গল্প- এক ঢিলে দুই পাখি by আদনান মুকিত
এই মুহূর্তে টুশির মনটা খারাপ। মন খারাপ
হওয়ারই কথা। কার্টুন দেখার সময় হয়ে গেছে, অথচ দেখতে পারছে না। টিভির
রিমোটটা ক্যাডবেরি চকলেটের মতো আগলে রেখেছেন টুশির মামা।
টিভিতে
জটিল টক শো হচ্ছে, মামা সেটাই বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছেন। কয়েকজন মানুষের
কথাবার্তা এত মনোযোগ দিয়ে দেখার কী আছে, তা টুশি কখনোই বুঝতে পারে না। সে
এরই মধ্যে কয়েকবার কান্নার ভান করে মামাকে চ্যানেল বদলাতে বলেছে। মামা
পাত্তা দেননি। তাই টুশি ধরে নিয়েছে, আজ আর কার্টুন দেখা হবে না। এমন সময়
ড্রয়িংরুমে এলেন টুশির মা। টিভির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মামাকে বললেন,
‘তুই কি কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারিস না? নাকি ইচ্ছা করেই উল্টাপাল্টা করিস?’
‘কী বলো, ইচ্ছা করে উল্টাপাল্টা করব কেন?’
‘তোকে আনতে বলেছিলাম বেল, যে বেলের শরবত তোর দুলাভাই খায়। তুই এনেছিস কলবেল। এখন কি কলবেলের শরবত বানিয়ে খাওয়াব?’
‘আরে কী আশ্চর্য! তুমি কোন বেলের কথা বলেছ, তা আমি কী করে বুঝব? পৃথিবীতে অনেক ধরনের বেল আছে। কতবেল, পাকা বেল, গ্যারেথ বেল...তা ছাড়া বাসার কলবেলটাও তো ঠিকমতো কাজ করছে না! আসলে আপা, তোমার কমিউনিকেশন স্কিল এত দুর্বল...কোনো কথা ঠিকভাবে বোঝাতে পারো না। ভালোভাবে বললেই হয়...’
মামার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই মা রাগে গজগজ করতে করতে ড্রয়িংরুম থেকে চলে গেলেন। মামা আবার মনোযোগ দিলেন টক শোয়। টুশি বলল,
‘মামা, মা বলল তুমি নাকি কিছুই করতে পারো না। মা প্রায়ই এমন বলে। কেন মামা? তুমি কি আসলেই কিছু পারো না?’
‘আরে, আপা তো এমন কথা বলবেই। আমার জ্ঞান সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। আমি কী পারি না? গান গাইতে পারি। অভিনয় করতে পারি। ভালো আবৃত্তি জানি। দাবা খেলায় আমাকে কেউ হারাতে পারেনি।’
‘কেউ হারাতে পারেনি তার কারণ, তুমি কারও সঙ্গে দাবা খেলোনি।’
‘হারাতে পারবে না জানি বলেই তো খেলি না। শোন, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যা আমি পারি না। ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, অ্যাকাউন্টিং, অ্যাস্ট্রোলজি, সাইকোলজি—আরও যত “লজি” আছে, সবটাতেই আমার জ্ঞান আছে।’
‘তুমি ছবি আঁকতে পারো?’
