মার্কেসের জনপ্রিয় চারটি বইয়ের কথা by রুহুল মাহফুজ জয়
কথাসাহিত্যের বিচিত্র সব দুনিয়া আর
অলিগলির আবিষ্কারক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। দ্বিতীয় উপন্যাস ওয়ান
হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ যাবৎকালের সবচেয়ে পঠিত
লেখক হিসেবে গণ্য। ম্যাজিক রিয়ালিজমের ওস্তাদ মার্কেজের প্রকাশিত ২২টি
গ্রন্থের সবগুলোই পাঠকপ্রিয় হয়েছে। তার ভেতর থেকে সর্বাধিক জনপ্রিয় বই বেছে
নেয়া কঠিন। তবে দুনিয়াব্যাপী সাহিত্যবোদ্ধারা নিুোক্ত বইগুলোকেই মনে করেন
গাবোর সেরা রচনা...
১. ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড (১৯৬৭) :
১৯৬৭ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসটিই বিশ্বখ্যাতি এনে দেয় মার্কেসকে। দুনিয়ার সব প্রধান ভাষাতেই অনুদিত হয়েছে উপন্যাসটি। সাহিত্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মার্কেজের নির্জনতার একশ বছর বিংশ শতাব্দীর সর্বাধিক পঠিত সাহিত্যকর্ম। সাহিত্যবোদ্ধা থেকে সাধারণ পাঠকের বহুল প্রশংসিত উপন্যাসটি বদলে দেয় ল্যাটিন আমেরিকার কথাসাহিত্যের ধারা। সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হয় জাদুবাস্তবতা।
বুয়েন্দিয়া পরিবারের মাধ্যমে মাকোন্দো নামের এক পৌরাণিক শহরের উত্থান ও পতনের গল্প বলে এ উপন্যাস। যা হয়ে উঠেছে মানবজাতির বাঁচা-মরা আর হর্ষ-বিষাদের মিশেলে রচিত এক অনন্য উপাখ্যান। মাকোন্দো মার্কেজের সৃষ্ট কল্পিত শহর, কিন্তু এ উপন্যাসের জন্য ল্যাটিন সাহিত্যের তীর্থস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এ শহরকেই! বনেদি, হাস্যরসে ভরপুর ও সুন্দর একটি পরিবারের চটকদার গল্পে, একের চোখে মানবতার সকল দিক দেখা, যা শুধু মাকোন্দোর ইতিহাস, পুরাণ, ক্রমবিকাশ আর অবক্ষয় নয়, কেউ চাইলে তা মিলিয়ে নিতে পারেন পুরো ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে। মাকোন্দো মার্কেজের জাদুবাস্তবতার শহর হলেও, তা যেনো ল্যাটিন সমাজের পরতে পরতে বিদ্যমান।
প্রেম-লালসা, যুদ্ধ-বিপ্লব, ধনী-দরিদ্র, যৌবন ও বার্ধক্য, জীবনের বৈচিত্র্য আর অন্ত্যহীন মুত্যু, শান্তি আর সত্যের খোঁজ নির্জনতার একশ বছর উপন্যাসে সার্বজনীন এ থিমের প্রবল বিস্তার ঘটেছে। মার্কেস তার নিজের সরল, খাঁটি আর বিশুদ্ধ ঢঙে বর্ণনা করেছেন পুঁজিবাদের লিপ্সা, সরকারের দুর্নীতি আর আবেগময় প্রণয়। সশ্রদ্ধ ও হাস্যরসাত্মক উপায়ে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত আর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জালের মতো বুনেছে নির্জনতার একশ বছর উপন্যাসটি। যার মাধ্যমে গল্প বলার নতুন এক ঘরানা সৃষ্টি করেছেন গ্যাবো।
২. লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা (১৯৮৫) :
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের সবচেয়ে সহজবোধ্য উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস উপন্যাসটিকে বর্ণিত করেছে এভাবে, সুপরিসরে লেখা সমৃদ্ধ এক উপন্যাস, যার অন্তর্নিহিত আখ্যান শক্তি দূরদর্শিতা দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা উপন্যাসটির নামেই ইঙ্গিত আছে, এটি প্রথাগত কোনো প্রেমকাহিনী নয়। উপন্যাসে দুজন প্রেমিককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন গাবো। ফ্লোরেন্তিনো অ্যারিযা আর ফেরমিনা দ্যাযা, দুজন জীবনের সোনালি সময়ে একে অপরের প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে ঐশ্বর্যশালী পরিবারের সন্তান এক চিকিৎসককে বিয়ে করে ফেরমিনা, বিচ্ছিন্ন হন তারা।
