এবারের লড়াই ধর্মনিরপেক্ষ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যে
নয়াদিল্লিতে গতকাল কংগ্রেসের অধিবেশনে বিশাল ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানানো হয় (বাঁ থেকে) দলীয় প্রধান সোনিয়া, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন ও দলের সহসভাপতি রাহুলকে । এএফপি |
ভারতীয় সংসদের আগামী নির্বাচনের ‘রণনীতি’ কংগ্রেস ঠিক করে দিল। গতকাল শুক্রবার দলের সম্মেলনে তারা ঘোষণা করল, এবারের লড়াইটা হবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী শক্তির। এবং সেই লড়াইয়ে ভারতবর্ষের চিরকালীন মূল্যবোধ ও ভাবধারারই জয় হবে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এবং আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রচারের প্রধান মুখ রাহুল গান্ধী—প্রত্যেকেই এ কথা জোরের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা কংগ্রেসমুক্ত ভারত দেখতে চাইছে, তাদের আশাহত হতে হবে। দেশ থেকে কংগ্রেসকে কেউ মুছে দিতে পারেনি, পারবেও না।
কংগ্রেসের এক দিনের অধিবেশন ডাকা হয়েছিল দলের রণনীতি ঠিক করতে। কিন্তু আগ্রহ ছিল রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয় কি না, তা নিয়ে। বৃহস্পতিবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সেই বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যায়। সোনিয়া স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কংগ্রেস কখনো আগাম প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে নির্বাচনে যায়নি। অতএব এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। আগের রাতে এই ঘোষণার ফলে শুক্রবারের সম্মেলন নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই কমে যায়। তবু সকালবেলায় অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্র বারবার রাহুলের নামে স্লোগান উঠতে থাকায় সোনিয়া গান্ধী তাঁর ভাষণে আরও একবার জানিয়ে দেন, আগের দিন যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা-ই চূড়ান্ত। কেন তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলো না, রাহুল নিজেও তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী স্থির করেন নির্বাচিত সাংসদেরা। সংবিধানেই সে কথা লেখা আছে। সাংসদদের সেই অধিকারের অমর্যাদা করা যায় না। রাহুলের এদিনের ভাষণ ছিল খুবই আক্রমণাত্মক এবং বলিষ্ঠ। পাশাপাশি জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও সম্মেলনকে তিনি সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘রান্নার গ্যাসের নয়টি সিলিন্ডারে বছর চলছে না। ওটা বাড়িয়ে আপনাকে ১২টা করতেই হবে।’ আগামী তিন মাসে সরকার ও দলের রোডম্যাপ ঠিক করে রাহুল বলেন, দুর্নীতি দূর করতে চূড়ান্ত যে বিলগুলো সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, সেগুলো আগামী অধিবেশনে পাস করানো হবে, মূল্যবৃদ্ধি রোধে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোতে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নারীর ক্ষমতায়নে সর্বত্র ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী পছন্দের ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ নারী প্রাধান্য পাবে।
দলে কীভাবে তিনি এগোতে চাইছেন, তা স্পষ্ট করে রাহুল বলেন, দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনে এই প্রথম সার্বিক নির্বাচন হয়েছে। নেতাদের ভোটে জিততে হয়েছে। আম আদমি পার্টির ধাঁচে ‘ডাইরেক্ট ডেমোক্রেসি’ (প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র) তিনিও যে করতে চাইছেন, তার প্রমাণ রেখে রাহুল জানান, লোকসভায় ১৫টি আসনে সরাসরি প্রার্থী বাছাই করা হবে। ১০ বছরের শাসনে দেশের ১৪ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যরেখার ওপরে তোলার কথা বলে রাহুল জানান, এবারে লক্ষ্য দেশের ৭০ কোটি মানুষ, যাঁরা গরিবি রেখার ওপরে অথচ মধ্যবিত্তের নিচে। তাঁদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মাথার ওপর ছাদের বন্দোবস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সোনিয়া তাঁর ভাষণে ধর্মনিরপেক্ষ বনাম সাম্প্রদায়িক শক্তির লড়াইয়ের কথা জানিয়ে যে পর্দায় সুর বেঁধে দেন, সেই উচ্চগ্রামেই নরেন্দ্র মোদির নাম না করে রাহুল বলেন, ‘গণতন্ত্র কখনো কোনো একজনের শাসন হতে পারে না।’ কিছুটা ঠাট্টার ঢঙে তিনি বলেন, ‘ওদের প্যাকেজিং খুব ভালো। ওরা টেকো মানুষদের চিরুনি বিক্রি করে। এখন আবার তাদের জন্য সেলুন খুলতে চাইছে।’ ১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ান দেখিয়ে সারা দেশের কংগ্রেসের নেতাদের রাহুল বলেন, ‘হীনম্মন্যতা নয়, নিজেদের সাফল্যকে তুলে ধরে মানুষের কাছে যেতে হবে। জিতব আমরাই।’
No comments