ভাড়ায় মিলবে ছেলেবন্ধু, কেনা যাবে কবির দুঃখ!
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোর
একটা চীনের তাওবাও ডটকম। এতে যেসব পণ্য ও সেবার বিকিকিনি হয় তার মধ্যে আছে
ছেলেবন্ধু ভাড়া করা থেকে শুরু করে জ্যান্ত বিছা আর কান্না-থামানো তাও
তাবিজের মতো অনেক কিছুই। এতে এমনকি বেচাকেনা হয় কবির দুঃখও! তাওবাও ডটকমের
৫০ কোটি নিবন্ধিত ব্যবহারকারী গড়ে প্রতি মিনিটে অন্তত ৫০ হাজার পণ্য ও সেবা
নিয়ে থাকেন। বিবিসি এই ওয়েবসাইটে কিছু সেবা ও পণ্যের বিকিকিনি সম্পর্কে
জানিয়েছে।
>>ভাড়া করা এই ‘ছেলেবন্ধুরা’ কোনো তরুণীকে সঙ্গ দিতে দুই-তিন দিনের জন্য চলে যাবেন দূরের কোনো শহর-গ্রামে মেয়েটির বাড়িতেও।
ভাড়ায় জোটানো ছেলেবন্ধু
চীনা নববর্ষের সময়টাতে দেশটির বিভিন্ন নগর-বন্দর থেকে কর্মজীবী, ছাত্রছাত্রীসহ নানান পেশার মানুষজন যার যার নিজ প্রদেশে, নিজ বাড়ির দিকে ছুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকের জন্য এটাই হয়তো সারা বছরে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলিত হওয়ার একমাত্র সুযোগ। আর এ সময়ে তরুণীরাই পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হন। অভিভাবকেরা জানতে চান মেয়ের ছেলেবন্ধুর খবরও। অনেক অভিভাবকেরই দাবি থাকে নববর্ষের ছুটিতে বাড়ি ফেরার সময় মেয়েটা যাতে তার ছেলেবন্ধুকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তাই নববর্ষের ছুটির আগে আগে তাওবাও ডটকম বা এমন সাইটগুলোতে নাম লেখায় অনেক তরুণ-যুবকেরাই। যাঁরা স্রেফ টাকার বিনিময়ে ‘ছেলেবন্ধু’ হিসেবে সঙ্গ দেবেন কোনো তরুণীকে। এমনকি ছেলেবন্ধু সেজে দু-তিন দিনের জন্য চলে যাবেন দূরের কোনো শহর-গ্রামে মেয়েটির বাড়িতেও। এ ছাড়া এই সেবা সীমিত আকারে চলে সারা বছর ধরে। এই ‘ছেলেবন্ধু সেবার’ দরদামও দেওয়া থাকে ওয়েবসাইটে। ছেলেবন্ধুর দরদামের হিসাব ওয়েবসাইটটিতে এভাবেই দেয়া আছে — অন্য কোনো নগরে পারিবারিক সফরের সময় দিনপ্রতি ৮০০ ইউয়ান। একই শহরের বিপণিবিতানে কেনাকাটার সহযোগী ঘণ্টায় ১৫০ ইউয়ান। নালিশ ও নিপীড়নের কথা শুনে মানসিক চাপ কমানো প্রতি ২০ মিনিটে ৫০ ইউয়ান।
জ্যান্ত বিছা বিক্রি
তাওবাও ডটকমের খুবই জনপ্রিয় একটা পণ্য জ্যান্ত ‘স্করপিয়ন’ বা কাঁকড়াবিছে। বাড়িতে পালার জন্য আফ্রিকার এমপেরর স্করপিয়ন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে চীনের আরমার-টেইল বিছা বিক্রির জন্য প্রায় ৮০০ দোকানি এই সাইটে তাঁদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে রেখেছেন।
এসব বিছার দাম সাধারণত ডজন প্রতি এক পাউন্ডের মতো। বিছাগুলো জ্যান্ত অবস্থায় ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য খুবই কৌশলে প্যাকেটজাত করা হয়। আর ওই সব প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকে, কীভাবে নিরাপদে খুলে বিছা রান্না করা যাবে। তবে, কোনো ক্রেতা চাইলে সেদ্ধ বা ভাজা অবস্থায়ও সরবরাহ করা হয় এই কাঁকড়াবিছে।
৫০ পয়সার কবির দুঃখ!
হ্যাঁ, যে কেউ চাইলে চীনা ৫০ পয়সা খরচ করে কিনে নিতে পারবেন কবির দুঃখও। তাওবাও ডটকমের একটি ই-শপের নাম ‘৫০ পয়সার কবির দুঃখ’। এই দোকানে কবিতা ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না। চারজন কবির ৪৫টি ছোট্ট কবিতা আছে এই দোকানে। পণ্যের বিজ্ঞাপনে লেখা, ‘এ এমন কাল, যখন কবিরা অনাহারে। আমাদের কবিতা বিনামূল্যের। তবে, কবিতা ভালো লাগলে ৫০ পয়সা দানে আমরা মাইন্ড করব না।’
অবশ্য ওয়েবসাইটের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত বছরের আগস্টে চালু হওয়া এই দোকানে এখন পর্যন্ত শুধু দুজন ক্রেতাই ৫০ পয়সা দান করে কবিতা কিনেছেন।
কান্না-থামানো তাও তাবিজ
হাজার বছর ধরে চীনাদের জীবনযাপনে প্রবল প্রভাব রয়েছে তাও মতবাদের। এখনো চীনা সমাজে দাওশি বা তাও গুরুদেবরা খুবই সম্মানের পাত্র। দাওশিদের দেওয়া ‘ফুঁ’ বা বিশেষ তাবিজ বিক্রির কয়েক ডজন দোকান আছে তাওবাও ডটকমে। এসব তাবিজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো শিশুর কান্না-থামানো তাবিজ। এই তাবিজ একই সঙ্গে ক্রেতার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে এবং তাঁকে অশুভ বিত্ত থেকে রক্ষা করে।
বিশেষ কাগজে তাওবাদী প্রতীক-ছবি এঁকে ধর্মীয় নানান আচারের পর কাগজটাকে ভাঁজ করে করে, ছোট করে বিশেষভাবে বানানো তাবিজের খোলের মধ্যে পুরে ফেলা হয়। ছিঁচকাঁদুনে শিশুর কান্না-থামাতে এই তাবিজ তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে কিংবা রেখে দেওয়া যেতে পারে বালিশের নিচেও। ব্যস, সে আর কাঁদবে না! সবচেয়ে কমদামি তাও তাবিজের দাম মাত্র এক পয়সা হলেও সবচেয়ে দামিটার দাম কিন্তু এক লাখ ৬৬ হাজার ইউয়ান!
No comments