নারীকে একা পেলে সব পূরুষই পণ্য মনে করে
রাজার রাজত্বের কী বর্ণনা দেযা যায়?
টপকাপি প্যালেসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই আমার এ কথা মনে হয়েছে। টপকাপি
প্যালেস দর্শনীয় স্থানের মাঝে অন্যতম প্রধান।
অটোম্যান
সম্রাট চারশ বছর তাদের রাজ্য পরিচালনার কাজ এ স্থান থেকে করেছেন। সমগ্র
বিশ্বের দর্শনার্থী এ প্যালেস দেখতে আসেন। বছরে প্রায় ২৫ মিলিয়ন
দর্শনার্থী এ প্যালেস দর্শন করে। এই প্যালেস বড় প্রাচীর দিয়ে ঘেরা যা ৫
কিলোমিটার বিশিষ্ট। আমি প্রথমে ট্যাক্সি দিয়ে এ প্যালেস একবার ঘুরে আসি।
তারপর প্রধান ফটক থেকে পায়ে হেঁটে ভেতরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। টপকাপির
সম্পূর্ণ এলাকার আয়তন ৭,০০,০০০ স্কয়ার মিটার যা ভাটিকান সিটির দ্বিগুণ ও
মোনাকোর অর্ধেক। প্যালেসটি ২৮টি টাওয়ার দ্বারা বেষ্টিত। প্যালেসে মোট
সাতটি প্রবেশের পথ রয়েছে। প্রায় ৫ হাজার লোক সে আমলে এ প্যালেসে কাজ
করতেন এবং প্রত্যেকের প্রবেশের পথ তাদের কাজের অবস্থানের ওপর নির্ধারিত
হতো। প্যালেসটি একটু ভিন্ন ধাঁচে নির্মিত। প্যালেসের চারদিকে বিল্ডিং এবং
মাঝখানে বাগান। অনেকটা নোমাডকি সংস্কৃতির মতো।
প্যালেসের প্রধান ফটকে ঢুকতেই একটি বড় ফোয়ারা দেখতে পাওয়া যায়। ওটা তুরস্কের ঐতিহ্যকে বহন করে। প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটকে হেঁটে যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। দ্বিতীয় ফটকটি হচ্ছে সম্রাটদের প্রবেশের পথ। সম্রাটরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে যেতেন এবং সেখান থেকে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী এ ফটক দিয়ে প্রবেশের অনুমতি পেতেন। দ্বিতীয় ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই বিশাল বাগান রয়েছে এবং সেখানেই বহির্বিশ্বের রাষ্ট্রদূতের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কখনো কখনো ১০ হাজার মানুষ সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন এবং সম্রাট বাগানের এক কোনায় সোনার সিংহাসনে বসে থাকতেন। সিংহাসনটি এখনো যতেœ রক্ষিত আছে। আমি রাজার বেডরুম, রানীর ঘর, অতিথি খানা, ধর্মীয় কামরা, ছোট ছোট সভা পরিচালনা কামরা ও দুটো বাগান তিন ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করি। এখানকার জাদুঘরে এখনো সজ্জিত রয়েছে রাজাদের ব্যবহৃত থালা-বাসন, অলঙ্কার ও বস্ত্রাদি। আমি একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছি। আমার ছবি তোলা দেখে সাহিল আমার নাম দিলো ‘পিকচার ম্যাডাম’।
প্যালেস দর্শন শেষ করে আমি টপকাপি প্যালেসের হারেম দর্শন করতে যাই। হারেম প্যালেস থেকে একটু পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। হারেমের প্রবেশপথও ভিন্ন। হারেমে প্রবেশ করতে পৃথকভাবে টিকেট কিনতে হয়। ‘হারেম’ শব্দটি আরবি ‘হারাম’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘হারেম’ শব্দটির অর্থ হলো, যে স্থানে হারাম কাজ করা হয়ে থাকে। অটোম্যান সম্রাট বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বুদ্ধিমতী ও সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে এসে ওই হারেমে রাখতেন এবং নিষিদ্ধ কার্যকলাপ করতেন। হারেমে প্রবেশ করে আমার মনে যা প্রথমে হয়েছে সর্বযুগে সর্বকালেই পতিতাদের স্থান পতিতালয়েই। হারেম দর্শন দর্শনার্থীদের জন্য বহু বছর নিষিদ্ধ ছিল তবে বর্তমানে তার কিছু অংশ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