‘হেহ! ছবি আঁকা কোনো ব্যাপার? রং-পেনসিল ধরলে মোনালিসা টাইপের গোটা দশেক ছবি আঁকা হয়ে যাবে। এত ছবি ঘরে রাখার জায়গা নেই বলে পেনসিল ধরি না। তা ছাড়া আমার এত সময় আছে? তোর মামা যে কত বড় প্রতিভা, তা তুই বুঝতেই পারছিস না টুশি। এসব বুঝতে হবে।’
‘আমাদের ড্রয়িং টিচার ১০ মিনিটে একটা গ্রামের দৃশ্য আর দুইটা দোয়েল পাখি আঁকতে পারে। টিচার বলেছেন, তিনি ছাড়া এটা আর কেউ পারবে না। অরনিও পারেনি। ও ড্রয়িংয়ে হাইয়েস্ট মার্ক পেয়েছিল। তুমি তো পারবেই না।’
‘তোর টিচারের মতো কত টিচারকে আমি ড্রয়িং শেখালাম! ১০ মিনিটে গ্রামের দৃশ্য আর দোয়েল আঁকা কোনো ব্যাপারই না। ১০ মিনিট সময় পেলে একটা কেন, বাংলাদেশের কয়েক শ গ্রাম আমি এঁকে ফেলতে পারি। আর দোয়েল? ১০ মিনিট সময় পেলে আমি যে কয়টা দোয়েল আঁকব, বাংলাদেশে অতগুলো দোয়েলই নেই!’
‘ইশ্! তুমি পারবে না। এমনি এমনি বলছ। মা বলেছে, তুমি কিছুই পারো না। মা কি তাহলে ভুল বলেছে, মামা?’
‘অবশ্যই ভুল বলেছে! তুই খাতা-পেনসিল নিয়ে আয়। ঘড়ি ধর। এঁকে দেখাচ্ছি। আমি পারি না, এমন কিছু আছে নাকি?’
‘না মামা, থাক। আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘তুই কিছুই বুঝিসনি, খাতা-পেনসিল আন। তারপর বুঝবি।’
টুশি এক দৌড়ে পড়ার টেবিল থেকে খাতা, পেনসিল, রং, রাবার ও শার্পনার—সব এনে মামার হাতে দিল। মামা গম্ভীর হয়ে পেনসিল হাতে নিলেন। বারবার কী যেন মাপলেন। তারপর বললেন,
‘ড্রয়িংরুমের টেবিলটা আমার জন্য নিচু হয়ে গেছে রে। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। তুই ঘড়ির দিকে খেয়াল রাখ।’
টুশি খুশি মনে বলল, ‘আচ্ছা মামা।’
মামা ছবি আঁকার সবকিছু নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। টুশিও সঙ্গে সঙ্গে রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল বদলে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতে লাগল। তার খুব মজা লাগছে। মামা সত্যি সত্যি ছবি আঁকলে ড্রয়িং ক্লাসের হোমওয়ার্কটাও হবে, আর কার্টুন তো দেখা হবেই। এক ঢিলে দুই পাখি! কী মজা!
‘তুই কি কোনো কাজ ঠিকমতো করতে পারিস না? নাকি ইচ্ছা করেই উল্টাপাল্টা করিস?’
‘কী বলো, ইচ্ছা করে উল্টাপাল্টা করব কেন?’
‘তোকে আনতে বলেছিলাম বেল, যে বেলের শরবত তোর দুলাভাই খায়। তুই এনেছিস কলবেল। এখন কি কলবেলের শরবত বানিয়ে খাওয়াব?’
‘আরে কী আশ্চর্য! তুমি কোন বেলের কথা বলেছ, তা আমি কী করে বুঝব? পৃথিবীতে অনেক ধরনের বেল আছে। কতবেল, পাকা বেল, গ্যারেথ বেল...তা ছাড়া বাসার কলবেলটাও তো ঠিকমতো কাজ করছে না! আসলে আপা, তোমার কমিউনিকেশন স্কিল এত দুর্বল...কোনো কথা ঠিকভাবে বোঝাতে পারো না। ভালোভাবে বললেই হয়...’
মামার কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই মা রাগে গজগজ করতে করতে ড্রয়িংরুম থেকে চলে গেলেন। মামা আবার মনোযোগ দিলেন টক শোয়। টুশি বলল,
‘মামা, মা বলল তুমি নাকি কিছুই করতে পারো না। মা প্রায়ই এমন বলে। কেন মামা? তুমি কি আসলেই কিছু পারো না?’
