রাশেদ চৌধুরী- হাওয়াই দ্বীপে কীর্তিমান বাংলাদেশি by ইফতেখার মাহমুদ
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জবাসীর কাছে বাংলাদেশের ছেলে রাশেদ চৌধুরীর নাম অতটা পরিচিত নয়।
কিন্তু
তাঁর উদ্ভাবিত বন্যার আগাম পূর্বাভাসপদ্ধতি সেখানকার অধিবাসীদের কাছে অতি
পরিচিত। ছয় মাস আগে থেকেই দেওয়া ওই পূর্বাভাস ক্ষুদ্র দ্বীপ গুয়াম,
মাইক্রোনেশিয়া, মার্শাল আইল্যান্ড ও আমেরিকান সামোয়ার অধিবাসীদের জীবনে
বয়ে এনেছে আশীর্বাদ। বদলে দিয়েছে দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবন। বেগবান করেছে
তাদের অর্থনীতির চাকা।
যুক্তরাষ্ট্র বললেই যে উন্নত অর্থনীতির ছবি চোখে ভাসে, সেটা দ্বীপবাসীর অনেকের বেলাতেই সত্যি নয়। তাদের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ। উত্তাল সাগর থেকে আসা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে এখানকার মানুষ টিকে থাকে। বাংলাদেশের উপকূলের মানুষদের মতোই কঠিন ও সংগ্রামী তাদের জীবন। হঠাৎ নামা তুমুল বৃষ্টিতে ফসল তলিয়ে যাওয়া এবং মাছ ধরার নৌকা ডুবে যাওয়া ছিল ফি বছরে নির্মম বাস্তবতা।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা নিয়ে গবেষণা করতে ওই অঞ্চলের হাওয়াই দ্বীপের হনলুলুতে একটি স্বতন্ত্র গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দ্বীপবাসীকে দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করে কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত উত্তর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জবাসীর ত্রাতার মতো এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের ছেলে রাশেদ চৌধুরী। একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিনি ২০০৩ সালে যোগ দিলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সেবা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত ওই গবেষণা সংস্থায় খুব দ্রুতই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি
এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি পরীক্ষা করে রাশেদ বন্যা পূর্বাভাসের এক নতুন পদ্ধতি বা মডেল উদ্ভাবন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত ‘এনসোভিত্তিক আগাম পূর্বাভাস’ হয়ে ওঠে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে ছয় মাস আগেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। আট বছর ধরে এই সাফল্য বজায় রেখেছে রাশেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত পদ্ধতি।
পূর্বাভাস পেয়ে ওই দ্বীপবাসী বন্যা-ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারছে। ফলে ফসলের চাষ করা থেকে শুরু করে মাছ ধরার পরিকল্পনা নেওয়ার মতো বিষয়ে ওই পূর্বাভাস তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই দ্বীপগুলোর সম্পদ ও প্রাণহানির পরিমাণও কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দ্বীপগুলো থেকে এই পূর্বাভাস দেওয়ার আবেদন আসছে। প্রশান্ত মহাসাগর-তীরবর্তী অনেক দেশ এই পূর্বাভাসব্যবস্থা চালু করার জন্য রাশেদের প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে।
দেশে কাজ করতে চেয়েছিলেন রাশেদ
রাশেদ চৌধুরীর এই বন্যা পূর্বাভাস দেওয়ার হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশে বসেই। চট্টগ্রামের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাট শেষ করে ১৯৮৩ সালে রাশেদ চৌধুরী যোগ দিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে। শুরুতে তিনি পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিলেও পরে তাঁকে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে রাশেদ যখন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ৪৮ ঘণ্টা আগের পূর্বাভাস দেওয়া হতো। উজানের পানি ও বৃষ্টিপাতের ধরন দেখে তাঁরা বলে দিতেন, দেশের কোন কোন নদীতে পানির প্রবাহ বাড়বে। কোথায় কোথায় বন্যার পানি আসতে পারে। সেই পূর্বাভাস যখন দেওয়া হচ্ছিল তখন রাশেদ ভাবছিলেন, কীভাবে সাত-আট দিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া যায়। দু-তিন দিন আগে পূর্বাভাস দিলে বন্যা-আক্রান্ত এলাকার মানুষ ফসল ও সম্পদ রক্ষা করার প্রয়োজনীয় সময় পায় না। ফলে যত আগে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে, সাধারণ মানুষের জন্য তত বেশি সুবিধা হবে। এই চিন্তা করে রাশেদ তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন। মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে পূর্বাভাস পাওয়ার চাহিদা রয়েছে বলেও দেখতে পান।
ওই সময়ে আগাম বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় দেওয়া হয়, তা খুঁজছিলেন তিনি। এ সময়ই সন্ধান পান জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন সেন্টারের। সেখানে দুই বছর মেয়াদি পোস্ট ডক্টরাল করা অবস্থায় তিনি ঢাকার বন্যার পানির গভীরতা ও ধরন নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করেন। সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। জাপানে পোস্ট ডক্টরাল শেষ করে ২০০১ সালে রাশেদ পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে জলবায়ু পূর্বাভাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দুই বছর মেয়াদি ওই গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ছয় মাস আগে থেকে ঋতুভিত্তিক আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া। বাংলাদেশের বন্যা ও ঝড়ের পূর্বাভাসও ওই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার পানিপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের ধরন ও পানিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পরিমাপ করে বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললে এবং নদী বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব বলে রাশেদ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানান।
২০০৩ সালে দেশে ফিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে আবারও যোগ দেন রাশেদ। বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনাও করেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি তো এককভাবে বাংলাদেশ সরকারের আওতার মধ্যে নেই। ফলে রাশেদের বন্যা পূর্বাভাস দেওয়ার গবেষণালব্ধ জ্ঞান মাঠেই মারা যাচ্ছিল। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে এ বিষয়ে গবেষণা যখন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন রাশেদের ডাক আসে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারে কাজ করার। নিজের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে লাগানোর এই সুযোগে সাড়া দিয়ে তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। গবেষণাকাজে যোগ দেন হাওয়াই দ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিজ্ঞানকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের জায়গায় না রেখে মানুষের কল্যাণে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই ইচ্ছা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী। কিন্তু দেশে ফিরে কাজ করার ইচ্ছে তাঁর এখনো। তিনি বলছিলেন, ‘দেশে যদি কাজ করার সুযোগ পাই অবশ্যই যাব। দেশের জন্যই কাজ করতে চাই। দেশের বন্যা, খরা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস -কবলিত মানুষের জন্য পূর্বাভাস দিয়ে তাদের তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করতে চাই।’
সুদূর হাওয়াই দ্বীপে বসে সেই স্বপ্নই দেখেন এই কৃতী বিজ্ঞানী।
যুক্তরাষ্ট্র বললেই যে উন্নত অর্থনীতির ছবি চোখে ভাসে, সেটা দ্বীপবাসীর অনেকের বেলাতেই সত্যি নয়। তাদের প্রধান জীবিকা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ। উত্তাল সাগর থেকে আসা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে এখানকার মানুষ টিকে থাকে। বাংলাদেশের উপকূলের মানুষদের মতোই কঠিন ও সংগ্রামী তাদের জীবন। হঠাৎ নামা তুমুল বৃষ্টিতে ফসল তলিয়ে যাওয়া এবং মাছ ধরার নৌকা ডুবে যাওয়া ছিল ফি বছরে নির্মম বাস্তবতা।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা নিয়ে গবেষণা করতে ওই অঞ্চলের হাওয়াই দ্বীপের হনলুলুতে একটি স্বতন্ত্র গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে। তাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দ্বীপবাসীকে দুর্যোগের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী এ নিয়ে গবেষণা করে কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত উত্তর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জবাসীর ত্রাতার মতো এগিয়ে এলেন বাংলাদেশের ছেলে রাশেদ চৌধুরী। একটি গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিনি ২০০৩ সালে যোগ দিলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সেবা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত ওই গবেষণা সংস্থায় খুব দ্রুতই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি
এল নিনো ও লা নিনার গতিবিধি পরীক্ষা করে রাশেদ বন্যা পূর্বাভাসের এক নতুন পদ্ধতি বা মডেল উদ্ভাবন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত ‘এনসোভিত্তিক আগাম পূর্বাভাস’ হয়ে ওঠে নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে ছয় মাস আগেই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। আট বছর ধরে এই সাফল্য বজায় রেখেছে রাশেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত পদ্ধতি।
পূর্বাভাস পেয়ে ওই দ্বীপবাসী বন্যা-ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারছে। ফলে ফসলের চাষ করা থেকে শুরু করে মাছ ধরার পরিকল্পনা নেওয়ার মতো বিষয়ে ওই পূর্বাভাস তাদের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই দ্বীপগুলোর সম্পদ ও প্রাণহানির পরিমাণও কমে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য দ্বীপগুলো থেকে এই পূর্বাভাস দেওয়ার আবেদন আসছে। প্রশান্ত মহাসাগর-তীরবর্তী অনেক দেশ এই পূর্বাভাসব্যবস্থা চালু করার জন্য রাশেদের প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে।
দেশে কাজ করতে চেয়েছিলেন রাশেদ
রাশেদ চৌধুরীর এই বন্যা পূর্বাভাস দেওয়ার হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশে বসেই। চট্টগ্রামের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাট শেষ করে ১৯৮৩ সালে রাশেদ চৌধুরী যোগ দিয়েছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে। শুরুতে তিনি পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল বিভাগে যোগ দিলেও পরে তাঁকে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৯৮ সালে রাশেদ যখন বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন ৪৮ ঘণ্টা আগের পূর্বাভাস দেওয়া হতো। উজানের পানি ও বৃষ্টিপাতের ধরন দেখে তাঁরা বলে দিতেন, দেশের কোন কোন নদীতে পানির প্রবাহ বাড়বে। কোথায় কোথায় বন্যার পানি আসতে পারে। সেই পূর্বাভাস যখন দেওয়া হচ্ছিল তখন রাশেদ ভাবছিলেন, কীভাবে সাত-আট দিন আগে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া যায়। দু-তিন দিন আগে পূর্বাভাস দিলে বন্যা-আক্রান্ত এলাকার মানুষ ফসল ও সম্পদ রক্ষা করার প্রয়োজনীয় সময় পায় না। ফলে যত আগে পূর্বাভাস দেওয়া যাবে, সাধারণ মানুষের জন্য তত বেশি সুবিধা হবে। এই চিন্তা করে রাশেদ তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেন। মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে পূর্বাভাস পাওয়ার চাহিদা রয়েছে বলেও দেখতে পান।
ওই সময়ে আগাম বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় দেওয়া হয়, তা খুঁজছিলেন তিনি। এ সময়ই সন্ধান পান জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর আর্থ সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন সেন্টারের। সেখানে দুই বছর মেয়াদি পোস্ট ডক্টরাল করা অবস্থায় তিনি ঢাকার বন্যার পানির গভীরতা ও ধরন নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও করেন। সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। জাপানে পোস্ট ডক্টরাল শেষ করে ২০০১ সালে রাশেদ পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে জলবায়ু পূর্বাভাস নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দুই বছর মেয়াদি ওই গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ছয় মাস আগে থেকে ঋতুভিত্তিক আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া। বাংলাদেশের বন্যা ও ঝড়ের পূর্বাভাসও ওই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার পানিপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের ধরন ও পানিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পরিমাপ করে বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললে এবং নদী বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব বলে রাশেদ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানান।
২০০৩ সালে দেশে ফিরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রে আবারও যোগ দেন রাশেদ। বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও আলোচনাও করেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি তো এককভাবে বাংলাদেশ সরকারের আওতার মধ্যে নেই। ফলে রাশেদের বন্যা পূর্বাভাস দেওয়ার গবেষণালব্ধ জ্ঞান মাঠেই মারা যাচ্ছিল। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে এ বিষয়ে গবেষণা যখন বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তখন রাশেদের ডাক আসে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক এনসো ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারে কাজ করার। নিজের দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাজে লাগানোর এই সুযোগে সাড়া দিয়ে তিনি আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। গবেষণাকাজে যোগ দেন হাওয়াই দ্বীপের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিজ্ঞানকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের জায়গায় না রেখে মানুষের কল্যাণে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই ইচ্ছা থেকে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানী। কিন্তু দেশে ফিরে কাজ করার ইচ্ছে তাঁর এখনো। তিনি বলছিলেন, ‘দেশে যদি কাজ করার সুযোগ পাই অবশ্যই যাব। দেশের জন্যই কাজ করতে চাই। দেশের বন্যা, খরা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস -কবলিত মানুষের জন্য পূর্বাভাস দিয়ে তাদের তা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত করতে চাই।’
সুদূর হাওয়াই দ্বীপে বসে সেই স্বপ্নই দেখেন এই কৃতী বিজ্ঞানী।
No comments