টপকাপি প্যাসেলের হারেমের প্রবেশ পথ বেশ সরু এবং প্রায় চারশটি কামরা রয়েছে। হারেমকে বহির্জগৎ থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছিল শুধু চিকিৎসক, শিক্ষক ও কিছু কর্মচারীর হারেমের বিশেষ কোনো স্থানে প্রবেশের অনুমতি ছিল। অমুসলিমদের প্রবেশ হারেমে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। রাজার মা হারেম পরিচালনা করতেন এবং সব বেশ্যাদের শিক্ষা প্রদান করতেন। কোনো কোনো সম্রাট একাধিক উপপত্নিদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন আবার কোনো কোনো সম্রাট শুধু চারজন উপপত্নীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন। কারণ তা ইসলাম অনুমোদন করে। যে সব উপপত্নী সম্রাটের সন্তানের জন্ম দিতেন তাদেরকে একটি বিশেষ কামরা প্রদান করা হতো। অন্যরা সম্রাটের অন্য সেবায় নিযুক্ত হতো অথবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতো।
সাধারণত সম্রাটের মৃত্যুর পর তার প্রথম পুত্রই সম্রাট হতো। তাই সব উপপত্নীর লক্ষ থাকত প্রথম পুত্র সন্তান জন্ম দেয়ার। আরেকটি শর্ত ছিল যে পুত্রসন্তানকে বাবার মৃত্যুর পর্যন্ত জীবিত থাকতে হবে তাই অনেক উপপত্নী যারা প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে পারেননি, তারা অন্য উপপতত্নীর পুত্রসন্তানকে মেরে ফেলতেন। আবার উপপত্নীদের মাঝে ‘হাসেকি’ হওয়ার প্রতিযোগিতাও চলত। ‘হাসেকি’ শব্দের অর্থ ‘প্রিয় পত্নী’।
হারেমে ৪৬টি বাথরুম, চারটি হামাম অথবা তুর্কি বাথ, চারটি রান্নাঘর, দুটি মসজিদ, ছয়টি মজুদখানা, একটি সুইমিংপুল ও একটি হাসপাতাল রয়েছে। হারেমের সম্পূর্ণ আয়তন ৬,৭০০ বর্গকিলোমিটার। হারেমের প্রবেশ পথেই কালোরক্ষীরা বসে থাকেন। কারণ সব উপপত্নীই রাজার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না। তারা অনেক সময়ই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতো এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।
যখন নতুন রাজা রাজত্বের দায়িত্ব নিতেন তখন পুরনো উপপত্নীদের অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে নতুন উপপত্নীকে দিয়ে নতুনভাবে হারেমকে সাজানো হতো। পৃথিবীর যে দেশেই যা-ই না কেন, নারীকে কেন যেন ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখতে পাই অথবা নারীরাও তাদেরকে সেভাবেই প্রদর্শন করতে পছন্দ করে।
এটাই আমার জীবনে প্রথম হারেমে প্রবেশের অভিজ্ঞতা। মন খারাপ হয়ে যায় এসব দেখলে আমার। সমগ্র পৃথিবীতেই চলে এসেছে নারী-পুরুষের এক বিক্রেতা ও ক্রেতার সম্পর্ক। একজন বিক্রেতা যেমন ভালো ক্রেতাকে খোঁজে তেমনি একজন উপপত্নীও তার দেহের জন্য একজন ভালো ক্রেতাকে খোঁজে। সম্রাটের চেয়ে ভালো ক্রেতা আর কেই বা হতে পারে? পৃথিবীর সব দেশের নারী এসেছেন এ হারেমে বিক্রেতা হয়ে ক্রেতার খোঁজে। নারী হয়ে জন্মগ্রহণ আমার কাছে ক্ষণিকের জন্য লজ্জার মনে হয়েছিল সে সময়। নারী তার দেহকে বিক্রি করা ছাড়াও অনেক কাজ করতে পারে, পার্থক্য শুধু একটাই এ সমাজ সব নারীকে সে সুযোগ প্রদান করে না।
