মায়ের ক্ষমায় বাঁচল ছেলের খুনির প্রাণ
চোখ বেঁধে তাঁকে দাঁড় করানো হয়েছে ফাঁসির
বেদিতে, গলায় গলানো হয়েছে ফাঁসির দড়ি। ‘মা’ আর সইতে পারলেন না, দ্রুত গিয়ে
‘ছেলেকে’ চড় মেরে ভেঙে পড়লেন কান্নায়, ‘বাবা’ খুলে দিলেন ফাঁসির দড়ি।
প্রাণে বেঁচে গেলেন ২৭ বছরের বেলাল। সামনে অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে যেন ছড়িয়ে
গেল মায়ের বুকে জমে থাকা বোবাকান্নার ঢেউ। এক মা এভাবেই বাঁচালেন তাঁর
নিজের ছেলের খুনিকে। দেশের আইন অনুযায়ী প্রকাশ্যে ফাঁসি কার্যকরের সময়
সম্প্রতি বিরল এই ক্ষমাশীলতার ঘটনা ঘটেছে ইরানে। দ্য গার্ডিয়ান এ খবর
জানিয়েছে।
সাত বছর আগে ২০ বছর বয়সী বেলাল তুচ্ছ ঘটনাকে
কেন্দ্র করে বাগিবতণ্ডায় জড়িয়ে ছুরির আঘাতে কেড়ে নিয়েছিলেন ১৮ বছর বয়সী
আবদুল্লাহ হোসেনজাদেহর প্রাণ। ইরানের মাজানদারান প্রদেশের ছোট্ট শহর রোয়ানে
এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশের হাতে ধরা পড়েন বেলাল। বিচার শুরু হয়
তাঁর। অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় ফাঁসির রায় হয় তাঁর। দেশের আইন অনুযায়ী ফাঁসি হবে
প্রকাশ্য এবং ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় অংশ নিতে হবে নিহতের পরিবারকেও।
>>ফাঁসির বেদিতে দাঁড়ানো অবস্থায় বেলালের গলা থেকে ফাঁসির দড়ি খুলে দিচ্ছেন আবদুল্লাহর বাবা-মা। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বেলালকে চোখ বাঁধা অবস্থায় গলায় ফাঁসির দড়ি পরানোর পর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবদুল্লাহ পরিবারের কাউকে গিয়ে তাঁর পায়ের নিচ থেকে চেয়ারটা সরিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকের তোলা ছবি ও বর্ণনায় দেখা যায়, ঠিক এ সময় ফাঁসি-কাষ্ঠের দিকে এগিয়ে যান নিহত আবদুল্লাহর মা। তিনি গিয়ে ছেলের খুনি বেলালকে একটা চড় মেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর পেছনে দাঁড়ানো আবদুল্লাহর বাবা ছেলের খুনির গলা থেকে খুলে নেন ফাঁসির দড়ি।
ছেলের খুনিকে ক্ষমা করে নিহত আবদুল্লাহর মা যখন নেমে আসছেন ফাঁসির বেদি থেকে, তখন বেলালের মা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। এক মা কাঁদলেন ছেলে হারানোর বেদনায়, আরেক মা কাঁদলেন ছেলের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায়। কিন্তু পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে এই দুই মায়ের কান্না কি বুঝতে পেরেছে সবাই! একজন মা কোন বোধে প্রাণের কোন তাড়নায় নিজের ছেলের খুনিকেও ক্ষমা করে দিতে পারেন, সেই প্রশ্নের উত্তর না মিললেও দুই মায়ের কান্না একটা ঢেউয়ের মতোই ছড়িয়ে পড়েছিল ফাঁসি দেখতে আসা শত মানুষের মধ্যে।
No comments