লংমার্চের কারণে ভারত কিছু পানি ছেড়েছে by তানভীর সোহেল
বিএনপির লংমার্চের কারণে ভারত তিস্তায়
কিছুটা পানি ছেড়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটা লংমার্চের প্রাথমিক সাফল্য। আমরা সাময়িক
নয়, পুরোপুরি সফলতা চাই।’
ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিএনপির লংমার্চ চলাকালে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত পথসভায় মির্জা ফখরুল এ দাবি করেন। তিনি বলেন, তিনি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন, তাঁদের আন্দোলনের কারণে ভারত তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এ পানির পরিমাণ দেড় হাজার কিউসেক, যা গতকাল পর্যন্ত ছিল ৪০০ কিউসেক।
গতকাল সকাল নয়টায় মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে রাজধানীর উত্তরা থেকে লংমার্চ শুরু হয়। উদ্বোধনী বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, এই কর্মসূচি সরকারের বিরুদ্ধে নয়। ভারতের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে সচেতন করতে এই লংমার্চ।
লংমার্চের গাড়ির বহর গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে রংপুরে পৌঁছে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। আজ বুধবার লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির লংমার্চ শেষ হবে। এর আগে সকালে রংপুরে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল লংমার্চের দীর্ঘ যাত্রাপথে ছয়টি পথসভায় বক্তৃতায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলের নেতা-কর্মী ও জনগণকে সরকার পতন আন্দোলনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত। এদের দিয়ে ভারতের কাছ থেকে দাবি আদায় সম্ভব নয়। তাই সব দলের অংশগ্রহণে শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হবে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রথম পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা ভারতের তাঁবেদার সরকার। এদের পক্ষে ভারতের কাছ থেকে তিস্তা নদীতে পানি আনা সম্ভব নয়। এ জন্য এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর টাঙ্গাইলের জালফৈ নামক স্থানে দ্বিতীয় পথসভায় তিনি শিগগির খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ায় পথসভায় তিনি বলেন, এই সরকার ভারতকে সবকিছুই দিয়ে দিয়েছে। এখন দর-কষাকষি করার মতো কোনো কিছুই সরকারের হাতে নেই। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করতে পারলে জাতিসংঘের মাধ্যমে পানির হিস্যা দিতে ভারতকে বাধ্য করা হবে।
বিএনপির এই লংমার্চের প্রথম দিনে যাত্রাপথে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো সাড়া দেখা যায়নি। অল্প কয়েকটি জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা লংমার্চকে স্বাগত জানাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পথসভাগুলোতে দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিও খুব বেশি ছিল না। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোট এই পথসভাকে সমর্থন করলেও বাকি শরিকদের কাউকে দেখা যায়নি। কেবল কাজী জাফর আহমদের জাতীয় পার্টির এক নেতা বগুড়ার পথসভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির নেতারা জানান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া না থাকায় লংমার্চ ‘নিরুত্তাপ’ ও বিভিন্ন পথসভায় জমায়েত কম হয়েছে। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়াকেও দায়ী করেন তাঁরা।
বগুড়ার বিএনপি নেতা সোলায়মান জামান বলেন, ৫ জানুয়ারির ভোটের পর তাঁদের দলের নেতা-কর্মীরা এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়েছেন। এরপর এ ধরনের একটি কর্মসূচিতে দলীয় চেয়ারপারসন এলে ভালো হতো। কর্মীদের মনোবল চাঙা হতো।
লংমার্চে আসা বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রথম কর্মসূচি হিসেবে আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। তিনি জানান, আজকের তিস্তা ব্যারাজের কাছের সমাবেশে বড় জমায়েত করতে আশপাশের জেলার নেতাদের বলা হয়েছে।
প্রথম দিন পথসভাগুলোতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম খান, হাফিজউদ্দিন আহম্মদ, ওসমান ফারুক, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
No comments