এ বিচ্ছেদে ফ্লোরেন্তিনো শারীরিক-মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও তার প্রেমিক হৃদয় মরে না। এর মধ্যেই ফ্লোরেন্তিনো নিজের ব্যবসা দাড় করায়, কয়েক বছরে ৬২২ জন রমণীর সঙ্গে মিলিত হয় সে। কিন্তু ফেরমিনার জন্য তার হৃদয় কাঁদে। হঠাৎই ফেরমিনার স্বামীর মৃত্যু হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সাবেক প্রেমিকার স্বামীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হাজির হয় ফ্লোরেন্তিনো। পঞ্চাশ বছর নয় মাস চার দিন পর ফেরমিনাকে আবারো ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। মানুষের অঝর আবেগের বিষয় নিয়ে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখকের এক কালজয়ী উপাখ্যানের নাম লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা।
৩. দ্য জেনারেল ইন হিজ লেবরিন্থ (১৯৮৯) :
উনিশ শতকের ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম মুক্তিকামী নেতা সাইমন বলিভারের জীবনের শেষ কটা মাসের কল্পিত আখ্যান। স্প্যানিশ স্বৈরশাসন থেকে ল্যাটিন আমেরিকার অর্ধেক অঞ্চল মুক্ত করলেও, রাজতান্ত্রিক উচ্চাশা তাকে জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্বদেশ ভেনিজুয়েলা থেকে নির্বাসিত অবস্থায় একটি দ্বীপে ১৮৩০ সালে মারা যান বলিভার। আধুনিককালে যিনি অনেকের হ্যাজিওগ্রাফির বিষয়, গার্সিয়া মার্কেজের কাছে সেই বলিভার একজন মানব চরিত্র: দুর্দান্ত মেধা আর উচ্চাভিলাষী মানুষ, আশঙ্কাজনকভাবে ইতিহাসে যিনি আবার জেনারেল হিসেবে চিহ্নিত।
যে মানুষটি পুরো ল্যাটিন আমেরিকাকে এক সুতায় বাঁধতে চেয়েছিলেন সাইমন বলিভারকে নিয়ে গাবো রচিত দ্য জেনারেল ইন হিজ লিবরিন্থ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। বলিভার, দুনিয়ার পশ্চিম গোলার্ধের অধিকাংশ মানুষের কাছে যিনি সুপার হিরো, দক্ষিণ আমেরিকার ছয়টি দেশকে যিনি পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করেছিলেন, মার্কেজের কলমে চমৎকারভাবে উঠে এসেছে তার ভুলগুলো। ম্যাগদালেনা নদীর সমুদ্রের দিকে যাত্রার মতো বলিভারের শেষযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা জাতিকে একত্র করার স্বপ্নও যেনো বিলীন হয়ে যায়। জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত, গুপ্তঘাতকের টার্গেট, জীবনক্ষয়ী অসুখে অকাল বার্ধক্যে ক্ষয়িত হওয়ার পরও জেনারেল একজন অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ও তেজস্বী মানুষ। অতীতে যুদ্ধক্ষেত্র আর প্রেমের জয়ই যেন তাকে নেতৃত্বের সাহস আর বাঁচতে দিয়েছে। ক্ষমতার ব্যর্থতা আর এক সময়ের অপরাজেয় স্মৃতি শেষ বয়সে বলিভারকে এক গোলকধাঁধায় ফেলে। সেই গোলকধাঁধার মধ্যেই বলিভারের মৃত্যু। এ মানুষটির শেষ জীবনের ট্র্যাজেডি নিপুণভাবে উঠে এসেছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের দ্য জেনারেল ইন হিজ লেবরিন্থ উপন্যাসে।
৪. মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস (২০০৪) :