টপকাপি প্যালেস থেকে বের হতে হতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। আমি ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। আমি একটু তুর্কির কাবাব খেয়ে গ্রান্ড বাজারে যাই। গ্রান্ড বাজার টপকপি প্যালেস থেকে হেঁটে ১৫ মিনিটের পথ। গ্রান্ড বাজারে প্রায় ৪ হাজার দোকান রয়েছে। সব ঐতিহ্যবাহী জিনিস এখানে পাওয়া যায়। দাম যা চাইবে তা থেকে চার ভাগের এক ভাগ বললেও বেশি হয়, এমন অবস্থা। মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমি কিছু স্যুভেনির ও নকল পারফিউম কিনলাম। বুঝতে পারিনি যে সুগন্ধীগুলো নকল ভেবেছিলাম স্থানীয় তাই সস্তা। বাসায় এসে দেখি পানিতেও এর চেয়ে বেশি ঘ্রাণ থাকে। গ্রাণ্ড বাজারে যাবার পর আমি বুঝতে পারি যে মুজাহিদ আমাকে ভালো ভাবে ঠকিয়েছে। মুজাহিদের ব্ন্ধুর দোকানে যেদামে আমি জিনিষ কিনেছি গ্রাণ্ড বাজারে তার চেয়ে কম দাম চায়। আর তার প্রশুরু হয় দামাদামি। তাই অপরিচিত ব্ন্ধু থেকে ভবিষ্যতে সাবধান -এই শিক্ষা আমি এই সফরে পেলাম।
গ্রান্ড বাজারে আমার বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী মাহমুদের সঙ্গে দেখা করি। ও তুর্কি। বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে গিয়েছিল। ও আমাকে রাতের খাবার নিমন্ত্রণ করে। রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। আমি আধ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রাতের তুরস্ক দেখতে বের হই একা একাই। আমার হোটেল ছিল টাক্সিম স্কয়ারে। টাক্সিম স্কয়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং এরপাশেই ইসতিকলাল স্ট্রিট। সারারাত ওই রাস্তায় মানুষের ভিড় থাকে। সব দোকানপাট খোলা থাকে। আমি একা দেখে অনেক ছেলেই এগিয়ে আসে কথা বলবার জন্য কিন্তু আমি এবার এড়িয়ে যাই। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা আমাকে বলে চলো তোমাকে ফ্রি শহর ঘুরিয়ে দেখাই। মনে মনে ভাবি মেয়েদের একাকী চলাচলে সাবধান থাকা প্রয়োজন। তুর্কি-আইস, কাবাব খেতে খেতে রাত ২টা বেজে যায়। হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে দোলমাবাঞ্চ প্যালেসে যাব এবং বিকেলে আমার ফ্লাইট।
প্যালেসের প্রধান ফটকে ঢুকতেই একটি বড় ফোয়ারা দেখতে পাওয়া যায়। ওটা তুরস্কের ঐতিহ্যকে বহন করে। প্রধান ফটক থেকে দ্বিতীয় ফটকে হেঁটে যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। দ্বিতীয় ফটকটি হচ্ছে সম্রাটদের প্রবেশের পথ। সম্রাটরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে যেতেন এবং সেখান থেকে রাজকার্য পরিচালনা করতেন। অল্প সংখ্যক ব্যবসায়ী এ ফটক দিয়ে প্রবেশের অনুমতি পেতেন। দ্বিতীয় ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই বিশাল বাগান রয়েছে এবং সেখানেই বহির্বিশ্বের রাষ্ট্রদূতের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। কখনো কখনো ১০ হাজার মানুষ সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন এবং সম্রাট বাগানের এক কোনায় সোনার সিংহাসনে বসে থাকতেন। সিংহাসনটি এখনো যতেœ রক্ষিত আছে। আমি রাজার বেডরুম, রানীর ঘর, অতিথি খানা, ধর্মীয় কামরা, ছোট ছোট সভা পরিচালনা কামরা ও দুটো বাগান তিন ঘণ্টা ধরে পর্যবেক্ষণ করি। এখানকার জাদুঘরে এখনো সজ্জিত রয়েছে রাজাদের ব্যবহৃত থালা-বাসন, অলঙ্কার ও বস্ত্রাদি। আমি একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছি। আমার ছবি তোলা দেখে সাহিল আমার নাম দিলো ‘পিকচার ম্যাডাম’।
