিটি কলেজে অকৃতকার্য ছাত্রদের ভর্তি করানোর জন্য ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভর্তি করে মেধার ভিত্তিতে আর ছাত্রলীগ ভর্তি করতে চায় অর্থের ভিত্তিতে৷ ‘মেধাবীদের’ সংগঠন বলে দাবি করলেও ছাত্রলীগে মেধার চেয়ে অর্থের কদরই যে বেশি, এ দুটি ঘটনায় তা-ই দেখা গেল৷ বলা বাহুল্য, এগুলো নতুন কিছু নয়, এটাই সরকার–সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের আসল পরিচয়৷ ঢাকা কলেজে অপেক্ষমাণ তালিকার পেছনের সারির কয়েকজন ছাত্রকে ভর্তির জন্য প্রশাসনের ওপর চাপ দিচ্ছিল ছাত্রলীগ৷ রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তির সেই চাপে কাজ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার তারা কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে৷ যথারীতি কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি ঘটনাটিকে কিছু ‘জুনিয়র’ ছাত্রের বিচ্ছিন্ন কাজ বলে অভিহিত করেছেন৷ অন্যদিকে রাজশাহীর িসটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেছেন, ওই কলেজে ভাঙচুরের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত নয়! প্রথমত, ছাত্রলীগ ভর্তি–প্রক্রিয়ায় কোনো রকম হস্তক্ষেপই করতে পারে না৷ দ্বিতীয়ত, সংগঠনের কেউ যদি তা করে, তাহলে তাদের সাংগঠনিক শািস্ত দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়৷ তৃতীয়ত, কলেজ প্রশাসনের উচিত ছিল তদন্ত করে দুর্বৃত্ত ছাত্রদের প্রশাসনিক শাস্তি দেওয়া৷ তারা তা করেনি৷
পুলিশও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি৷ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদেরও এদিকে ভ্রুক্ষেপ করার সময় বা মর্জি আছে বলে মনে হয় না৷ সুতরাং, অনিয়ম, সন্ত্রাস, আইন লঙ্ঘন, ভর্তি–বাণিজ্য—কোনো কিছুর জন্য শাস্তি দূরের কথা, এগুলোকে মোকাবিলা করারও কাউকে পাওয়া গেল না৷ একদিকে এ সরকারের আমলে পরীক্ষাব্যবস্থাকে খেলো করে ফেলা, অন্যদিকে ছাত্রলীগের ভর্তি–বাণিজ্য; এই দুই সমস্যা থেকে শিক্ষাব্যবস্থার মুক্তি পাওয়ার কোনো রাস্তাই আর রইল না৷ প্রতিকারহীন এসব অন্যায় কুরে কুরে খেয়ে ফেলেছে শিক্ষার সম্ভাবনা৷ এ ঘটনাগুলো আবারও দেখাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের ভূমিকা আসলে কী৷ এমনকি ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত হলেও তাদের প্রতাপ কিছুমাত্র কমেনি৷ ছাত্রলীগের শাখা নেতারা যাকে বলছেন ‘রাজনৈতিক’ বিবেচনা, তা আসলে টাকার বিবেচনা৷ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে ভরপুর ছাত্রলীগ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন৷ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগও গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ছাত্রলীগকে অঙ্গসংগঠনের সম্পর্ক থেকে মুক্ত করে৷ কিন্তু কার্যত, ছাত্রলীগ আরও বেপরোয়া হয়েছে৷ আর কত রসাতলে গেলে সরকারের বিবেক জাগবে?
No comments