অন্যরকম আড্ডায় এবিএম মূসা by কাজল ঘোষ
দু’মাস হয়ে
গেছে মূসা ভাই টকশোতে আসছেন না। চারপাশের এন্তার জিজ্ঞাসা। মূসা ভাই
কোথায়? এক টকশো দর্শক প্রায়ই ফোনে জানতে চান, আপনার বয়স্ক বন্ধু কি
নিষিদ্ধ?
গলার আওয়াজ ক্ষীণ করে বলি, মূসা ভাইয়ের শরীরটা
ভাল যাচ্ছে না। না হলে রাতে আসবেন কি না আমি ফোন দেয়ার আগে মূসা ভাই-ই
জানতে চাইতেন। গম্ভীর কণ্ঠে সেলফোনে বলে উঠতেন সোমবারের সকালে, ‘আছি...
না... নাই।’ আসছে ফেব্রুয়ারিতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই মানুষটি পা দেবেন
তিরাশিতে। তাতে কি, তিনি যেন সবারই বন্ধু। বয়স যেন কোন বাধা নয়। আপন করে
নেন মুহূর্তেই। আড্ডা দেন। হাসি-আনন্দে মাতিয়ে রাখেন ছেলেবুড়ো সকলকেই।
বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় তিরিশে ডিসেম্বর ভর্তি হন ল্যাবএইডে। পাঁচতলায়
৫০২ নং কক্ষে গিয়ে মূসা ভাইকে তার ব্যতিক্রম পাইনি। চিরচেনা মানুষটির শরীর
রোগভারে নুয়ে পরলেও ভেতরে একইরকম তারুণ্য। ভিভিআইপি ৫০২ নং কক্ষটি
ইতিমধ্যেই পরিচিত হয়ে গেছে এবিএম মূসার নামেই।
ছুটির সকালে একটু দেরি করেই সেন্ট্রাল
রোডের ল্যাব এইড হাসপাতালের কার্ডিয়াকে পৌঁছি। সঙ্গী আলোকচিত্রী শাহীন
কাউসার। লিফটে ওঠতে ওঠতে বলি, সুযোগ পেলে তবেই কিন্তু ছবি তুলবেন। মূসা
ভাইকে কোনভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। অনেকরকম ওষুধ আর পথ্যের ভিড়ে ঘুম ভাঙতে
খানিকটা দেরি হয় তা আগেই জেনেছিলাম। বন্ধুবর সাইদুজ্জামান শাহীন আগেই
জানিয়েছিলেন মান্না ভাই আছেন। বুঝলাম, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের
আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এসেছেন। কেবিনে নক করার প্রয়োজন হয়নি। দরোজা
খোলাই ছিল। ঢুকতেই মূসা ভাইয়ের থেমে থেমে জিজ্ঞাসা, মিডিয়ার অবস্থা কি?
টকশো কেমন চলছে? কারা কারা এখন আসে? বিস্তারিত নামগুলো শুনতেও চাইলেন ঘাড়
কাত করে। হাতে পত্রিকা। চোখ বুলাতে বুলাতে মান্না ভাই তার নিজের ট্যাবে ছবি
তুলতে অনুমতি চাইলেন মূসা ভাইয়ের। নিজের ফেসবুক একাউন্টে ছবিটি আপলোড করতে
চান। সুযোগ হাতছাড়া না করে শাহীন কাউসারকে ক্লিক করতে বলি। মূসা ভাইও
ক্যামেরার লেন্সকে সুযোগ করে দিলেন প্রত্যাশিত ছবির জন্য। টুকটাক কথার
মধ্যেই সপ্রাইটের ক্যান দিতে ইশারা করলেন। চলমান রাজনীতির কথা আসতেই কিভাবে
সামনে এগুবে নাগরিক ঐক্য তা জেনে নিলেন মান্না ভাইয়ের কাছ থেকে। জাতির
পিতা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গ আসতেই সবাইকে থামিয়ে দিয়ে মান্না ভাইকে জিজ্ঞেস
করলেন, তোমার বাবার নাম কি? আসরার উদ্দীন বলতেই মূসা ভাইয়ের দৃষ্টি আমাদের
দিকে। বাবার নাম স্থায়ী। এটা কোন বিতর্কের বিষয় নয়। বিএনপি এখন কি করবে?
ঘুরেফিরে কথা ওঠতেই বলেন, শুধু অপেক্ষা। কিছুই করতে হবে না। এক ফাঁকে
দু’তিন সহযোগী নিয়ে ড. বরেণ চক্রবর্তীর প্রবেশ। স্যার কেমন আছেন? ক’বছর
থাকতে হবে- পাল্টা প্রশ্ন এবিএম মূসার। আপনিতো আগের চেয়ে অনেক ভাল। এইতো
এখন কথা বলতে পারছেন। বিখ্যাত কার্ডিওলজিস্ট বরেণ চক্রবর্তী একজন ভ্রমণ
লেখক হিসেবেও খ্যাত। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। এবার বইমেলায় কি আসছে?