প্যালেস দর্শন শেষ করে আমি টপকাপি প্যালেসের হারেম দর্শন করতে যাই। হারেম প্যালেস থেকে একটু পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। হারেমের প্রবেশপথও ভিন্ন। হারেমে প্রবেশ করতে পৃথকভাবে টিকেট কিনতে হয়। ‘হারেম’ শব্দটি আরবি ‘হারাম’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘হারেম’ শব্দটির অর্থ হলো, যে স্থানে হারাম কাজ করা হয়ে থাকে। অটোম্যান সম্রাট বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বুদ্ধিমতী ও সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে এসে ওই হারেমে রাখতেন এবং নিষিদ্ধ কার্যকলাপ করতেন। হারেমে প্রবেশ করে আমার মনে যা প্রথমে হয়েছে সর্বযুগে সর্বকালেই পতিতাদের স্থান পতিতালয়েই। হারেম দর্শন দর্শনার্থীদের জন্য বহু বছর নিষিদ্ধ ছিল তবে বর্তমানে তার কিছু অংশ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
টপকাপি প্যাসেলের হারেমের প্রবেশ পথ বেশ সরু এবং প্রায় চারশটি কামরা রয়েছে। হারেমকে বহির্জগৎ থেকে পৃথক করে রাখা হয়েছিল শুধু চিকিৎসক, শিক্ষক ও কিছু কর্মচারীর হারেমের বিশেষ কোনো স্থানে প্রবেশের অনুমতি ছিল। অমুসলিমদের প্রবেশ হারেমে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। রাজার মা হারেম পরিচালনা করতেন এবং সব বেশ্যাদের শিক্ষা প্রদান করতেন। কোনো কোনো সম্রাট একাধিক উপপত্নিদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন আবার কোনো কোনো সম্রাট শুধু চারজন উপপত্নীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন। কারণ তা ইসলাম অনুমোদন করে। যে সব উপপত্নী সম্রাটের সন্তানের জন্ম দিতেন তাদেরকে একটি বিশেষ কামরা প্রদান করা হতো। অন্যরা সম্রাটের অন্য সেবায় নিযুক্ত হতো অথবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতো।
সাধারণত সম্রাটের মৃত্যুর পর তার প্রথম পুত্রই সম্রাট হতো। তাই সব উপপত্নীর লক্ষ থাকত প্রথম পুত্র সন্তান জন্ম দেয়ার। আরেকটি শর্ত ছিল যে পুত্রসন্তানকে বাবার মৃত্যুর পর্যন্ত জীবিত থাকতে হবে তাই অনেক উপপত্নী যারা প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম দিতে পারেননি, তারা অন্য উপপতত্নীর পুত্রসন্তানকে মেরে ফেলতেন। আবার উপপত্নীদের মাঝে ‘হাসেকি’ হওয়ার প্রতিযোগিতাও চলত। ‘হাসেকি’ শব্দের অর্থ ‘প্রিয় পত্নী’।
হারেমে ৪৬টি বাথরুম, চারটি হামাম অথবা তুর্কি বাথ, চারটি রান্নাঘর, দুটি মসজিদ, ছয়টি মজুদখানা, একটি সুইমিংপুল ও একটি হাসপাতাল রয়েছে। হারেমের সম্পূর্ণ আয়তন ৬,৭০০ বর্গকিলোমিটার। হারেমের প্রবেশ পথেই কালোরক্ষীরা বসে থাকেন। কারণ সব উপপত্নীই রাজার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন না। তারা অনেক সময়ই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতো এবং তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।
