বগুড়ায় অনুমোদন ছাড়াই চার শতাধিক ভবন by আনোয়ার পারভেজ
নীতিমালা লঙ্ঘন করে বগুড়ায় অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে চার শতাধিক ভবন।
এর মধ্যে তিন শতাধিক ছয়তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভার অনুমোদনের
তোয়াক্কা করেননি ভবনের মালিকেরা। আর বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভার
পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার বিধি মানার
কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
অনুমোদনহীন কয়েক শ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠিয়েছে বগুড়া পৌরসভা। পরিবেশ অধিদপ্তরও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবনের মালিকদের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এর পরও থেমে নেই শহরে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ। বগুড়া পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ রাশেদ সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এবং পৌরসভার অনুমোদনহীন এসব বহুতল ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও শহরবাসীর প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে ভবনের সামনে ন্যূনতম ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। বগুড়ায় গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনের সামনে ওই পরিমাণ রাস্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও বুয়েটের জরিপ অনুযায়ী বগুড়া শহরকে ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুমোদন না নিয়ে অপরিকল্পিত ও দায়সারা নকশায় যেনতেন উপকরণ দিয়ে শহরে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এতে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগে বহু প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’
পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ ও আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, শহরজুড়ে প্রায় চারশ অবৈধ বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় তিনশ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে দ্বিতল বা তিনতলা পর্যন্ত নকশার অনুমোদন নিয়ে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। আর ১০০ ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়ে ১০-১২ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জ্বলেশ্বরীতলা নূর মসজিদ সড়কে দোতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে তিন বছর আগে ছয়তলাবিশিষ্ট আমিন কমপ্লেক্স নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির মালিক নূর আমীন বলেন, ছয়তলা করার পরপরই নকশা অনুমোদনের জন্য পৌরসভায় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অনুমোদন দেয়নি। পাশের গলিতে অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এনজে টাওয়ার ও হাফিজা টাওয়ার নামে আটতলাবিশিষ্ট দুটি ভবন। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দুটি ভবনের মালিক ছয়তলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়েছেন। এনজে টাওয়ারের মালিক নিতিশ রঞ্জন কর্মকার আটতলার অনুমোদন না নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নির্মাণ আটতলার অনুমোদন নেওয়ার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। মালতিনগর, রহমাননগর, চকসূত্রাপুর, খান্দার ও সেউজগাড়ি এলাকায় বেশ কিছু বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই।
পৌরসভার আইন শাখা জানিয়েছে, ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এ রকম দুই শতাধিক অবৈধ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে পৌরসভা থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের আরও হাজার খানেক অভিযোগ এসেছে শহরের সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে।
পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, অনুমোদনহীন ভবন ছাড়াও শহরে অর্ধশতাধিক পুরোনো সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সিমেন্টের বদলে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। পৌরসভাকে না জানিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও এখন বহুতল করা হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের নিউমার্কেটের আশপাশে বেশ কয়েকটি পুরোনো ভবন অনুমোদন ছাড়াই বহুতল করা হচ্ছে। এ কারণে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছে। পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ ভবনমালিকদের কাছে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রায়ই নোটিশ পাঠানো হলেও খুব কমই সাড়া পাওয়া যায়। আবার ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও তাতে খুব একটা সহযোগিতা পাওয়া যায় না। জেলা প্রশাসক (বর্তমানে ঢাকায় বদলি হয়েছেন) সারোয়ার মাহমুদ বলেন, অবৈধ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৌর মেয়র প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পাননি, এমনটা সঠিক নয়। পৌরসভা থেকে এ ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হলে অবশ্যই দেওয়া হতো। আর সরকারি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকলে তা গণপূর্ত বিভাগ ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জানার কথা।
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল গোফফার জানান, বগুড়া শহরের কোনো সরকারি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থেকে থাকলে সেটা তাঁর জানা থাকত। পৌরসভা চিঠি দিয়ে জানালে সে ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান সোহেল রানা জানান, পৌরসভার নথিতে ছয়তলার অধিক ভবনের সংখ্যা বেশি হলেও মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি ভবনমালিক ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। দুর্ঘটনা ও দুর্যোগকালীন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার জন্য বেশির ভাগ বহুতল ভবনের সামনে প্রশস্ত রাস্তা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক আলী রেজা মজিদ বলেন, শহরজুড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদিত মাত্র ২০-২৫টি বহুতল ভবন রয়েছে। অনুমোদনহীন আরও অন্তত ৪০ জন ভবনমালিককে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