আমার প্রশ্নে অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠেন, বাংলাদেশের সবচে’ দীর্ঘ উপন্যাস
আসছে। নাম দিয়েছি, ‘রাশিয়ার মেয়ে’। রুশ বিপ্লব নির্ভর উপন্যাসটি প্রায় সাড়ে
বারো শো পৃষ্ঠার হবে।
ভাঙা গলায় মূসা ভাই- বরেণতো অনেক ভ্রমণ কাহিনী লিখেছো, আমাদের সময় কার ভ্রমণ কাহিনী জনপ্রিয় ছিল। ইনিয়ে বিনিয়ে আমরা সঞ্জীব চট্ট্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা বললেও না ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে মূসা ভাই বললেন, রমানাথ বিশ্বাস-এর ভ্রমণ কাহিনী ছিল সবচে’ মজার। সৈয়দ মুজতবা আলী কতটা কৌতুকপ্রিয় ছিলেন তাও আমাদের শোনালেন। একবার এক ঘোড়ার গাড়ির কোচওয়ানকে মুজতবা আলী বললেন, তুমি যখন জোরে গাড়ি ঘুরাও আমি তখন ভয়ে দু’চোখ বন্ধ করে রাখি। কোচওয়ানের ফিরতি জবাব ছিল, স্যার আমিও তখন চোখ বন্ধ রাখি। একে একে ৫০২ নং কক্ষে আলোচনায় আসে অস্কার ওয়াইল্ড, চার্লস ডিকেন্স, অলিভার ট্যুইস্ট, বার্নার্ড শ থেকে বাংলাদেশের ভাল লেখক কে আর ভোগাস লেখক কে তাও। একসময় মান্না ভাই বিদায় নেন। বলে যান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তায় নাগরিক ঐক্যের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে চান। মূসা ভাইকে প্রধান অতিথি করবেন। সাগ্রহে সম্মতি জানালেন। বললেন, তুমি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাইলে এখানেও করতে পারো। এটাই প্রথমবার আসেননি, আগেও অন্তত বিশবার এসেছেন ল্যাবএইডে। আর কটা দিন থাকতে হবে। এই বলে বেরিয়ে যান বরেণ দা-ও। খুব ক্লান্ত লাগছে, বিশ্রাম দরকার- মূসা ভাইয়ের স্বগতোক্তি।
বিদায় নেব দাঁড়াতেই উদাস দৃষ্টি মূসা ভাইয়ের। আমি আবার হাঁটতে পারবোতো? বাসায় গিয়ে চেয়ারে বসতে পারবোতো? আর্থোপেডিকস-এর সমস্যা চেপে ধরেছে মূসা ভাইকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমেছে। ডায়াবেটিস ছাড়া প্রায় সব রোগই এক আধটু বাসা বেঁধেছে মূসা ভাইয়ের শরীরে। মিরপুর রোডের সদর রাস্তাটি দেখা যায় ৫০২ নং কক্ষের বড় কাঁচের দেয়াল দিয়ে। যেখানে শীতের এক মুঠো দুপুরের রোদেলা আলো এসে ঠাঁই নিয়েছে মূসা ভাইয়ের কপালে।
ভাঙা গলায় মূসা ভাই- বরেণতো অনেক ভ্রমণ কাহিনী লিখেছো, আমাদের সময় কার ভ্রমণ কাহিনী জনপ্রিয় ছিল। ইনিয়ে বিনিয়ে আমরা সঞ্জীব চট্ট্যোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা বললেও না ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে মূসা ভাই বললেন, রমানাথ বিশ্বাস-এর ভ্রমণ কাহিনী ছিল সবচে’ মজার। সৈয়দ মুজতবা আলী কতটা কৌতুকপ্রিয় ছিলেন তাও আমাদের শোনালেন। একবার এক ঘোড়ার গাড়ির কোচওয়ানকে মুজতবা আলী বললেন, তুমি যখন জোরে গাড়ি ঘুরাও আমি তখন ভয়ে দু’চোখ বন্ধ করে রাখি। কোচওয়ানের ফিরতি জবাব ছিল, স্যার আমিও তখন চোখ বন্ধ রাখি। একে একে ৫০২ নং কক্ষে আলোচনায় আসে অস্কার ওয়াইল্ড, চার্লস ডিকেন্স, অলিভার ট্যুইস্ট, বার্নার্ড শ থেকে বাংলাদেশের ভাল লেখক কে আর ভোগাস লেখক কে তাও। একসময় মান্না ভাই বিদায় নেন। বলে যান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তায় নাগরিক ঐক্যের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে চান। মূসা ভাইকে প্রধান অতিথি করবেন। সাগ্রহে সম্মতি জানালেন। বললেন, তুমি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চাইলে এখানেও করতে পারো। এটাই প্রথমবার আসেননি, আগেও অন্তত বিশবার এসেছেন ল্যাবএইডে। আর কটা দিন থাকতে হবে। এই বলে বেরিয়ে যান বরেণ দা-ও। খুব ক্লান্ত লাগছে, বিশ্রাম দরকার- মূসা ভাইয়ের স্বগতোক্তি।
বিদায় নেব দাঁড়াতেই উদাস দৃষ্টি মূসা ভাইয়ের। আমি আবার হাঁটতে পারবোতো? বাসায় গিয়ে চেয়ারে বসতে পারবোতো? আর্থোপেডিকস-এর সমস্যা চেপে ধরেছে মূসা ভাইকে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমেছে। ডায়াবেটিস ছাড়া প্রায় সব রোগই এক আধটু বাসা বেঁধেছে মূসা ভাইয়ের শরীরে। মিরপুর রোডের সদর রাস্তাটি দেখা যায় ৫০২ নং কক্ষের বড় কাঁচের দেয়াল দিয়ে। যেখানে শীতের এক মুঠো দুপুরের রোদেলা আলো এসে ঠাঁই নিয়েছে মূসা ভাইয়ের কপালে।
No comments