যখন নতুন রাজা রাজত্বের দায়িত্ব নিতেন তখন পুরনো উপপত্নীদের অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে নতুন উপপত্নীকে দিয়ে নতুনভাবে হারেমকে সাজানো হতো। পৃথিবীর যে দেশেই যা-ই না কেন, নারীকে কেন যেন ভোগ্যপণ্য হিসেবেই দেখতে পাই অথবা নারীরাও তাদেরকে সেভাবেই প্রদর্শন করতে পছন্দ করে।
এটাই আমার জীবনে প্রথম হারেমে প্রবেশের অভিজ্ঞতা। মন খারাপ হয়ে যায় এসব দেখলে আমার। সমগ্র পৃথিবীতেই চলে এসেছে নারী-পুরুষের এক বিক্রেতা ও ক্রেতার সম্পর্ক। একজন বিক্রেতা যেমন ভালো ক্রেতাকে খোঁজে তেমনি একজন উপপত্নীও তার দেহের জন্য একজন ভালো ক্রেতাকে খোঁজে। সম্রাটের চেয়ে ভালো ক্রেতা আর কেই বা হতে পারে? পৃথিবীর সব দেশের নারী এসেছেন এ হারেমে বিক্রেতা হয়ে ক্রেতার খোঁজে। নারী হয়ে জন্মগ্রহণ আমার কাছে ক্ষণিকের জন্য লজ্জার মনে হয়েছিল সে সময়। নারী তার দেহকে বিক্রি করা ছাড়াও অনেক কাজ করতে পারে, পার্থক্য শুধু একটাই এ সমাজ সব নারীকে সে সুযোগ প্রদান করে না।
টপকাপি প্যালেস থেকে বের হতে হতে বিকেল পাঁচটা বেজে যায়। আমি ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। আমি একটু তুর্কির কাবাব খেয়ে গ্রান্ড বাজারে যাই। গ্রান্ড বাজার টপকপি প্যালেস থেকে হেঁটে ১৫ মিনিটের পথ। গ্রান্ড বাজারে প্রায় ৪ হাজার দোকান রয়েছে। সব ঐতিহ্যবাহী জিনিস এখানে পাওয়া যায়। দাম যা চাইবে তা থেকে চার ভাগের এক ভাগ বললেও বেশি হয়, এমন অবস্থা। মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমি কিছু স্যুভেনির ও নকল পারফিউম কিনলাম। বুঝতে পারিনি যে সুগন্ধীগুলো নকল ভেবেছিলাম স্থানীয় তাই সস্তা। বাসায় এসে দেখি পানিতেও এর চেয়ে বেশি ঘ্রাণ থাকে। গ্রাণ্ড বাজারে যাবার পর আমি বুঝতে পারি যে মুজাহিদ আমাকে ভালো ভাবে ঠকিয়েছে। মুজাহিদের ব্ন্ধুর দোকানে যেদামে আমি জিনিষ কিনেছি গ্রাণ্ড বাজারে তার চেয়ে কম দাম চায়। আর তার প্রশুরু হয় দামাদামি। তাই অপরিচিত ব্ন্ধু থেকে ভবিষ্যতে সাবধান -এই শিক্ষা আমি এই সফরে পেলাম।
গ্রান্ড বাজারে আমার বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী মাহমুদের সঙ্গে দেখা করি। ও তুর্কি। বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে গিয়েছিল। ও আমাকে রাতের খাবার নিমন্ত্রণ করে। রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ১০টা। আমি আধ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে রাতের তুরস্ক দেখতে বের হই একা একাই। আমার হোটেল ছিল টাক্সিম স্কয়ারে। টাক্সিম স্কয়ার শহরের প্রাণকেন্দ্র এবং এরপাশেই ইসতিকলাল স্ট্রিট। সারারাত ওই রাস্তায় মানুষের ভিড় থাকে। সব দোকানপাট খোলা থাকে। আমি একা দেখে অনেক ছেলেই এগিয়ে আসে কথা বলবার জন্য কিন্তু আমি এবার এড়িয়ে যাই। ট্যাক্সি ড্রাইভাররা আমাকে বলে চলো তোমাকে ফ্রি শহর ঘুরিয়ে দেখাই। মনে মনে ভাবি মেয়েদের একাকী চলাচলে সাবধান থাকা প্রয়োজন। তুর্কি-আইস, কাবাব খেতে খেতে রাত ২টা বেজে যায়। হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে দোলমাবাঞ্চ প্যালেসে যাব এবং বিকেলে আমার ফ্লাইট।
সূত্র: হ্যালো-টুডে ডটকম।
No comments