অনুমোদনহীন কয়েক শ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠিয়েছে বগুড়া পৌরসভা। পরিবেশ অধিদপ্তরও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভবনের মালিকদের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু এর পরও থেমে নেই শহরে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণ। বগুড়া পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ রাশেদ সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এবং পৌরসভার অনুমোদনহীন এসব বহুতল ভবন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও শহরবাসীর প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আবাসিক এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করতে হলে ভবনের সামনে ন্যূনতম ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। বগুড়ায় গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনের সামনে ওই পরিমাণ রাস্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও বুয়েটের জরিপ অনুযায়ী বগুড়া শহরকে ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অনুমোদন না নিয়ে অপরিকল্পিত ও দায়সারা নকশায় যেনতেন উপকরণ দিয়ে শহরে এসব বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এতে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্যোগে বহু প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’
পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ ও আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, শহরজুড়ে প্রায় চারশ অবৈধ বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় তিনশ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরসভা থেকে দ্বিতল বা তিনতলা পর্যন্ত নকশার অনুমোদন নিয়ে ছয়তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। আর ১০০ ভবনের ছয়তলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়ে ১০-১২ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জ্বলেশ্বরীতলা নূর মসজিদ সড়কে দোতলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে তিন বছর আগে ছয়তলাবিশিষ্ট আমিন কমপ্লেক্স নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির মালিক নূর আমীন বলেন, ছয়তলা করার পরপরই নকশা অনুমোদনের জন্য পৌরসভায় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অনুমোদন দেয়নি। পাশের গলিতে অনুমোদন ছাড়াই নির্মিত হচ্ছে এনজে টাওয়ার ও হাফিজা টাওয়ার নামে আটতলাবিশিষ্ট দুটি ভবন। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ দুটি ভবনের মালিক ছয়তলা পর্যন্ত অনুমোদন নিয়েছেন। এনজে টাওয়ারের মালিক নিতিশ রঞ্জন কর্মকার আটতলার অনুমোদন না নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নির্মাণ আটতলার অনুমোদন নেওয়ার জন্য কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। মালতিনগর, রহমাননগর, চকসূত্রাপুর, খান্দার ও সেউজগাড়ি এলাকায় বেশ কিছু বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই।
পৌরসভার আইন শাখা জানিয়েছে, ২০১০ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এ রকম দুই শতাধিক অবৈধ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে পৌরসভা থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের আরও হাজার খানেক অভিযোগ এসেছে শহরের সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকে।
পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, অনুমোদনহীন ভবন ছাড়াও শহরে অর্ধশতাধিক পুরোনো সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন রয়েছে। এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সিমেন্টের বদলে চুন-সুরকি ব্যবহার করা হয়েছে। পৌরসভাকে না জানিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনও এখন বহুতল করা হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের নিউমার্কেটের আশপাশে বেশ কয়েকটি পুরোনো ভবন অনুমোদন ছাড়াই বহুতল করা হচ্ছে। এ কারণে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকছে। পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ ভবনমালিকদের কাছে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রায়ই নোটিশ পাঠানো হলেও খুব কমই সাড়া পাওয়া যায়। আবার ভবনমালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য প্রশাসন ও পুলিশকে অনুরোধ করা হলেও তাতে খুব একটা সহযোগিতা পাওয়া যায় না। জেলা প্রশাসক (বর্তমানে ঢাকায় বদলি হয়েছেন) সারোয়ার মাহমুদ বলেন, অবৈধ ভবনমালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পৌর মেয়র প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে পাননি, এমনটা সঠিক নয়। পৌরসভা থেকে এ ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হলে অবশ্যই দেওয়া হতো। আর সরকারি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকলে তা গণপূর্ত বিভাগ ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জানার কথা।
তবে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল গোফফার জানান, বগুড়া শহরের কোনো সরকারি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থেকে থাকলে সেটা তাঁর জানা থাকত। পৌরসভা চিঠি দিয়ে জানালে সে ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা দেওয়ান সোহেল রানা জানান, পৌরসভার নথিতে ছয়তলার অধিক ভবনের সংখ্যা বেশি হলেও মাত্র ৩০ থেকে ৩৫টি ভবনমালিক ফায়ার সার্ভিস থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। দুর্ঘটনা ও দুর্যোগকালীন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার জন্য বেশির ভাগ বহুতল ভবনের সামনে প্রশস্ত রাস্তা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক আলী রেজা মজিদ বলেন, শহরজুড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদিত মাত্র ২০-২৫টি বহুতল ভবন রয়েছে। অনুমোদনহীন আরও অন্তত ৪০ জন ভবনমালিককে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
No comments