যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে
মিসরের রাজপথে শুধু দেশটির নবীন গণতন্ত্র লুটিয়ে পড়েনি, অগুনতি মানুষের চোখে পুরোনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মিসরনীতিও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। মিসর সংকটে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বস্তুত এ মুহূর্তে কায়রোর ওপর ওয়াশিংটনের প্রভাব তলানিতে। সাম্প্রতিক সময়ে মিসরে মার্কিন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা একের পর এক ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনী মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁকে সেনা কর্তৃপক্ষ ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আপসরফার পরামর্শ দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এতে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এর আগে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত না করতে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা আমলে নেয়নি সেনাবাহিনী। মুরসির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান বলে স্বীকৃতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, একদিকে যেমন মিসরের জেনারেলদের ও মুরসিবিরোধী লাখো মানুষকে ক্ষুব্ধ করতে চায়নি ওয়াশিংটন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইনকানুনের বিষয়টিও বড় বিবেচ্য ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস স্টাডিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট টমাস ক্যারোথার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিসরের সঙ্গে তাঁদের যৌথ সামরিক মহড়া বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এতেও খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না ওয়াশিংটন। কারণ, সৌদি আরব মিসরকে প্রতিবছর এক হাজার কোটি ডলার সহায়তা দেয়। অ্যাট দ্য পয়েন্ট অব এ গান গ্রন্থের লেখক ডেভিড রিয়েফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিসরের সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে মাত্র, নিন্দা করেনি। কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রুস রাদারফোর্ড বলেছেন, মুরসি-বিরোধীরাও যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র মনে করে না। তাদের অভিযোগ, ক্ষমতায় থাকার সময় মুরসিকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে ওয়াশিংটন। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, মুরসিকে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও মিসরকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্টতই সেনা কর্তৃপক্ষকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছে দেশটি।
No comments