বাংলায় তর্জমা করলে উপন্যাসটির নাম হয় আমার বিষন্ণ বেশ্যাদের স্মৃতি। সবগুলো রচনার মতো মার্কেজের প্রকাশিত সবশেষ উপন্যাসের নামকরণেও একটা আলাদা স্বর আছে। যে নিজস্বতা লেখক মায়েস্ত্রোর বড় শক্তি। সদ্যযৌবনা কুমারী এক মেয়ের সঙ্গে উন্মত্ত ভালোবাসার রাত কাটিয়ে আমি নিজেকে আমার নব্বইতম জন্মদিনের উপহার দিতে চেয়েছিলাম। এভাবেই মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস শুরু; যা কিছুটা হলেও উপন্যাসটির ভেতরটা কিছুটা খুলে দেয়।
আকারে ক্ষুদ্র এ উপন্যাসের গল্প সাজানো হয়েছে একজন বেনামি, কখনোই বিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কে না জড়ানো নব্বই বছর বয়সী একজন কলম্বিয়ান সাংবাদিক ও শিক্ষককে নিয়ে। যিনি এক ধর্মযাজকের পরিত্যক্ত বাড়িতে বাস করেন। তাকে সহায়তা করার জন্য শহরের সবচেয়ে নামজাদা পতিতালয়ের মাসি রোযা কাবারকাসকে ডাকেন। রোযা জানায়, বয়সের কারণে তার ইচ্ছাপূরণ সম্ভব নয়। তবে কিছুদিন পরেই জানানো হয়, তার জন্য দারুণ এক মেয়ে খুঁজে পেয়েছে সে।
উপন্যাসের একপর্যায়ে নায়ক উচ্চারণ করেছেন, আমি কখনও গাঁটের পয়সা খরচ করে নারীর সঙ্গে বিছানায় যাইনি। কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত ৫১৪ জন নারীর সঙ্গে অন্তত একবার হলেও মিলিত হয়েছি। আমার সামাজিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। অন্যদিকে বাবা-মা দুজনকেই হারানো ছাপোষা সাংবাদিক, ক্যারিকেচারে মজে থাকা ভবিষ্যৎহীন কুৎসিত যুবক হওয়ায় ভালোবাসার প্রতি ভয় ছিল আমার। সেই মানুষটিই জীবনের শেষ সময়ে এসে প্রেমে পড়েন ১৪ বছর বয়সী এক বালিকার। রোযার সৌজন্যে খুঁজে পাওয়া সে বালিকার সঙ্গে মিলিত হতে গিয়ে অন্যরকম এক প্রেম মজে যান তিনি। উপন্যাসের প্লট অপ্রচলিত আর প্রথাবিরোধী হলেও, মার্কেজের লেখার ধারে অনন্য এক বিষণ্নতা আর জীবনবোধের পরিচয় পান পাঠক।
এছাড়া নিউজ অফ অ্যা কিডন্যাপিং, অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস, নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল : অ্যান্ড আদার স্টোরিজ, স্ট্রেঞ্জ পিলগ্রিমস, গল্প সংগ্রহ মার্কেজের অন্যান্য আলোচিত বই। আর গাবোর সমগ্র জীবনকে জানতে পড়ে ফেলুন তার আত্মজীবনী গ্রন্থ গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস : অ্যা লাইফ।
১. ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অফ সলিটিউড (১৯৬৭) :
১৯৬৭ সালে প্রকাশিত এ উপন্যাসটিই বিশ্বখ্যাতি এনে দেয় মার্কেসকে। দুনিয়ার সব প্রধান ভাষাতেই অনুদিত হয়েছে উপন্যাসটি। সাহিত্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মার্কেজের নির্জনতার একশ বছর বিংশ শতাব্দীর সর্বাধিক পঠিত সাহিত্যকর্ম। সাহিত্যবোদ্ধা থেকে সাধারণ পাঠকের বহুল প্রশংসিত উপন্যাসটি বদলে দেয় ল্যাটিন আমেরিকার কথাসাহিত্যের ধারা। সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত হয় জাদুবাস্তবতা।
বুয়েন্দিয়া পরিবারের মাধ্যমে মাকোন্দো নামের এক পৌরাণিক শহরের উত্থান ও পতনের গল্প বলে এ উপন্যাস। যা হয়ে উঠেছে মানবজাতির বাঁচা-মরা আর হর্ষ-বিষাদের মিশেলে রচিত এক অনন্য উপাখ্যান। মাকোন্দো মার্কেজের সৃষ্ট কল্পিত শহর, কিন্তু এ উপন্যাসের জন্য ল্যাটিন সাহিত্যের তীর্থস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এ শহরকেই! বনেদি, হাস্যরসে ভরপুর ও সুন্দর একটি পরিবারের চটকদার গল্পে, একের চোখে মানবতার সকল দিক দেখা, যা শুধু মাকোন্দোর ইতিহাস, পুরাণ, ক্রমবিকাশ আর অবক্ষয় নয়, কেউ চাইলে তা মিলিয়ে নিতে পারেন পুরো ল্যাটিন আমেরিকার সঙ্গে। মাকোন্দো মার্কেজের জাদুবাস্তবতার শহর হলেও, তা যেনো ল্যাটিন সমাজের পরতে পরতে বিদ্যমান।
প্রেম-লালসা, যুদ্ধ-বিপ্লব, ধনী-দরিদ্র, যৌবন ও বার্ধক্য, জীবনের বৈচিত্র্য আর অন্ত্যহীন মুত্যু, শান্তি আর সত্যের খোঁজ নির্জনতার একশ বছর উপন্যাসে সার্বজনীন এ থিমের প্রবল বিস্তার ঘটেছে। মার্কেস তার নিজের সরল, খাঁটি আর বিশুদ্ধ ঢঙে বর্ণনা করেছেন পুঁজিবাদের লিপ্সা, সরকারের দুর্নীতি আর আবেগময় প্রণয়। সশ্রদ্ধ ও হাস্যরসাত্মক উপায়ে রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত আর আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো জালের মতো বুনেছে নির্জনতার একশ বছর উপন্যাসটি। যার মাধ্যমে গল্প বলার নতুন এক ঘরানা সৃষ্টি করেছেন গ্যাবো।
২. লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা (১৯৮৫) :
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের সবচেয়ে সহজবোধ্য উপন্যাস হিসেবে পরিচিত। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস উপন্যাসটিকে বর্ণিত করেছে এভাবে, সুপরিসরে লেখা সমৃদ্ধ এক উপন্যাস, যার অন্তর্নিহিত আখ্যান শক্তি দূরদর্শিতা দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা উপন্যাসটির নামেই ইঙ্গিত আছে, এটি প্রথাগত কোনো প্রেমকাহিনী নয়। উপন্যাসে দুজন প্রেমিককে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন গাবো। ফ্লোরেন্তিনো অ্যারিযা আর ফেরমিনা দ্যাযা, দুজন জীবনের সোনালি সময়ে একে অপরের প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে ঐশ্বর্যশালী পরিবারের সন্তান এক চিকিৎসককে বিয়ে করে ফেরমিনা, বিচ্ছিন্ন হন তারা।
এ বিচ্ছেদে ফ্লোরেন্তিনো শারীরিক-মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও তার প্রেমিক হৃদয় মরে না। এর মধ্যেই ফ্লোরেন্তিনো নিজের ব্যবসা দাড় করায়, কয়েক বছরে ৬২২ জন রমণীর সঙ্গে মিলিত হয় সে। কিন্তু ফেরমিনার জন্য তার হৃদয় কাঁদে। হঠাৎই ফেরমিনার স্বামীর মৃত্যু হয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সাবেক প্রেমিকার স্বামীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে হাজির হয় ফ্লোরেন্তিনো। পঞ্চাশ বছর নয় মাস চার দিন পর ফেরমিনাকে আবারো ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। মানুষের অঝর আবেগের বিষয় নিয়ে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখকের এক কালজয়ী উপাখ্যানের নাম লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা।
৩. দ্য জেনারেল ইন হিজ লেবরিন্থ (১৯৮৯) :
উনিশ শতকের ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম মুক্তিকামী নেতা সাইমন বলিভারের জীবনের শেষ কটা মাসের কল্পিত আখ্যান। স্প্যানিশ স্বৈরশাসন থেকে ল্যাটিন আমেরিকার অর্ধেক অঞ্চল মুক্ত করলেও, রাজতান্ত্রিক উচ্চাশা তাকে জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্বদেশ ভেনিজুয়েলা থেকে নির্বাসিত অবস্থায় একটি দ্বীপে ১৮৩০ সালে মারা যান বলিভার। আধুনিককালে যিনি অনেকের হ্যাজিওগ্রাফির বিষয়, গার্সিয়া মার্কেজের কাছে সেই বলিভার একজন মানব চরিত্র: দুর্দান্ত মেধা আর উচ্চাভিলাষী মানুষ, আশঙ্কাজনকভাবে ইতিহাসে যিনি আবার জেনারেল হিসেবে চিহ্নিত।
