প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ফরাজী হাসপাতাল by রাজবংশী রায়
রাজধানীর বনশ্রীতে এই হাসপাতালে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ |
বিভিন্ন
দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসকদের কাছ থেকে বিনামূল্যে পরামর্শ পাওয়া গেলে মন্দ
কী! বিশেষ করে যাদের দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাদের
জন্য এমন 'অফার' তো মহাসুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে রোগে-শোকে কাতর কেইবা এমন সুযোগ
হাতছাড়া করবেন! অথচ কেউ কী জানে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ নিতে গিয়ে কী
ভয়ানক প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি সমকালের এক
অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে এমন এক প্রতারণার ফাঁদ। বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ
নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ প্রচুর টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য
হচ্ছেন। 'সকল শ্রেণীপেশার মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানের
জন্য অ্যাপোলো হসপিটাল, চেন্নাই এবং মাইন্ডশেয়ার গ্গ্নোবাল কনসালট্যান্সি
প্রাইভেট লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে অ্যাপোলো হাসপাতাল চেন্নাইয়ের নিম্নলিখিত
প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ আগামী ২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি একটি ফ্রি হেলথ
ক্যাম্প পরিচালনা করবেন। আগ্রহী নতুন ও পুরনো রোগীদের নিম্নলিখিত ঠিকানায়
জেলার নাম উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। অ্যাপোলো
হসপিটাল চেন্নাইয়ের তথ্য কেন্দ্র- মাইন্ডশেয়ার গ্গ্নোবাল কনসালট্যান্সি
(প্রা.) লি. ও কনসালটেশন সেন্টার- ফরাজী হাসপাতাল লি.'। জাতীয় দৈনিকে ফ্রি
চিকিৎসা পরামর্শ প্রদানের এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা করছে রাজধানীর
ফরাজী ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট চিকিৎসা
সেবাকেন্দ্র।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার সিফায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেন, বিএমডিসি আইন অনুযায়ী মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চিকিৎসা সেবা বা পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা নিশ্চিতভাবে প্রতারক চক্র। এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে আগে কয়েকবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি জনসাধারণকে এ চক্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
ফরাজী ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা। ফ্রি চিকিৎসা সেবা পরামর্শ দেওয়ার কথা বলে অসুস্থ রোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। বিদেশি ডাক্তার দেখানোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে অনেক অসুস্থ রোগী রামপুরা থানার ১৬-১৯ হোল্ডিংয়ের ব্লক-ই বনশ্রী এলাকার ওই হাসপাতালটিতে পরামর্শের জন্য গেছেন। এর পর তারা হয়েছেন নাজেহাল। বিজ্ঞাপনে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাননি তারা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন রোগীর স্বজন সমকালকে জানান, ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শের জন্য ফরাজী হাসপাতালে গেলে প্রথমে পাঁচশ' টাকা জমা দিয়ে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। এরপর ডাক্তার দেখানোর আগেই পাঁচ থেকে ছয় ধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে বলা হয়। ফরাজী হাসপাতালেই ওই টেস্ট করতে রোগীদের বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ। এসব টেস্ট করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এরপরই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ মেলে। ডাক্তার দেখানোর পর বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আরেক দফা টেস্টের কথা বলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক যুবক বসে আছেন। বিদেশি ডাক্তারের পরামর্শের জন্য কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে জানতে চাইলে ওই যুবক একটু অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে চলে যান। তিন থেকে চার মিনিট পর একটি কক্ষ থেকে বের হয়ে এ প্রতিবেদককে ওই কক্ষের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলেন, 'ওই রুমে যান, স্যার আছেন। তার সঙ্গে আলাপ করুন।' যুবকের কথামতো অভ্যর্থনা কক্ষলাগোয়া পেছনের একটি কক্ষে গিয়ে কথা হয় আবদুর রব নামে একজনের সঙ্গে। তিনি নিজেকে অ্যাপোলো হসপিটালস ইন্ডিয়ার আবাসিক প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন। রোগী সেজে চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রতি মাসে একবার করে ইন্ডিয়া থেকে ডাক্তার এসে ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করেন। এজন্য রোগীদের মাত্র পাঁচশ' টাকা জমা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।' বিদেশ থেকে চিকিৎসক এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে তাতে ওই চিকিৎসকদের লাভ কী_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লাভ তো আছেই, লাভ ছাড়া কেউ কি কাজ করে?' পাঁচশ' টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি কেন নেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই যে রোগীদের ফোন করা হয়, লোকজন নিয়োগ করে খাতায় নাম এন্ট্রি করতে হয়, খাতা-কলম খরচ হয়। এসবের খরচ হিসেবে ওই পাঁচশ' টাকা নেওয়া হয়।' একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'যে কোনো রোগের সমস্যার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বিদেশি ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেব।'
পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবদুর রবকে ফোন করা হয়। বিদেশি ডাক্তার তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন এমন কোনো অনুমতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে কি-না এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, 'চার থেকে পাঁচ বছর ধরে আমরা এ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আপনার যদি কোনো রোগী থাকে নিয়ে আসুন, আমরা ফ্রি সব ব্যবস্থা করে দেব।' ফ্রি চিকিৎসা নামে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'রোগ নিরূপণ করতে হলে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট তো করতেই হবে। আমাদের হাসপাতালে যেহেতু টেস্ট আছে তাই রোগীদের এখানেই সব টেস্ট করা হয়। এছাড়া কারও কাছে টাকা না থাকলে আমরা ফ্রি টেস্টের ব্যবস্থা করে দিই।'
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার সিফায়েত উল্লাহ সমকালকে বলেন, বিএমডিসি আইন অনুযায়ী মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চিকিৎসা সেবা বা পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের কাজ করছে তারা নিশ্চিতভাবে প্রতারক চক্র। এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে আগে কয়েকবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি জনসাধারণকে এ চক্রের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক।
ফরাজী ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা। ফ্রি চিকিৎসা সেবা পরামর্শ দেওয়ার কথা বলে অসুস্থ রোগীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। বিদেশি ডাক্তার দেখানোর চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে অনেক অসুস্থ রোগী রামপুরা থানার ১৬-১৯ হোল্ডিংয়ের ব্লক-ই বনশ্রী এলাকার ওই হাসপাতালটিতে পরামর্শের জন্য গেছেন। এর পর তারা হয়েছেন নাজেহাল। বিজ্ঞাপনে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাননি তারা।
ভুক্তভোগী কয়েকজন রোগীর স্বজন সমকালকে জানান, ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শের জন্য ফরাজী হাসপাতালে গেলে প্রথমে পাঁচশ' টাকা জমা দিয়ে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়। এরপর ডাক্তার দেখানোর আগেই পাঁচ থেকে ছয় ধরনের প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতে বলা হয়। ফরাজী হাসপাতালেই ওই টেস্ট করতে রোগীদের বাধ্য করে কর্তৃপক্ষ। এসব টেস্ট করতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এরপরই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ মেলে। ডাক্তার দেখানোর পর বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আরেক দফা টেস্টের কথা বলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, অভ্যর্থনা কক্ষে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক যুবক বসে আছেন। বিদেশি ডাক্তারের পরামর্শের জন্য কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে জানতে চাইলে ওই যুবক একটু অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে চলে যান। তিন থেকে চার মিনিট পর একটি কক্ষ থেকে বের হয়ে এ প্রতিবেদককে ওই কক্ষের দিকে আঙ্গুল নির্দেশ করে বলেন, 'ওই রুমে যান, স্যার আছেন। তার সঙ্গে আলাপ করুন।' যুবকের কথামতো অভ্যর্থনা কক্ষলাগোয়া পেছনের একটি কক্ষে গিয়ে কথা হয় আবদুর রব নামে একজনের সঙ্গে। তিনি নিজেকে অ্যাপোলো হসপিটালস ইন্ডিয়ার আবাসিক প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন। রোগী সেজে চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্রতি মাসে একবার করে ইন্ডিয়া থেকে ডাক্তার এসে ফ্রি চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করেন। এজন্য রোগীদের মাত্র পাঁচশ' টাকা জমা দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।' বিদেশ থেকে চিকিৎসক এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে তাতে ওই চিকিৎসকদের লাভ কী_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লাভ তো আছেই, লাভ ছাড়া কেউ কি কাজ করে?' পাঁচশ' টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি কেন নেওয়া হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই যে রোগীদের ফোন করা হয়, লোকজন নিয়োগ করে খাতায় নাম এন্ট্রি করতে হয়, খাতা-কলম খরচ হয়। এসবের খরচ হিসেবে ওই পাঁচশ' টাকা নেওয়া হয়।' একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'যে কোনো রোগের সমস্যার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বিদেশি ভালো ডাক্তার দেখিয়ে দেব।'
পরে ওইদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আবদুর রবকে ফোন করা হয়। বিদেশি ডাক্তার তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছেন এমন কোনো অনুমতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে কি-না এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, 'চার থেকে পাঁচ বছর ধরে আমরা এ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। আপনার যদি কোনো রোগী থাকে নিয়ে আসুন, আমরা ফ্রি সব ব্যবস্থা করে দেব।' ফ্রি চিকিৎসা নামে রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'রোগ নিরূপণ করতে হলে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট তো করতেই হবে। আমাদের হাসপাতালে যেহেতু টেস্ট আছে তাই রোগীদের এখানেই সব টেস্ট করা হয়। এছাড়া কারও কাছে টাকা না থাকলে আমরা ফ্রি টেস্টের ব্যবস্থা করে দিই।'
No comments