‘আরে, আপা তো এমন কথা বলবেই। আমার জ্ঞান সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। আমি কী পারি না? গান গাইতে পারি। অভিনয় করতে পারি। ভালো আবৃত্তি জানি। দাবা খেলায় আমাকে কেউ হারাতে পারেনি।’
‘কেউ হারাতে পারেনি তার কারণ, তুমি কারও সঙ্গে দাবা খেলোনি।’
‘হারাতে পারবে না জানি বলেই তো খেলি না। শোন, পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যা আমি পারি না। ফিজিকস, কেমিস্ট্রি, অ্যাকাউন্টিং, অ্যাস্ট্রোলজি, সাইকোলজি—আরও যত “লজি” আছে, সবটাতেই আমার জ্ঞান আছে।’
‘তুমি ছবি আঁকতে পারো?’
‘হেহ! ছবি আঁকা কোনো ব্যাপার? রং-পেনসিল ধরলে মোনালিসা টাইপের গোটা দশেক ছবি আঁকা হয়ে যাবে। এত ছবি ঘরে রাখার জায়গা নেই বলে পেনসিল ধরি না। তা ছাড়া আমার এত সময় আছে? তোর মামা যে কত বড় প্রতিভা, তা তুই বুঝতেই পারছিস না টুশি। এসব বুঝতে হবে।’
‘আমাদের ড্রয়িং টিচার ১০ মিনিটে একটা গ্রামের দৃশ্য আর দুইটা দোয়েল পাখি আঁকতে পারে। টিচার বলেছেন, তিনি ছাড়া এটা আর কেউ পারবে না। অরনিও পারেনি। ও ড্রয়িংয়ে হাইয়েস্ট মার্ক পেয়েছিল। তুমি তো পারবেই না।’
‘তোর টিচারের মতো কত টিচারকে আমি ড্রয়িং শেখালাম! ১০ মিনিটে গ্রামের দৃশ্য আর দোয়েল আঁকা কোনো ব্যাপারই না। ১০ মিনিট সময় পেলে একটা কেন, বাংলাদেশের কয়েক শ গ্রাম আমি এঁকে ফেলতে পারি। আর দোয়েল? ১০ মিনিট সময় পেলে আমি যে কয়টা দোয়েল আঁকব, বাংলাদেশে অতগুলো দোয়েলই নেই!’
‘ইশ্! তুমি পারবে না। এমনি এমনি বলছ। মা বলেছে, তুমি কিছুই পারো না। মা কি তাহলে ভুল বলেছে, মামা?’
‘অবশ্যই ভুল বলেছে! তুই খাতা-পেনসিল নিয়ে আয়। ঘড়ি ধর। এঁকে দেখাচ্ছি। আমি পারি না, এমন কিছু আছে নাকি?’
‘না মামা, থাক। আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘তুই কিছুই বুঝিসনি, খাতা-পেনসিল আন। তারপর বুঝবি।’
টুশি এক দৌড়ে পড়ার টেবিল থেকে খাতা, পেনসিল, রং, রাবার ও শার্পনার—সব এনে মামার হাতে দিল। মামা গম্ভীর হয়ে পেনসিল হাতে নিলেন। বারবার কী যেন মাপলেন। তারপর বললেন,
‘ড্রয়িংরুমের টেবিলটা আমার জন্য নিচু হয়ে গেছে রে। আমি আমার ঘরে যাচ্ছি। তুই ঘড়ির দিকে খেয়াল রাখ।’
টুশি খুশি মনে বলল, ‘আচ্ছা মামা।’
মামা ছবি আঁকার সবকিছু নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। টুশিও সঙ্গে সঙ্গে রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল বদলে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখতে লাগল। তার খুব মজা লাগছে। মামা সত্যি সত্যি ছবি আঁকলে ড্রয়িং ক্লাসের হোমওয়ার্কটাও হবে, আর কার্টুন তো দেখা হবেই। এক ঢিলে দুই পাখি! কী মজা!
No comments