অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নজর দিন
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় সবচেয়ে
বেশি ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির- এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ কম। চলতি
২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ২
শতাংশ। এ লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী- এমন অভিমত বিভিন্ন মহল থেকে করা হয়। তাদের
অনুমানের কারণ নিকট অতীতের অভিজ্ঞতা। গত কয়েক বছর ধরেই আওয়ামী লীগ
নেতৃত্বাধীন সরকার প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরে নিয়ে যেতে সংকল্প প্রকাশ
করেছে। কিন্তু লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। এ ধরনের উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি
অর্জনের জন্য যে মাত্রায় বিনিয়োগ প্রয়োজন, সেটা আসেনি। এবারে রাজনৈতিক
অস্থিরতার জন্য বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও সমস্যা হবে- এমনই ধারণা।
শিল্প-বাণিজ্যের কর্মকাণ্ডে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি এবং চেম্বারের নেতারা
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন, যাতে উদ্বেগ যথেষ্ট। ইতিমধ্যে
অর্থবছরের যে অর্ধেক সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, তার বেশিরভাগ জুড়ে ছিল
হরতাল-অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতা। একদিকে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি শ্লথ, অন্যদিকে
রাজস্ব বিভাগ শুল্ক-কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ্বব্যাংকের তরফে বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কম হবে। অর্থ
মন্ত্রণালয় অবশ্য ততটা নিরাশ নয়। তারা এ হার কমিয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ
নির্ধারণ করবে- এমন ধারণা মিলেছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য তো দ্রুতগতিতে
প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত
করা। সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময়ে দলীয় ইশতেহার ঘোষণা করতে গিয়ে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ বিশ্বের
সারিতে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। সেখানে পেঁছাতে হলে বিনিয়োগ ও
প্রবৃদ্ধির হারে বাড়তি গতি আনতেই হবে। এ জন্য আরও করণীয়- বিনিয়োগকারীদের
উদ্বুদ্ধ করা এবং তার অপরিহার্য শর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন। শনিবার
সমকাল 'পাঁচ বছরের অর্থনৈতিক কৌশলপত্র তৈরি হচ্ছে' শিরোনামের প্রতিবেদনে
বলেছে, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে হুমকির মুখে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকেই
নতুন সরকার বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে। এ জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি একটি কৌশলপত্র
তৈরির কাজ চলছে। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি উভয় ধরনের কর্মসূচি তাতে স্থান পাবে।
শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী মহল তাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু প্রস্তাব
সরকারের কাছে ইতিমধ্যে পেশ করেছে। সরকারের দিক থেকেও তাদের শুল্ক-কর এবং
ব্যাংকিং ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা প্রদান করা হবে- এমন কথা বলা হচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনাও গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজ সহজ হবে না। নতুন
একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। এ জন্য প্রধান
দুটি দলের মধ্যে সমঝোতা হতেই হবে। এ কাজে বিলম্ব হলে কিংবা ফের সংঘাতপূর্ণ
রাজনীতির শঙ্কা থাকলে বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হবে না। বিশ্বব্যাংক, এশীয়
উন্নয়ন ব্যাংকসহ যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে স্বল্প হার সুদে ও
দীর্ঘ মেয়াদে আর্থ-সামাজিক প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা প্রদান করে, তাদের
সঙ্গে পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থায়ন বিষয়ে সমঝোতায়
পৌছানোও গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে উৎপাদনমূলক খাতে বেসরকারি বিদেশি বিনিয়োগ
বাড়াতেও মনোযোগী হতে হবে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যদি রাজনীতির জন্য
অর্থনীতির ক্ষতি হতে না দেওয়ার বিষয়ে একমত হতে পারে, তাহলে দেশি ও বিদেশি
উভয় অঙ্গনেই বিনিয়োগকারীরা একটি ইতিবাচক বার্তা পাবে। কিন্তু তেমন বার্তা
কি প্রদান করা সম্ভব হবে? আমাদের রাজনীতি কি হিংসার আবর্ত থেকে বের হয়ে
আসতে পারবে? রাজনীতিকরা কি জনগণের কাছে এমন সুবার্তা দিতে পারবেন যে,
অর্থনীতির ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে তারা বিরত থাকবেন?
No comments