সুশাসন ও নির্বাচন by মইনুল হোসেন
জামায়াতের
দু’দিনব্যাপী হরতালে যখন সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিসহ জনজীবন মারাত্মকভাবে
বিপর্যস্ত, তখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়াই
ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে জনগণকে বোঝানোর ব্যাপারে খুবই উদগ্রীব।
আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই বিরোধী দলকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, নির্বাচন হোক বা
না হোক, তারাই ক্ষমতায় থাকবে। কিছু লোকের কাছে ক্ষমতার আকাক্সক্ষা খুবই
লোভনীয় এবং স্বাভাবিকও বটে। গত মঙ্গলবার তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন না হলেও
ক্ষমতায় থাকার প্রত্যয় দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করা হয়েছে। বহুদিন থেকেই বিরোধী
দলকে তারা আরও ভয় দেখাচ্ছে যে, সরকারের শর্ত অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে
বাধা দেয়া হলে তৃতীয় শক্তি এর সুযোগ নেবে এবং পরবর্তী দশ বছরেও আর নির্বাচন
হবে না। নতুন হুমকি অনুযায়ী তাদের বক্তব্য দাঁড়ায়, নির্বাচন ছাড়া তাদের
ক্ষমতায় থেকে যাওয়া অসাংবিধানিক হবে না। নির্বাচন না হলেও এ ধরনের সরকার
নির্বাচিত সরকার হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার অর্থ হল, পেছনের দরজা দিয়ে কোনো
অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক তৃতীয় শক্তির ক্ষমতা দখলের কোনো ‘ভয়’ থাকবে না।
আওয়ামী লীগ এটা সামনের দরজা দিয়েই করবে। কাজেই বিরোধী দলের উদ্বেগের কোনো
কারণ নেই যে, তাদের হতাশ করে তৃতীয় কোনো শক্তি ক্ষমতা নিয়ে নেবে। কিন্তু
আওয়ামী লীগ এটা বলছে না যে, ১০ বছর পরও আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। নিষ্ঠুর
বাস্তবতা হচ্ছে, প্রচলিত রাজনীতিতে নির্বাচন জনগণের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন
বয়ে আনে না। বিদ্যমান ধারার রাজনীতিতে নির্বাচনী ফলাফল যাই হোক- হরতাল,
নৈরাজ্য, গুম, গুপ্তহত্যা ও লুটতরাজ বন্ধ হবে না। বর্তমানে রাজনীতি ও সরকার
পর্দার আড়ালে থেকে অরাজনৈতিক ও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারাই পরিচালিত
হচ্ছে।
এখন ভোটের ব্যাপারে জনগণের খুব বেশি চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক প্রথায় জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু সৎ ও উত্তম কাউকে বেছে নিতে পারে না। ফলে জনগণের বিবেচনায় জনস্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে নির্বাচন কোনো চূড়ান্ত ফয়সালা নয়। তবে ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নির্ধারিত পথ গণতন্ত্রের প্রত্যাশাকেই ধূলিসাৎ করবে মাত্র।
পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তারাও রাজনীতিবিদদের মতোই দুর্নীতিগ্রস্ত। সুতরাং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তেমন কার্যকারিতা নেই। একটি যোগ্য সরকার পরিচালনা করা ভিন্ন জিনিস। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করতে হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের রাজনীতি পরিহার করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আবারও অনুরোধ জানিয়েছেন। যদিও ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ বিদ্যুৎ স্বল্পতা/সংকট এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চেম্বার নেতারা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির/অগ্রগতির একটি ইতিবাচক দিক চিহ্নিত করে বোঝাতে চেয়েছেন, এটা সরকারের জন্য মারাÍক সংকট নয়। ফলে তাদের সতর্কবাণী সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। এভাবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ উন্নতকরণে সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারে উপযোগী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার হিসাব সব সময় সুখবর হয় না। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি সবল-সচল না থাকে এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশে যদি না থাকে তাতে সরকারের কৃতিত্ব প্রমাণ হয় না। অর্থ পাচারের সুযোগ পুঁজি পাচারের পথ অবারিত করে দিয়েছে- যতটা অতীতে ছিল না। বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে দেশের অর্থনীতি এখনও মুখ থুবড়ে পড়েনি সত্য, কিন্তু অর্থনীতির শূন্যগর্ভতা সরকার কর্তৃক স্থাপিত বড় বড় বিলবোর্ডের মাধ্যমে আড়াল করা যাবে না। জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা না থাকলে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কাজ করতে না পারলে কোনো ভালো কীর্তিই চূড়ান্ত পর্যায়ে ভালো কিছু বলে বিবেচিত হয় না। এটা দৃশ্যমান যে, ব্যর্থ রাজনীতি ও ব্যর্থ অর্থনীতি দেশে এক বিস্ফোরণোউন্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অনেকেই লক্ষ্য করছেন যে, দেশ দ্রুত এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা সবার নিরাপত্তায়ই বিঘœ ঘটাবে। এতে বিদেশী বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হলেও আমাদের সুশীল সমাজ মোটেই বিচলিত নন। এই সংকট নিরসনে দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ জরুরি।