যে মানুষটি পুরো ল্যাটিন আমেরিকাকে এক সুতায় বাঁধতে চেয়েছিলেন সাইমন বলিভারকে নিয়ে গাবো রচিত দ্য জেনারেল ইন হিজ লিবরিন্থ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৯ সালে। বলিভার, দুনিয়ার পশ্চিম গোলার্ধের অধিকাংশ মানুষের কাছে যিনি সুপার হিরো, দক্ষিণ আমেরিকার ছয়টি দেশকে যিনি পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করেছিলেন, মার্কেজের কলমে চমৎকারভাবে উঠে এসেছে তার ভুলগুলো। ম্যাগদালেনা নদীর সমুদ্রের দিকে যাত্রার মতো বলিভারের শেষযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা জাতিকে একত্র করার স্বপ্নও যেনো বিলীন হয়ে যায়। জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত, গুপ্তঘাতকের টার্গেট, জীবনক্ষয়ী অসুখে অকাল বার্ধক্যে ক্ষয়িত হওয়ার পরও জেনারেল একজন অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ও তেজস্বী মানুষ। অতীতে যুদ্ধক্ষেত্র আর প্রেমের জয়ই যেন তাকে নেতৃত্বের সাহস আর বাঁচতে দিয়েছে। ক্ষমতার ব্যর্থতা আর এক সময়ের অপরাজেয় স্মৃতি শেষ বয়সে বলিভারকে এক গোলকধাঁধায় ফেলে। সেই গোলকধাঁধার মধ্যেই বলিভারের মৃত্যু। এ মানুষটির শেষ জীবনের ট্র্যাজেডি নিপুণভাবে উঠে এসেছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের দ্য জেনারেল ইন হিজ লেবরিন্থ উপন্যাসে।
৪. মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস (২০০৪) :
বাংলায় তর্জমা করলে উপন্যাসটির নাম হয় আমার বিষন্ণ বেশ্যাদের স্মৃতি। সবগুলো রচনার মতো মার্কেজের প্রকাশিত সবশেষ উপন্যাসের নামকরণেও একটা আলাদা স্বর আছে। যে নিজস্বতা লেখক মায়েস্ত্রোর বড় শক্তি। সদ্যযৌবনা কুমারী এক মেয়ের সঙ্গে উন্মত্ত ভালোবাসার রাত কাটিয়ে আমি নিজেকে আমার নব্বইতম জন্মদিনের উপহার দিতে চেয়েছিলাম। এভাবেই মেমোরিজ অফ মাই মেলানকোলি হোরস শুরু; যা কিছুটা হলেও উপন্যাসটির ভেতরটা কিছুটা খুলে দেয়।
আকারে ক্ষুদ্র এ উপন্যাসের গল্প সাজানো হয়েছে একজন বেনামি, কখনোই বিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কে না জড়ানো নব্বই বছর বয়সী একজন কলম্বিয়ান সাংবাদিক ও শিক্ষককে নিয়ে। যিনি এক ধর্মযাজকের পরিত্যক্ত বাড়িতে বাস করেন। তাকে সহায়তা করার জন্য শহরের সবচেয়ে নামজাদা পতিতালয়ের মাসি রোযা কাবারকাসকে ডাকেন। রোযা জানায়, বয়সের কারণে তার ইচ্ছাপূরণ সম্ভব নয়। তবে কিছুদিন পরেই জানানো হয়, তার জন্য দারুণ এক মেয়ে খুঁজে পেয়েছে সে।
উপন্যাসের একপর্যায়ে নায়ক উচ্চারণ করেছেন, আমি কখনও গাঁটের পয়সা খরচ করে নারীর সঙ্গে বিছানায় যাইনি। কিন্তু পঞ্চাশ বছর বয়স পর্যন্ত ৫১৪ জন নারীর সঙ্গে অন্তত একবার হলেও মিলিত হয়েছি। আমার সামাজিক জীবন বলতে কিছু ছিল না। অন্যদিকে বাবা-মা দুজনকেই হারানো ছাপোষা সাংবাদিক, ক্যারিকেচারে মজে থাকা ভবিষ্যৎহীন কুৎসিত যুবক হওয়ায় ভালোবাসার প্রতি ভয় ছিল আমার। সেই মানুষটিই জীবনের শেষ সময়ে এসে প্রেমে পড়েন ১৪ বছর বয়সী এক বালিকার। রোযার সৌজন্যে খুঁজে পাওয়া সে বালিকার সঙ্গে মিলিত হতে গিয়ে অন্যরকম এক প্রেম মজে যান তিনি। উপন্যাসের প্লট অপ্রচলিত আর প্রথাবিরোধী হলেও, মার্কেজের লেখার ধারে অনন্য এক বিষণ্নতা আর জীবনবোধের পরিচয় পান পাঠক।
এছাড়া নিউজ অফ অ্যা কিডন্যাপিং, অফ লাভ অ্যান্ড আদার ডেমনস, নো ওয়ান রাইটস টু দ্য কর্নেল : অ্যান্ড আদার স্টোরিজ, স্ট্রেঞ্জ পিলগ্রিমস, গল্প সংগ্রহ মার্কেজের অন্যান্য আলোচিত বই। আর গাবোর সমগ্র জীবনকে জানতে পড়ে ফেলুন তার আত্মজীবনী গ্রন্থ গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস : অ্যা লাইফ।
No comments