আওয়ামী লীগ তাদের স্বপ্ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলে আপত্তি নেই, কিন্তু সর্বাগ্রে জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। শুধু একটি সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়, বরং জনগণের মঙ্গল ও উপযুক্ত শাসনের জন্যই শাসনতন্ত্র। দেশ কিন্তু সুশাসন বঞ্চিত।
স্বৈরশাসকরাও ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনের প্রয়োজন অনুভব করে। তারা জানে, দেশ নির্বাচনের জন্য নিরাপদ না হলে কিছুর জন্যই নিরাপদ নয়। গণতান্ত্রিক শাসন খুব সহজ নয়, কিন্তু স্বৈরশাসন আরও কঠিন ও বিপজ্জনক।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
এখন ভোটের ব্যাপারে জনগণের খুব বেশি চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক প্রথায় জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু সৎ ও উত্তম কাউকে বেছে নিতে পারে না। ফলে জনগণের বিবেচনায় জনস্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে নির্বাচন কোনো চূড়ান্ত ফয়সালা নয়। তবে ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগের নির্ধারিত পথ গণতন্ত্রের প্রত্যাশাকেই ধূলিসাৎ করবে মাত্র।
পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয় এবং তারাও রাজনীতিবিদদের মতোই দুর্নীতিগ্রস্ত। সুতরাং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তেমন কার্যকারিতা নেই। একটি যোগ্য সরকার পরিচালনা করা ভিন্ন জিনিস। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত যোগ্যতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করতে হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের রাজনীতি পরিহার করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আবারও অনুরোধ জানিয়েছেন। যদিও ব্যবসায়ী নেতারা তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ বিদ্যুৎ স্বল্পতা/সংকট এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চেম্বার নেতারা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির/অগ্রগতির একটি ইতিবাচক দিক চিহ্নিত করে বোঝাতে চেয়েছেন, এটা সরকারের জন্য মারাÍক সংকট নয়। ফলে তাদের সতর্কবাণী সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবে না। এভাবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ উন্নতকরণে সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারে উপযোগী ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার হিসাব সব সময় সুখবর হয় না। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি সবল-সচল না থাকে এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশে যদি না থাকে তাতে সরকারের কৃতিত্ব প্রমাণ হয় না। অর্থ পাচারের সুযোগ পুঁজি পাচারের পথ অবারিত করে দিয়েছে- যতটা অতীতে ছিল না। বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলে দেশের অর্থনীতি এখনও মুখ থুবড়ে পড়েনি সত্য, কিন্তু অর্থনীতির শূন্যগর্ভতা সরকার কর্তৃক স্থাপিত বড় বড় বিলবোর্ডের মাধ্যমে আড়াল করা যাবে না। জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা না থাকলে এবং স্বাধীনভাবে নিজ নিজ কাজ করতে না পারলে কোনো ভালো কীর্তিই চূড়ান্ত পর্যায়ে ভালো কিছু বলে বিবেচিত হয় না। এটা দৃশ্যমান যে, ব্যর্থ রাজনীতি ও ব্যর্থ অর্থনীতি দেশে এক বিস্ফোরণোউন্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। অনেকেই লক্ষ্য করছেন যে, দেশ দ্রুত এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা সবার নিরাপত্তায়ই বিঘœ ঘটাবে। এতে বিদেশী বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হলেও আমাদের সুশীল সমাজ মোটেই বিচলিত নন। এই সংকট নিরসনে দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ জরুরি।
আওয়ামী লীগ তাদের স্বপ্ন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারলে আপত্তি নেই, কিন্তু সর্বাগ্রে জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। শুধু একটি সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়, বরং জনগণের মঙ্গল ও উপযুক্ত শাসনের জন্যই শাসনতন্ত্র। দেশ কিন্তু সুশাসন বঞ্চিত।
স্বৈরশাসকরাও ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনের প্রয়োজন অনুভব করে। তারা জানে, দেশ নির্বাচনের জন্য নিরাপদ না হলে কিছুর জন্যই নিরাপদ নয়। গণতান্ত্রিক শাসন খুব সহজ নয়, কিন্তু স্বৈরশাসন আরও কঠিন ও বিপজ্জনক।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments